‘‘সব সরকারের আমলেই আক্রান্ত হচ্ছে সংখ্যালঘুরা'' – বর্তমান সরকারের আমলে সংখ্যালঘুদের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত এমান মন্তব্যই করেন৷
ছবি: Shayantani Twisha
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসেই সংখ্যালঘুদের নির্যাতন শুরু করে৷ বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেয়া, জমি দখল করা, মারধোর, এমনকি সংখ্যালঘু পরিবারের নারীদের ধর্ষণের মতো অপরাধেও জড়িতে পড়ে তারা৷ এরপর ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ৷ প্রথমদিকে সংখ্যালঘুদের ওপর খুব একটা নির্যাতন না হলেও, বছরখানেক যাবৎ নির্যাতনের ভয়াবহ মাত্রা যুক্ত হয়েছে৷ আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা সংখ্যালঘুদের জমি দখল করে নিচ্ছে, ভয়ভীতি দেখিয়ে অনেককে দেশত্যাগেও বাধ্য করা হচ্ছে৷ অথচ সরকারের তরফ থেকে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না৷''
মালোপাড়ার হিন্দুদের কান্না থামেনি
বাংলাদেশের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেয়াকে ঘিরে যশোরের অভয়নগর উপজেলার মালোপাড়ায় ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় হিন্দুদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়ার পাশাপাশি লুটপাটও করা হয়৷
ছবি: DW
নেই নিরাপত্তাকর্মীর সাড়া
যশোরের অভয়নগরের চাপাতলী গ্রামের প্রবেশপথে পুলিশের সতর্ক অবস্থান৷ গত ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের দিন এই গ্রামের নিম্নবর্ণের হিন্দু অধ্যুষিত মালোপাড়ায় বসবাসরতদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটে৷ আক্রান্তরা জানান, ঘটনাস্থলের মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে থানার অবস্থান হলেও অনেক ফোন করেও সে সময়ে পুলিশ কিংবা কোনো নিরাপত্তাকর্মীর সাড়া মেলেনি৷
ছবি: DW
‘নদী ঠাকুর’
দুর্বৃত্তদের হামালায় লণ্ডভণ্ড মায়া রানি বিশ্বাসের একমাত্র মাথা গোঁজার ছোট্ট নিবাস৷ সেদিন হামলা শুরু হলে পাশের বুড়ি ভৈরব নদীতে ঝাঁপ দিয়ে ওপারে উঠে প্রাণে বেঁচে যান বিধবা এই নারী৷ তাঁর ভাষায় ‘নদী ঠাকুর’ সেদিন না থাকলে জানটা হয়ত থাকতো না৷
ছবি: DW
প্রাণ বাঁচাতে নদীতে
নিজের ঘরের ভাঙা আসবাব, টেলিভিশনের পাশে মালোপাড়ার গৃহবধু উজ্জ্বলা বিশ্বাস৷ হামলাকারীদের ভয়াবহ রূপ সামান্য দেখেছিলেন তিনি৷ প্রাণ বাঁচাতে তিনিও ঝাঁপ দেন বুড়ি ভৈরবে৷ হামলার সময়ে তাঁর মনে হয়েছিল যে ভগবান সেদিন পাশে ছিলেন না৷
ছবি: DW
বই-পত্র পুড়িয়ে দিয়েছে
কলেজ পড়ুয়া মঙ্গলা বিশ্বাসের বই-পত্র, এমনকি সার্টিফিকেটও পুড়িয়ে দিয়েছে হামলাকারীরা৷
ছবি: DW
সুন্দর স্বপ্নে চির
হামলাকারীদের ভেঙে দেয়া আয়নায় কলেজ পড়ুয়া মঙ্গলা বিশ্বাসের প্রতিবিম্ব৷ বাড়ির দেয়ালে টাঙানো এই ভাঙা আয়নার মতোই মঙ্গলার সুন্দর স্বপ্নেও চির ধরিয়েছে হামলাকারীরা৷ মঙ্গলার আক্ষেপ, তাঁর বই-পত্র আর সার্টিফিকেট কী দোষ করলো?
