১৫৩০ সালের একটি জার্মান কেতাব, যার বিষয়বস্তু হলো গোলন্দাজি ও দুর্গ অবরোধ৷ সেখানেই দেখা যাচ্ছে একটা বেড়ালের ছবি, যার পিঠে ছুঁচোবাজির মতো বারুদের পোঁটলা বাঁধা! যেন বিংশ শতাব্দীর কোনো কমিক৷
বিজ্ঞাপন
শুধু বেড়ালের পিঠে কেন, পায়রার পিঠে বাঁধা রকেট, এমন ছবিও আছে সমরশিক্ষার বইটিতে৷ মূল লেখা জার্মানে, তবে সাথে যে ছবিগুলো দেওয়া আছে, সেগুলি সত্যিই চমকপ্রদ৷ বেড়ালের পিঠে বারুদের থলে বাঁধা, পায়রার পুচ্ছ থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে৷ পাশের ভাষ্যে সামরিক অধিনায়কদের প্রতি পরামর্শ, তা-ও আবার জার্মান ভাষায়: ‘‘(এগুলো ব্যবহার করে শত্রুর) কোনো দুর্গ অথবা শহরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া সম্ভব''৷
ষোড়শ শতাব্দীর এই জার্মান ম্যানুয়াল ও তার ‘কমিকোপযোগী' অলঙ্করণ আবিষ্কৃত হয়েছে এক অদ্ভুত পন্থায়৷ ছবিগুলি অস্ট্রেলিয়ার একটি ‘বুক ব্লগ', অর্থাৎ বই নিয়ে ব্লগ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মিচ ফ্রাসের নজরে আসে৷ ফ্রাস-ই আজব কেতাবটি ডিজিটাইজ করার ব্যবস্থা করেন৷ তবে বেড়ালের পিঠে রকেট বাঁধাটা যে বিংশ শতাব্দীর প্রযুক্তির সঙ্গে তুলনীয় নয়, সেটা ফ্রাস নিজেই বলেছেন৷
মানুষ ও প্রাণীর সম্পর্ক
কুকুরকে সবসময়ই বলা হয়ে থাকে মানুষের প্রকৃত বিশ্বাসী বন্ধু, সহস্রাব্দ ধরে মানুষ আর পশুর সম্পর্ক রয়েছে এবং একে অপরকে দরকারও৷
ছবি: Fotolia/Oksana Kuzmina
মানুষের শ্রেষ্ঠ বন্ধু কুকুর
কুকুর কখনো খেলার সাথী, কখনো পাহাড়াদার, আবার কখনো বা অন্ধের পথপ্রদর্শক৷ কুকুর মানুষের সবচেয়ে বিশ্বাসী বন্ধু৷ পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, কুকুর মানুষের আচরণ লক্ষ্য করে তার প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে৷ মানুষের শরীরের অঙ্গভঙ্গী এবং চোখ দেখে বুঝতে পারে মানুষ কি চায়৷ আর সেজন্যই গাইড কুকুররা অন্ধ মালিকদের গন্তব্য বুঝতে পেরে তাদের সেখানে পৌঁছে দেয়৷
ছবি: Fotolia/Oksana Kuzmina
জার্মানদের সবচেয়ে প্রিয় পোষা প্রাণী
জার্মানিতে ৮ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাড়িতে বেড়াল পোষেন৷ তাই বেড়ালই হচ্ছে জার্মানিতে পোষা প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়৷ তার কারণ তুলতুলে বেড়ালকে কোলে নিয়ে আদর করতে ভালো লাগে, বেড়ালের যত্ন নেওয়াও সহজ৷ এছাড়া এরা খুবই শান্ত ও চুপচাপ স্বভাবের প্রাণী৷ তাছাড়া মানুষের দৈনন্দিন চাপ ও সমস্যার সাথে মানিয়ে নিতে বেড়াল তার মালিককে সাহায্য করে৷
