চারজন পুলিশকর্মী মিলে বেধড়ক পিটিয়েছেন ফরাসি কৃষ্ণাঙ্গ সংগীতশিল্পী মাইকেল জেকলারকে, এই অভিযোগে এর প্রতিবাদে উত্তাল ফ্রান্স৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার চারজন পুলিশকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে৷ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, কৃষ্ণাঙ্গ সংগীতশিল্পী মাইকেল জেকলারকে পিটিয়েছেন তারা৷ জেকলারকে মারার একটি ভিডিও ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে লুপসাইডার নামের একটি নিউজ ওয়েবসাইটে৷
ফ্রান্সে বর্তমানে আলোচিত একটি বিল আইনে পরিণত হলে যে কোনো পুলিশি কার্যকলাপের ছবি বা ভিডিওধারণ আইনত নিষিদ্ধ হয়ে যাবে৷ এই আইন ফ্রান্সের জাতীয় অ্যাসেমব্লিতে পাস হলেও এখন সেনেটে পাস হবার অপেক্ষায়৷ শুক্রবারে এই ঘটনার পর প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এটিকে ‘লজ্জাজনক’ আখ্যা দিয়েছেন৷
এই ঘটনার পেছেন বর্ণবাদী মনোভাব থাকার সম্ভাবনাকেও ফেলে দিচ্ছেন না মাক্রোঁ, তাই সরকারকে অবিলম্বে বৈষম্যরোধী কিছু প্রস্তাব করতে আহ্বান জানান তিনি৷
যা ঘটেছিল জেকলারের সাথে
লুপসাইডারের প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায় নিজের মিউজিক স্টুডিওতে ঢুকতে চেষ্টা করছেন মাইকেল জেকলার৷ সেই মুহূর্তেই দরজার পাশে তাঁকে চেপে ধরেন তিনজন পুলিশকর্মী৷ বেধড়ক মারধোর করার সময় কোনোমতে নিজেকে বাঁচান জেকলার৷ বন্ধ করে দেন স্টুডিওর দরজা৷ এরপর চতুর্থ পুলিশকর্মী স্টুডিওর জানালা দিয়ে একটি টিয়ার গ্যাসবোমা ছুঁড়ে দেন তাঁর স্টুডিওর ভেতর৷ পুরো ঘটনাটিই ধরা পড়েছে ভা়ইরাল হওয়া সেই ভিডিওতে৷
এই ঘটনার বিচারকার্যে রত ম্যাজিস্ট্রেট সংবাদসংস্থা এএফপিকে জানান যে তাঁরা তিনজন পুলিশকর্মীকে ‘কর্তৃপক্ষের অংশ হয়েও জেনেশুনে সহিংসতায় লিপ্ত হওয়ার ও জালিয়াতির অপরাধে’ অভিযুক্ত করেছে৷ চতুর্থজন অভিযুক্ত ‘জেনেশুনে সহিংসতায় লিপ্ত হওয়ার অপরাধে’৷
এই চার পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে উঠছে বর্ণবাদী বৈষম্য ও মিথ্যা পুলিশিবিবৃতি দেবার অভিযোগও৷
অভিযুক্তদের আইনজীবী লরে-ফ্রাঙ্ক লিনার্ড সংবাদমাধ্যমকে জানান যে অভিযুক্তদের কাছে জেকলারকে মারা ছাড়া আর অন্য কোনো উপায় ছিল না৷ কিন্তু সরকারপক্ষের আইনজীবী রেমি হাইটজ ডয়চে ভেলের প্রতিনিধি লিসা লুইসকে জানান, ‘‘বারবার জিজ্ঞাসাবাদে চাপে পড়ে অভিযুক্তরা তাদের বয়ান বদলেছে৷ তারা স্বীকার করেছে যে সংগীতশিল্পীকে গ্রেপ্তার করার জন্য প্রয়োজনের চেয়ে বেশি শক্তিপ্রয়োগ করেছে৷’’
পুলিশের এই নির্মম আচরণ একদিকে ও অন্যদিকে বিতর্কিত বিল, দুই নিয়ে বর্তমানে উত্তাল ফ্রান্সের রাজপথ৷ প্রতিবাদ হচ্ছে রাজধানীসহ স্ট্রাসবুর্গ, মার্সাই, লিওন ও রেন শহরে৷ প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের প্রতিবাদে অংশগ্রহণের খবর জানা গেছে৷
এসএস/কেএম ( এএফপি, রয়টার্স, ডিপিএ)
‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ এর অজানা কিছু কথা
১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট দিনটি অ্যামেরিকার ইতিহাসে অমর হয়ে আছে৷ সেদিন ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ খ্যাত একটি ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র, যিনি অ্যামেরিকায় আফ্রিকান-অ্যামেরিকান নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা৷
ছবি: AP
লক্ষ্য বর্ণবাদের অবসান
এই সেই বিখ্যাত ছবি৷ ১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট ওয়াশিংটনের লিংকন মেমোরিয়ালে প্রায় আড়াই লক্ষ সমর্থকের উদ্দেশ্যে ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ খ্যাত ভাষণ দিয়েছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বর্ণবাদ দূর করাই ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নাগরিক অধিকার আন্দোলন
