মানুষ হাসপাতালে যায় রোগ নিরাময়ের আশায়৷ কিন্তু সেখানে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকিও কম নয়৷ জার্মানির এক হাসপাতাল সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে বেশ কিছু অভিনব পদক্ষেপ নিচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির ইয়েনা শহরের বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ১,৩০০ রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে৷ ২০১২ সাল থেকে সেখানে সংক্রমণ ও হাইজিন সংক্রান্ত একটি গবেষণা কেন্দ্র সক্রিয় রয়েছে৷ জার্মানির অন্য কোনো হাসপাতালে এই দু'টি বিষয়ের এমন মেলবন্ধন নেই৷ সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ মাটিয়াস প্লেৎস এই কেন্দ্রের প্রধান৷ ওষুধ ও পরিচ্ছন্নতার সুনির্দিষ্ট প্রয়োগের মাধ্যমে জীবাণুর প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি৷
হাইজিনের দায়িত্বে রয়েছেন কনি গ্যোলিৎস৷ নার্স হিসেবে তাঁর দায়িত্ব হাসপাতালে জীবাণুর প্রসার প্রতিরোধ করা৷ মাটিয়াস প্লেৎস দৈনিক টহলে বেরোন৷ রোগের প্যাথোজেন নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিনি প্রতিনিয়ত পথ খুঁজে চলেছেন৷ সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ হিসেবে মাটিয়াস প্লেৎস-এর হাসপাতালের জীবাণু সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান রয়েছে৷ তিনি নিয়মিত ভিজিটে বেরিয়ে ডাক্তারদের পরামর্শ দেন৷ সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ মাটিয়াস প্লেৎস বলেন, ‘‘প্রতিরোধ ক্ষমতা কমানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, পুরোপুরি এড়িয়ে চলা সম্ভব হবে না৷ রেজিস্টেন্স দেখা দিলে হাতের পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে, রোগীদের পরীক্ষা করে প্রয়োজনে তাদের বিচ্ছিন্ন করে প্রসার রুখতে হবে৷''
মূত্রাশয়ে ‘ইনফেকশন’, যা নিয়ে কেউ কথা বলে না
নারী, পুরুষ, ছোট-বড় অনেককেই দেখা যায় বারবার টয়লেটে যাচ্ছেন বা নার্ভাস বোধ করছেন৷কাছাকাছি টয়লেট না থাকায় বিরক্তও হচ্ছেন৷মূত্রাশয়ে সংক্রমণের কারণে সাধারণত যা হয়ে থেকে৷এ থেকে মুক্তি পেতে ছবিঘরে থাকছে সচেতনতামূলক কিছু তথ্য৷
ছবি: Fotolia/Doruk Sikman
নারীরাই ভোগেন বেশি
মূত্রাশয়ের সংক্রমণের ঝুঁকি পুরুষদের তুলনায় নারীদেরই বেশি৷ জার্মান একটি জরিপের ফলাফলে জানানো হয়েছে, এ দেশে প্রতি দু’জনের একজন মহিলা জীবনে অন্তত একবার মূত্রাশয়ের সংক্রমণে আক্রান্ত হন৷ এই সংক্রমণ সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার কারণেই হয়ে থাকে আর একবার যে নারীর এই ইনফেকশন হয়, পরবর্তীতেও তাঁর এই সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে৷ মূত্রনালি পুরুষদের ২০ এবং নারীদের ৪ সেন্টিমিটার হওয়ার ফলে পরিষ্কার রাখা কষ্টসাধ্য হয়৷
সকলেরই হতে পারে
এ সমস্যা নারী, পুরুষ সবারই হতে পারে এবং তা যে কোনো বয়সে৷ মূত্রাশয়ের সমস্যা মানুষকে নার্ভাস করে ফেলে, বিশেষ করে অপরিচিত কোথাও গেলে বা ভ্রমণকালে অথবা অচেনা মানুষ সাথে থাকলে তো কথাই নেই! এই সমস্যায় মানুষ সংকোচ বা লজ্জা বোধ তো করেনই, এমনকি এ সমস্যা নিয়ে সরাসরি কারুর সাথে কথাও বলতে চান না৷ মূত্রাশয়ের এই ‘ইনফেকশন’ বা সংক্রমণ বেশিদিন ধরে বয়ে বেড়ালে এর থেকে কিন্তু জটিল অসুখও হতে পারে৷ তাই সাবধান!
