২০২০ সালে বিশ্বের বিভিন্ন সংঘাতপূর্ণ এলাকায় অনেক শিশু অপহরণ, ধর্ষণ, নির্যাতনের শিকার হয়েছে৷ যুদ্ধে নিহতও হয়েছে অনেক শিশু৷
বিজ্ঞাপন
শিশুদের দুরবস্থা তুলে ধরা এক প্রতিবেদনে ইসরায়েল এবং সৌদি আরবের নাম না রাখায় জাতিসংঘের কঠোর সমালোচনা করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ৷
সংঘাতপূর্ণ এলাকায় শিশুদের অপহরণ, নিপীড়ন-নির্যাতন, এমনকি হত্যার শিকার হওয়ার অনেক তথ্য পেয়েছে জাতিসংঘ৷ এ নিয়ে সোমবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
জাতিসংঘের শিশু এবং সশস্ত্র সংঘাত বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ভার্জিনিয়া গাম্বা জানান, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্য বিশ্বের বিভিন্ন সংঘাতপূর্ণ এলাকায় শিশু অপহরণ শতকরা ৯০ ভাগ এবং ধর্ষণ এবং অন্যান্য ধরনের যৌন সন্ত্রাস ৭০ ভাগ বেড়েছে৷ বিশ্বের ২১ টি সংঘাতপূর্ণ এলাকার সন্ত্রাস, নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার ১৯ হাজার ৩৭৯ জন শিশুর তথ্য নিয়ে তৈরি এ প্রতিবেদনে বলা হয়, এক বছরে অন্তত আট হাজার ৫২১ জন শিশুকে সৈন্য হিসেবে যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়েছে৷ দুই হাজার ৬৭৪ জন শিশু মারা গেছে আর পাঁচ হাজার ৭৪৮ জন আহত হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে দাবি করা হয়৷
যে পাঁচ দেশে শিশুরা সবচেয়ে বেশি যৌন হয়রানির শিকার
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংগঠিত শিশু যৌন হয়রানির পরিসংখ্যান ঘেঁটে একটি তালিকা তৈরি করেছে ব্রিটেনের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমস৷ দেখুন কোন দেশগুলোর নাম এসেছে সেই তালিকায়...
ছবি: picture-alliance/dpa
দক্ষিণ আফ্রিকা
দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রতি তিন মিনিটে একটি শিশুকে ধর্ষণ করা হয় বলে ট্রেড ইউনিয়ন ‘সলিডারিটি হেল্পিং হ্যান্ড’-এর করা এক জরিপ থেকে জানা গেছে৷ দেশটির মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল-এর ২০০৯ সালে করা আরেক জরিপে প্রতি চারজন পুরুষের একজন জীবনের কোনো এক সময়ে কাউকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন৷ ২০০০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় ৬৭,০০০ শিশু ধর্ষণ এবং নিগ্রহের মামলা নথিভুক্ত হয়েছিল৷
ছবি: Fotolia/Kitty
ভারত
দ্য এশিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস ২০১৩ সালে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভারতে শিশুদের উপর যৌন নিপীড়ন মহামারি পর্যায়ে পৌঁছেছে৷ দেশটিতে ২০০১ সাল থেকে ২০১১ সালের মধ্যে শিশু ধর্ষণের অন্তত ৪৮,০০০ মামলা হয়েছে৷ ২০০১ সালের তুলনায় ২০১১ সালে ধর্ষণের হার বেড়েছিল ৩৩৬ শতাংশ৷
ছবি: Getty Images/D. Berehulak
জিম্বাবোয়ে
জিম্বাবোয়ের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ২০১২ সালে দেশটির পুলিশের মুখপাত্র চ্যারিটি চারাম্বা’র বরাতে জানায়, সেখানে শিশু ধর্ষণের হার ক্রমশ বাড়ছে৷ ২০১১ সালে দেশটিতে ৩,১৭২ টি শিশু যৌন নিপীড়নের ঘটনা নথিভুক্ত হয়৷ এছাড়া ২০০৯ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জিম্বাবোয়ের রাজধানী হারারেতে শুধুমাত্র একটি ক্লিনিকে চার বছরে ৩০,০০০ নিপীড়নের শিকার ছেলে ও মেয়েকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে৷
