ইসরায়েলের সেনার বিরুদ্ধে গুলি চালানো এবং রকেট হামলার অভিযোগ তোলা হয়েছে। গাজাতেও লাগাতার হামলা অব্যাহত।
বিজ্ঞাপন
লেবাননের অভিযোগ অন্তত ছয়টি জায়গায় ইসরায়েল হামলা করেছে। উল্লেখ্য, বুধবার সকাল চারটে থেকে হিজবুল্লা এবং ইসরায়েলের সংঘর্ষ-বিরতি শুরু হয়েছে। গৃহহীন মানুষ ফের ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। কিন্তু তারই মধ্যে ইসরায়েলের হামলা চুক্তি-বিরুদ্ধ বলে দাবি করেছে লেবানন।
ইসরায়েলের সেনা জানিয়েছে, সীমান্ত অঞ্চলে তারা গুলি চালিয়েছে এবং রকেট ছুঁড়েছে কারণ, সেখানে সন্দেহভাজনদের দেখা গেছিল। দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লা ঘাঁটিতে আক্রমণ হয়েছে বলে তারা জানিয়েছে। বস্তুত, ইসরায়েলের সেনা একটি পোস্ট করে জানিয়েছে, দক্ষিণ লেবাননে বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা থেকে শুক্রবার সকাল ৭টা পর্যন্ত কারফিউ থাকবে। সে সময় যেন কোনো ব্যক্তি বাইরে বার না হন। ওই সময় হিজবুল্লার ঘাঁটিতে আক্রমণ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। লেবাননের সেনা জানিয়েছে, নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এবিষয়ে সমস্ত তথ্য দেওয়া হবে। অ্যামেরিকা এবং ফ্রান্সের মধ্যস্থতায় হিজবুল্লা এবং ইসরায়েলের যে চুক্তি হয়েছে, তাতে ৬০দিনের মধ্যে ইসরায়েলের সেনাকে লেবানন ছেড়ে চলে যেতে হবে। লেবাননের সেনা হিজবুল্লা অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিতে মোতায়েন থাকবে। কোনোপক্ষই অন্যপক্ষের উপর আক্রমণ চালাবে না।
সংঘর্ষ-বিরতি: ঘরে ফিরছেন লেবাননের সাধারণ মানুষ
হিজবুল্লার সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘর্ষের জেরে বহু মানুষ বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন। অন্যদিকে সেনা সরাতে শুরু করেছে ইসরায়েল।
ছবি: MAHMOUD ZAYYAT/AFP
রাস্তাজুড়ে গাড়ির লাইন
লেবাননের হাইওয়েতে গাড়ির লাইন চোখে পড়ার মতো। কাতারে কাতারে মানুষ বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছেন। হিজবুল্লার সঙ্গে ইসরায়েলের লড়াইয়ের জেরে অনেকেই বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন।
ছবি: MAHMOUD ZAYYAT/AFP
ঘরে ফিরবেন ইসরায়েলের মানুষ?
উত্তর ইসরায়েলের বহু মানুষ ১৪ মাস আগে বাড়ি ছেড়েছিলেন। লেবানন সীমান্তের কাছে আশ্রয়শিবিরে ছিলেন তারা। হামাস ইসরায়েলে আক্রমণ চালানোর পরেই তারা বাড়ি ছেড়েছিলেন প্রাণ সংশয়ে। এতদিন পর তারাও বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছেন।
ছবি: Hussein Malla/AP Photo/picture alliance
নীল সীমান্তের কাছে
জাতিসংঘ ইসরায়েল এবং লেবাননের যে সীমান্ত চিহ্নিত করেছে, তার আনুষ্ঠানিক নাম ব্লু লাইন। সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর ওই ব্লু লাইনের কাছেই আশ্রয় শিবিরে যেতে হয়েছিল বহু মানুষকে। বাড়ি ফেরার পরিকল্পনা করলেও হিজবুল্লাকে এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না অনেকে।
ছবি: Daniel Carde/Getty Images
শক্তি কমেছে হিজবুল্লার
বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, অন্তত দুইবছর বড় কোনো আক্রমণের রাস্তায় হাঁটবে না হিজবুল্লা। কারণ সাম্প্রতিক সংঘর্ষে তাদের প্রভূত শক্তিক্ষয় হয়েছে। সে কারণেই তারা লড়াইয়ের ময়দান ছাড়তে রাজি হয়েছে।