ছবি: DW/A. Induchova
যৌনমিলনে সংক্রমণ
জীবাণুমুক্ত মূত্রনালি ও মূত্রাশয় ব্যাকটেরিয়ায় সংক্রমিত হলে মূত্রাশয়ে জ্বালা এবং ব্যথা হয়৷ জীবাণু সাধারণত পাকস্থলী ও অন্ত্রের নীচের অংশে থাকে, যা যৌনমিলনের সময় ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ জীবাণু মূত্রনালি দিয়ে মূত্রাশয়ে ঢুকলে সাধারণত প্রস্রাবের সঙ্গে বের হয়ে যায়৷ তবে জীবাণু বংশবিস্তার শুরু করলে মূত্রাশয়ে সংক্রমণ ঘটে৷ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ, সহবাসের পর জীবাণু ধুয়ে ফেলার জন্য প্রস্রাব করা এবং পরিষ্কার করা উচিত৷
ছবি: Fotolia/Gina Sanders
সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ
একমাত্র কোনো জীবাণু ঢোকার পরই সংক্রমণ ঘটে এবং প্রস্রাবের সময় ব্যথা এবং জ্বালা অনূভব হয়৷ তখন তাঁর সারাক্ষণই মনে হতে থাকে যে টয়লেটে যেতে হবে৷ সমস্যাটা আরো মারাত্মক হয় যখন জীবাণু কিডনিতে প্রবেশ করে৷ তখন শুধু জ্বালা নয়, পাশাপাশি জ্বর হয়৷ তাই এমনটা হলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে৷
ছবি: Colourbox
ডালিম বা বেদানা খান
মূত্রনালির সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে দরকার শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা৷ তাছাড়া সুস্থ ব্লাডারের জন্য প্রয়োজন বিশেষ ব্যায়াম৷ এছাড়া ব্লাডার বা মূত্রাশয়কে ঠিক মতো পরিষ্কারের জন্য দিনে কমপক্ষে ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান প্রয়োজন৷ ভিটামিন সি, জিংক এবং সেলেনিউম ব্লাডারের রোগের প্রতিরোধ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে৷ এক্ষেত্রে বেদানায় থাকা উপাদানও ‘ইউরেনারি ইনফেকশন’ হওয়া থেকে দূরে রাখে৷
ছবি: Fars
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা খুবই জরুরি
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিশেষ জরুরি, বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে৷ পরনের প্যান্টি বা আন্ডার প্যান্টস, স্লিপ হওয়া উচিত অবশ্যই সুতির, যাতে বাতাস চলাচল করতে সুবিধা হয়৷ পলিয়েস্টার কাপড়ের তৈরি অন্তর্বাস সহজেই গোপন জায়গায় জীবাণু ছড়াতে পারে, হতে পারে ছত্রাকও৷ বলেন স্ত্রী বিশেষজ্ঞ ডোরোথি স্ট্রুক৷ তাছাড়া প্রস্রাবের বেগ হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘ সময় প্রস্রাব ধরে রাখা এ রোগ হওয়ার আরো একটি কারণ, তাই আর চেপে রাখা নয়!
ছবি: Fotolia
বেশি ওষুধ নয়
তলপেটে ঠান্ডা লাগা থেকে দূরে থাকা দরকার এবং তার সঙ্গে সঙ্গে যথেষ্ট পানি পান করুন৷ মনে রাখবেন খাবারে সরিষার তেলের ব্যবহার মূত্রাশয়ে সক্রমণের ঝুঁকি অনেক কমিয়ে দেয়৷ রোজমেরির মতো নানা ভেষজ উদ্ভিদও অত্যন্ত কার্যকর এক্ষেত্রে৷ তবে যাঁরা ডায়াবেটিস, ব্যথানাশক ওষুধ বেশি সেবন করেন, তাঁদের কিন্তু মূত্রাশয়ের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়৷
ছবি: Fotolia/Doruk Sikman
7 ছবি1 | 7
কনি গ্যোলিৎস বলেন, তিনি দিনে কমপক্ষে ১০০ বার নিজের হাত ডিস-ইনফেক্ট করেন৷ কাজের রুটিন তো বটেই, জিবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এটা অপরিহার্য৷ কনি আইসিইউ-তে হাইজিন পরীক্ষা করেন৷ এখানকার রোগীরা তাঁদের কঠিন রোগের কারণে সহজেই সংক্রমণের শিকার হতে পারেন৷ এখানে এক রোগীর শরীরে মাল্টিরেজিস্টেন্ট ইন্টেস্টাইন ব্যাকটেরিয়া রয়েছে৷ বিশেষ সুরক্ষার পোশাক এখানে বাধ্যতামূলক৷ কেউই নিয়মের ঊর্ধ্বে নয়৷ কনি বললেন, শুধু ভিজিটরদের অ্যাপ্রন পরতে হবে, কারণ শুধু ঘরের মধ্যেই কাজ সারতে হবে৷
অ্যাপ্রন পরে, মুখ ঢেকে, গ্লাভস পরলে সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়৷ তাছাড়া হাইজিনের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই টিম যাতে নতুন করে ঘরে জীবাণু আনতে বা সেখান থেকে নিয়ে যেতে না পারে, তার জন্যও এটা গুরুত্বপূর্ণ৷ সাফাই কর্মীরা ঠিকমতো পরিষ্কার করেছে কিনা, তার পরীক্ষা চলে৷ চোখের আড়ালের জায়গাগুলিও বাদ দিলে চলবে না৷ মসৃণ সারফেসের উপর জীবাণু বাসা বাঁধতে ভালোবাসে৷ তবে হাতের মাধ্যমেই তারা সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়ে৷ কনি গ্যোলিৎস বলেন, ‘‘আমরা এমন জীবাণু খুঁজছি, যেগুলি মুখ, নাক বা গলায় পাওয়া যায়, যা কর্মীদের মাধ্যমে হাতে-হাতে ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ তাই হাতের হাইজিন আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ৷ দিনে একশ' থেকে ২০০ বার আমি সে কথা মনে করিয়ে দেই৷''
ইয়েনার হাসপাতালে হাইজিনের মানদণ্ড গোটা জার্মানিতে সবচেয়ে কড়া বলে পরিচিত৷ কনি গ্যোলিৎস-এর জন্য এর অর্থ সর্বদা সজাগ থাকা৷