সাধারণ নির্বাচনের ষষ্ঠ দফার ভোটে অনেকটাই নির্ধারিত হয়ে গেল কোন দল বসবে দিল্লির মসনদে৷ ১১টি রাজ্য ও একটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের মোট ১১৭টি আসনে ভোট হয়ে গেল বৃহস্পতিবার৷ প্রাথমিক হিসেবে অন্যান্যবারের তুলনায় ভোট ভালোই পড়েছে৷
বিজ্ঞাপন
ন'দফা নির্বাচনের ষষ্ঠ পর্বে রাজনৈতিক দলগুলির ভাগ্য অনেকটাই নির্ধারিত হয়ে গেল৷ দক্ষিণী রাজ্য তামিলনাড়ু এবং পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি যদি থাবা বসাতে পারে, তাহলে সরকার গঠনের পথে অনেকটাই এগিয়ে থাকবে বিজেপি – এমনটাই মনে করছেন ভোট বিশেষজ্ঞরা৷ সেই অর্থে বৃহস্পতিবারের ভোট তামিলনাড়ু ও পশ্চিমবঙ্গে দুর্গরক্ষার লড়াই৷ তামিলনাড়ুর ৩৯টি আসনেই ভোট হয়৷ ভোট পড়ে ৭০ শতাংশের বেশি৷ ১৯৬৭ সাল থেকে কোনো জাতীয় দল সুবিধা করতে পারেনি এই রাজ্যে৷ তবে এবার ঐ রাজ্যে ছয়-দলীয় বিজেপি-জোট ৫০টির মতো আসন নিজেদের ঝুলিতে ভরতে পারবে বলে আশা ব্যক্ত করেছেন বিজেপির শীর্ষ নেতা ভেঙ্কাইয়া নাইডু৷ তবে চূড়ান্ত ছবিটা জানা যাবে ১৬ই মে৷
ষষ্ঠ পর্বে যে ১১টি রাজ্যে ভোট হলো, সেগুলি হলো আসামে ১৪টি আসনের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় হয়ে গেছে আটটি আসনের ভোট৷ আর এবার হলো ছয়টি আসনে৷ ভোট দিতে আসেন স্বপত্নী প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং৷ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, তিনি মনে করেন না যে কোনো মোদী ঢেউ আছে৷ গোটাটাই মিডিয়ার মনগড়া৷ পশ্চিমবঙ্গে ৪২টি আসনের মধ্যে প্রথম দফায় হয়ে গেছে চারটি আসনে, আর এবার হলো চারটি জেলার ছয়টি আসনে৷ এর মধ্যে পাঁচটিতে জিতেছিল কংগ্রেস৷ ছয়টি আসনে ভোট পড়ে ৮০ শতাংশের মতো৷ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধান দলগুলি হলো শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস, বামদল এবং বিজেপি৷
বিহারে ৪০টি আসনের মধ্যে ১৩টি আসনে ভোট আগের দফায় হয়ে গেছে৷ এবার হলো সাতটিতে৷ ভোট পড়ে ৫২ শতাংশের মতো৷ ছত্তিশগড়ে ১১টি আসনের মধ্যে গত দু'দফায় হয়ে গেছে চারটি আসনের ভোট৷ ষষ্ঠ পর্বে হলো সাতটি আসনে৷ মধ্যপ্রদেশে ৩৯টি আসনের মধ্যে আগেই দু'দফায় ভোট হয়ে গেছে ১৯টি আসনে, এবার হলো অবশিষ্ট ১০টি আসনে৷ ভোট পড়ে ৫৯ শতাংশ৷ উত্তর প্রদেশে ৮০টি আসনের মধ্যে দু'দফায় হয়ে গেছে ২১টি আসনে আর বৃহস্পতিবার হলো ১২টি আসনে৷ রাজস্থানে ২৫টি আসনের মধ্যে আগেই হয়ে গেছে ২০টি আসনের ভোট৷ এবার ভোট হলো অবশিষ্ট পাঁচটি আসনে৷ ভোটের হার ৫৬ শতাংশ৷ মহারাষ্ট্রে ৪৮টি আসনের মধ্যে আগে দু'দফায় হয়ে গেছে ২৯টি আসনে, ষষ্ঠ দফায় হলো ১৯টি আসনের ভোট৷ এর মধ্যে বেশিরভাগ আসন মুম্বই এবং শহরতলিতে৷ ভোটের হার সবাইকে নিরাশ করেছে, মাত্র ৩৫ শতাংশের মতো৷ মহারাষ্ট্রে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই কংগ্রেস-এনসিপি জোট বনাম বিজেপি-শিবসেনা জোট৷
ভারতের নির্বাচন ২০১৪
ভারতে একমাসেরও বেশি সময় ধরে নয় দফায় ভোটগ্রহণ হবে৷ ৭ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ৷ ভোট গণনা হবে ১৬ মে৷ ৮০ কোটি ভোটার এই নির্বাচনে অংশ নেবেন৷
ছবি: DW/A. Chatterjee
জনগণের সরকার
ভারতের সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর৷ পার্লামেন্টে দুটি কক্ষ রয়েছে৷ উচ্চকক্ষকে বলা হয় রাজ্যসভা আর নিম্নকক্ষ লোকসভা হিসেবে পরিচিত৷ নিম্নকক্ষে যে দল বা জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় তারাই দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করে৷
ছবি: AP
দৌড়ে এগিয়ে
সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যাচ্ছে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে৷ তবে তিনি যদি প্রধানমন্ত্রী হন তাহলে যুক্তরাষ্ট্রকে ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের পথটা নতুনভাবে বিবেচনা করতে হবে৷ কেননা ২০০২ সালে গুজরাটে দাঙ্গার কারণে যুক্তরাষ্ট্র নরেন্দ্র মোদীকে বয়কট করেছে৷
ছবি: Reuters
কংগ্রেস নেতা
