1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলে গণতান্ত্রিক রীতি কে মানে

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
১২ জুলাই ২০২১

সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেই কি গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ভাঙার অধিকার পাওয়া যায়? ভারতে সেই প্রশ্নটা এখন বারবার করে উঠছে।

মুকুল রায়কে(মাঝখানে) পিএসি চেয়ারম্যান করা নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। ছবি: Ians

গণতন্ত্র মানে যে সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন, সংখ্যাগরিষ্ঠতার খেলা, তা স্কুলপাঠ্যেই লেখা থাকে। সেই সঙ্গে এটাও লেখা থাকে যে, গণতন্ত্র মানে শুধুই সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে শাসন নয়। এখানে দীর্ঘদিন ধরে তিলে তিলে কিছু রীতি-নীতি গড়ে ওঠে। গড়ে ওঠে বিরোধীদেরও গুরুত্ব দেয়ার, সরকারের প্রতিটি সিদ্ধান্ত, আইন ও খরচ-খরচার চুলচেরা বিচার করার অধিকারের রীতি। এই রীতির ফলেই লোকসভা ও বিধানসভায় পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি বা পিএসি-র চেয়ারম্যানের পদ প্রধান বিরোধী দলকে দেয়া হয়। কারণ, সরকারের কাজের উপর, খরচ-খরচার উপর নজরদারির ভূমিকা পালন করে পিএসি। স্বাভাবিকভাবেই তার চেয়ারম্যানের পদ বিরোধী দলকে দেয়ার রীতি ভারতে আছে। রীতি মেনেই ইউপিএ সরকারের সময় বিজয় কুমার মালহোত্রা পিএসি-র চেয়ারম্যান ছিলেন। এখন যেমন সংসদে আছেন কংগ্রেসের অধীর রঞ্জন চৌধুরী। এর আগে ছিলেন মল্লিকার্জুন খাড়গে। আর এই রীতি ১৯৬৭ সাল থেকে চলে আসছে।

কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এবার সেই রীতি মানা হলো না। পিএসি-র চেয়ারম্যান করা হয়েছে মুকুল রায়কে। মুকুল সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-র প্রার্থী হিসাবে জিতে এসেছেন। কিন্তু কিছুদিন আগেই তিনি রাীতিমতো ঢাকঢোল পিটিয়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তার যোগদানের মঞ্চে খোদ মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। পুরনো দলে আবার ফিরে যাওয়ার পর মুকুল জানিয়েছিলেন,  তাকে বিজেপি-তে ঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়নি। তার দমবন্ধ লাগছিল। তাই তিনি পুরনো দলে ফিরে এসেছেন। পছন্দ না হলে তিনি দল বদলাতেই পারেন। কিন্তু এর আগে তৃণমূল থেকে তিনি যখন বিজেপি-তে গিয়েছিলেন, তখন তিনি রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। তখন তিনি পুরনো দল ছেড়ে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাংসদ পদও ছেড়ে দেয়াকে শ্রেয় বলে মনে করেছিলেন।

এখন তিনি মত বদলেছেন। এবার বিজেপি থেকে তৃণমূলে গেলেও বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেননি। খাতায়-কলমে তিনি বিজেপি-র বিধায়ক। তার বসার আসন বিজেপি বিধায়কদের মধ্যেই দেয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি প্রকাশ্যে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তাকেই পিএসি-র চেয়ারম্যানের পদ দেয়া হয়েছে। বিজেপি প্রতিবাদ জানিয়েছিল। তারা অশোক লাহিড়ীকে এই পদ দিতে চেয়েছিল। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনড় ছিলেন। তিনি পিএসি চেয়ারম্যান হিসাবে মুকুলকেই চেয়েছেন। বলেছেন, দরকার হলে ভোটাভুটি হোক। দেখি কার ক্ষমতা বেশি। অর্থাৎ, সেই সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোর দেখিয়েছেন মমতা

ফলে রীতি গেল, সংখ্যাগরিষ্ঠতার জয় ঘোষিত হলো।

এমন নয় যে, এই কাজ মমতা বা তৃণমূল একাই করছে। ভোটের আগে তৃণমূলের সাংসদ সুনীল মন্ডল অমিত শাহের নির্বাচনী জনসভায় গিয়ে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু সাংসদ পদ ছাড়েননি। তৃণমূল সুনীল মন্ডলের সদস্যপদ খারিজ করার জন্য স্পিকারকে চিঠি দিয়েছে। যেমন বিজেপি দিয়েছে মুকুল রায়ের বিষয়ে। এখন আইন হলো, এক তৃতীয়াংশ সাংসদ বা বিধায়ক মিলে দলত্যাগ করতে পারেন। তার কমে করলে তার সদস্য বা বিধায়ক পদ খারিজ হওয়ার কথা। তবে এ ব্যাপারে স্পিকার সিদ্ধান্ত নেবেন। কতদিনের মধ্যে তা আইনে নেই।

সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোর বনাম গণতান্ত্রিক রীতিনীতি, মূল্যবোধের একটা অসম লড়াই চলছে। আর প্রশ্ন উঠলেই তৃণমূল উদাহরণ দেখিয়ে বলে, দেখুন, বিজেপি কী করছে। আর বিজেপি বলে, এই তো তৃণমূলের উদাহরণ। ঘটনা হলো, ভুল হলে দুটোই তো ভুল। একটা ভুলের নজির দিয়ে অন্য ভুলকে ঠিক বলে প্রমাণ করা যায় কি? যে ইন্দিরা গান্ধী জরুরী অবস্থা জারি করে গণতন্ত্রকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিলেন, তিনিই তো তার সরকারের কট্টর বিরোধীদের বরাবর পিএসি-র চেয়ারম্যান করেছেন। চেয়ারম্যান তার সরকারের সমালোচনার সুযোগ পাবে জেনেও। ওই সমালোচনাটাই তো গণতন্ত্রের জোর। সব সমালোচনার উৎসমুখ বন্ধ করে দিলে সেটা কি আর গণতন্ত্র থাকে!

সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী টুইট করে বলেছেন, ''স্পিকারের পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তা সে লোকসভা কিংবা বিধানসভা যাই হোক না কেন। পদের মর্যাদা রক্ষা করার যোগ্যতা পদাধিকারীর থাকা উচিত। দলদাসত্বের মনোভাবে এই পদের মর্যাদা কিংবা গরিমা নষ্ট করার অধিকার কারো নেই।''  অথচ এই সিপিএমই পরমাণু চুক্তি নিয়ে প্রথম ইউপিএ সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করার পর সাবেক ও প্রয়াত স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে পদত্যাগ করতে বলেছিল। সেই নির্দেশ সোমনাথ শোনেননি। ফলে ওই আপ্তবাক্যই সত্যি, সব দলই সুযোগ পেলে, সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলে গণতান্ত্রিক রীতিনীতির মূলে কুঠারাঘাত করার চেষ্টা করে।

গৌতম হোড়, ডয়চে ভেলে। ছবি: privat

সম্প্রতি আরেকটি বিষয় নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে খুব জলঘোলা হচ্ছে। সেটা হলো, বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারীর দেহরক্ষী থাকার সময় কাঁথির পুলিশ ব্যারাকে ২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর মাথায় গুলি লাগে শুভব্রত চক্রবর্তীর। পরের দিন তিনি মারা যান। সেই মৃত্যু নিয়ে আড়াই বছর পর গত বুধবার শুভব্রতর স্ত্রী সুপর্ণা তদন্ত চেয়ে কাঁথি থানায় অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগের পাঁচদিনের মধ্যেই সিআইডির তদন্ত শুরু। কার্যত শুভেন্দুর দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন সুপর্ণা। আড়াই বছর পরে এই অভিযোগ কেন? এখন শুভেন্দু তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দেয়ার পর কেন তদন্ত শুরু হলো? মহিষাদলের তৃণমূল বিধায়ক বলেছেন, ''শুভেন্দুর নির্দেশে গোটা ঘটনাটা ধামাচাপা দেয়া হয়েছিল।'' কারা ধামাচাপা দিয়েছিলেন? সেই পুলিশ কর্মীদের কেন শাস্তি হবে না? না কি, যতক্ষণ আমার সঙ্গে ততক্ষণ সাত খুন মাফ, বিরুদ্ধে গেলেই প্রত্নতাত্ত্বিকের মতো সব খুঁড়ে বের করা হবে। 

রাজনৈতিক মহলে প্রশ্নটা তুললেই জবাব পাবেন, রাজনীতিতে এটা হয়। কেন দেখেননি, ভোট এলেই সারদা, নারদ কেলেঙ্কারি নিয়ে সক্রিয়তা শুরু হয়। ভোট চলে যায়। আবার সব থেমে যায়। অতীত ইতিহাস সেকথাই বলছে। ঘটনাটা সেই আবার একই জায়গায় চলে এল। সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলে করা যায়, সবই করা যায়। তা হলে গণতন্ত্রিক রীতি-নীতি, মূল্যবোধ? এই প্রশ্ন তুললেই রাজনৈতিক দলগুলির তৈরি জবাব আছে, আমাদের শেখাতে আসবেন না। আমরা অত্যাচারিত হয়ে, লড়াই করে এই জায়গায় এসেছি। সেটা কি সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোর দেখিয়ে সব কাজ করার ছাড়পত্র দেয়? এর জবাবটাও সকলে জানেন। স্কুলপাঠ্য বইতেও নিশ্চয়ই বলা আছে, গণতন্ত্রে এভাবে সেই অধিকার পাওয়া যায় না।

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