হিজবুল্লাকে সংঘর্ষবিরতিতে রাজি করানোর অন্যতম দাবিদার ইরান। অভিযোগ, হিজবুল্লাকে আর্থিক এবং সামরিক সাহায্য করে তারা। সম্প্রতি ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষ-বিরতিতে যাওয়ার জন্যেও ইরান চাপ তৈরি করেছিল হিজবুল্লার উপর। কারণ ইরান বুঝতে পারছিল যে, হিজবুল্লা ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ছে।
ছবি: Faraz
লেবাননের সেনা
হিজবুল্লা যেমন উত্তর লেবানন থেকে চুক্তি মেনে সরতে শুরু করেছে, তেমন লেবাননের সেনা লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তে পোস্ট তৈরি করছে। কিন্তু লেবাননের সেনার শক্তি কতটা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাদের দাবি, লেবাননে হিজবুল্লার দাপট এতটাই যে সেনার ক্ষমতা খুব বেশি নয়। তাদের শক্তি পুলিশের মতো।
ছবি: Hussein Malla/AP/picture alliance
রাজনৈতিক পরিস্থিতি
লেবাননের রাজনীতিতে হিজবুল্লার বিরাট প্রভাব। পার্লামেন্টে হিজবুল্লার রাজনৈতিক সংগঠনের আসন আছে। এই পরিস্থিতিতে সংঘর্ষবিরতি কতদিন স্থায়ী হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
ছবি: ANWAR AMRO/AFP/Getty Images
ফিরছে ইসরায়েলের সেনা
চুক্তি অনুযায়ী ৬০ দিনের মধ্যে ইসরায়েলের সেনাকে লেবানন ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হবে। সংঘর্ষ-বিরতি শুরু হওয়ার পর ধীরে ধীরে জায়গা ছাড়ছে ইসরায়েলের সেনা।
ছবি: Mostafa Alkharouf/picture alliance/Anadolu
ধ্বংসস্তূপে ফেরা
লেবাননের একটি বড় অংশে একের পর এক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণেও আক্রমণ চালানো হয়েছে। লেবাননের বহু মানুষ সে সময় বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিলেন। সংঘর্ষ-বিরতি শুরু হওয়ার পর তারা বাড়ি ফিরছেন কিন্তু যে বাড়ি ছেড়ে তারা গেছিলেন, তা এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
ছবি: Hassan Hankir/REUTERS
জাতিসংঘের অবস্থান
হিজবুল্লা এবং ইসরায়েল সংঘর্ষ-বিরতিতে রাজি হওয়ার পর তাকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেছেন, এই সংঘর্ষ-বিরতির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির এক নতুন অধ্যায় শুরু হবে। দিকে দিকে যে সংঘর্ষ চলছে, তা সমাপ্তি ঘটবে এবার।
মধ্য গাজায় বৃহস্পতিবার লাগাতার আক্রমণ চালিয়েছে ইসরায়েল। একের পর এক বোমা বর্ষণ করা হয়েছে। ফিলিস্তিনের সংবাদসংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, ঘটনায় অন্তত নয় জনের মৃত্যু হয়েছে। নিউসিরাট উদ্বাস্তু ক্যাম্পে বোমা বর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। বহু মানুষ সেখানে আহত হয়েছেন।
সংবাদসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, উত্তর, মধ্য এবং দক্ষিণ গাজায় একাধিক জায়গায় বৃহস্পতিবার আক্রমণ চালিয়েছে ইসরায়েল। গাজার মানুষ ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে আছেন। তারা ঠিক মতো খাবার পর্যন্ত পাচ্ছেন না। তারই মধ্যে সংবাদমাধ্যমের কাছে তারা বলেছেন, লেবাননের মতো গাজাতেও সংঘর্ষ-বিরতি চুক্তি হোক। জাতিসংঘের রিপোর্ট বলছে, গাজার একাধিক জায়গায় প্রবল খাদ্য সংকট শুরু হয়েছে। তাদের কাছে ওষুধও পৌঁছাচ্ছে না।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিন সংক্রান্ত সংস্থা জানিয়েছে, উত্তর গাজার একাধিক জায়গা এখনো বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। সেখানে জাতিসংঘের ত্রাণও পৌঁছাচ্ছে না। ওই অঞ্চলে ৬৫ থেকে ৭৫ হাজার মানুষ আটকে আছেন। প্রবল খাদ্য সংকটে ভুগছেন তারা। জাতিসংঘের দাবি, গত কয়েক মাসে সেখানে তারা ৯১ বার যাওয়ার চেষ্টা করেছে কিন্তু ৮২ বার তাদের আটকে দিয়েছে ইসরায়েলের সেনা।