আঙ্গেলা ম্যার্কেল আর রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ কী দিলেন, যা ডনাল্ড ট্রাম্প পারেননি? এই প্রশ্নের উত্তর, করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতাদের কাছ থেকে নাগরিকরা যা আশা করেন তার উপর আলো ফেলছে বলে মনে করেন ডিডাব্লিউর মেলিন্ডা ক্রেন৷
বিজ্ঞাপন
১. সোজাসাপ্টা কথা
খুব বেশিদিন হয়নি ওয়াশিংটনের এক বন্ধুর কাছ থেকে আমি এই বার্তাটি পেয়েছিলাম, ‘জার্মানির ৬০ শতাংশ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হবে, আঙ্গেলা ম্যার্কেলের এই বক্তব্য তাঁকে এখানে তাৎক্ষণিকভাবে নায়কে পরিণত করেছে৷’ সংকটের শুরুর দিনগুলোতে চ্যান্সেলর ম্যার্কেল প্রথমবারের মতো নাগরিকদের উদ্দেশে সরাসরি বক্তব্য় দেন৷ এর আগে তিনি শুধু নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বছরে একবার ভাষণ দিতেন৷ বক্তব্যে ম্যার্কেল করোনা সংকটকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন৷ তাঁর সরকার এই সংকট থেকে নাগরিকদের কীভাবে রক্ষা করবে তাও ব্যাখ্যা করেন তিনি৷
টেলিভিশনে প্রচারিত ঐ বক্তব্যের পরও বিভিন্ন পডকাস্ট আর সংবাদ সম্মেলনে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরেছেন ম্যার্কেল৷ এমনকি হাত ধোয়ার প্রয়োজনীয়তা ও টয়লেট পেপার ব্যবহারের মতো ক্ষুদ্র বিষয়েও কথা বলেছেন৷
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ তাঁর ভাষণের শুরুতেই নাগরিকদের দুঃখ, কষ্ট ও দেশের আর্থিক সংকটে পড়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন৷ চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের মতোই রানি তাঁর বক্তব্যে কোনো মিথ্যা আশ্বাস দেয়ার চেষ্টা করেননি৷
নাগরিকদের সামনে যখন প্রকৃত ও সত্য তথ্য থাকে তখন তাঁরা ঝুঁকি কমাতে ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন৷ বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়ার মাধ্যমে নেতারা ধারণাতীত বিপদের ঝুঁকি নিয়ে আসেন৷
'মৃত্যুপুরী' নিউইয়র্ক
ভয়াবহ রূপ নিয়েছে করোনা-সংকট। ৬৯ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়া এই ভাইরাসের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহর এখন মৃত্যুপুরীর মতো। দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/J. Moon
খোলা আকাশের নীচে হাসপাতাল
হাসপাতালে আর জায়গা নেই। তাই নিউইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্ক অঞ্চলের ইস্ট মিডোর একটি মাঠ হয়ে গেছে হাসপাতাল। ছবির এই তাঁবুগুলোর ভেতরে চলছে করোনায় সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসা।
ছবি: Reuters/J. Moon
শঙ্কিত স্বাস্থ্যকর্মী
চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকট দেখা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে। কোথাও কোথাও ষ স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিতদের মাঝেও শুরু হয়েছে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম পিপিই-র জন্য হাহাকার। নিউ ইয়র্কের মনটেফোর মেডিকেল সেন্টার মোজেস ডিভিশন হাসপাতালে পিপিই-র দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।
ছবি: Reuters/B. McDermid
লাশ আর লাশ
