আমাদের এই পৃথিবীতে মানুষের তৈরি সংকটের যেন শেষ নেই৷ ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার প্রধান মনে করেন, যৌথ মহাকাশ প্রকল্পই রেষারেষি ভুলে মানবজাতির মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করতে পারে৷ এর ফলে আখেরে সবারই লাভ হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
বিজ্ঞাপন
গত শতাব্দীর সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে রুশ ও অ্যামেরিকানরা মহাকাশে করমর্দন করেছিল৷ সেই সহযোগিতা আজ আরও দৃঢ় হয়েছে৷ মহাকাশ অভিযানের ক্ষেত্রে এই যোগাযোগ ভবিষ্যতেও সক্রিয় রাখতে চান ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার মহাপরিচালক ইয়োহান ডিট্রিশ ভ্যোর্নার৷ তিনি বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক সহযোগিতার জন্য মহাকাশ যাত্রাকে আরও বেশি করে কাজে লাগানো উচিত বলে আমি মনে করি৷ শুধু রাশিয়া নয়, বিশ্বের সব দেশের ক্ষেত্রে এটি প্রজোয্য৷ আমি বলি, কোনো এক পক্ষের বয়কটের উদ্যোগের মাধ্যমে মহাকাশ যাত্রা নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন না৷ সংকটের সময়েও বিজ্ঞান জগতের মতো এই ক্ষেত্রটিও যেন যোগাযোগের সূত্র থাকে৷
রোসেটা থেকে তোলা ‘চুরি’-র ছবিছবি: picture-alliance/AP Photo/ESA/Rosetta/Navcam
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ভ্যোর্নার বলেন, ‘‘ছেলেবেলা থেকেই মহাকাশ বার বার আমার পিছু নিয়েছে, আমিও মহাকাশের পিছু নিয়েছি৷ প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই কৌতূহল রয়েছে৷ আমার ক্ষেত্রে সেটি প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের মধ্যে বিকশিত হয়েছে৷ আমার বয়স যখন তিন, বাবা সে সময়ে স্পুটনিক সম্পর্কে বলেছিলেন৷ সেটা আমার মনকে বেশ স্পর্শ করেছিল৷ তখন তিনি আমাকে স্পুটনিক দেখিয়েছিলেন, যদিও সেটা দেখা সম্ভব ছিল না৷ কিন্তু তিনি এমনভাবে দেখিয়েছিলেন যে, আমি বিশ্বাস করে নিয়েছিলাম৷ মহাকাশের ক্ষেত্রে আমরা সম্পূর্ণ এক নতুন ও পরিবর্তিত পর্যায়ে এসে পড়েছি৷ আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে৷ এই মুহূর্তে ইউরোপের ২২টি দেশ ও ক্যানাডা এসা-র সদস্য৷ তাই আন্তর্জাতিক সহযোগিতার গুরুত্ব আমরা বিলক্ষণ জানি৷ এ কারণে এসা পূর্ব ও পশ্চিমের বিভিন্ন শিবিরের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটানোর আদর্শ সহযোগী৷''
জার্মান এয়ারোস্পেস এজেন্সির প্রধান হিসেবে ইয়োহান ডিট্রিশ ভ্যোর্নার প্রায় ৮ বছর ধরে নেটওয়ার্কিং ও বিভিন্ন স্বার্থের মধ্যে ভারসাম্য আনার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন৷ ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার শীর্ষে কাজের সময় তা অবশ্যই কাজে লাগবে৷
পৃথিবীর বুকে মঙ্গল অভিযান!
মানুষ মঙ্গলগ্রহ অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ কিন্তু তার মহড়া তো চাই! মঙ্গলগ্রহের সঙ্গে মিল থাকার কারণে বিজ্ঞানীরা অস্ট্রিয়ার এক হিমবাহে সেই কাজ চালাচ্ছেন৷
ছবি: Imago//K.-P. Wolf
আমাডি-১৫
অস্ট্রিয়ার মহাকাশ ফোরাম এই নামে কাউয়ার্ন উপত্যকার হিমবাহে দুই সপ্তাহের প্রকল্প শুরু করেছে৷ বার্লিনের কারমেন ক্যোলার ও স্পেনের ইনিয়োগো মুনিয়োস ‘মহাকাশচারী’ হিসেবে তাতে অংশ নিচ্ছেন৷ বিশ্বের অন্য কোথাও নাকি এমন ‘মঙ্গল’-জনক পরিবেশ পাওয়া যায় না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Röder
ভারী পোশাক
স্পেস সুটের নিজস্ব ওজনই ৪৮ কিলো! অগ্নিনিরোধক সিন্থেটিক ফাইবার ‘কেভলার’ দিয়ে তৈরি এই বিশেষ পোশাকে অ্যালুমিনিয়ামের স্তরও রয়েছে৷ কারমেন জানালেন, এই পোশাক পরে ওঠাবসা করা খুবই কঠিন৷ শুধু এই পোশাক পরার অধিকার পেতে তাঁকে ৫ মাসের প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে৷ কারমেন পেশায় গণিতবিদ ও আবহাওয়াবিদ৷
ছবি: Imago/Eibner Europa
মঙ্গলের মতোই বরফ ও নুড়িপাথরে ঢাকা
গ্রীষ্মে এই হিমবাহের উপরিভাগ জমাট বরফ ও নুড়িপাথরের স্তরে ঢাকা থাকে৷ ফলে মঙ্গলগ্রহের মতোই সেখানে চলাফেরা করা কঠিন৷ তবে এমন ‘আদর্শ পরিবেশ’ পেয়ে গবেষকরা আহ্লাদিত৷ তার উপর এবার দুটি ‘মার্স-রোভার’-ও পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হবে৷ বড় পাথরের টুকরোও এই যানকে থামাতে পারে না৷
ছবি: Imago/Eibner Europa
পিস্টেনবুলি-র বদলে রোভার
রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে যে গাড়িটি চালানো হচ্ছে, সেটি অবিকল ‘অপারচুনিটি’ রোভার-এর মতো দেখতে৷ ২০১২ সালে ‘কিউরিয়সিটি’ মহাকাশযান মঙ্গলগ্রহে নামার পর প্রায় ১১ বছর ধরে এই রোভার সেখানে কাজ করে চলেছে৷ তবে পৃথিবীর বুকে এমন পরীক্ষা চালানো অনেক সহজ৷ মঙ্গলগ্রহে সিগনালের আদানপ্রদান করতে ২০ মিনিট লেগে যায়৷
ছবি: Imago/Eibner Europa
দাঁতের ব্যথা হলেই মুশকিল!