ছবি: Imago/Xinhua
যুক্তরাজ্য
২০০০ সালে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, যুক্তরাজ্যে প্রতি ২০০ প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজনের বেশি পেডোফিল৷ ২০১২-১৩-তে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস-এ ষোল বছরের কম বয়সি ১৮,৯১৫ শিশু যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
২০১০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সেবছর ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সি ১৬ শতাংশ শিশু যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে৷ দেশটির প্রতি চার নারীর একজন এবং প্রতি ছয় পুরুষের একজন ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বলেও জানা গেছে চিলড্রেন এসিসমেন্ট সেন্টারের আরেক গবেষণায়৷
ছবি: Fotolia/pegbes
5 ছবি1 | 5
জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২০ সালে সোমালিয়া, ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, আফগানিস্তান, সিরিয়া এবং ইয়েমেনে শিশুরা সবচেয়ে বেশি নিপীড়ন, নির্যাতনের শিকার হয়৷ এমন দেশগুলোর একটি কালোতালিকাও করেছে জাতিসংঘ৷ তবে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ইসরায়েল এবং সৌদি আরবের নামতালিকায় না রাখায় এ জাতিসংঘের কঠোর সমালোচনা করেছে৷
শিশু নির্যাতনের জন্য দায়ী দেশগুলোর তালিকায় ইসরায়েলের নাম কোনোদিনই রাখা হয়নি৷ সৌদি আরবের নাম প্রথমবারের মতো এ তালিকায় স্থান পায় ২০১৯ সালে৷ তবে তারপরই মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশটির নাম তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায়৷
কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরা মনে করেন, ইসরায়েল এবং সৌদি আরব কালো তালিকায় তাদের নাম না রাখার জন্য সব সময় জাতিসংঘকে চাপ দেয়৷
শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার জন্য যে কালো তালিকা করা হয়েছে, তাতে স্থান হয়েছে মাত্র দুটি রাষ্ট্রপক্ষের, এক, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং দুই, সিরিয়ার সরকারি বাহিনী৷
সেনেগালের মাদ্রাসাগুলোয় কী ঘটছে?
সেনেগাল পশ্চিম আফ্রিকার একটি দেশ, যেখানে জনসংখ্যার ৯২ শতাংশ ইসলাম ধর্মাবলম্বী৷ কিন্তু সেখানের মাদ্রাসাগুলির পরিস্থিতি ভয়ানক৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/Z. Bensemra
‘দারা’র ভেতরে কী ঘটছে?
ছবিতে আট বছরের ওমরকে ‘দারা’ বা স্থানীয় মাদ্রাসার বাইরে ভিক্ষা চাইতে দেখা যাচ্ছে৷ সেনেগালে বাবা-মা’রা প্রায়ই তাঁদের সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষা লাভের জন্য মাদ্রাসা বা ‘দারা’য় পাঠান৷ কিন্তু পবিত্র কোরান পড়তে শেখার পাশাপাশি শিশুদের রাস্তায় ভিক্ষা করাতে বাধ্য করা হয় সেখানে৷
ছবি: Reuters/Z. Bensemra
অত্যাচারী শিক্ষক
দারায় যে ছাত্ররা পড়ে, তাদের বলা হয় ‘তালিবে’৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই তালিবেরা শিক্ষকদের চাপ সহ্য করতে পারে না৷ দিন শেষে যথেষ্ট পরিমাণ টাকা না নিয়ে ফিরলে এই শিক্ষকরা, যাদের স্থানীয়রা ডাকেন ‘মারাবৌত’ নামে, হয়ে ওঠেন অত্যাচারী৷ ফলে, সেখান থেকে তালিবেরা প্রায়ই পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার৷
ছবি: Reuters/Z. Bensemra
টাকা না মুক্তি?