ছবি: DW
আত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রয়
হামলার ছয় দিন পরে এঁরা ফিরছেন বাড়িতে৷ হামলার সময় পার্শ্ববর্তী গ্রামে আত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাঁরা৷
ছবি: DW
হামলার প্রত্যক্ষদর্শী
৮৬ বছর বয়সি মৃত্যুঞ্জয় সরকার সেদিনের হামলার প্রত্যক্ষদর্শী৷ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও দেশ ছাড়েননি তিনি৷ কিন্তু হামলার পর তাঁর মনে হচ্ছিল যে, সে সময়ে ছেড়ে যাওয়াটাই উচিত ছিল তাঁর৷
ছবি: DW
গাছও রেহাই পায়নি
বাড়ি-ঘরের পাশাপাশি মালোপাড়ার গাছও জ্বালিয়ে দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা৷
ছবি: DW
পলাতক জামায়াত নেতা
মালোপাড়ায় হামলার পরে চাপাতলী গ্রামের পার্শ্ববর্তী গ্রাম বালিয়াডাঙ্গায় স্থানীয় জামায়াতে ইসলামীর থানা আমীর মাওলানা আব্দুল আজিজের বাড়ি ভাঙচুর করে যৌথবাহিনী৷ ঘটনার আগে থেকেই পলাতক রয়েছেন এ জামায়াত নেতা৷
ছবি: DW
আক্রান্তদের অভিযোগ
জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আব্দুল ওহাব৷ মালোপাড়ায় সাম্প্রদায়িক হামলার জন্য জামায়াত শিবির ছাড়াও স্থানীয় আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলকেও দায়ী করেছেন অনেকে৷ সাবেক এই সাংসদ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়েছেন৷ সেখানে নতুন প্রার্থী হিসেবে রণজিৎ রায় মনোনয়ন পাওয়ায় এই দুই জনের সমর্থকদের মাঝে বেশ উত্তেজনা ছিল পুরো নির্বাচনের সময়টায়৷
ছবি: DW
গণধর্ষণ
যশোরের আরেক ভয়াল জনপদ মনিরামপুর উপজেলার হাজরাইল গ্রামের দাসপাড়ার বাসিন্দা অনারতী দাস৷ ৭ জানুয়ারি রাতে তাঁর সামনেই অস্ত্রের মুখে একদল দুবৃত্ত গণধর্ষণ করে পুত্রবধু মনিমালা দাস আর ভাতিজি রূপালী দাসকে৷
ছবি: DW
ভয়াবহ দৃশ্যের প্রত্যক্ষদর্শী
কার্তিক দাসকেও সেদিন রাতে সেই ভয়াবহ দৃশ্যের প্রত্যক্ষদর্শী হতে হয়েছিল৷ দাসপাড়ায় গণধর্ষণের শিকার নিম্নবর্ণের হিন্দু মনিমালা দাসের শ্বশুর ও রূপালী দাসের চাচা তিনি৷
ছবি: DW
বাড়িঘর ছেড়েছেন
দাসপাড়ায় গণধর্ষণের শিকার হওয়া পরিবার দুটি আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়েছেন৷
ছবি: DW
শুধুই আতঙ্ক
দাসপাড়ার এক নারী৷ দাসপাড়ার নারীদের এখন নির্ঘুম রাত কাটে আতঙ্কে৷
ছবি: DW
14 ছবি1 | 14
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর যেখানে অমুসলিমদের সংখ্যা ছিল ২৯ দশমিক ৭ শতাংশ, সেখানে বর্তমানে এ সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৯ দশমিক ৭ শতাংশে৷ রানা দাশগুপ্তের কথায়, ‘‘সংখ্যালঘুদের প্রতি মানবতাবিরোধী অপরাধ রোধ করা না গেলে, তা হবে ১৯৭১-এ অর্জিত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্য একটি জাতীয় লজ্জা৷ তাই সরকারকে এখনই দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে৷''
