বৃহস্পতিবার রাতেই আরজি কর হাসপাতালের সিসিইউ-তে ভর্তি করা হয়েছে অনিকেতকে। উদ্বেগ বাড়ছে বাকি অনশনকারীদের নিয়েও।
বিজ্ঞাপন
অষ্টমীতে ষষ্ঠদিনে পা রাখলো জুনিয়র ডাক্তারদের আমরণ অনশন। কলকাতার ধর্মতলায় সাতজন এবং উত্তরবঙ্গে দুইজন জুনিয়র ডাক্তার আমরণ অনশনে বসেছেন। এর মধ্যে অনিকেত মাহাতোকে বুধবার রাতে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। যদিও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অনিকেত হাসপাতালে ভর্তি হতে চাননি বলে জানিয়েছেন তার সতীর্থরা।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বুধবার দুপুর থেকেই ক্রমশ শরীর খারাপ হতে থাকে অনিকেতের। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় টান ধরতে শুরু করে। বেড়ে যায় পালসের গতি। লিভার এবং কিডনিতে সমস্যা হতে শুরু করে। কিন্তু অনিকেত হাসপাতালে যেতে চাননি। যদিও তার জন্য অ্যাম্বুল্যান্স এনে রাখা হয় অনশন মঞ্চের সামনে।
নারকেলডাঙার সরস্বতী কালীমাতা মন্দির পরিষদ ক্লাবের দুর্গাপুজোয় উঠে এসেছে আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদ। সেখানে মা দুর্গার মূর্তির সামনে রাখা হয়েছে চাদরে ঢাকা অভয়ার শোয়ানো মূর্তি। যা দেখে হাত দিয়ে মুখ ঢেকেছেন মা দুর্গা। সিংহও নতমুখ। মায়ের হাত অস্ত্রহীন। পাশে প্যান্ডেলে লাগানো চিকিৎসকের পোশাক ও স্টেথো।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কী বলছেন আয়োজকরা
নারকেলডাঙা পুজোর উদ্যোক্তা বিশ্বজিৎ সরকার জানিয়েছেন, নারীর উপর একের পর এক অত্যাচারের খবর আসছে। তাই তাদের থিম এবার লজ্জা। মা দুর্গা লজ্জায় মুখ ঢাকছেন। তার বাহন সিংহও লজ্জায় নতমুখ হয়েছে। এভাবেই তাদের পুজো হয়ে উঠেছে প্রতিবাদের পুজো।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
চতুর্থীর প্রদীপ
সোমবার ছিল চতুর্থী। সেই রাতে গিয়ে দেখা গেল, অভয়ার প্রতীকী মূর্তির সামনে ফুলমালা ও তার মধ্যে একটা প্রদীপ জ্বলছে। প্রতিবাদের আলো, অভয়াকে স্মরণ করার প্রদীপ।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
প্রতিবাদের পুজোয় অগ্রণী কাঁকুরগাছি যুবকবৃন্দ
কাঁকুরগাছি যুবকবৃন্দের পুজোর থিম পরিচয়। ৯৫ বছরে পা দেয়া এই পুজোর কর্মকর্তারা ভেবেছিলেন, এবার পুজোয় থিম হবে পোশাকশিল্পী। আরজি করের ঘটনা সবকিছু বদলে দিল। তারা এটা জানলেন, পোশাকশিল্পের সঙ্গে জড়িত সাধারণ মধ্যবিত্ত বাবা-মা মেয়েকে চিকিৎসক করেছিলেন অনেক কষ্ট করে। তখন তারা থিমের কিছুটা বদল ঘটালেন। তাদের পুজো হয়ে উঠলো প্রতিবাদের পুজো।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
জীবন্ত রূপকার
এই পুজোর আরেকটি চমক হলো, জীবন্ত রূপকার। অর্থাৎ, দুইজন পোশাকশিল্পীকে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা অভয়ার বাবা-মার প্রতীক। মন্ডপে দর্শকদের সামনে তারা কাজ করছেন। কৃত্রিম মেধা বা এআই ব্যবহার করে চিকিৎসকের প্রতীকী ছবি তৈরি করা হয়েছে। সেই ছবি দেয়া হয়েছে মণ্ডপে। বাকি মণ্ডপজুড়ে রয়েছে পোশাকশিল্পের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন অনুসঙ্গ। কিন্তু প্রতিটি জায়গায় ছড়িয়ে আছে আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
আয়োজকের বক্তব্য
এই পুজোর উদ্য়োক্তা শান্তনু সাহা জানিয়েছেন, তাদের থিম হলো 'রূপকার'। যারা আমাদের পোশাকের রূপ দেন তাদের নিয়ে এই পুজোর থিম করার কথা ভাবা হয়েছিল। পরে যখন আরজি কর কাণ্ড হলো, তখন তারা মনে করলেন এই প্রতিবাদটা জরুরি। আর অভয়ার বাবা নিজেও পোশাকশিল্পী ছিলেন। ফলে তাদের মূল থিমের সঙ্গে প্রতিবাদের থিমও মিলে গেল।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
থিম যেখানে 'ব্রাত্য'
ভবানীপুর শিবমন্দিরের থিম হলো ব্রাত্য। সেই পুজোতেও রয়েছে প্রতিবাদের চিহ্ন। একটি যন্ত্রণাকতর মুখের ভাস্কর্য রয়েছে সেখানে। আর সেই মুখের গায়ে রয়েছে একটি মেয়ের ছবি। দেখলেই বোঝা যায়, এ কার যন্ত্রণা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজোয়
সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজোয় এবারের থিম হলো লাস ভেগাসের বিখ্যাত আলোর গোলক স্ফিয়ার। ১১ডি প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ১১ দিক থেকে দেখা যাবে এই গোলকের মধ্যে মা দুর্গার অসীম শক্তির প্রতিচ্ছবি। কিন্তু সেই পুজোতেও রয়েছে প্রতিবাদের সুর।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ন্যায়ের দাবি
সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজোর অন্যতম কর্মকর্তা হলেন বিজেপি নেতা সজল ঘোষ। এখানে পুজোর থিম 'স্ফিয়ার' হলেও পোস্টারে-ফেস্টুনে রয়েছে ন্যায়ের দাবি। যেমন এই বিশালকায় বোর্ডে লেখা রয়েছে, 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস'।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
9 ছবি1 | 9
রাতে অবস্থার আরো অবনতি হলে তাকে আরজি করের সিসিইউ-তে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসক জানিয়েছেন, অনিকেতের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। শরীরের কোষে জলের পরিমাণ কমে গেছে। লিভার এবং কিডনিতে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। সকালে অনিকেতের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি চিকিৎসক বোর্ড গঠন করা হয়েছে। অনিকেতের পাশাপাশি আরেক অনশনকারী স্নিগ্ধার অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু স্নিগ্ধা সকাল পর্যন্ত হাসপাতালে যেতে চাননি।
অনিকেতের সতীর্থরা এখনো অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। অনিকেত অসুস্থ হয়ে পড়লেও তারা অনশন থেকে উঠতে রাজি হননি। বস্তুত, বৃহস্পতিবার সিনিয়র চিকিৎসকেরাও আন্দোলন মঞ্চে এসে তাদের কাছে অনশন তুলে নেওয়ার আর্জি জানান। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তাররা তাতে রাজি হননি। অনশন তোলার আবেদন জানানো হয়েছে নাগরিক সমাজের তরফেও। পাশাপাশি নাগরিক সমাজ চিঠি দিয়েছে সরকারপক্ষকেও। তাতে বলা হয়েছে, জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে আবার আলোচনায় বসার জন্য। বৃহস্পতিবার দিনভর অনশন মঞ্চে এসেছেন বিশিষ্ট মানুষেরা। এসেছেন অসংখ্য সাধারণ মানুষ।
প্রতিবাদীদের সাত দিনের পুলিশ হেফাজত
নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। বুধবার প্যান্ডেলে স্লোগান দেওয়ার অপরাধে যে নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, শুক্রবার তাদের আলিপুর আদালতে তোলা হয়। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় স্থানে অশান্তি তৈরির মামলা দায়ের করেছে। এই ধারা জামিন অযোগ্য। আদালত ওই ব্যক্তিদের সাতদিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে।
উৎসব শুরু, চলছে জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন ও বিক্ষোভ
ষষ্ঠীতেও অনশন জারি রেখেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। মঙ্গলবার গণ ইস্তফা দেয়ার পর আন্দোলন মঞ্চে মিছিল করে যান সিনিয়র ডাক্তররা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মিছিল-বিতর্ক
পঞ্চমী এবং ষষ্ঠীতে আগেই মহা মিছিলের ডাক দিয়েছিলেন চিকিৎসকদের সংগঠন। মঙ্গলবার কলেজ স্কোয়্যার থেকে ধর্মতলার অনশন মঞ্চ পর্যন্ত মিছিল হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পুজোর কারণে পুলিশ অনুমতি দেয়নি। ফলে মেডিক্যাল কলেজের গেট থেকে মিছিল হয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
রাস্তার ধার ধরে মিছিল
চিত্তরঞ্জন অ্যাভেনিউয়ের মিছিল রাস্তার ধার ধরে হয়, যাতে গাড়ি চলাচলে সমস্যা না হয়। ডাক্তারদের পাশাপাশি মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন বহু সাধারণ মানুষ। ডিডাব্লিউকে তারা জানিয়েছেন, উৎসবে নয়, তারা দ্রোহে আছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
জনতার চিঠি
ধর্মতলায় অনশন মঞ্চের সামনে এমনই একটি বোর্ড লাগানো হয়েছে। যেখানে সাধারণ মানুষ এসে অনশনরত ডাক্তারদের জন্য বার্তা লিখে যাচ্ছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মায়ের কান্না
