আফ্রিকা মহাদেশে সংক্রামক রোগের মোকাবিলা একটা বড় সমস্যা৷ ঘানায় এক নেটওয়ার্ক তৃণমূল স্তরে মানুষের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে৷ এই কাজে অর্থসংস্থানের ক্ষেত্রেও তারা বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
ঘানার মধ্যভাগের আগোগো শহরে জন আমুয়েসির নেতৃত্বে এক গবেষকদল এই নিয়ে তৃতীয়বার টেরেসা সারপংয়ের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছে৷ তাদের দুই বছরের মেয়ে মিশেল কয়েক সপ্তাহ আগে আন্ত্রিক রোগে আক্রান্ত হয়েছিল৷ টেরেসা বলেন, ‘‘আমার সত্যি ভয় করছিল৷ ছোট্ট মেয়েটি খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছিল৷ এই বয়সের বাচ্চাদের আন্ত্রিক রোগে মৃত্যুও হতে পারে৷''
মিশেল-এর অত্যন্ত ছোঁয়াচে আন্ত্রিক রোগ হয়েছিল, যার নাম ক্রিপ্টোস্পরিডায়োসিস৷ এই রোগের সংক্রমণ ঠিক কীভাবে ঘটে, জন আমুয়েসি ও তাঁর টিম অনেককাল ধরে তা বোঝার চেষ্টা করছেন৷ তাই বাড়ি-বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিতে হয়েছে৷ তারা আসায় টেরেসা প্রথমে খুবই অবাক হয়েছিলেন৷ জন আমুয়েসি বলেন, ‘‘এমন অদ্ভুত রোগের কারণে তারা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন৷ শহর থেকে সাদা অ্যাপ্রন ও দস্তানা পরা লোক এসে রক্ত পরীক্ষা করছে, নানা প্রশ্ন করছে৷ রোগীর অবস্থা নিয়ে দুশ্চিন্তার পাশাপাশি একঘরে হয়ে পড়ার একটা ঝুঁকি রয়েছে৷ প্রতিবেশীরা বলতে পারে, একজনের জন্য শহর থেকে লোক এসে নানা প্রশ্ন করছে৷ তার নিশ্চয় সত্যি সমস্যা রয়েছে, এড়িয়ে চলাই ভালো৷''
তৃণমূলের সাহায্যে উদ্যোগী যারা
04:05
আগোগো শহরের স্থানীয় হাসপাতালে অবশেষে ক্রিপ্টোস্পরিডায়োসিস রোগ ধরা পড়েছে৷ এটি তথাকথিত ‘নেগলেক্টেড ট্রপিকাল ডিজিজ' পর্যায়ে পড়ে৷ বারবার তার প্রকোপ দেখা যায়৷
আরেকটি ঘরে বুরুলি আলসার রোগীদের চিকিৎসা চলছে৷ এটি একটি ছোঁয়াচে চর্মরোগ, যদিও এর সংক্রমণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত করে জানা যায়নি৷ এটিও এক ‘নেগলেক্টেড ট্রপিকাল ডিজিজ'৷ রোগীদের ভাগ্য ভালো যে, এই হাসপাতাল এক গবেষণা প্রকল্পে অংশ নিচ্ছে৷ তাই বিনা মূল্যেই চিকিৎসা পাচ্ছেন তাঁরা৷ জন আমুয়েসি বলেন, ‘‘রোগীদের প্রতিই আমরা বেশি মনোযোগ দেই, তারাই তো কষ্ট পাচ্ছে! অত্যন্ত দরিদ্র তারা৷ ওষুধ কেনার সামর্থ্য নেই৷ অবশ্য রোগের ওষুধও থাকতে হবে৷ এরা প্রবল বঞ্চনার শিকার৷''
গাড়িতে ঘণ্টাখানেক দূরত্বে ঘানার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কুমাসি৷ জন আমুয়েসি সেখানে আফ্রিকার গবেষণা নেটওয়ার্কের প্রধান৷ বিরল রোগের মোকাবিলা বা সেগুলি নির্মূল করার পথ দেখানোই তাদের উদ্দেশ্য৷
পেটের গোলমাল মানে সবই এলোমলো
রাতে পার্টি অথচ পেটে মোচড় দিয়ে ব্যথা করছে, বার বার টয়লেটে যেতে হচ্ছে৷ ভুল বা বেশি খাওয়া, নাকি নার্ভাস বা উত্তেজনা? এ ধরণের সমস্যার কারণই বা কী? কী বা এর প্রতিকার? এ বিষয়েই বিস্তারিত পাবেন এই ছবিঘরে৷
ছবি: DW/ S. Bandopadhyay
সব আনন্দই মাটি
