সংখ্যা কমাতে জলহস্তি ভারত ও মেক্সিকোয় পাঠাবে কলম্বিয়া
৬ মার্চ ২০২৩
কুখ্যাত মাদক সম্রাট পাবলো এসকোবারের মৃত্যুর ৩০ বছর পরেও তার রেখে যাওয়া শখের জলহস্তিগুলো কলম্বিয়াকে বেকায়দায় ফেলছে৷
ছবি: Juancho Torres/AA/picture alliance
বিজ্ঞাপন
প্রায় ১ বছর ধরে অতিরিক্ত জলহস্তিগুলোকে ভারত ও মেক্সিকো স্থানান্তরের পরিকল্পনা চলছে৷ আপাতত ৭০টি জলহস্তি দেশ দুটির চিড়িয়াখানা ও অভয়ারণ্যে পাঠানো হবে বলে কলম্বিয়ার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে৷ ভারতে ৬০টি আর মেক্সিকোয় ১০টি পাঠানো হবে৷
শখের বসে ১৯৮০'র দশকে অবৈধভাবে আফ্রিকা থেকে ৪টি জলহস্তী এনেছিলেন এসকোবার৷ তার খামারবাড়ি থেকে বংশবিস্তার করেছে জলহস্তি৷
১৯৯৩ সালে পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার পর এসকোবারের খামারবাড়ি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়৷ খামারবাড়ি পরিত্যক্ত হয়ে গেলে জলহস্তিরা অবাধে বংশবিস্তার করে৷ এখন তাদের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গেছে, যা এখন কলম্বিয়া সরকারের মাথা ব্যাথার কারণ৷
এমন পরিস্থিতিতে, গত বছর কলম্বিয়া জলহস্তিগুলোকে 'বিষাক্ত ও আক্রমণাত্মক প্রজাতি' হিসেবে ঘোষণা করে৷
এদিকে, বিজ্ঞানীর সতর্ক করে বলেছেন, কলম্বিয়ার জলহস্তি জীববৈচিত্র্যের প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে৷ তাদের মল নদীর পানিকে দূষিত করে, যা অন্যান্য প্রাণীর খাদ্য সংকট তৈরি করতে পারে৷
বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রাণি রক্ষায় বড় উদ্যোগ
04:25
This browser does not support the video element.
বিশাল আকৃতির একেকটি জলহস্তির ওজন প্রায় ৩ টন৷ পরিকল্পনা অনুযায়ী, জলহস্তিগুলোকে খাবারের লোভ দেখিয়ে বড় আকারের লোহার খাঁচায় আটকে ট্রাকে করে বিমানবন্দরে নেওয়া হবে৷ সেখান থেকে উড়োজাহাজে করে ভারত ও মেক্সিকোর পশু অভয়ারণ্য ও চিড়িয়াখানায় পাঠানো হবে৷
যেসব জলহস্তিগুলো খামারবাড়ির বাইরে বাস করছে মূলত সেগুলোকেই স্থানান্তর করা হবে৷ কারণ, সেগুলো বড় ধরনের হুমকি৷
আশা করা হচ্ছে, ৭০টি জলহস্তি ভারত ও মেক্সিকোয় পাঠানোর পর তাদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রিত হবে৷ কিছু জলহস্তি ইকুয়েডরেও পাঠানো হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ এদিকে, বোতসওয়ানা এবং ফিলিপাইন্সও কলম্বিয়ার জলহস্তি নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানা গেছে৷
একেএ/এসিবি (এপি, ইইই)
জলহস্তির জন্মনিয়ন্ত্রণে তির
জলহস্তি যে হারে বাড়ছে তাতে ভবিষ্যতে কলম্বিয়ার অনেক মানুষের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে৷ তাই কলম্বিয়ায় চলছে বিশেষ ধরনের তির ছুঁড়ে জলহস্তির প্রজনন ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের অভিযান৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: REUTERS
৯০ থেকে হাজারের আশঙ্কা
৩০ বছর আগে ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানার জন্য কিছু জলহস্তি আমদানি করেছিলেন মাদক মাফিয়া পাবলো এসকোবার৷ ইতিমধ্যে হিংস্র প্রকৃতির এই জলহস্তির সংখ্যা ৯০ ছাড়িয়েছে৷ বায়োলজিক্যাল কনজারভেশন জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে কলম্বিয়ায় জলহস্তির সংখ্যা হাজার ছাড়াতে পারে৷
ছবি: Cornare/REUTERS
ঝুঁকির মুখে মানুষ ও পরিবেশ
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বর্তমান হারে সংখ্যাবৃদ্ধি চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে জলহস্তির আক্রমণে অনেক মানুষের মৃত্যু হতে পারে৷ দেশময় ছড়িয়ে পড়তে থাকা এই প্রাণীর মল-মূত্রে জলজ পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে৷ তাছাড়া প্রচুর ফসল ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে এসব প্রাণীর মাধ্যমে৷
ছবি: Cornare/REUTERS
যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা
জনজীবন এবং পরিবেশকে শঙ্কামুক্ত রাখতে কলম্বিয়ায় জলহস্তির জন্মনিয়ন্ত্রণ এখন সময়ের দাবি৷ তবে এই জলহস্তিদের অস্ত্রোপচার করা ঝুঁকিপূর্ণ এবং ব্যয়সাপেক্ষ৷ তাই কলম্বিয়ার সহায়তায় এগিয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার’স অ্যানিমেল অ্যান্ড প্ল্যান্ট হেল্থ ইন্সপেকশন সার্ভিস (এপিএইচআইএস)৷ ৭০ ডোজ গনাকন পাঠিয়েছে তারা৷ ওপরের ছবিতে জলহস্তির শরীরে গনাকন ছোঁড়ার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত এক বিজ্ঞানী৷
ছবি: Cornare/REUTERS
বিশেষ অভিযান
আক্রমণাত্মক প্রাণীদের জন্য তৈরি গর্ভনিরোধক গনাকন৷ এখন তির দিয়ে এই ওষুধ ছোঁড়া হচ্ছে কলম্বিয়ার জলহস্তিদের গায়ে৷ ওপরের ছবিতে বিশেষ ধরনের তিরে গনাকন প্রবেশ করানোর মুহূর্ত৷
ছবি: REUTERS
হরিণের তির জলহস্তির গায়ে
এতদিন এই ধরনের তিরের সহায়তায় হরিণের গায়ে গর্ভনিরোধক ছোঁড়া হতো৷ এখন সেই ‘অস্ত্রে ঘায়েল’ হচ্ছে জলহস্তি৷