যে জঙ্গি নেতাকে নিয়ে শ্রীলঙ্কায় ইস্টার হামলার পর থেকেই আলোচনা চলছে, সেই জাহরান হাশিমও হামলায় নিহত হয়েছেন৷ দেশটির প্রেসিডেন্ট মৈত্রিপালা সিরিসেনা এ তথ্য জানিয়েছেন৷
গির্জা ও হোটেলে হামলার পর সরকার ন্যাশনাল তাওহীদ জামাত- এনটিজেকে এর জন্য দায়ী করে৷ স্থানীয় জঙ্গিরা বিদেশ থেকে সহায়তা পেয়েছে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়৷ পরবর্তীতে এনটিজে নেতা হাশিম আইএসের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করছেন, এমন এক ভিডিও সামাজিক যোগায়োগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়৷ এরপরই হাশিমকে খুঁজতে দেশব্যাপী অভিযান শুরু করে শ্রীলঙ্কা পুলিশ৷
তবে শুক্রবার প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা জানান, ছয়টি হামলাস্থলের একটি রাজধানী কলম্বোর সাংগ্রি-লা হোটেলে বিস্ফোরণে মারা গেছেন হাশিম৷ গোয়েন্দা সংস্থা তাঁকে এ তথ্য জানিয়েছে বলেও জানান তিনি৷
সিরিসেনার মতে, তামিল টাইগারদের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর সেনা গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বিচার করে সরকারই দেশের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দুর্বল করে দিয়েছে৷ ২০০৯ সালে বিদ্রোহ দমনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে চলা গৃহযুদ্ধ৷
এপ্রিলের মাঝামাঝি প্রতিরক্ষা সচিব ও পুলিশ প্রধান সিরিসেনার সঙ্গে দেখা করেন৷ তখন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের কাছে ‘বন্ধুপ্রতীম দেশের' কাছ থেকে হামলার প্রস্তুতির সতর্কবার্তা থাকলেও, তা তাঁকে জানানো হয়নি বলে অভিযোগ করেন সিরিসেনা৷
প্রেসিডেন্ট জানান দেশটির পুলিশ প্রধান অচিরেই পদত্যাগ করতে পারেন৷
শ্রীলঙ্কায় এই হামলা কি এড়ানো যেতো ?
রবিবার শ্রীলঙ্কায় মোট ৮টি সন্ত্রাসী হামলায় নিহতের সংখ্যা আপাতত ২৯০৷আহত হয়েছেন ৫০০-রও বেশি মানুষ৷ হতাহতদের মধ্যে অনেক বিদেশি নাগরিকও রয়েছেন৷ বিস্তারিত ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters/Stringer
ভয়াবহ ইস্টার সানডে
খ্রিষ্টানদের অন্যতম পবিত্র দিন ইস্টার সানডে৷ এমন দিনেই কলম্বো, নেগোম্বো ও বাট্টিকালোয়া শহরের বেশ কয়েকটি গির্জা ও হোটেলে ঘটে সিরিজ বোমা হামলা৷ শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী এই হামলায় নিহতের সংখ্যা ২৯০, আহত হয়েছেন ৫০০ জনেরও বেশি৷
ছবি: Reuters/Stringer
কোথায় হামলা
বোমা হামলার শিকার গির্জাগুলির মধ্যে রয়েছে উত্তর কলম্বোর সেইন্ট অ্যান্থনি'স শ্রাইন, নেগোম্বো শহরের পাশে সেইন্ট সেবাস্টিয়ান চার্চ ও পূর্বে বাট্টিকালোয়া শহরের জিয়ন চার্চ৷ এছাড়া তিনটি ফাইভ স্টার হোটেল সিনামন গ্রান্ড, কিংসবুরি ও দ্য সাংরিলাতেরও হামলা হয়৷ তিনটিই রাজধানী কলম্বোর কেন্দ্রে অবস্থিত৷
ছবি: Reuters/Stringer
শ্রীলঙ্কায় খ্রিষ্টান যারা...