সর্বশেষ নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়ায় গত বৃহস্পতিবার রাতে এক খ্রিষ্টান দম্পতিকে মারধর করে অচেতন অবস্থায় ফেলে রেখে যায় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তর৷ সাবেক স্কুলশিক্ষক গ্যাব্রিয়েল কস্তা ও তাঁর স্ত্রী বীণা পিরিসের ঘরে ঢুকে তাঁদের পিটিয়ে অচেতন করা হয়৷ ঘটনার পর কয়েকদিন চলে গেলেও পুলিশ সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আটক করে দায় সেরেছে৷ কিন্তু মারধোরের কারণই এখনও তারা শনাক্ত করতে পারেনি৷ পুলিশ শুধু বলছে, ঘটনাটি রহস্যজনক৷
ঠাকুরগাঁওয়ের সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলামসহ আওয়ামী লীগের কয়েকজন সংসদ সদস্য ও নেতার বিরুদ্ধে সংখ্যালঘুদের জমি দখলের অভিযোগ অনুসন্ধান করেছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র, ব্লাস্ট, পূজা উৎযাপন পরিষদ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদসহ ৮টি সংগঠনের প্রতিনিধিরা৷ গত ৮ জানুয়ারি অনুসন্ধান দলটি এক সাংবাদিক সম্মেলনে তাদের প্রতিবেদন উপস্থান করে৷ সেখানে ৮টি সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন৷
রানা দাশগুপ্ত
This browser does not support the audio element.
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘ঠাকুরগাঁওয়ের ঘটনাতে এমপি দবিরুল ইসলাম সরাসরি জড়িত থাকার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে৷ এছাড়া ফরিদপুরে ঘটনাতেও একজন মন্ত্রীর নামও এসেছে৷ পিরোজপুরের এমপি একেএমএ আউয়ালও একইভাবে সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করছে৷ দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ক্ষত্রিয় পরিবারের ৫৫টি পরিবারের ওপর অত্যাচার ও নির্যাতন হচ্ছে৷ এর সঙ্গে জড়িত এমপি মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার৷ এরা সবাই সরকারি দলের মন্ত্রী ও এমপি৷''
সেখানে লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, ‘জোরপূর্বক ভূমিদখল, সহিংস হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা একাধিকবার ঘটছে৷ পুলিশ এ সব বিষয় জানলেও, এখন পর্যন্ত এ সব ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি৷ কোনো নির্যাতনকারী গ্রেপ্তার হয়নি৷ স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকাও বিস্মিত করছে৷ শুধু ঠাকুরগাঁও নয়, সারা দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি দখলের একের পর এক একই ধরণের ঘটনা এবং তাতে প্রশাসনের নীরব ভূমিকা দেখে আমরা হতবাক হচ্ছি৷'
ঐ অনুষ্ঠানে ঠাঁকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী থেকে আসা ভুক্তভোগী জিতেন চন্দ্র সিং এমপি দবিরুলের ছেলে মাজহারুল ইসলামের নেতৃত্বে তার ছোট ভাই ভাকারাম সিংয়ের উপর হামলার বর্ণনা দেন৷ তিনি বলেন, ‘‘তারা জমি দখল করতে এসেছিল৷ এক পর্যায়ে তারা ভাকারামকে পায়ে-পিঠে চাপাতি দিয়ে কোপায়৷'' ওই হামলার পর তাঁর ছেলে অভিলাল সিং পালিয়ে দিল্লি চলে গেছে বলেও জানান জিতেন চন্দ্র সিং৷
নারায়ণ সাহা মনি
This browser does not support the audio element.
