বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারিসহ সকল ধরনের অনানুষ্ঠানিক খাতের ষাটোর্ধ্ব সকল নাগরিককে পেনশন সুবিধার আওতায় আনার পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানায়, বৃহস্পতিবার এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশ দিয়েছেন৷ এই নির্দেশের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এম ইমরুল কায়েস৷
দেশে শুধু সরকারি কর্মচারীরা পেনশন পেলেও আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে বেসরকারি চাকরিজীবীসহ সবাইকে পেনশনের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি ছিল৷ ইমরুল কায়েস বলেন, ‘‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে গণভবনে অর্থ বিভাগ কর্তৃক ‘সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তন' বিষয়ক একটি উপস্থাপনা অবলোকন করে সরকারি-বেসরকারিসহ সকল ধরনের অনানুষ্ঠানিক খাতের ষাটোর্ধ্ব জনগণের জন্য একটি সার্বজনীন পেনশন স্কিম প্রণয়ন এবং কর্তৃপক্ষ স্থাপনের নির্দেশনা দিয়েছেন৷’’
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, অর্থ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন এবং পরিকল্পনা বিভাগের সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই সভায় উপস্থিত ছিলেন৷ এর আগে এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী মান্নান বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক ও হতদরিদ্র মানুষকে সার্বজনীন পেনশনের আওতায় আনার পরিকল্পনা সাজানোর কথা জানিয়েছিলেন৷
২০১৬ সালের বাজেট বক্তৃতায় সরকারির পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও পেনশনের আওতায় আনার চিন্তার কথা বলেছিলেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত৷তিনি বলেছিলেন, দেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মাত্র ৫ শতাংশ সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত, তারাই পেনশন সুবিধা পান৷ বাকি ৯৫ শতাংশের মধ্যে প্রায় ৮ শতাংশ গ্রাচ্যুইটি সুবিধা পেলেও অন্যদের জন্য সে সুবিধাও নেই৷
মানুষের গড় আয়ু বাড়ার কারণে প্রবীণদের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, বিপরীতে নগরায়নের ফলে প্রবীণদের আর্থিক ও সামাজিকভাবে নিরাপত্তাহীন হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ছে৷ তাই প্রবীণদের শেষ জীবনে আর্থিক সুরক্ষায় সার্বজনীন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তন এখন ‘সময়ের দাবি'৷ আবুল মাল আবদুল মুহিত এভাবেই বয়োজ্যেষ্ঠ সকলকে পেনশন দেওয়ার ভাবনার কারণ জানিয়েছিলেন৷
এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
প্রবীণদের জন্য সেরা ১০টি দেশ
‘গ্লোবাল এজ ওয়াচ ইনডেক্স’ ২০১৫ সালে ৯৬টি দেশে জরিপ চালিয়ে প্রবীণদের স্বাস্থ্য সেবা, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, যোগাযোগ ব্যবস্থা, সামাজিক যোগাযোগ এসবের ভিত্তিতে ১০টি দেশকে সেরা হিসেবে বেছে নিয়েছে৷
ছবি: Colourbox/Kzenon
সুইজারল্যান্ড
ষাটোধর্ব ব্যক্তিদের জন্য সেরা দেশ সুইজারল্যান্ড৷ এই দেশে প্রবীণদের জন্য সেরা স্বাস্থ্যসেবা রয়েছে, এছাড়া তাদের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থাও বেশ ভালো৷ তবে ৬৫ বছরের বেশি বয়সিদের শতভাগ পেনশন সুবিধার পরও সেদেশে ১৬ দশমিক ১ ভাগ বয়স্ক মানুষ দরিদ্র৷
ছবি: picture-alliance/Keystone/U. Flueeler
নরওয়ে
