ইউক্রেন সংকট নিরসনের জন্য জেনেভায় দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা শুরুর দাবি জানিয়েছে জার্মানি৷ এদিকে ওডেসায় রুশ এবং ইউক্রনপন্থিদের সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ৪২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে৷
বিজ্ঞাপন
রোববার রুশপন্থিরা ওডেসার পুলিশ স্টেশনে হামলা চালায়৷ দু’হাজারের মতো বিক্ষোভকারীর চালানো এ হামলার সময় থানার জানলার কাচ ভেঙে ফেলা হয়৷ গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়েন অনেকে৷ হামলাকারীরা আটকে রাখা রুশপন্থিদের মুক্তির দাবি জানাতে থাকলে এক পর্যায়ে পুলিশ বেশ কয়েকজনকে মুক্তি দেয়৷ ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতির মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৬৭ জনকে মুক্তি দেয়ার কথা জানিয়েছে৷
ক্রাইমিয়ায় সব শান্ত?
সবার মনোযোগ এখন ইউক্রেনের ক্রাইমিয়ার দিকে৷ ক্রাইমিয়ায় যা ঘটেছে তাকে রাশিয়ার আগ্রাসন বলা হলেও রুশ সেনাদের কিন্তু সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছে স্থানীয়রা৷ ছবিঘরে দেখুন ক্রাইমিয়ার পরিস্থিতি৷
ছবি: DW/F. Warwick
কোসাকদের আগমন
রাশিয়ার ক্রাসনোডার থেকে এসেছে ২৫০ জনের মতো কুবান কোসাক৷ সামরিক বাহিনীর পোশাক পরেননি তাঁরা৷ সেভাস্টোপোলের রুশপন্থি কর্তৃপক্ষ কোসাকদের শপথ পাঠ করিয়েছে৷ স্বেচ্ছাসেবী কোসাকরা জানিয়েছে, ক্রাইমিয়াবাসীদের রক্ষা করার জন্য তারা স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে কাজ করবে৷
কুবান কোসাকরা সেভাস্টোপোলের পুলিশের সঙ্গে টহলে অংশ নিচ্ছে৷ মাথায় উলের টুপি পরে রবি বার থেকে রাস্তায় টহল দিচ্ছে কোসাকরা৷ ২০০৫ সালে এথনিক সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী এবং শক্তিশালী সামরিক শক্তি হিসেবে কোসাকদের স্বীকৃতি দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷
ছবি: DW/F. Warwick
কঠিন সময়ে নিরাপত্তা
রাশিয়া এবং ক্রাইমিয়ার টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন কোসাকদের নেতা কর্নেল সের্গেই সাভোনিন ইউরিয়েভিচ৷ তিনি বলেন, কোসাকরা সেভাস্টোপোলের মানুষদের রক্ষা করার জন্য এসেছে৷
ছবি: DW/F. Warwick
‘স্বায়ত্তশাসন, বিচ্ছিন্নতাবাদ নয়’
ক্রাইমিয়ায় অনেকের হাতেই দেখা যায় ক্রাইমিয়া এবং রাশিয়ার পতাকা৷ এর অর্থ এই নয় যে, ক্রাইমিয়া ইউক্রেন থেকে আলাদা হয়ে গেছে৷ সেভাস্টোপোলের এই তরুণ-তরুণীরা জানালেন, তাঁরা ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ চাননা, কেননা ইউক্রেনকে তাঁরা ভ্রাতৃপ্রতীম রাষ্ট্র মনে করেন৷ তাঁদের দাবি একটাই – স্বায়ত্তশাসন এবং এথনিক রুশ হিসেবে প্রাপ্য মর্যাদা৷
ছবি: DW/F. Warwick
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?
এই প্রবীণ এসেছেন কোসাকদের সমর্থন জানাতে৷ রাশিয়ার প্রতি তাঁর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে৷ পরনে রুশ সেনাবাহিনীর মতো কমলা আর কালো রংয়ের পোশাক৷ তিনি নিজেও সোভিয়েত ইউনিয়নের রেড আর্মির সাবেক কর্মকর্তা৷
ছবি: DW/F. Warwick
রাস্তায় তল্লাশি
সিমফারোপোল এবং সেভাস্টোপোলের মাঝের হাইওয়েতে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে রুশপন্থি বেসামরিক বাহিনীর সদস্যরা৷
ছবি: DW/F. Warwick
ব্যবসার জন্য খারাপ সময়?