মঙ্গলগ্রহে মানুষের অভিযান চলবে প্রায় ৩ বছর ধরে৷ এই সময়ে কত কিছুই না ঘটে পারে৷ ফলে বিজ্ঞানীরা অনেক দৈনন্দিন সমস্যা নিয়েও মাথা ঘামাচ্ছেন৷ যেমন মহাকাশে হঠাৎ দাঁতে ব্যথা হলে কী হবে? কোনো চিন্তা নেই৷ মহাকাশযানের থ্রিডি প্রিন্টার নকল দাঁত বানিয়ে দেবে৷ তবে হ্যাঁ, শরীর ভালো রাখতে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে৷
ছবি: Imago/Eibner Europa
বাষ্প দিয়ে স্নান
প্রায় ১৯টি দেশের ১০০ গবেষক এমন অভিযানের নানা দিক নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন৷ ১২টি বিভিন্ন পরীক্ষা কর্মসূচির পরিকল্পনা রয়েছে৷ যেমন বাষ্প দিয়ে স্নান করার এক শাওয়ারের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা৷ এতকাল মহাকাশে ভিজে টিস্যু দিয়েই শরীর পরিষ্কার করতে হতো৷
ছবি: Imago/Eibner Europa
মহাকাশযানের বদলে কেবেল কার
যন্ত্রপাতি, সাজসরঞ্জাম ও মানুষ স্কি-লিফট-এ করে কয়েক মিনিটের মধ্যেই হিমবাহের উপর পাঠানো হচ্ছে৷ আসল মঙ্গল অভিযানে গন্তব্যে পৌঁছাতে লাগবে প্রায় এক বছর৷ তখন মাঝপথে হেলমেট খুলে জিরিয়ে নেবার উপায় থাকবে না বলেই মনে হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Röder
মঙ্গলগ্রহে তুষারপাত হয় না
গ্রীষ্মের মাসগুলিতেই গবেষকদের এই প্রকল্পের কাজ সারতে হবে৷ তার ঠিক পরেই হিমবাহে বরফ পড়তে শুরু করবে৷ মার্স রোভারও তখন এমন গুঁড়ো বরফের উপর অচল হয়ে পড়বে৷ এই অভিযান সম্পর্কে আরও জানতে উপরে ডানদিকের লিংক ক্লিক করুন৷
ছবি: Imago//K.-P. Wolf
8 ছবি1 | 8
তিনি মহাকাশ অভিযানের ইতিহাসের অনেক সন্ধিক্ষণের সাক্ষীও ছিলেন৷ যেমন দীর্ঘ শীতঘুমের পর রোসেটা-র জেগে ওঠা অথবা ‘চুরি' ধূমকেতুর উপর ‘ফিলে' রোবটের অবতরণের ঘটনা৷ ভ্যোর্নার বলেন, ‘‘চাঁদে প্রথম মানুষ নামা অথবা ইউরি গ্যাগারিনের মহাকাশযাত্রার মতো এই সব মুহূর্ত সত্যি অনবদ্য৷ কিছুকাল পর পর এমন সব বড় ঘটনা ঘটে৷ রোসেটাও একেবারে সেই পর্যায়ের একটা সাফল্য৷ ইতিমধ্যে জার্মানি তথা ইউরোপে আমরা এমন এক সম্মানজনক অবস্থায় পৌঁছেছি, যে গোটা বিশ্বে তার স্বীকৃতি পাওয়া যাচ্ছে৷ সেই স্বীকৃতি কাজে লাগিয়ে আমাদের এখন সত্যি আন্তর্জাতিক স্তরের মহাকাশ প্রকল্প এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে৷ প্রথম আইডিয়া হিসেবে আমি চাঁদের পিছন দিকে এক স্থায়ী স্টেশন গড়ে তোলার উদ্যোগ শুরু করেছি৷''
সেখানে গবেষক ও ইঞ্জিনিয়াররা মহাকাশ অভিযানে আরও অগ্রগতির প্রস্তুতি নিতে পারবেন৷ চাঁদে প্রস্তাবিত স্টেশনটি প্রকৃত অর্থে সেই সব দেশের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে, যাদের মহাকাশ কর্মসূচি রয়েছে৷ ইয়োহান ডিট্রিশ ভ্যোর্নার বলেন, ‘‘আমার ধারণা, ভবিষ্যতে এমন প্রকল্প আমাদের বৈশ্বিক সমস্যা দূরে রেখে মহাকাশ যাত্রার মাধ্যমে সেতুবন্ধ রচনা করতে সাহায্য করবে৷''