‘‘সব সরকারের আমলেই আক্রান্ত হচ্ছে সংখ্যালঘুরা'' – বর্তমান সরকারের আমলে সংখ্যালঘুদের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত এমান মন্তব্যই করেন৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসেই সংখ্যালঘুদের নির্যাতন শুরু করে৷ বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেয়া, জমি দখল করা, মারধোর, এমনকি সংখ্যালঘু পরিবারের নারীদের ধর্ষণের মতো অপরাধেও জড়িতে পড়ে তারা৷ এরপর ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ৷ প্রথমদিকে সংখ্যালঘুদের ওপর খুব একটা নির্যাতন না হলেও, বছরখানেক যাবৎ নির্যাতনের ভয়াবহ মাত্রা যুক্ত হয়েছে৷ আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা সংখ্যালঘুদের জমি দখল করে নিচ্ছে, ভয়ভীতি দেখিয়ে অনেককে দেশত্যাগেও বাধ্য করা হচ্ছে৷ অথচ সরকারের তরফ থেকে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না৷''
মালোপাড়ার হিন্দুদের কান্না থামেনি
বাংলাদেশের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেয়াকে ঘিরে যশোরের অভয়নগর উপজেলার মালোপাড়ায় ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় হিন্দুদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়ার পাশাপাশি লুটপাটও করা হয়৷
ছবি: DW
নেই নিরাপত্তাকর্মীর সাড়া
যশোরের অভয়নগরের চাপাতলী গ্রামের প্রবেশপথে পুলিশের সতর্ক অবস্থান৷ গত ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের দিন এই গ্রামের নিম্নবর্ণের হিন্দু অধ্যুষিত মালোপাড়ায় বসবাসরতদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটে৷ আক্রান্তরা জানান, ঘটনাস্থলের মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে থানার অবস্থান হলেও অনেক ফোন করেও সে সময়ে পুলিশ কিংবা কোনো নিরাপত্তাকর্মীর সাড়া মেলেনি৷
ছবি: DW
‘নদী ঠাকুর’
দুর্বৃত্তদের হামালায় লণ্ডভণ্ড মায়া রানি বিশ্বাসের একমাত্র মাথা গোঁজার ছোট্ট নিবাস৷ সেদিন হামলা শুরু হলে পাশের বুড়ি ভৈরব নদীতে ঝাঁপ দিয়ে ওপারে উঠে প্রাণে বেঁচে যান বিধবা এই নারী৷ তাঁর ভাষায় ‘নদী ঠাকুর’ সেদিন না থাকলে জানটা হয়ত থাকতো না৷
ছবি: DW
প্রাণ বাঁচাতে নদীতে
নিজের ঘরের ভাঙা আসবাব, টেলিভিশনের পাশে মালোপাড়ার গৃহবধু উজ্জ্বলা বিশ্বাস৷ হামলাকারীদের ভয়াবহ রূপ সামান্য দেখেছিলেন তিনি৷ প্রাণ বাঁচাতে তিনিও ঝাঁপ দেন বুড়ি ভৈরবে৷ হামলার সময়ে তাঁর মনে হয়েছিল যে ভগবান সেদিন পাশে ছিলেন না৷
ছবি: DW
বই-পত্র পুড়িয়ে দিয়েছে
কলেজ পড়ুয়া মঙ্গলা বিশ্বাসের বই-পত্র, এমনকি সার্টিফিকেটও পুড়িয়ে দিয়েছে হামলাকারীরা৷
ছবি: DW
সুন্দর স্বপ্নে চির
হামলাকারীদের ভেঙে দেয়া আয়নায় কলেজ পড়ুয়া মঙ্গলা বিশ্বাসের প্রতিবিম্ব৷ বাড়ির দেয়ালে টাঙানো এই ভাঙা আয়নার মতোই মঙ্গলার সুন্দর স্বপ্নেও চির ধরিয়েছে হামলাকারীরা৷ মঙ্গলার আক্ষেপ, তাঁর বই-পত্র আর সার্টিফিকেট কী দোষ করলো?