কোনো উৎসবে অতিরিক্ত খাওয়ার পর তা হজম করতে অসুবিধা হলে যে কিছুই ভালো লাগে না – সেটা আমরা কম বেশি সকলেই জানি৷ পেট মোচড়ানো, পেট ব্যথা, টয়লেটে যাওয়া এ সব কিছু যেন সব আনন্দ মাটি করে দেয়৷ সাধারণ পেট খারাপ বা ডাইরিয়ার পাশাপাশি এর কারণ কিন্তু পাকস্থলী বা অন্ত্রের অসুখও হতে পারে৷
ছবি: picture alliance/dpa Themendienst
বদহজমের নানা কারণ
নানা কারণে বদহজম হতে পারে৷ ভুল বা অতিরিক্ত বা অনেককিছু একসাথে মিশিয়ে খাওয়া, উত্তেজনা, নার্ভাসনেস বা হঠাৎ করে কোনো ভাইরাস থেকে পেটের সমস্যা হতে পারে৷ আর নিয়মিত অনিয়মে যা হয়ে উঠতে পারে ‘ক্রনিক’৷ পাকস্থলী বা পাকতন্ত্র পরিষ্কার না থাকলে তা কোনো ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করতে পারে না৷
ছবি: Fotolia/Gennadiy Poznyakov
সবচেয়ে বড় অঙ্গ
মানুষের শরীরে অন্ত্র নামের যন্ত্রটি প্রায় ৮ মিটার লম্বা এবং সে হিসেবে এটাই শরীরের সবচেয়ে বড় অঙ্গ৷ শরীর যে খাবারগুলো গ্রহণ করে, তার মধ্যে জটিল পুষ্টিকর বস্তু যেমন শর্করা, আমিষ ও স্নেহ পদার্থকে ভেঙে সহজপাচ্য বস্তুতে পরিণত করে অন্ত্র৷ পাকস্থলী ও অন্ত্রের দেয়ালের মাধ্যমে শোষিত হয়ে এগুলো সমস্ত শরীরে যায়৷
ছবি: Fotolia/Sebastian Kaulitzki
সরাসরি কথা বলা প্রয়োজন
তাই পাকস্থলী এবং অন্ত্র – বৃহদান্ত্র এবং ক্ষুদ্রান্ত্র সব সময় পরিষ্কার রাখা জরুরি৷ কারণ অন্ত্রে সমস্যা দেখা দিলে শরীর দৈনন্দিন সব কাজ ঠিকমতো করতে পারে না৷ তবে কিছু নিয়ম-কানুন, অর্থাৎ নিয়মিত ৩০ মিনিট হাঁটা-চলা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং হালকা কিছু ব্যায়াম করলে এ সমস্যা এড়ানো সম্ভব৷ এর জন্য সংকোচ বোধ না করে কথা বলুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চাই স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাদ্য
সুস্থ অন্ত্রের জন্য চাই স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাবার৷ আর সেটা যে শুধু পেটের জন্যই ভালো তা নয়, একজন মানুষকে সুস্থ রাখতে এগুলো বড় ভমিকা পালন করে৷ পাকস্থলী বা অন্ত্রের প্রয়োজন ‘সঠিক খাবার’, যাতে অন্ত্র ভালোভাবে কাজ করতে পারে৷ অথাৎ আঁশযুক্ত খাবার, ভুষিসহ রুটি, বিভিন্ন শষ্যদানা, বিচি, সাদা দই, শাকসবজি, ফলমুল ইত্যাদি৷
ছবি: Fotolia
খুব সহজ উপায়
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকেু উঠেই এক গ্লাস কুসুম-কুসুম গরম জল পান করুন৷ তবে সেটা যেন ‘মিনারেল ওয়াটার’ না হয়৷ এটা অন্ত্রের জন্য উদ্দীপক হিসেবে কাজ করবে এবং টয়লেটে যেতে সাহায্য করবে৷ প্রতিদিন একই সময়ে নিয়ম করে টয়লেটে যাওয়ার অভ্যাস করলে স্বাভাবিকভাবেই পেট পরিষ্কার থাকবে৷
ছবি: Fotolia/Artusius
যে খাবার পাকস্থলীর জন্য ভালো
জার্মানির খাদ্য ও স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থা ডিজিই-র হিসেব অনুয়ায়ী, দিনে কম করে হলেও ৩০ গ্রাম সুষম খাদ্য খাওয়া উচিত৷ অর্থাৎ বিভিন্ন দানা, বিচি, সবজি ফল ইত্যাদির সাথে অবশ্যই যথেষ্ট পানি (কম করে দুই থেকে তিন লিটার) পান করতে হবে৷ তাছাড়া কফি, তেতো শাক-সবজি, শুকনো আলু বোখারা পাকস্থলীকে সক্রিয় রাখে, রক্ত চলাচল বাড়ায়৷