দশ বছর বয়েসি সুলেমানের কোরানপাঠ শেষ না হলে বাবা-মায়ের কাছে যাবার সুযোগ নেই৷ শুধু তাই নয়, দিনের শেষে যদি ২০০ ফ্রাঙ্ক (যা ২৮ টাকার সমান) না নিয়ে ফেরে সুলেমান, তাহলে তাকে বেদম প্রহার করে শিক্ষক, এমনটাই জানাচ্ছে সে৷ প্রহারের ভয়েই তার মতো অনেক শিশুরা পালাতে চায়৷
ছবি: Reuters/Z. Bensemra
অন্য কোনো উপায়?
সেনেগালে রয়েছে একাধিক মানবাধিকার সংস্থা, যারা এই তালিবেদের জন্য কাজ করে৷ স্নান করার জন্য পরিষ্কার ঘর বা বালতি প্রভৃতি দেয় তারা৷ উপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে এমনই এক ছাত্রকে৷ তার হাতে ধরা আছে একটি বালতি, যা সে স্নান করবার জন্য জল রাখতে ব্যবহার করে৷
ছবি: Reuters/Z. Bensemra
মাদ্রাসাকে ঘিরে রয়েছে ‘ট্যাবু’
অনেকদিন ধরেই সেনেগালে তালিবেদের অত্যাচার বিষয়ে আলোচনা ছিল ‘ট্যাবু’৷ কিন্তু বিগত কয়েক বছরে নানা শিক্ষামূলক প্রচারের ফলে বেড়েছে সচেতনতা৷ ২০১৬ সালে সেনেগালের প্রেসিডেন্ট একটি প্রকল্পের প্রস্তাব আনেন যার ভিত্তিতে তালিবেদের ওপর অত্যাচার শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হয়৷
ছবি: Reuters/Z. Bensemra
শিশুদের যৌন নির্যাতন
বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার বক্তব্য, সেনেগালে দারা’র আড়ালে চলছে গুরুতর যৌন নির্যাতনের ঘটনাও৷ ওপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে এক সমাজকর্মীকে, যিনি এক তালিবের সাথে ঘটা ভয়ানক অত্যাচারের বিবরণ শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন৷
ছবি: Reuters/Z. Bensemra
বাবা-মায়েরা কি জানেন না?
প্রাক্তন তালিবেদের অনেকেই আজ নিজেরা প্রতিষ্ঠিত৷ এর মধ্যে এল হাডজ ডিয়ালু একজন ডাক্তার৷ তিনি জানান যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তালিবেদের বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের ওপর ঘটা অত্যাচারের কথা জানলেও কিছু করেন না, কারণ তাঁরা চান যে তাঁদের সন্তানরা ভবিষ্যতে শিক্ষিত ইমাম বা ধর্মীয় শিক্ষক হোক৷ কিন্তু সঠিক শিক্ষার বদলে তালিবেদের কপালে জোটে নানা রকমের চর্মরোগ ও মানসিক অসুস্থতা, জানান তিনি৷
ছবি: Reuters/Z. Bensemra
সুরক্ষার জন্য ‘কারাটে’
অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তালিবেদের স্বনির্ভর করে তুলতে ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি তাঁদের শারীরিক শিক্ষাও প্রদান করে৷ রাতের অন্ধকারে ভিক্ষা করতে গিয়ে প্রায়ই এই শিশুদের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয়৷ এর মোকাবিলা করতে তালিবেদের কারাটে’র মতো মার্শাল আর্ট শেখানো হয় এখানে৷
ছবি: Reuters/Z. Bensemra
এখনও বিপদে যারা...
অনেক তালিবেরাই অত্যাচার না সইতে পেরে পালিয়ে যায়৷ কিন্তু পরে ক্ষুধার তাড়নায় তাদের দেখা যায় বিভিন্ন আস্তাকুঁড়ে খাবারের খোঁজ করতে৷ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পরিসংখ্যান বলছে, এখনও সেনেগালে শিক্ষকদের চাপে লক্ষাধিক শিশু পথে-ঘাটে ভিক্ষা করতে বাধ্য হয়৷