ছবি: DW
আত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রয়
হামলার ছয় দিন পরে এঁরা ফিরছেন বাড়িতে৷ হামলার সময় পার্শ্ববর্তী গ্রামে আত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাঁরা৷
ছবি: DW
হামলার প্রত্যক্ষদর্শী
৮৬ বছর বয়সি মৃত্যুঞ্জয় সরকার সেদিনের হামলার প্রত্যক্ষদর্শী৷ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও দেশ ছাড়েননি তিনি৷ কিন্তু হামলার পর তাঁর মনে হচ্ছিল যে, সে সময়ে ছেড়ে যাওয়াটাই উচিত ছিল তাঁর৷
ছবি: DW
গাছও রেহাই পায়নি
বাড়ি-ঘরের পাশাপাশি মালোপাড়ার গাছও জ্বালিয়ে দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা৷
ছবি: DW
পলাতক জামায়াত নেতা
মালোপাড়ায় হামলার পরে চাপাতলী গ্রামের পার্শ্ববর্তী গ্রাম বালিয়াডাঙ্গায় স্থানীয় জামায়াতে ইসলামীর থানা আমীর মাওলানা আব্দুল আজিজের বাড়ি ভাঙচুর করে যৌথবাহিনী৷ ঘটনার আগে থেকেই পলাতক রয়েছেন এ জামায়াত নেতা৷
ছবি: DW
আক্রান্তদের অভিযোগ
জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আব্দুল ওহাব৷ মালোপাড়ায় সাম্প্রদায়িক হামলার জন্য জামায়াত শিবির ছাড়াও স্থানীয় আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলকেও দায়ী করেছেন অনেকে৷ সাবেক এই সাংসদ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়েছেন৷ সেখানে নতুন প্রার্থী হিসেবে রণজিৎ রায় মনোনয়ন পাওয়ায় এই দুই জনের সমর্থকদের মাঝে বেশ উত্তেজনা ছিল পুরো নির্বাচনের সময়টায়৷
ছবি: DW
গণধর্ষণ
যশোরের আরেক ভয়াল জনপদ মনিরামপুর উপজেলার হাজরাইল গ্রামের দাসপাড়ার বাসিন্দা অনারতী দাস৷ ৭ জানুয়ারি রাতে তাঁর সামনেই অস্ত্রের মুখে একদল দুবৃত্ত গণধর্ষণ করে পুত্রবধু মনিমালা দাস আর ভাতিজি রূপালী দাসকে৷
ছবি: DW
ভয়াবহ দৃশ্যের প্রত্যক্ষদর্শী
কার্তিক দাসকেও সেদিন রাতে সেই ভয়াবহ দৃশ্যের প্রত্যক্ষদর্শী হতে হয়েছিল৷ দাসপাড়ায় গণধর্ষণের শিকার নিম্নবর্ণের হিন্দু মনিমালা দাসের শ্বশুর ও রূপালী দাসের চাচা তিনি৷
ছবি: DW
বাড়িঘর ছেড়েছেন
দাসপাড়ায় গণধর্ষণের শিকার হওয়া পরিবার দুটি আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়েছেন৷
ছবি: DW
শুধুই আতঙ্ক
দাসপাড়ার এক নারী৷ দাসপাড়ার নারীদের এখন নির্ঘুম রাত কাটে আতঙ্কে৷
ছবি: DW
14 ছবি1 | 14
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর যেখানে অমুসলিমদের সংখ্যা ছিল ২৯ দশমিক ৭ শতাংশ, সেখানে বর্তমানে এ সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৯ দশমিক ৭ শতাংশে৷ রানা দাশগুপ্তের কথায়, ‘‘সংখ্যালঘুদের প্রতি মানবতাবিরোধী অপরাধ রোধ করা না গেলে, তা হবে ১৯৭১-এ অর্জিত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্য একটি জাতীয় লজ্জা৷ তাই সরকারকে এখনই দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে৷''
সর্বশেষ নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়ায় গত বৃহস্পতিবার রাতে এক খ্রিষ্টান দম্পতিকে মারধর করে অচেতন অবস্থায় ফেলে রেখে যায় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তর৷ সাবেক স্কুলশিক্ষক গ্যাব্রিয়েল কস্তা ও তাঁর স্ত্রী বীণা পিরিসের ঘরে ঢুকে তাঁদের পিটিয়ে অচেতন করা হয়৷ ঘটনার পর কয়েকদিন চলে গেলেও পুলিশ সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আটক করে দায় সেরেছে৷ কিন্তু মারধোরের কারণই এখনও তারা শনাক্ত করতে পারেনি৷ পুলিশ শুধু বলছে, ঘটনাটি রহস্যজনক৷