প্রবীণদের ক্ষেত্রে সব বিষয়েই নরওয়ে ব়্যাংকিংয়ে শীর্ষে৷ দেশটিতে ৭১ দশমিক ১ ভাগ প্রবীণের কর্মসংস্থান রয়েছে৷ প্রবীণদের মধ্যে দরিদ্র ১ দশমিক ৮ ভাগ এবং সেদেশেও ৬৫ বছরের বেশি বয়সিদের শতভাগ পেনশন সুবিধা রয়েছে৷
ছবি: DW/M. Z. Haque
সুইডেন
সুইডেনে ষাটোর্ধ্বদের কর্মসংস্থান এবং শিক্ষাক্ষেত্রে যুক্ত থাকার হার অনেক বেশি৷ সেখানে প্রবীণরা নিজেদের নিরাপত্তা, নাগরিক স্বাধীনতা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট৷
ছবি: picture-alliance/chromorange/Media for Medical
জার্মানি
ব়্যাংকিংয়ে জার্মানির অবস্থান চতুর্থ৷ শিক্ষা ক্ষেত্রে সম্পৃক্ত থাকার ক্ষেত্রে এখানকার প্রবীণদের হার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ৷ এই দেশটিও প্রবীণদের নাগরিক স্বাধীনতা, জীবন নিয়ে প্রত্যাশা এবং স্বাস্থ্যসেবার দিক দিয়ে প্রত্যাশা প্রায় শতাভাগ পূরণ করে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্যানাডা
দেশটিতে প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবা বেশ ভালো৷ ক্যানাডা প্রবীণদের স্বাস্থ্যকর জীবনের প্রত্যাশা মিটিয়ে থাকে৷ এছাড়া এই দেশের বয়স্কদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা রয়েছে৷ ৯৭ দশমিক ৭ ভাগ পেনশনের সুবিধা রয়েছে৷ বৃদ্ধ অবস্থায় দরিদ্রের সংখ্যা শতকরা ৬ দশমিক ৮ ভাগ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/A.Lynett
নেদারল্যান্ডস
ব়্যাংকিংয়ে নেদারল্যান্ডসের অবস্থান ষষ্ঠ৷ বয়স্কদের মধ্যে দারিদ্রের হার ৩ ভাগ৷ ৬৫ বছরের বেশি বয়সে পেনশনের নিশ্চয়তা শতভাগ৷ এছাড়া নাগরিক স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তা নিয়ে প্রবীণদের সন্তুষ্টি রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kalaene
আইসল্যান্ড
আইসল্যান্ডে প্রবীণদের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ১ দশমিক ৬ ভাগ৷ ৬০ বছরের বেশি বয়সি মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে সন্তুষ্টি রয়েছে৷ সামাজিক যোগাযোগ, নিরাপত্তা, গণপরিবহন এবং নাগরিক স্বাধীনতা নিয়ে এখানকার প্রবীণদের সন্তুষ্টি রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Vennenbernd
জাপান
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি প্রবীণের বাস জাপানে৷ দেশটির এক তৃতীয়াংশ মানুষ প্রবীণ, অর্থাৎ তাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি৷ স্বাস্থ্যসেবায় দেশটি তালিকায় শীর্ষে রয়েছে৷ এখানকার ৬০ বছরের প্রবীণরা আশা করেন তাঁরা আরও ২৬ বছর বাঁচবেন এবং এর মধ্যে ২০ বছরই তাঁরা সুস্থ-সবল থাকবেন৷ এছাড়া নিজেদের নিরাপত্তা, নাগরিক স্বাধীনতা নিয়ে সন্তুষ্টি রয়েছে প্রবীণদের মধ্যে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Kyodo News
যুক্তরাষ্ট্র
ব়্যাংকিংয়ে যুক্তরাষ্ট্র আছে ৯ নম্বর অবস্থানে৷ শিক্ষাক্ষেত্রে সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে এটির অবস্থান শীর্ষে৷ এছাড়া এখানকার প্রবীণদের নিরাপত্তা, সামাজিক যোগাযোগ, স্বাস্থ্য সেবা এবং জীবনমান নিয়ে সন্তুষ্টি রয়েছে৷ তবে বয়স্ক মানুষদের মধ্যে দরিদ্র শতকরা ১৮ ভাগ৷
ছবি: ddp/David Hecker
যুক্তরাজ্য
সামাজিক যোগাযোগ, নাগরিক স্বাধীনতা, নিরাপত্তা এবং গণপরিবহন নিয়ে এখানকার প্রবীণদের মধ্যে সন্তুষ্টি রয়েছে৷ এছাড়া এখানকার ৬৫ বছরের বেশি বয়সিরা শতভাগ পেনশন সুবিধা পান৷ তবে বয়স্কদের মধ্যে ৯ দশমিক ৩ ভাগ দরিদ্র৷