সংঘবদ্ধ ধর্ষণের দুই মাস পরেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় তাঁর বাবা আত্মহত্যা করতে গেছিলেন। তারপর পুলিশ ব্যবস্থা নিল। কংগ্রেস শাসিত ছত্তিশগড়ে।
বিজ্ঞাপন
বিজেপি শাসিত উত্তর প্রদেশের পর এ বার কংগ্রেস শাসিত ছত্তিশগড়। সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর পুলিশ ব্যবস্থা তো নেয়ইনি, বরং তা ধামাচাপা দিতেই ব্যস্ত ছিল। এফআইআর পর্যন্ত করছিল না। ধর্ষণের পরের দিনই মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে। পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় মেয়েটির বাবা গত মঙ্গলবার বিকেলে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করতে গেছিলেন। এ নিয়ে প্রবল আলোড়ন দেখা দেয়ায় পুলিশ ঘটনার দুই মাসেরও বেশি সময় পর পাঁচজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। দুই জন পলাতক।
মেয়েটির দেহ না পুড়িয়ে সমাহিত করে রেখেছিল পরিবার। তাঁর দেহ বের করে ময়নাতদন্ত করতে দিয়েছে পুলিশ। বস্তারের আইজি সুন্দররাজ জানিয়েছেন, এসপি-র নেতৃত্বে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়েছে।
স্থানীয় মিডিয়া জানিয়েছে, ঘটনার পরই ধর্ষিতার বাবা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান। পুলিশ আশ্বাস দিয়েছিল যে, অবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু কিছুই করেনি। অভিযুক্তরা প্রকাশ্যে ঘোরাঘুরি করেছে। একজন সাক্ষীকে সমানে ভয় দেখিয়ে গেছে। বাবা বীতশ্রদ্ধ হয়ে গলায় দড়ি দিতে গেছিলেন। তা নিয়ে হইচই হওয়াতে তখন পুলিশ নড়চড়ে বসে। পুলিশ অবশ্য দাবি করছে, পরিবারের তরফ থেকে তাঁদের কাছে কিছুই জানানো হয়নি।
ভারতে প্রতি ১৬ মিনিটে একটা ধর্ষণ
রিপোর্ট প্রকাশ করলো ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো বা এনসিআরবি। এই সরকারি সংস্থা ভারতজুড়ে সব অপরাধের হিসেব রাখে। সেই রিপোর্ট থেকে উঠে এসেছে ভারতে ধর্ষণ ও অপরাধের ভয়াবহ ছবি।
ভারতে প্রতিদিন গড়ে ৮৭টা ধর্ষণ হয়। ২০১৯ সালের হিসাব এটা। এনসিআরবি রিপোর্ট অনুসারে বছরভর মোট ৩২ হাজার ৩৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/P. Hatvalne
নারী-নির্যাতন বেড়েছে
দেশজুড়ে মোট চার লাখ পাঁচ হাজার ৮৬১ জন নারী বিভিন্নভাবে নির্যাতিতা হয়েছেন। ২০১৮ সালে এই সংখ্যাটা ছিল তিন লাখ ৭৮ হাজার ২৩৬ জন। এই হিসাবই বলে দিচ্ছে, ভারতে নারী-নির্যাতন বেড়েছে।
ছবি: Reuters/A. Fadnavis
একে রাজস্থান, দুই নম্বরে উত্তর প্রদেশ
ধর্ষণের সংখ্যার নিরিখে ভারতে এক নম্বর রাজ্য হলো রাজস্থান। সেখানে ২০১৯-এ পাঁচ হাজার ৯৯৭ জনকে ধর্ষণ করা হয়েছে। উত্তর প্রদেশে ধর্ষিতা হয়েছেন তিন হাজার ৬৫ জন। তিন নম্বরে মধ্যপ্রদেশ। সেখানে দুই হাজার ৪৮৫ জন নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে মেয়েদের শ্লীলতাহানির চেষ্টায় এক নম্বরে উত্তর প্রদেশ।
ছবি: Reuters/Sivaram V
দিল্লিতে প্রতিদিন তিন জনকে ধর্ষণ
রাজধানী দিল্লির অবস্থাও শোচনীয়। এখানে প্রতিদিন তিনজন মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়। ২০১৯-এ দুই হাজার ৩৫৫ জন নারীর শ্লীলতাহানি করা হয়েছে। যৌন নিগ্রহের শিকার ৪৫৬ জন নারী। পরিবারের সদস্যদের হাতে ধর্ষিতা হয়েছেন ১২৫ জন নারী। ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে আটজনকে। আর বিয়েতে পন সংক্রান্ত বিবাদের জেরে মারা হয়েছে ১১৬ জন নারীকে। সব মিলিয়ে দিল্লিতে ২০১৮-র তুলনায় অপরাধ বেড়েছে ২০ শতাংশ।
ছবি: Reuters/
ধর্ষণের পর হত্যা