মহানগর পূজা উৎযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ সাহা মনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘১৯০৮ সালে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের জমি ছিল ২০ বিঘা৷ বিভিন্নভাবে দখলের পর এখন ঢাকেশ্বরী মন্দিরের জমি আছে মাত্র ৬ বিঘা৷ ঢাকেশ্বরী মন্দিরের জমিই যদি এভাবে দখল হয়ে যায়, তাহলে সাধারণ হিন্দু বা সংখ্যালঘুদের অবস্থা কত কঠিন? সারাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের পুরো চিত্র মিডিয়ায় আসে না৷ কিছু আসে, কিছু লোকচক্ষুর অন্তরালেই থেকে যায়৷ কিন্তু একটি ঘটনায়ও কোনো আসামী গ্রেপ্তার বা বিচার পাওয়ার কোনো নজির এই সরকারের আমলেও নেই৷''
সাম্প্রদায়িক নির্যাতন বন্ধে সরকারের পদক্ষেপ দাবি করে সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি৷ একই সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতো সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠনের আহ্বান জানানো হয়েছে৷ সম্প্রতি আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে বৈঠক করে সংগঠনটির নেতারা এই দাবি জানান৷ আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘‘আমরা সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের দাবি তুলে ধরেছি৷ মন্ত্রী আমাদের প্রস্তাবকে নীতিগতভাবে সম্মতি জানিয়েছেন৷'' আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে আলাপ-আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে৷''
যে দেশগুলোতে সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘মাইনোরিটি রাইটস গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল’ প্রতিবছর যেসব দেশে সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে আছে তার তালিকা প্রকাশ করে৷ ছবিঘরে ২০১৫ সালের জুলাইতে প্রকাশিত সবশেষ প্রতিবেদনের তথ্য থাকছে৷
ছবি: DW
প্রথম: সিরিয়া
সুন্নিপ্রধান দেশ সিরিয়ায় শিয়া, বিশেষ করে আলাউইট সম্প্রদায়ের লোকজন সহ খ্রিষ্টান, কুর্দ, ফিলিস্তিনি ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা হুমকির মুখে রয়েছে৷ আইএস, হিজবুল্লাহ ছাড়াও সিরিয়ার শাসকপন্থি গ্রুপ সাবিহা এ সব হুমকির অন্যতম কারণ৷ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘মাইনোরিটি রাইটস গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল’ হুমকি বলতে গণহত্যা, রাজনৈতিক হত্যা ও সহিংস দমননীতি বুঝিয়েছে৷
ছবি: Reuters/SANA
দ্বিতীয়: সোমালিয়া
সরকারের সঙ্গে আল-শাবাব জঙ্গি গোষ্ঠীর সংঘাত এখনও চলছে৷ আর এর শিকার হচ্ছে বান্টু (বেশিরভাগ খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী) ও বেনাদিরি (বেশিরভাগ ইসলাম ধর্মাবলম্বী) গোষ্ঠীর মানুষজন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Y. Warsame
তৃতীয়: সুদান
দেশটির দারফুর অঞ্চলে বসবাসকারী নন-আরব মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর খার্তুম সরকারের নিপীড়নের অভিযোগে দু’টি বিদ্রোহী গোষ্ঠী ২০০৩ সালে সরকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে৷ সেটি এখনও চলছে৷ ফলে দারফুরে বসবাসকারী ফুর, জাঘাওয়া, মাসালিট সহ অন্যান্য গোষ্ঠীর মানুষদের জীবন সংকটে রয়েছে৷
ছবি: GetttyImages/AFP/C. Lomodon
চতুর্থ: আফগানিস্তান
বিদেশি সৈন্য চলে যাবার পর সেখানে আবারও তালেবানের শক্তি বেড়েছে৷ ফলে হাজারা, পশতুন, তাজিক, উজবেক, তুর্কমেন, বেলুচি সহ অন্যান্য গোষ্ঠীর মানুষের উপর নির্যাতনের আশঙ্কা বাড়ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Aref Karimi