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে মৃত্যুর মিছিল চলছে নিউ ইয়র্কে। হাসপাতাল থেকে মৃতদেহ বের করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।
ছবি: Reuters/B. McDermid
অস্থায়ী মর্গ
ওয়াইকম্ব মেডিকেল সেন্টারের মর্গে আর মৃতদেহ রাখার জায়গা নেই। তাই হাসপাতালের বাইরেই গড়ে তোলা হয়েছে অস্থায়ী মর্গ।
ছবি: Reuters/handout
মৃতদেহের অপেক্ষায়
যুক্তরাষ্ট্রে তিন লাখেরও বেশি মানুষের দেহে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। মৃত্যু হয়েছে নয় হাজার ১৫৪ জনের। শুধু নিউইয়র্কেই মৃত্যুবরণ করেছেন তিনি হাজার ৫৬৫ জন। শহরের এক হাসপাতালের সামনে করোনায় মৃতদের নেওয়ার জন্য তৈরি রাখা হয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ট্রাক।
ছবি: Reuters/J. Moon
করোনার সঙ্গে যুদ্ধ
মনটেফোর মেডিকেল সেন্টারে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিতদের চিকিৎসায় ব্যস্ত এক স্বাস্থ্যকর্মী।
ছবি: Reuters/J. Moon
ক্লান্তি
ওয়াইকম্ব হাইটস মেডিকেল সেন্টারের ক্লান্ত এক স্বাস্থকর্মী। দাঁড়িয়েই চলছে বিশ্রাম।
ছবি: Reuters/J. Moon
7 ছবি1 | 7
২. সহানুভূতি ও উদাহরণ
অন্য়ের প্রতি সহানুভূতি দেখানোর ক্ষেত্রে ম্যার্কেল আর রানি সুপরিচিত না হলেও এই মহামারির সময়ে তাঁরা দুজনই এক্ষেত্রে পারদর্শিতা দেখিয়েছেন৷ বক্তব্যে তাঁরা দুজনই নিজেদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে নাগরিকদের আশ্বস্ত করতে চেয়েছেন৷
রানি তাঁর ভাষণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ব্রিটেনের উপর জার্মানির বোমা হামলার সময় দেয়া বক্তব্যের উল্লেখ করেন৷ আর ম্যার্কেল তাঁর বক্তব্যে বলেন, পূর্ব জার্মানিতে বেড়ে ওঠায় তিনি জানেন চলাফেরায় স্বাধীনতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ৷
সবার সুস্থতার জন্য নাগরিকরা যে অসুবিধার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন তার জন্য দুজনই কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন৷
রানি ও তাঁর স্বামী ১৯ মার্চ থেকে সেলফ আইসোলেশনে চলে গিয়েছিলেন৷ ম্যার্কেলও দুই সপ্তাহ হোম কোয়ারান্টিনে ছিলেন৷ এছাড়া যে সময় জার্মানরা ‘প্যানিক বায়িং’ করছিলেন তখন ম্যার্কেল নিজে একটি সুপারমার্কেটে গিয়ে কেনাকাটা করেছেন৷ সেই সময়কার প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, তিনি টয়লেট পেপারের মাত্র একটি প্যাকেট কিনেছেন৷ মাত্রাতিরিক্ত কেনাকাটা তিনি করেননি৷
অন্যদিকে, ট্রাম্পকে দেখা গেছে সংবাদ সম্মেলনে তিনি প্রায়সময়ই নিজের প্রশংসা করছেন, মাঝেমধ্যে আশেপাশে থাকা কর্পোরেট কর্তাদেরও প্রশংসা করেন তিনি৷ একই সময়ে তিনি তাঁর স্বাস্থ্য উপদেষ্টাদের অপমান করেন, সমালোচকদেরও বকাঝকা করেন৷
সংকটের সময় স্বচ্ছতা আর সহানুভূতি চায় মানুষ৷ এতে নেতাদের উপর আস্থা তৈরি হয়, যেটা ম্যার্কেল আর রানি পেরেছেন, ট্রাম্প পারেননি৷
মেলিন্ডা ক্রেন/জেডএইচ
যেখানে করোনা, সেখানেই রোবট আর ড্রোন
জানালায় এসে কথা বলছে ড্রোন। পুলিশের নির্দেশে উড়ে যাচ্ছে যেখানে দরকার। রেস্তোরাঁ, হাসপাতাল, সুপার মার্কেটসহ অনেক জায়গায় করোনা ভাইরাসকে রুখতে রোবটও কাজ করে চলেছে বিরামহীনভাবে। দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/China Daily
ড্রোন বলছে, সাবধান!