ভারতে মোট ২৭৮ জন মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে ২০১৯-এ। মহারাষ্ট্রে সব চেয়ে বেশি এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। মোট ৪৭ জন নারীকে হত্যার পর খুন করা হয়েছে মহারাষ্ট্রে। তার পরে আছে মধ্যপ্রদেশ, সেখানে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে ৩৭টি এবং উত্তর প্রদেশে ৩৪টি।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Kakade
দলিত নারীদের নির্যাতনে একে উত্তর প্রদেশ
দলিত নারীদের ধর্ষণ, যৌন নিগ্রহ, শ্লীলতাহানি, অত্যাচারের ঘটনায় এক নম্বরে যোগী আদিত্যনাথের উত্তর প্রদেশ। সেখানে ২০১৯-এ ১১ হাজার ৮২৯ জন দলিত নারী নিগৃহীত ও অত্যাচারিত হয়েছেন। আদিবাসী মেয়েদের বিরুদ্ধে অত্যাচারের ক্ষেত্রে অবশ্য এক নম্বরে মধ্য প্রদেশ। ২০১৮-র তুলনায় দলিত নারীদের উপর অত্যাচার বেড়েছে সাত শতাংশ ও আদিবাসীদের ক্ষেত্রে ২৬ শতাংশ।
ছবি: Sam Panthaky/AFP/Getty Images
দলিত মেয়েদের ধর্ষণ করে খুন
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের শেষে ও অক্টোবরের গোড়ায় তিনজন দলিত মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে উত্তর প্রদেশে। হাথরাসে পরিবারের সঙ্গে মাঠে ঘাস কাটতে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার দলিত তরুণীর মৃত্যু হয় প্রায় দুই সপ্তাহ পর। বলরামপুরে কলেজে ভর্তি হতে গিয়েছিলেন দলিত ছাত্রী। তাঁকে অপহরণ ও ধর্ষণ করে অত্যাচার চালানো হয়। মেয়েটির মৃত্যু হয়। ভাদোইতে ১১ বছরের একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে মাথায় পাথর দিয়ে মারা হয়।
ছবি: Francis Mascarenhas/Reuters
অধিকাংশ ধর্ষক চেনা লোক
এনসিআরবি তথ্য বলছে, ২০১৮ সালে ৯৪ শতাংশ নারীকে চেনাজানা লোকের হাতে ধর্ষিতা হতে হয়েছিল। তারা কেউ পরিবারের সদস্য, বন্ধু, প্রতিবেশী, চাকরিক্ষেত্রে বস, মালিক, সহকর্মী বা সামাজিক মাধ্যম সূত্রে চেনা।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Maqbool
প্রতিবাদে বাধা
হাথরাসের ধর্ষণের প্রতিক্রিয়া সারা দেশে পড়েছে। বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, উত্তর প্রদেশে প্রতিবাদ করতে দেয়া হচ্ছে না। হাথরাসে কাউকে যেতে দেয়া হচ্ছে না। সমাজবাদী পার্টির কর্মীদের আটকে দেয়া হয়েছিল হাথরাসে। রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা গান্ধীকে যেতে দেয়া হয়নি। দিল্লি-ঘেঁষা নয়ডাতে তাঁদের আটকে দেয়া হয়।
ছবি: Anushree Fadnavis/Reuters
এনসিআরবি
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো তৈরি হয় ১৯৮৬ সালে। তবে ১৯৯৫ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত জেলাস্তরে ক্রাইম অ্যান্ড ক্রিমিনাল ইনফরমেশন ব্যবস্থা তৈরি হয়। তারা বছরে তিনটি রিপোর্ট তৈরি করে। অপরাধ চিত্র, আত্মহত্যা ও দুর্ঘটনায় মৃত্যু এবং কারাগার নিয়ে। সব রাজ্য সরকরের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এই রিপোর্ট বানানো হয়।
ছবি: Reuters
10 ছবি1 | 10
সুন্দররাজ বলেছেন, একটি বিয়েবাড়ি থেকে মেয়েটিকে দুই জন ধরে জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেখানে আরও পাঁচজন ছিল। তারা মেয়েটিকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে।
মেয়েটির কাকা জানিয়েছেন, ধর্ষণের পরের দিন মেয়েটি বাড়িতে ভাইবোনদের সঙ্গে ছিল। তখন সে গলায় দড়ি দেয়। তাঁর বাবা-মা যেহেতু সে সময় গ্রামে ছিলেন না, তাই গ্রামের লোকেদের উপস্থিতিতে তাঁর দেহ না পুড়িয়ে সমাহিত করা হয়। এতদিন পর পুলিশ সেই দেহ তুলে ময়না তদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।
মেয়েটির বাবা যে গলায় দড়ি দিতে গেছিলেন তা সুন্দররাজ স্বীকার করে নিয়েছেন। তবে কেন তিনি আত্মহত্যা করতে গেছিলেন তা তিনি জানেন না।