দীর্ঘ সময় ধরে কংগ্রেসের হাল ধরা সোনিয়া গান্ধী এবার দলের দায়িত্বের বোঝা তুলে দিয়েছেন নিজ পুত্র রাহুল গান্ধীর কাঁধে৷ ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর প্রপৌত্র, প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী পৌত্র এবং সবচেয়ে কমবয়সি প্রধানমন্ত্রীর ছেলে রাহুল৷ কিন্তু গত ১০ বছর ধরে রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট থেকেও সেখানে বড় কোনো ভূমিকা রাখতে পারছেন না তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দুর্নীতি বিরোধী নেতা
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে দিল্লির রাজ্যসভা নির্বাচনে অভিষেক হয় দুর্নীতি বিরোধী দল আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের৷ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু মাত্র ৪৯ দিনের মাথায় পদত্যাগ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘কিং মেকার’ দল
বামপন্থি চারটি দল এবং সাতটি আঞ্চলিক দল মিলে থার্ড ফ্রন্ট গঠন করেছে, যা বিজেপি এবং কংগ্রেসের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ৷ লোকসভায় এখনই তাদের আধিপত্য আছে৷ ঝুলন্ত পার্লামেন্টের সম্ভাবনা থাকলে তারা হয়ে উঠতে পারে ‘কিং মেকার’৷ অর্থাৎ তারা যে দল সমর্থন করবে তারাই গঠন করবে সরকার৷
ছবি: Sajjad HussainAFP/Getty Images
সামাজিক গণমাধ্যমের ভূমিকা
এ বছর নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বড় ভূমিকা রয়েছে৷ এটিকে নির্বাচনি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে কোনো দলই পিছিয়ে নেই৷ এ বছর প্রথম ভোট দেবেন এমন মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি৷ এদের মধ্যে ৪০ ভাগ শহরে বাস করে, যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সক্রিয়৷ ফলে নতুন এই প্রজন্ম এবারের নির্বাচনে একটা বড় ভূমিকা রাখছে৷
মেশিনের মাধ্যমে ভোট
লোকসভার ৫৪৫ টি আসনের প্রতিনিধি নির্বাচনে ভারতের মানুষ ভোট দেবেন ৫ সপ্তাহ ধরে৷ ইলেকট্রনিক মেশিন পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ চলবে৷ ফলাফল জানা যাবে ১৬ মে৷
ছবি: AP
সংখ্যালঘুদের উপর নির্ভরশীলতা
ভারতে ১৩ শতাংশ ভোটদাতা মুসলিম৷ ১০০টি সংসদীয় কেন্দ্রে ১৫-২০ শতাংশ, ৩৫টি কেন্দ্রে ৩০ শতাংশ এবং ৩৮টি আসনে মুসলিম ভোটদাতাদের সংখ্যা ২০ থেকে ৩০ শতাংশের মতো৷ কাজেই আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম ভোটবাক্স নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে পারে বলে মনে করছেন ভোট বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘নমো’ উন্মাদনা
যখন থেকে বিজেপি নরেন্দ্র মোদীকে (নমো) তাদের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেয়; তখন থেকেই সে দেশের গণমাধ্যমের একটি বড় অংশ হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ব্র্যান্ড হিসেবে ‘নমোকে’ তুলে ধরার উদ্যোগ নেয়৷ বিজেপির প্রচার-কুশীলবদের রি-ব্র্যান্ডিং অভিযানের তোড়ে নৈতিকতার প্রশ্নগুলো হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে৷
ছবি: Sam Panthaky/AFP/Getty Images
9 ছবি1 | 9
জম্মু-কাশ্মীরে ছয়টি আসনের মধ্যে আগে দু'দফায় হয়ে গেছে দুটি আসনে, আর এবার হলো একটি আসনে৷ মাত্র ৩২ শতাংশের মতো ভোট পড়লেও কোনো গন্ডগোল হয়নি৷ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল কড়া৷ প্রতিদ্বন্দ্বী দল এসি ও পিডিপি৷
এদিকে বারাণসী কেন্দ্র থেকে দাঁড়াতে বেশ ধুমধামের সঙ্গে মনোনয়ন-পত্র জমা দেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী৷ জনমোহিনী ভাষায় মোদী বলেন যে, তিনি পবিত্র শহর বারাণসী থেকে দাঁড়াচ্ছেন দলের নির্দেশে নয়, মা গঙ্গার ডাকে৷ মোদীর বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছেন আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং কংগ্রেসের রাই৷ মোদীর জনসভায় জঙ্গি হামলার ছক কষছে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন গোয়েন্দা সূত্রে জানতে পেরেছে সরকার৷ এই মর্মে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে সেইসব রাজ্যে, যেখানে মোদীর জনসভা করা কথা৷ জঙ্গিদের নিশানায় আছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের শীর্ষ নেতা প্রবীণ তোগাড়িয়া৷