ঠাকুরগাঁওয়ের সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলামসহ আওয়ামী লীগের কয়েকজন সংসদ সদস্য ও নেতার বিরুদ্ধে সংখ্যালঘুদের জমি দখলের অভিযোগ অনুসন্ধান করেছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র, ব্লাস্ট, পূজা উৎযাপন পরিষদ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদসহ ৮টি সংগঠনের প্রতিনিধিরা৷ গত ৮ জানুয়ারি অনুসন্ধান দলটি এক সাংবাদিক সম্মেলনে তাদের প্রতিবেদন উপস্থান করে৷ সেখানে ৮টি সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন৷
রানা দাশগুপ্ত
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘ঠাকুরগাঁওয়ের ঘটনাতে এমপি দবিরুল ইসলাম সরাসরি জড়িত থাকার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে৷ এছাড়া ফরিদপুরে ঘটনাতেও একজন মন্ত্রীর নামও এসেছে৷ পিরোজপুরের এমপি একেএমএ আউয়ালও একইভাবে সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করছে৷ দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ক্ষত্রিয় পরিবারের ৫৫টি পরিবারের ওপর অত্যাচার ও নির্যাতন হচ্ছে৷ এর সঙ্গে জড়িত এমপি মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার৷ এরা সবাই সরকারি দলের মন্ত্রী ও এমপি৷''
সেখানে লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, ‘জোরপূর্বক ভূমিদখল, সহিংস হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা একাধিকবার ঘটছে৷ পুলিশ এ সব বিষয় জানলেও, এখন পর্যন্ত এ সব ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি৷ কোনো নির্যাতনকারী গ্রেপ্তার হয়নি৷ স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকাও বিস্মিত করছে৷ শুধু ঠাকুরগাঁও নয়, সারা দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি দখলের একের পর এক একই ধরণের ঘটনা এবং তাতে প্রশাসনের নীরব ভূমিকা দেখে আমরা হতবাক হচ্ছি৷'
ঐ অনুষ্ঠানে ঠাঁকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী থেকে আসা ভুক্তভোগী জিতেন চন্দ্র সিং এমপি দবিরুলের ছেলে মাজহারুল ইসলামের নেতৃত্বে তার ছোট ভাই ভাকারাম সিংয়ের উপর হামলার বর্ণনা দেন৷ তিনি বলেন, ‘‘তারা জমি দখল করতে এসেছিল৷ এক পর্যায়ে তারা ভাকারামকে পায়ে-পিঠে চাপাতি দিয়ে কোপায়৷'' ওই হামলার পর তাঁর ছেলে অভিলাল সিং পালিয়ে দিল্লি চলে গেছে বলেও জানান জিতেন চন্দ্র সিং৷
নারায়ণ সাহা মনি
মহানগর পূজা উৎযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ সাহা মনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘১৯০৮ সালে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের জমি ছিল ২০ বিঘা৷ বিভিন্নভাবে দখলের পর এখন ঢাকেশ্বরী মন্দিরের জমি আছে মাত্র ৬ বিঘা৷ ঢাকেশ্বরী মন্দিরের জমিই যদি এভাবে দখল হয়ে যায়, তাহলে সাধারণ হিন্দু বা সংখ্যালঘুদের অবস্থা কত কঠিন? সারাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের পুরো চিত্র মিডিয়ায় আসে না৷ কিছু আসে, কিছু লোকচক্ষুর অন্তরালেই থেকে যায়৷ কিন্তু একটি ঘটনায়ও কোনো আসামী গ্রেপ্তার বা বিচার পাওয়ার কোনো নজির এই সরকারের আমলেও নেই৷''