পঞ্চম: ইরাক
দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৫ শতাংশ শিয়া সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত৷ তারপরও সেখানে শিয়া গোষ্ঠীর লোকজনের জীবন বিপদমুক্ত নয়৷ সংকটে রয়েছে সুন্নি, কুর্দ, তুর্কমেন, খ্রিষ্টান, ইয়াজিদি, শাবাক, বাহাই, ফিলিস্তনি সহ অন্যান্যদের জীবনও৷
ছবি: Reuters/T. Al-Sudani
ষষ্ঠ: ডিআর কঙ্গো
স্থানীয় মায়ি-মায়ি মিলিশিয়া, উগান্ডা ও রুয়ান্ডার বিদ্রোহী এবং কাতাঙ্গান বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কারণে মানুষের প্রাণ যাওয়া অব্যাহত আছে৷ ফলে সংকটে আছে হেমা, লেন্ডু, হুতু, লুবা, লুন্ডা, টুটসি, বাটওয়া সহ আরও কয়েকটি গোষ্ঠীর জনগণ৷
বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের হামলায় সংকটে রয়েছে ইসলাম ধর্মাবলম্বী রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের লোকজন৷ এছাড়া কচিন, কারেনি, কারেন, মন, রাখাইন, শান, চিন এবং ওয়া জাতির জনগণও ভালো নেই সেখানে৷
ছবি: Reuters
বাংলাদেশ, ভারতের অবস্থান
‘মাইনোরিটি রাইটস গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল’-এর তালিকায় বাংলাদেশ ৪১তম আর ভারত ৫৪তম অবস্থানে আছে৷ বাংলাদেশে আহমদিয়া, হিন্দু সহ অন্য ধর্মাবলম্বীরা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী উপজাতির লোকেদের জীবন হুমকির মুখে রয়েছে বলে জানানো হয়েছে৷ আর ভারতে আসামিজ, বোড়ো, নাগা, ত্রিপুরা সহ অন্যান্য উপজাতি এবং কাশ্মিরী, শিখ, মুসলিম ও দলিতরা হুমকির মুখে আছে৷ প্রতিবেদনটি পড়তে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: DW
9 ছবি1 | 9
ডয়চে ভেলের অপর এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘সরকার ও সব রাজনৈতিক দলকে দ্রুততার সঙ্গে সংখ্যালঘু সেল গঠন করে বিশেষ বিবেচনায় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছি৷ একদিকে স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক শক্তির ছত্রচ্ছায়ায় ঠিক পাকিস্তানি আমলের মতোই সংখ্যালঘুদের দেশ থেকে বিতাড়নের চেষ্টা চালানো হচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষমতাসীন জোটেরও কেউ কেউ অনাকাঙ্খিতভাবে সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখলের প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছেন৷''
শুধু তাই নয়, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রকাশিত নির্যাতনের ক'টি সচিত্র খবরের ভিত্তিতে অত্যন্ত উদ্বেগ জানান হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের এই নেতা৷ ২০১০ সালের শেষের দিকে গঠিত ‘শাহাবুদ্দিন কমিশন'-এর সুপারিশ বাস্তবায়নের তাগিদও দিয়েছেন তিনি৷
২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত সাতটি সাম্প্রদায়িক ঘটনার কথা উল্লেখ করে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘১৫ জন আদিবাসীকে হত্যা, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনসহ সাতজন আদিবাসী নারীকে হত্যা, ১২৬ জন আদিবাসীকে শারীরিক নির্যাতন, ৫৪টিরও বেশি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া এবং উত্তরবঙ্গে ৬০টি পরিবারের ৩০০ জন আদিবাসীকে ভয়ে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে৷ নির্যাতনের কারণে ক্রমাগত এমন দেশত্যাগের ফলে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু জনসংখ্যা উদ্বেগজনক হারে কমছে৷
বন্ধু, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়ার প্রধান কারণ কী বলে আপনার মনে হয়? জানান নীচের ঘরে৷