ছবি: Fotolia/stokkete
খরগোশ
খরগোশ যদিও কুকুরের মতো মানুষের সাথে তেমন সম্পর্ক চায় না তারপরও খরগোশের ঘন সুন্দর লোম এবং মিষ্টি চেহারার কারণেই অনেকে বাড়িতে খরগোশ পোষেন৷ লম্বা কানের কোনো কোনো খরগোশ তাদের মালিক বাড়িতে এলেই আনন্দিত হয়৷ গায়ের গন্ধ এবং কণ্ঠ শুনেই মালিককে চিনতে পারে তারা৷ খরগোশ বুদ্ধিমান প্রাণীদের দলে না পরলেও ওরা বুঝতে পারে বাড়িতে ওদের কি করার অনুমতি আছে, আর কি নেই৷
ছবি: Fotolia/Aliaksei Lasevich
পরিবহণ থেকে শুরু করে অবসর কাটানো
অনেক আগে ঘোড়াকে শুধু মাল টানাটানি বা পরিবহণের কাজে লাগানো হতো৷ তবে আজকের দিনে আর তা করা হয় না৷ তবে ঘোড়াপ্রেমীরা অবসর সময়ে অতি আনন্দের সাথে ঘোড়ায় চড়েন৷
ছবি: Fotolia/Kathrin39
গরু
হাজার বছর ধরেই মানুষ ও গরুর মধ্যে রয়েছে বাণিজ্যিক সম্পর্ক৷ গরুর মাংস ও দুধ খাওয়ার পাশাপাশি মানুষ গরুর চামড়াও বিভিন্ন কাজে লাগায়৷ গরু খোলা আকাশের নীচে ঘাসের ওপর ঘুমায়৷ গরুর স্থান এখনো কৃষকের বাড়িতেই রয়ে গেছে৷
শূকর
শূকরকে গালি দেওয়ার জন্য বিশেষ শব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হয়৷ তবে সবচেয়ে বড় কথা, জার্মানিতে শূকরের মাংস অনেক বেশি খাওয়া হয়৷ একজন জার্মান বছরে ৩৯ কেজি শূকরের মাংস খেয়ে থাকেন৷
ছবি: Fotolia/Lilifox
6 ছবি1 | 6
জার্মানির কোলোন শহরের বাসিন্দা এবং গোলন্দাজির ওস্তাদ ফ্রানৎস হেল্ম এই কেতাবের রচয়িতা৷ হেল্ম স্বয়ং দক্ষিণ ও মধ্য ইউরোপে তুর্কিদের বিরুদ্ধে নানা যুদ্ধে সামিল ছিলেন৷ সময়টা যোড়শ শতাব্দীর সূচনা, যখন বারুদের আবিষ্কার যুদ্ধের ধারাপ্রকৃতিই বদলে দিচ্ছে৷ হেল্মের গোলন্দাজির ম্যানুয়াল ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এবং বহু শিল্পী তার অলঙ্করণে হাত লাগান৷ অথচ হেল্মের ম্যানুয়াল যে ‘শান্তিপ্রিয়', এমন অপবাদ তাঁর অতি বড় শত্রুও দিতে পারবে না৷ লোহার টুকরো ভরা বোমা থেকে শুরু করে পেরেক ভরা বিস্ফোরক রকেট, সব কিছুই পাওয়া যাবে তাঁর কেতাবে৷
রকেট ক্যাট
হেল্ম তাঁর বইতে ব্যাখ্যা করেছেন, কিভাবে ছোট ছোট জন্তু-জানোয়ার ব্যবহার করে আগুনে বোমা পাঠানো যায়: ‘‘শহর অথবা দুর্গ থেকে একটা বেড়াল যোগাড় করার চেষ্টা করো৷ তার পিঠে বারুদের থলিটা বেঁধে তা-তে আগুন ধরিয়ে দাও৷... বেড়ালটা শহর কিংবা দুর্গে ঢুকে কোথাও একটা লুকনোর চেষ্টা করবে, যেমন খড়ের গাদায়... যা-তে আগুন ধরে যাবে৷''
ভাগ্যের কথা, হেল্মের আজগুবি আইডিয়া বাস্তবে কোনোদিন পরীক্ষা করে দেখা হয়েছিল কিনা, ফ্রাস তার কোনো হদিশ পাননি৷