সাম্প্রদায়িক নির্যাতন বন্ধে সরকারের পদক্ষেপ দাবি করে সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি৷ একই সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতো সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠনের আহ্বান জানানো হয়েছে৷ সম্প্রতি আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে বৈঠক করে সংগঠনটির নেতারা এই দাবি জানান৷ আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘‘আমরা সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের দাবি তুলে ধরেছি৷ মন্ত্রী আমাদের প্রস্তাবকে নীতিগতভাবে সম্মতি জানিয়েছেন৷'' আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে আলাপ-আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে৷''
যে দেশগুলোতে সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘মাইনোরিটি রাইটস গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল’ প্রতিবছর যেসব দেশে সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে আছে তার তালিকা প্রকাশ করে৷ ছবিঘরে ২০১৫ সালের জুলাইতে প্রকাশিত সবশেষ প্রতিবেদনের তথ্য থাকছে৷
ছবি: DW
প্রথম: সিরিয়া
সুন্নিপ্রধান দেশ সিরিয়ায় শিয়া, বিশেষ করে আলাউইট সম্প্রদায়ের লোকজন সহ খ্রিষ্টান, কুর্দ, ফিলিস্তিনি ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা হুমকির মুখে রয়েছে৷ আইএস, হিজবুল্লাহ ছাড়াও সিরিয়ার শাসকপন্থি গ্রুপ সাবিহা এ সব হুমকির অন্যতম কারণ৷ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘মাইনোরিটি রাইটস গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল’ হুমকি বলতে গণহত্যা, রাজনৈতিক হত্যা ও সহিংস দমননীতি বুঝিয়েছে৷
ছবি: Reuters/SANA
দ্বিতীয়: সোমালিয়া
সরকারের সঙ্গে আল-শাবাব জঙ্গি গোষ্ঠীর সংঘাত এখনও চলছে৷ আর এর শিকার হচ্ছে বান্টু (বেশিরভাগ খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী) ও বেনাদিরি (বেশিরভাগ ইসলাম ধর্মাবলম্বী) গোষ্ঠীর মানুষজন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Y. Warsame
তৃতীয়: সুদান
দেশটির দারফুর অঞ্চলে বসবাসকারী নন-আরব মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর খার্তুম সরকারের নিপীড়নের অভিযোগে দু’টি বিদ্রোহী গোষ্ঠী ২০০৩ সালে সরকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে৷ সেটি এখনও চলছে৷ ফলে দারফুরে বসবাসকারী ফুর, জাঘাওয়া, মাসালিট সহ অন্যান্য গোষ্ঠীর মানুষদের জীবন সংকটে রয়েছে৷
ছবি: GetttyImages/AFP/C. Lomodon
চতুর্থ: আফগানিস্তান
বিদেশি সৈন্য চলে যাবার পর সেখানে আবারও তালেবানের শক্তি বেড়েছে৷ ফলে হাজারা, পশতুন, তাজিক, উজবেক, তুর্কমেন, বেলুচি সহ অন্যান্য গোষ্ঠীর মানুষের উপর নির্যাতনের আশঙ্কা বাড়ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Aref Karimi
পঞ্চম: ইরাক
দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৫ শতাংশ শিয়া সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত৷ তারপরও সেখানে শিয়া গোষ্ঠীর লোকজনের জীবন বিপদমুক্ত নয়৷ সংকটে রয়েছে সুন্নি, কুর্দ, তুর্কমেন, খ্রিষ্টান, ইয়াজিদি, শাবাক, বাহাই, ফিলিস্তনি সহ অন্যান্যদের জীবনও৷