প্রতিদিন অনশন মঞ্চে আসছেন প্রচুর সাধারণ মানুষ। আসছেন অনশনরত চিকিৎসকদের পরিবারের মানুষেরাও। মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে তেমনই এক মায়ের কান্না।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
অনশন মঞ্চে সেলিব্রিটিরা
সাধারণঁ মানুষের পাশাপাশি সেলিব্রিটিরাও প্রায় প্রতিদিন যাচ্ছেন অনশন মঞ্চে। মঙ্গলবার রাতে মঞ্চে এসেছেন চৈতি ঘোষাল। আন্দোলনের প্রথম দিন থেকেই তিনি ডাক্তারদের সঙ্গে লড়াইয়ে যোগ দিয়েছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ষষ্ঠীতেও মিছিল
পঞ্চমীর মতো ষষ্ঠীর দিনও নাগরিক মিছিলের ডাক দিয়েছেন ডাক্তাররা। তাদের অভিযোগ, অনশন মঞ্চে জল পর্যন্ত আনতে দিচ্ছে না পুলিশ। এনিয়ে মঙ্গলবারও পুলিশের সঙ্গে এক দফা বচসা হয় তাদের।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পুজো প্যান্ডেলে 'জাস্টিস'
পুজোর প্যান্ডেলেও 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস' ব্যাচ বিলি করা হচ্ছে। একটি নয়, কলকাতা এবং শহরতলির একাধিক প্যান্ডেলে এভাবেই প্রতীকী প্রতিবাদ করা হচ্ছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
দেশজুড়ে প্রতীকী অনশন
বুধবার দেশজুড়ে প্রতীকী অনশনে বসছেন চিকিৎসকেরা। ফেডারেশন অফ অল ইন্ডিয়া মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন এই ডাক দিয়েছে। দিল্লি-সহ ভারতের বিভিন্ন শহরে এই প্রতীকী অনশন করবেন চিকিৎসকেরা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
দিন-রাত স্লোগান
অনশন মঞ্চের সামনে বহু মানুষ ভিড় করছেন। দিন-রাত তারা স্লোগান দিচ্ছেন বিচারের দাবিতে। এদিকে মঙ্গলবার জুনিয়র ডাক্তারেরা জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার ৯০ শতাংশ কাজের যে আশ্বাস দিয়েছেন, তা যুক্তিসংগত বলে তাদের মনে হচ্ছে না।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
9 ছবি1 | 9
প্রশ্ন উঠছে, প্যান্ডেলের সামনে শান্তিপূর্ণভাবে স্লোগান দেওয়া কী অপরাধ? পুলিশ তাদের আটক করতে পারতো, কিন্তু কেন তাদের বিরুদ্ধে এত ভয়ংকর ধারায় মামলা করা হলো? এদিন আদালত চত্বরে ভিড় জমিয়েছিলেন বহু মানুষ। সেখানে দাঁড়িয়েও তারা স্লোগান দেন। আদালত চত্বরে এসেছিলেন গ্রেপ্তার হওয়া এক ছাত্রের বাবা। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ''আমি ছেলের জন্য গর্বিত। এতটুকু ভয় বা চিন্তা হচ্ছে না।''
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার পুলিশ একটি নোটিস পাঠায় আন্দোলনকারীদের। সেখানে বলা হয়েছে, ধর্মতলায় যে মঞ্চ তৈরি করা হয়ছে তা বেআইনি। যারা অনশন করছে, তাদের শারীরিক অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। তা-ই দ্রুত এই আন্দোলন প্রত্যাহার করা হোক। বস্তুত, বৃহস্পতিবারও অভয়া পরিক্রমায় বাধা দেয় পুলিশ। লাগিয়ে দেওয়া হয় ব্যারিকেড। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জনতার চাপে সেই ব্যারিকেড সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় তারা।
ডাক্তারদের চিঠি
বৃহস্পতিবার সিনিয়র চিকিৎসকদের একাধিক সংগঠন রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়েছে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসকদের সংগঠন, আইএমএ এবং ফেমা আছে। ফেমার চিঠিতে বলা হয়েছে, আন্দোলনকারীদের কারও যদি কিছু হয়ে যায়, তাহলে তার জন্য দায়ী থাকবে সরকার। সে ক্ষেত্রে গোটা রাজ্যে সমস্ত চিকিৎসকেরা সব কাজ বন্ধ করে দেবেন। দ্রুত এই অচলাবস্থা কাটানোর জন্য সরকারকে সদর্থক ভূমিকা নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে। ডাক্তারদেরঅন্য সংগঠনগুলিও সরকারকে আবার আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছে। একই আহ্বান জানানো হয়েছে নাগরিক সমাজের তরফ থেকেও।
এদিকে শুক্রবারও একাধিক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আন্দোলনকারীরা। সরকারও অনশন মঞ্চের কাছে পুলিশ মোতায়েন করেছে। রাখা হয়েছে অ্যাম্বুল্যান্স। যদিও আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, তারা সরকারের দেওয়া অ্যাম্বুল্যান্স ব্যবহার করবেন না।