পঞ্চদশ শতাব্দীতে পর্তুগিজ পাদ্রীদের আগমনের পর থেকে শ্রীলঙ্কায় বাড়তে থাকে খ্রিষ্টান জনসংখ্যা৷ বর্তমানে, দেশটির জনসংখ্যার ৭ শতাংশ মানুষ খ্রিষ্টধর্মের অনুসারী৷ এর মধ্যে রয়েছেন রোমান ক্যাথলিক, মেথডিস্ট ও প্রটেস্টান্ট ধারার মানুষ৷
ছবি: Reuters/Stringer
বিদেশিরাও হামলার শিকার
সংবাদসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলায় ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩৫ জন বিদেশি নাগরিক৷ হামলার শিকার হোটেলগুলিতে ছিলেন তাঁরা৷ নিহতদের মধ্যে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিমের আট বছর বয়সি নাতি জায়ান চৌধুরীও রয়েছে৷
ছবি: AFP/I. S. Kodikara
সহিংসতার ধারা
শ্রীলঙ্কায় মাত্র এক দশক আগেই থেমেছে গৃহযুদ্ধ৷তার আগে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সিনহালিজ ও সংখ্যালঘু হিন্দু তামিলদের মধ্যে দীর্ঘদিন চলে সশস্ত্র লড়াই৷বিগত দশকে গৃহযুদ্ধ থামার পর রবিবারের এ হামলাই সাম্প্রতিক কালে শ্রীলঙ্কায় সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/epa/str
হামলার পেছনে কারা?
শ্রীলঙ্কার সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, এই হামলার পেছনে রয়েছে স্থানীয় ইসলামী সংগঠন ন্যাশনাল তৌফিক জামাত৷ দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজিথা সেনারত্নে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, ৭ আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীই শ্রীলঙ্কার নাগরিক এবং তারা তৌফিক জামাতের সাথে জড়িত৷ হামলার পেছনে বিদেশি শক্তির হাত থাকার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেননি তিনি৷হামলায় জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters
বর্তমান পরিস্থিতি
রবিবার হামলার পর দেশজুড়ে কার্ফু জারি করেছিল শ্রীলঙ্কা সরকার৷ তবে সোমবার সকালে কার্ফু তুলে নেওয়া হয়৷ সোমবার রাত থেকে জরুরি অবস্থা জারি হতে পারে৷ ওপরের ছবিতে বিস্ফোরণের পর বিধ্বস্ত এক গির্জার পাশে স্থানীয় যাজকদের দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: AFP/I. S. Kodikara
এ হামলা কি এড়ানো যেতো?
শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্যমন্ত্রী সেনারত্নে জানিয়েছেন, পুলিশের কাছে এমন হামলার আশঙ্কার আগাম তথ্য থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরকে তা জানানো হয়নি৷ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এখনো এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য না এলেও প্রশ্ন উঠেছে – সত্যিই কি পুলিশ এমন তথ্য আগে পেয়েছিল? তাহলে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিলে এই ভয়াবহ হামলা তো কিছুটা হলেও এড়ানো যেতো!
দেশটির সেনাবাহিনী জানিয়েছে সন্দেহভাজনদের খুঁজে বের করা এবং ধর্মীয় স্থাপনায় নিরাপত্তা দিতে দেশজুড়ে প্রায় ১০ হাজার নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে৷
এদিকে, প্রতিশোধমূলক হামলার আশঙ্কায় শুক্রবার মসজিদে নামাজ না পড়ে বাসায় নামাজ আদায়ের জন্য মুসলিমদের আহ্বান জানিয়েছিল ধর্মীয় নেতারা৷ ইস্টার হামলার পরপরই শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তান থেকে আসা আহমদিয়া শরণার্থীদের ওপর সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে৷
বোমা হামলার পর দেশটির খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরাও গির্জায় যেতে ভয় পাচ্ছেন৷ দেশটিতে আবার হামলা হতে পারে বলে শুক্রবার সতর্ক করেছে অস্ট্রেলিয়া৷
অস্ট্রেলীয় নাগরিকদের জন্য জারি করা ভ্রমণ সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে. ‘‘সবার ওপরই হামলা হতে পারে, বিশেষ করে যেসব স্থানে বিদেশিরা বেশি যান৷''