ছবি: Reuters/T. Al-Sudani
ষষ্ঠ: ডিআর কঙ্গো
স্থানীয় মায়ি-মায়ি মিলিশিয়া, উগান্ডা ও রুয়ান্ডার বিদ্রোহী এবং কাতাঙ্গান বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কারণে মানুষের প্রাণ যাওয়া অব্যাহত আছে৷ ফলে সংকটে আছে হেমা, লেন্ডু, হুতু, লুবা, লুন্ডা, টুটসি, বাটওয়া সহ আরও কয়েকটি গোষ্ঠীর জনগণ৷
বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের হামলায় সংকটে রয়েছে ইসলাম ধর্মাবলম্বী রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের লোকজন৷ এছাড়া কচিন, কারেনি, কারেন, মন, রাখাইন, শান, চিন এবং ওয়া জাতির জনগণও ভালো নেই সেখানে৷
ছবি: Reuters
বাংলাদেশ, ভারতের অবস্থান
‘মাইনোরিটি রাইটস গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল’-এর তালিকায় বাংলাদেশ ৪১তম আর ভারত ৫৪তম অবস্থানে আছে৷ বাংলাদেশে আহমদিয়া, হিন্দু সহ অন্য ধর্মাবলম্বীরা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী উপজাতির লোকেদের জীবন হুমকির মুখে রয়েছে বলে জানানো হয়েছে৷ আর ভারতে আসামিজ, বোড়ো, নাগা, ত্রিপুরা সহ অন্যান্য উপজাতি এবং কাশ্মিরী, শিখ, মুসলিম ও দলিতরা হুমকির মুখে আছে৷ প্রতিবেদনটি পড়তে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: DW
9 ছবি1 | 9
ডয়চে ভেলের অপর এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘সরকার ও সব রাজনৈতিক দলকে দ্রুততার সঙ্গে সংখ্যালঘু সেল গঠন করে বিশেষ বিবেচনায় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছি৷ একদিকে স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক শক্তির ছত্রচ্ছায়ায় ঠিক পাকিস্তানি আমলের মতোই সংখ্যালঘুদের দেশ থেকে বিতাড়নের চেষ্টা চালানো হচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষমতাসীন জোটেরও কেউ কেউ অনাকাঙ্খিতভাবে সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখলের প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছেন৷''
শুধু তাই নয়, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রকাশিত নির্যাতনের ক'টি সচিত্র খবরের ভিত্তিতে অত্যন্ত উদ্বেগ জানান হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের এই নেতা৷ ২০১০ সালের শেষের দিকে গঠিত ‘শাহাবুদ্দিন কমিশন'-এর সুপারিশ বাস্তবায়নের তাগিদও দিয়েছেন তিনি৷
২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত সাতটি সাম্প্রদায়িক ঘটনার কথা উল্লেখ করে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘১৫ জন আদিবাসীকে হত্যা, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনসহ সাতজন আদিবাসী নারীকে হত্যা, ১২৬ জন আদিবাসীকে শারীরিক নির্যাতন, ৫৪টিরও বেশি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া এবং উত্তরবঙ্গে ৬০টি পরিবারের ৩০০ জন আদিবাসীকে ভয়ে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে৷ নির্যাতনের কারণে ক্রমাগত এমন দেশত্যাগের ফলে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু জনসংখ্যা উদ্বেগজনক হারে কমছে৷
বন্ধু, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়ার প্রধান কারণ কী বলে আপনার মনে হয়? জানান নীচের ঘরে৷