মালয়েশিয়ার পুলিশ করোনা ভাইরাসের আক্রমণ থেকে বাঁচার কথা বলতে পাঠিয়েছে তাকে। রাজধানী কুয়ালালামপুরের এই ঘরটির সামনে এসে সে কথাই বলছে ড্রোন। মন দিয়ে ড্রোনের কথা শুনছেন এক গৃহিণী।
ছবি: Reuters/Lim Huey Teng
শিক্ষার্থীর বেশে রোবট
করোনা ভইরাস থেকে বাঁচতে ঘরে থাকতে হচ্ছে সবাইকে। জাপানের রাজধানী টোকিওর এক অনুষ্ঠানে তাই সদ্য স্নাতক পাস করা শিক্ষার্থীরা আসতে পারেননি। তাদের জায়গায় গাউন পরে দাঁড়িয়েছে রোবট।
ছবি: Reuters/BBT UNIVERSITY
রোবট যখন ফটোগ্রাফার
ইটালির ভারেসে শহরের এক হাসপাতলে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত রোগীদের ছবি তুলে বেড়াচ্ছে রোবট। রোগীদের চিকিৎসায় খুব কাজে লাগছে সেই ছবি। কম্পিউটারের স্ক্রিনে রোবটের তোলা ছবি দেখছেন এক স্বাস্থকর্মী।
ছবি: Reuters/F. Lo Scalzo
সচেতন রোবট
করোনা ভাইরাস থেকে দূরে থাকতে একজন সচেতন মানুষের যা যা করা উচিত, সবাই মিলে ভাইরাসের বিরুদ্ধে যেভাবে লড়া উচিত, সুপার মার্কেটে সেই কথাগুলো বলছে মানুষের আদলে গড়া এক রোবট। জার্মানির লিন্ডিয়ার শহরের এক সুপার মার্কেট থেকে তোলা ছবি।
ছবি: Reuters/W. Rattay
সংবাদ সম্মেলনে রোবট
বেজিংয়ের সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এয়ারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে সাংবাদিকদের দেখানো হচ্ছে হাসপাতলে রোবট কিভাবে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় সহায়তা করে। 'নকল মানুষ' সামনে রেখে রোবটই তা দেখাচ্ছে।
ছবি: Reuters/C. Garcia Rawlins
শহর জীবাণুমুক্ত করছে ড্রোন
চিলির তালকাহুয়ানা শহরে জীবাণুনাশক ছিটাতে আর মানুষের দরকার হয় না। লকডাউন মেনে মানুষ থাকছে ঘরে আর শহরময় উড়ে উড়ে জীবাণুনাশক ছিটাচ্ছে ড্রোন।
ছবি: Reuters/J. Luis Saavedra
খাবার পরিবেশনে
চীনের সাংহাই শহরের এক রেস্তোরাঁয় চাহিদামতো খাবার পরিবেশন করছে রোবট।
ছবি: Reuters/Aly Song
সিঁড়ি বেয়ে ওঠে স্প্রেয়ার!
চীনের লুসিয়াং হেনান প্রদেশের এক ভবনে জীবাণুনাশক ছিটাতে সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে এগিয়ে চলেছে স্প্রেয়ার।
ছবি: Reuters/China Daily
রংমিস্ত্রি রোবট
করোনা ভাইরাসের কারণে ফ্রান্সও এখন বিপর্যস্ত। সব মানুষকে বলা হয়েছে ঘরে থাকতে। অনেক কাজেই নামতে হয়েছে রোবটকে। করোনায় মৃতদের জন্য বানাতে হচ্ছে নতুন নতুন কফিন। কফিনে রং করছে এক রোবট।
ছবি: Reuters/G. Fuentes
মাস্ক লাগবে?
ভারতের কোচি শহরে ট্রে হাতে দাঁড়িয়ে আছে রোবট। ট্রে-তে আছে মাছ আর স্যানিটাইজার। যার দরকার নিয়ে নিন!
ছবি: Reuters/Sivaram V
বিকল্প স্বাস্থ্যকর্মী
ইতালির ভারেসে শহরের এক হাসপাতলে করোনায় সংক্রমিতদের চিকিৎসায় সহায়তা করছে রোবট।
ছবি: Reuters/F. Lo Scalzo
পরম বন্ধু
করোনা-সংকটে সবচেয়ে বিপদে আছেন প্রবীণরা। রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি, একাকিত্বের যন্ত্রণাও তাদের জন্য বেশি অসহনীয়। বেলজিয়ামে এমন মানুষদের জন্য ঘরে ঘরে বিনামূল্যে রোবট পাঠাচ্ছে একটি কোম্পানি। রোবটগুলোর কাজই হলো ভিডিও কলের মাধ্যমে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলানো।
ছবি: Reuters/Y. Herman
পুলিশ এবং ড্রোন
ইন্দোনেশিয়ার রিয়াউ প্রদেশের পেকানবাউ শহরে
জীবাণুনাশক ছিটানোর কাজও করতে হচ্ছে পুলিশকে। অবশ্য পুলিশ কাজটা নিজে করছে না। রিমোট হাতে নিয়ে শুধু নির্দেশ দিচ্ছে আর সেই নির্দেশ মেনে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে যাচ্ছে ড্রোন।
ছবি: Reuters/R. Muharrman
'বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক'
বেজিংয়ের করোনায় সংক্রমিত রোগীদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতো নানা উপদেশ দেবে এই রোবট। কিভাবে, কোন ইশারায় কী বোঝাতে হবে তা দেখিয়ে দিচ্ছেন ফাইভ জি প্রযুক্তির রোবটটি তৈরি করা কোম্পানির কর্মীরা।