ছবি: picture alliance/chromorange
ডাক্তারের পরামর্শ
অবশ্য শুধু খাওয়া-দাওয়া নয়, মানুষের জীবনযাত্রা, মানসিক চাপ বা স্ট্রেসও পেট খারাপ, পেটকষা বা হজমের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে৷ তাই প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত৷ অর্থাৎ কারণ খুঁজে বের করে তার চিকিৎসা করা প্রয়োজন৷
ছবি: DW-TV
পেটকষা
পেটে ম্যাসাজ করলে উপকার পাওয়া যায়৷ হাত দিয়ে পেটে আস্তে আস্তে ম্যাসাজ করতে পারেন৷ তাছাড়া পেটে একটি গরম কাপড় বা ‘হট ওয়াটার ব্যাগ’ কিছুক্ষণ ধরে রাখলে পেটে রক্তচলাচল ভালোভাবে হয়৷ এছাড়া রাতের খাবার বিছানায় যাওয়ার তিন ঘণ্টা আগে খাওয়া উচিত৷
ছবি: Fotolia/Picture-Factory
যে কারুরই হতে পারে
হঠাৎ করে যদি কারুর ‘অ্যানিমিয়া’ ধরা পড়ে, তাহলে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে তাঁর পাকস্থলী বা অন্ত্রের কোনো অসুখ আছে৷ এই সমস্যা পুরুষদের তুলনার নারীদেরই বেশি হয়ে থাকে৷ তাই নারীদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা অত্যন্ত আবশ্যক৷
ছবি: Fotolia/Alliance
ভ্রমনে সতর্কতা
ভ্রমনের সময় বা অন্য দেশ, অন্য খাবার, আবহাওয়ার পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে পেটে নানা সমস্যা দেখা দেয়, যা ভ্রমণ বিলাসীরা ভালো করেই জানেন৷ তাই আগে থেকেই খাবারের ব্যাপারে কিছুটা সতর্ক হলে ভ্রমণ আরো আনন্দময় হয়ে উঠতে পারে৷ ছবিতে দেখুন, ডেভিড ক্যামেরন ভারতে কলকাতার রাস্তায় দাড়িয়ে নিশ্চিন্তে ডালবড়া খাচ্ছেন৷
ছবি: DW/ S. Bandopadhyay
11 ছবি1 | 11
ব্যয়বহুল গবেষণার অর্থায়নের জন্য আমুয়েসি লবিয়িং-এর কাজও করেন৷ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের সরকার ও ধনীদের তিনি এই কাজে শামিল করতে চান৷ তা সত্ত্বেও গবেষণার কাজে প্রায়ই ইউরোপে নমুনা পাঠাতে হয়, কারণ, এখানে সেগুলি পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সাজসরঞ্জাম নেই৷ আমুয়েসি বলেন, ‘‘কীভাবে সবকিছু কাজ করে তা জেনেও সাজ-সরঞ্জাম বা গবেষণাগারের অভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে খুব খারাপ লাগে৷ যখন জানি যে, একজনের প্রাণ বাঁচাতে পারি বা ভালো কিছু করতে পারি, তখন সেই অভাব যেন তাড়িয়ে বেড়ায়৷ অনেক সহকর্মী ইউরোপ বা অ্যামেরিকায় প্রশিক্ষণের পর দেশে ফিরে কয়েক মাস পর বুঝতে পারেন, যা প্রয়োজনীয় তা তাঁরা করতে পারছেন না৷ দেশে উন্নতির সম্ভাবনা না দেখে তাঁরা আবার ফিরে যান৷''
তবে অ্যামেরিকায় উচ্চশিক্ষা পেয়ে সেখানে ফিরে যাবার কথা ভাবতে পারেন না জন আমুয়েসি৷ নেটওয়ার্কের কাজে তিনি গোটা বিশ্বে ঘুরে বেড়ান৷ তা সত্ত্বেও গ্রামে যেতে তিনি বেশি পছন্দ করেন, মিশেলের মতো মানুষকে সাহায্য করতে চান৷ তাঁর স্বপ্ন খুবই স্পষ্ট – গোটা মহাদেশ থেকে অবহেলিত রোগ নির্মূল করতে চান তিনি৷ কিন্তু সেই লক্ষ্যে অনেক কাজ বাকি রয়েছে৷