সংবাদপত্রের আইন সংস্কার?
২৫ জুলাই ২০১৪তবে তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করতে আইনের সংস্কার বা নতুন কোনো আইন করার ইচ্ছা সরকারের নেই৷ এই আইন সংস্কারের মাধ্যমে সাংবাদিকদের নিরাপত্তাসহ তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করা হবে৷
ইতিহাস
গতবছর জেলা প্রশাসক সম্মেলনে রাষ্ট্রদ্রোহ ও ধর্মবিরোধিতার অভিযোগে পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিলের ক্ষমতা চান জেলা প্রশাসকরা৷ এরপর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে প্রস্তাবটি তথ্য মন্ত্রণালয়ে আসে৷ গত জানুয়ারিতে তথ্য মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত একটি কমিটি গঠন করে৷ ওই কমিটি ১৯৭৩ সালের দ্য প্রিন্টিং প্রেসেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস আইনটি যুগোপযোগী করার জন্য গত ২৪ ফেব্রুয়ারি চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরকে (ডিএফপি) দায়িত্ব দেয়৷ ১৮ মার্চ ডিএফপি বাংলায় একটি পূর্ণাঙ্গ খসড়া তৈরি করে পাঠায় মন্ত্রণালয়ে৷ ২৮ এপ্রিল কমিটি খসড়াটি আবার ডিএফপির কাছে ফেরত পাঠিয়ে নতুন আইন প্রণয়ন না করে পুরোনো আইনটি ইংরেজিতে যুগোপযোগী করতে বলে৷
১৯৭৩ সালের আইনে জেলা প্রশাসকদের হাতে পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিলের ক্ষমতা ছিল৷ কিন্তু ১৯৯১ সালে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবাদপত্রের স্বাধীনতাবিরোধী এই ধারা বাতিল করে৷ ফলে এখন আর জেলা প্রশাসকরা পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করতে পারেন না৷
উল্লেখ্য, ১৯৭৩ সালের দ্য প্রিন্টিং প্রেসেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস আইনটির মাধ্যমে বাংলাদেশের সংবাদপত্র শিল্প পরিচালিত হয়৷
তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্য
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু জানিয়েছেন, প্রায় ৪০ বছর আগে প্রণীত ১৯৭৩ সালের দ্য প্রিন্টিং প্রেসেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস আইনটি যুগোপযোগী করা হবে৷ এটা নিয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা হবে৷ এখানে গোপন বলে কিছু নেই৷ এ দেশে গোপন কাজ করে জঙ্গিবাদী ও সন্ত্রাসীরা৷ তাই আইনটি নিয়ে বিভ্রান্ত বা উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই৷ তিনি বলেন, এর খসড়া চূড়ান্ত হলে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে তা ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে৷
ইনু বলেন, ২০০৮ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর ছয় শতাধিক ডিক্লারেশন দিয়েছেন জেলা প্রশাসকরা৷ এ সরকারের আমলে ৩১টি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল, ২৪টি এফএম এবং ৩২টি কমিউনিটি রেডিওর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে৷ কারণ, সরকার অবাধ তথ্যে বিশ্বাসী৷ শুধু বিশ্বাসী নয়, কর্মেও তার প্রতিফলন ঘটাতে সরকার বদ্ধপরিকর৷
সাংবাদিকরা যা বলছেন
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল এর প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘‘এ কথা ঠিক, গণমাধ্যম জগতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে নতুন আইন বা বিধি যেমন প্রয়োজন, তেমনি পুরোনো অনেক আইনের সংস্কার প্রয়োজন৷ ক্ষেত্রবিশেষে কোনো কোনো আইনের কোনো কোনো অংশ বাতিল বা সংযোজন করাও জরুরি৷ স্বচ্ছ সম্প্রচার নীতিমালা বা অনলাইন মাধ্যমের নীতিমালা যেমন প্রয়োজন, তেমনি ১৯৭৪ সালের নিউজপেপার এমপ্লয়িস সার্ভিসেস অ্যান্ড কন্ডিশন্স অ্যাক্ট যুগোপযোগী করা প্রয়োজন৷ তবে এসবই হতে হবে গণমাধ্যম জগতের সঙ্গে সম্পৃক্তদের সঙ্গে আলোচনা করেই৷ যে-কোনো আইনে পরিবর্তন আনার সহজ পদ্ধতি হচ্ছে, সেই আইনের প্রয়োগকারী ও সুবিধাভোগীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া৷''
তিনি বলেন, ‘‘সে পথে না গিয়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরা যা চাইছেন তা হচ্ছে, ভালো পায়ে চুলকিয়ে ঘা বানানোর অবস্থার মতো! তাঁদের দাবি অগ্রহণযোগ্য সব বিবেচনাতেই৷ স্পষ্ট করেই বলতে চাই, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ও গণমাধ্যমকে শৃঙ্খলমুক্ত রাখার অবিরাম সংগ্রামরত সাংবাদিকেরা তাঁদের দীর্ঘ সংগ্রামের ফসল কোনোভাবেই হারিয়ে যেতে দেবেন না৷ নিশ্চয়ই নীতিনির্ধারকেরা বিষয়টি অনুধাবন করবেন৷''