লিলিয়া ভজনুক একজন স্যুভেনির বিক্রেতা৷ রাবারের তৈরি মুখোশগুলোর মধ্যে পুটিনের চেহারার মুখোশটার এখন দারুণ কাটতি৷ তবু খুব চিন্তায় আছেন লিলিয়া৷ চলমান সংকট ব্যবসার বড় রকমের ক্ষতি করবে বলে আশঙ্কা তাঁর৷
ছবি: DW/F. Warwick
হৃদয়-মন জয় করেছে তাঁরা
সেভাস্টোপোলে গেলেই ব্ল্যাক সি ফ্লিট অঁসম্বল-এর কনসার্ট দেখতে পাবেন৷ নাচ-গানের এই স্থানীয় সংগঠনটি তাদের পরিবেশনা দিয়ে সবার মন জয় করেছে৷ রুশ লোকসংগীতে সাগরের প্রশংসা করে যেসব গান রচনা করা হয়েছে মূলত সেগুলোই পরিবেশন করে ব্ল্যাক সি ফ্লিট অঁসম্বল৷ রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী ইয়াব্লোচকো বা ‘ছোট্ট আপেল’ নাচটা সত্যই মনোমুগ্ধকর৷
ছবি: DW/F. Warwick
চাই শুধু স্বায়ত্তশাসন
সেভাস্টোপোলের অধিকাংশ মানুষই রুশ জাতীয়তাবাদের সমর্থক৷ ইউক্রেনীয়দের তারা অবিশ্বাস করে, মনে করে ইউক্রেনীয়রা চরম ডানপন্থি৷ সেভাস্টোপোলের মানুষ মনে করে রুশ বাহিনীর উপস্থিতি এ অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসন এবং নিরাপত্তার রক্ষাকবচ৷
ছবি: DW/F. Warwick
10 ছবি1 | 10
শুক্রবার কৃষ্ণসাগরীয় ওডেসায় রুশপন্থি এবং ইউক্রনপন্থিদের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে৷ সংঘর্ষের সময় পুলিশ যাঁদের আটক করে তাঁদের বেশির ভাগই রুশপন্থি৷ রোববার ইউক্রেনের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রেসিডেন্ট আর্সেনি ইয়াৎসেনিয়ুক ওডেসা সফর করেন৷ ভয়াবহ এ সংঘর্ষকে ‘সব ইউক্রেনবাসীর জন্যই দুঃখজনক' হিসেবে বর্ণনা করে এর জন্য রাশিয়া দায়ী বলে মন্তব্য করেন৷ তাঁর মতে, ‘‘ওডেসায় যা ঘটেছে তা ইউক্রেনকে ধ্বংস করার জন্য রুশ ফেডারেশনের পরিকল্পনার অংশ৷''
ওডেসায় সংঘর্ষ বন্ধ হলেও উত্তেজনা কমেনি৷ মারিউপোলের সরকারি ভবনগুলো থেকে রুশপন্থিদের সরানোর উদ্দেশে এখনো অভিযান চলছে৷ ভবনগুলোতে ইউক্রেনের সেনাসদস্যরা ঢুকে পড়েছে৷ ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর্সেন আভাকভকে উদ্ধৃত করে জার্মান বার্তা সংস্থা ডিপিএ এ খবর জানায়৷
এর আগে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর স্লাভিয়ানস্কে আটকে রাখা ওএসসিইর সাতজন সামরিক পর্যবেক্ষককে মুক্তি দেয় রুশপন্থিরা৷ নিরাপত্তা ও সহযোগিতা বিষয়ক ইউরোপীয় সংগঠন ওএসসিই-র পর্যবেক্ষকদের মধ্যে চারজন জার্মান নাগরিকও ছিলেন৷ শনিবার তাঁদের ছেড়ে দেয়া হয়৷
পরের দিনই ওডেসায় শুরু হয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ৷ চলমান পরিস্থিতিতে জেনেভায় আরেকটি শান্তি আলোচনা শুরু করা জরুরি মনে করছে জার্মানি৷ রোববার জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাংক ভাল্টার স্টাইনমায়ার এআরডি টেলিভিশনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, গত মাসে সুইজারল্যান্ডে দু’পক্ষ যেসব শর্ত মেনে নিয়েছিল, সেগুলো মেনে অস্ত্র ছাড়তে রাজি করানোর জন্য শিগগিরই নতুন করে আলোচনা শুরু করা দরকার৷