‘সংখ্যালঘুর নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদের’: খতিব
৭ আগস্ট ২০২৪
এদিকে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সম্পর্কে মানুষের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করতে সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা করা হচ্ছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত৷
প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর গত ৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বেশ কিছু ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়৷ ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে লুটপাট ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়৷
সরকার পতনের পর থেকে সারা দেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা হয়েছে৷ ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও তাদের উপাসনালয়ে হামলার ঘটনা ঘটছে৷ দেশের কয়েক স্থানে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের মসজিদ ও বাড়িঘরেও হামলা হয়েছে৷ জলের গানের দলনেতা রাহুল আনন্দের বাড়িতে হামলা চালিয়ে দুর্বৃত্তরা তার বাড়িতে থাকা সহস্রাধিক যন্ত্র ভাঙচুর করেছে৷
মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করে রাষ্ট্রীয় স্থাপনা, ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বাড়ি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে হামলা রুখে দাঁড়াতে সারা দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বামপন্থি সাতটি ছাত্রসংগঠনের মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট৷
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব রুহুল আমিন বুধবার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি- আমরা কোনো ধরনের সহিংসতা এবং কোনো ধরনের লুটতরাজ, জ্বালাও-পোড়াও বা আক্রোশমূলক কিছু করব না৷ আমরা সকলে এগুলো পরিহার করবো৷
‘‘আমরা সবাই মিলেমিশে থাকবো৷ সংখ্যালঘু শব্দটা ভাষা হিসেবে বলা হয়, কিন্তু তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের সকলের৷ অতএব এ ধরনের সহিংসতার সঙ্গে কেউ যাতে জড়িত না হয় এবং জড়িত থাকাদের পরবর্তীতে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হয়৷ এই মুহূর্তে সবাই মিলে জনগণের জান-মাল, ইজ্জত, আভ্রু নিরবচ্ছিন্নভাবে পাহারা দিতে হবে৷ সেভাবে আমাদের চলার পথ সুন্দরভাবে যেন গুছিয়ে আনতে পারি আমি সেই প্রত্যাশা রাখছি৷''
সরকার পতনের পর সংখ্যালঘুদের বাড়ি ও উপাসনালয়ে হামলার সঙ্গে কোনো শিক্ষার্থী জড়িত নয় বলে মনে করছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত৷
সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার ডয়চে ভেলেকে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘আমার মূল্যায়ন হচ্ছে যারা এ ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে এবং ঘটিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেউ এ কাজটি করেছে বলে আমাদের কাছে মনে হয় না৷ অস্বীকারের উপায় নেই বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা দেশের রাজনীতিতে একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য কোটা আন্দোলন থেকে কতগুলো দাবিকে তারা সামনে নিয়ে এসেছে৷
‘‘কিন্তু স্থাপনাগুলোতে যারা হামলা করলো, আমাদের যে স্থাপনাগুলো রয়েছে সেগুলোতে যারা হামলা করলো এরা প্রকৃতপক্ষে ছাত্ররা নয় বলেই আমি বিশ্বাস করি৷ এই কাজটি যারা করেছে তারা প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে একাত্তরকে মুছে ফেলতে চায় এবং এরাই কিন্তু একদিকে ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে, আরেকদিকে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ চালাচ্ছে৷''
রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘শুধু সংখ্যালঘু নয়, তারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে লুট করেছে৷ এরমধ্য দিয়ে আন্দোলন সম্পর্কে মানুষের যাতে নেতিবাচক ধারণা হয় তারজন্য তারা প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বলে আমার কাছে মনে হয়৷''
‘‘বিএনপির তারেক রহমান ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা ইতোমধ্যে পরিষ্কারভাবে ধ্বংসযজ্ঞ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সাবধান বাণী উচ্চারণ করেছে৷ এরপরেও দুর্বৃত্তরা হীন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে৷ এর পেছনে কারণ হলো এই মুহূর্তে কোনো সরকার নেই, আইনশৃঙ্খলাজনিত কোনো পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো কেউ নেই, এই সুযোগকে তারা গ্রহণ করছে৷ এ রকম অবস্থায় আমরা মনে করি মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধানকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সব দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করা প্রয়োজন, আমি তাদের কাছে এই আবেদনটা রাখছি৷''
সংখ্যালঘুরা হামলার শিকার হতে পারেন, সেই ধারণা থেকে গত ৩ আগস্ট একটি মনিটরিং সেল গঠন করে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ৷
ওই সেলের তথ্যানুযায়ী, গত ৪, ৫ ও ৬ আগস্ট দেশের ৩০ জেলা আক্রান্ত হয়েছে৷ ২৫-৩০টি মন্দির আক্রান্ত হয়েছে, লুটপাট হয়েছে৷ ৩৫০-৪০০ বাড়ি আক্রান্ত হয়েছে, হামলা হয়েছে, লুটপাট হয়েছে৷ দুটি হত্যা হয়েছে, জখম হয়েছে অনেক৷
রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘অব্যাহতভাবে অনেকের ভূমি দখল করতে শুরু করেছে, দেশে থাকতে হলে চাঁদা দিতে হবে এ দাবি করা হচ্ছে৷ অনেক জায়গায় এখনো হামলার প্রস্তুতি চলছে৷ লক্ষ্য করা যাচ্ছে ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সংখ্যালঘু মহল্লায় পাহারা দিয়েছে, বিএনপির পক্ষ থেকেও সংখ্যালঘু এলাকায় গিয়ে তাদের শক্তি-সাহস যোগানোর চেষ্টা করছে৷ আমরা এটিকে ইচিবাচকভাবেই দেখতে চাই৷''
গত ৫, ৬ ও ৭ আগস্ট হামলার শিকার সংখ্যালঘুদের কেউ আইনি সহায়তা নিতে পারেনি জানিয়ে রানা দাশগুপ্ত বলেন, থানায় কোনো পুলিশ নেই, আদালত ভবন বন্ধ৷ ম্যাজিস্ট্রেট নেই, জজ নেই৷ এ রকম একটি পরিস্থিতিতে থানায় অভিযোগ দেওয়ার পরিস্থিতি নেই, কোর্টেও যে অভিযোগ দেবেন সেই পরিস্থিতিও নেই৷ আর মামলা করলে তো সংখ্যালঘুরা বিচায় পায় না৷ একটা দায়মুক্তি সংস্কৃতি আমাদের দেশে তো অব্যাহত আছে৷
দুর্বৃত্তদের নিয়ন্ত্রণে আনা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম কাজ হওয়া উচিত বলে মনে করেন রানা দাশগুপ্ত৷
তিনি বলেন, ‘‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ নেওয়ার পর পরিস্থিতি তাড়াতাড়ি উন্নতি হবে কিনা আমি বলতে পারব না৷ তবে উন্নতির দিকে যে এগিয়ে যাবে এটি আমি বলতে পারি৷ তবে এটি কত সময়ের মধ্যে স্বাভাবিক হবে বলা মুশকিল৷ যারা দুর্বৃত্ত তাদেরকে কন্ট্রোল করাই কিন্তু এখন সামনের সরকারের মূল টাস্ক হওয়া উচিত৷''