বর্ণবাদ অবসানের লক্ষ্যে ‘সিভিল রাইটস মুভমেন্ট’ বা নাগরিক অধিকার আন্দোলন শুরু করেছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ তারই অংশ হিসেবে ১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট আয়োজিত ‘মার্চ অন ওয়াশিংটন’ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন তিনি৷ ছবিতে সামনের সারিতে বাম থেকে দ্বিতীয়তে দেখা যাচ্ছে তাঁকে৷
ছবি: Hulton Archive/Getty Images
যেভাবে আন্দোলনের শুরু
ছবির এই নারীর নাম রোজা পার্কস৷ বাস চালকের নির্দেশের পরও বাসের পেছনে বসতে অস্বীকৃতি জানানোয় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷ তার প্রতিবাদেই শুরু হয়েছিল নাগরিক অধিকার আন্দোলন - যাঁর অন্যতম নেতা ছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ মার্কিন কংগ্রেস পরবর্তীতে রোজা পার্কসকে ‘দ্য ফার্স্ট মিনিস্টার অফ সিভিল রাইটস’ উপাধি দিয়েছিল৷
ছবি: AP
বাস বয়কটের দায়ে অভিযুক্ত
রোজা পার্কসের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বাস বয়কট আন্দোলন শুরু করেছিলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ ১৯৫৬ সালের ২২ মার্চ তোলা ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে মার্টিন লুথার কিংকে স্বাগত জানাচ্ছেন তাঁর স্ত্রী কোরেটা স্কট কিং৷ এটা আদালত ছাড়ার সময়কার ছবি৷ মন্টগোমারি শহরের বাসে চালু থাকা নিয়ম ভঙ্গের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছিল লুথার কিং এর বিরুদ্ধে৷ তবে তাঁর আপিলের পর বিচারক ৫০০ ডলারের জরিমানা মওকুফ করে দিয়েছিলেন৷
ছবি: AP
কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য ভোটাধিকার
১৯৬৫ সালের ৩০ মার্চের এই ছবিতে কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য ভোটাধিকারের দাবিতে ঘোষিত কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে মার্টিন লুথার কিং ও তাঁর স্ত্রী সহ অন্যান্যদের৷
ছবি: William Lovelace/Express/Getty Images
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা
কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য ভোটাধিকারের দাবি নিয়ে ১৯৬৫ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসনের সঙ্গে আলোচনা করতে দেখা যাচ্ছে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রকে৷
ছবি: Hulton Archive/Getty Images
জন্ম
১৯২৯ সালের ১৫ই জানুয়ারি জর্জিয়ার অ্যাটলান্টায় জন্মগ্রহণ করেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ ১৯৫৫ সালে বস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেন ডক্টর অব ফিলোসোফি ডিগ্রি৷ নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় অহিংস আন্দোলনের জন্য ১৯৬৪ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি৷ তখন তাঁর বয়স মাত্র ৩৫৷ নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ীদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ৷ ছবিটি ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ ভাষণের৷
ছবি: picture-alliance/akg
জার্মান মার্টিন লুথার
মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র এর নাম কিন্তু শুরুতে ছিল মাইকেল কিং৷ পরবর্তীতে তাঁর বাবা ষোড়শ শতকে যে জার্মান ক্যাথলিক যাজক প্রোটেস্টান্ট গির্জা প্রতিষ্ঠা করেন, সেই মার্টিন লুথারের নামে তাঁর ছেলে ও নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন মার্টিন লুথার কিং৷
ছবি: Hulton Archive/Getty Images
মৃত্যু
১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল এক আততায়ীর গুলিতে নিহত হন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র৷ তাঁকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল জেমস আর্ল রে’কে (ছবিতে যাকে দেখা যাচ্ছে)৷ ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত রে একবার জেল থেকে পালিয়ে যাবার পর এফবিআই তাঁকে ধরতে এই পোস্টারটি ছাপিয়েছিল৷ তিনটি ছবিই রে’র৷