খাবার নেই, ওষুধ নেই, জ্বালানি নেই। যত দিন যাচ্ছে, আরো ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে শ্রীলঙ্কা। বুধবার দিনভর কলম্বোর ছাত্ররা বিক্ষোভ দেখিয়েছে রাজপথে।

গত কয়েকদিন ধরেই কলম্বোর একাধিক মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে মূলত ছাত্র এবং সাধারণ মানুষ। বৃহস্পতিবার আন্দোলন আরো তীব্র হয়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গেটে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে তারা ঢুকে পড়ে ভিতরে। ওষুধ এবং খাবারের দাবিতে তারা বিক্ষোভ দেখাতে থাকে।

শ্রীলঙ্কা পার্লামেন্টের স্পিকার মাহেন্দা ইয়েপা আবেওয়ারদনা বলেছেন, আরো ভয়াবহ সময় আসতে চলেছে অদূর ভবিষ্যতে। দেশ ক্রমশ অনাহারের দিকে যাচ্ছে।

প্রতিটি পেট্রোল পাম্প এবং গ্যাস স্টেশনের বাইরে লম্বা লাইন। ৩৬ ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়েও সামান্য তেল পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। ভারতের কাছ থেকে আরো তেল নেয়াার দাবি জানাচ্ছেন তারা।

বিরোধীদের চাপে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করেছে শ্রীলঙ্কার প্রশাসন। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

দেশ ছেড়ে পালাতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। ভারতে এসে আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন তারা। বিপুল অঙ্কের অর্থ খরচ করে দুর্গম সমুদ্রে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি দিচ্ছেন তারা।

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, রাজাপাকসে সরকারের ভুল নীতির কারণে এই অবস্থায় এসে পৌঁছেছে শ্রীলঙ্কা। সাহায্য না পেলে এখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব।

ভারত ইতিমধ্যেই এক জাহাজ তেল পাঠিয়েছে শ্রীলঙ্কায়। এক বিলিয়ন ডলারের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পাঠানো হবে বলে জানানো হয়েছে।

বাজারে চড়া দ্রব্যমূল্য, জ্বালানি সংকট, ১৩ ঘণ্টার লোডশেডিং; শ্রীলঙ্কার মানুষ নিত্যদিন এখন এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি৷ ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন সাধারণ মানুষ৷ গত মাস থেকেই শুরু করেছেন বিক্ষোভ৷ ক্ষোভের আগুনে পুড়ছে রাজধানী কলম্বো৷

দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পেট্রোল, ডিজেলের মূল্য ২৫ শতাংশ বেড়েছে দেশটিতে৷ বাজারে দেখা দিয়েছে খাদ্যপণ্যের অভাব, নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে দাম৷ মার্চে মূল্যস্ফীতি ১৯ শতাংশে ঠেকেছে৷

বিরোধী দলের ডাকে সরকারবিরোধী আন্দোলন ঠেকাতে কারফিউ জারি করেন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে৷ রাস্তায় নামে সেনা সদস্যরা৷ রাজাপাকসের বাসভবনের সামনে সশস্ত্র প্রহরায় সেনা সদস্যদের দেখা যায়৷

সরকারবিরোধী আন্দোলনের জেরে এরইমধ্যে পদত্যাগ করেছেন ২৬ জন মন্ত্রী৷ তবে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ্র রাজাপাকসে ইস্তফা দেননি৷ জরুরি অবস্থার মধ্যেও বিক্ষোভ করে যাচ্ছেন প্রতিবাদকারীরা৷ রোববার প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভের ছবি এটি৷

কমতে কমতে শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৩০ কোটি ডলারে ঠেকেছে৷ ঋণ পরিশোধ, আমদানি ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে দেশটি৷ যার কারণে দেখা দিয়েছে জ্বালানি সংকট৷ ভেঙে পড়েছে পরিবহণ ব্যবস্থা৷ উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটায় দেখা দিয়েছে বিদ্যুৎ ঘাটতি৷ ক্ষুব্ধ মানুষ রাস্তায় পুড়িয়ে দিয়েছেন যানবাহন৷

এই পরিস্থিতির জন্য প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের দিকে অভিযোগের তীর বিরোধী দল ও আন্দোলনকারীদের৷ রাজাপাকসে ও তার স্বজনদের অবিলম্বে পদত্যাগের দাবি জানিয়ে আসছেন তারা৷ ‘গোটা গো হোম’ বা ‘গোটা বাড়ি ফিরে যাও’ এমন স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজপথ৷

বিক্ষোভ দমনে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার৷ রাজপথ ছাড়ছে না জনতাও৷ আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে আহত হচ্ছে দুই পক্ষই৷ ছবিতে আহত এক পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছেন সহকর্মীরা৷

এক ব্যক্তি তার পোষা কুকুরকেও নিয়ে এসেছেন আন্দোলনে৷ গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে ‘বাহা মেন’ ব্যান্ডের গানের শিরোনাম ‘হু লেট দ্য ডগস আউট’ লেখা প্ল্যাকার্ড৷

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ঋণের উৎস খুঁজছে শ্রীলঙ্কার সরকার৷ জরুরি পণ্য আমদানির জন্য গত মাসে ভারতের সঙ্গে ১০০ কোটি ডলারের চুক্তি করেছে দেশটি৷ আরো ১০০ কোটি ডলারের জন্য প্রতিবেশী দেশটিকে অনুরোধ করেছে তারা৷ ২৫০ কোটি ডলার ঋণ পেতে আলাপ চলছে চীনের সঙ্গে৷ তবে পরিস্থিতি সামলাতে এই টাকাও যথেষ্ট নয়৷ তাই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের কাছে উদ্ধার তহবিলের জন্য হাত পেতেছে এখন সরকার৷