শীর্ষ সম্মেলনের ফলাফল
৮ জুলাই ২০১৭জি-টোয়েন্টি শীর্ষ সম্মেলন আরও খারাপ হতে পারতো৷ হিংসাত্মক সংঘর্ষের কথা হচ্ছে না – হিংসার মাত্রা বোধহয় এর থেকে আরও খারাপ হতে পারতো না৷ হিংসা, ধ্বংসলীলা, লুটপাটের মাত্রা এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছিল, জার্মানিতে যা সম্পূর্ণ অপরিচিত৷
১৯টি দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈঠকের ফলাফল আরও খারাপ হতে পারতো৷ ঐকমত্যের ভিত্তিতে চূড়ান্ত ঘোষণাপত্র লেখার লক্ষ্য যার আছে, উপস্থিত শীর্ষ প্রতিনিধিদের দিকে নজর দিলেই তার কপালে ঘাম চলে আসতে বাধ্য৷ সদস্যদের আসনে প্রকৃত গণতান্ত্রিক ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা মেলে খাঁটি স্বৈরাচারী নেতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের৷ কারো পরণে সাদা হাতকাটা কোট, কারো ঘাড়ে দূর্নীতির বোঝা৷ তাদের মধ্যে আবার ট্রাম্প নামের এক ব্যক্তিও ছিলেন, যিনি তাঁর ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট' বুলি আউড়িয়ে বাড়তি উত্তেজনা সৃষ্টি করেছেন৷
লক্ষ্য পূরণে সাফল্য
এমন পরিস্থিতিতে শীর্ষ সম্মেলনের ফলাফল নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা যেতে পারে৷ বিস্ময়করভাবে সবাই মিলে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সংরক্ষণ নীতির বিরোধিতা করেছেন৷ যদি কেউ নিজেকে এ ক্ষেত্রে অন্যায় আচরণের শিকার বলে মনে করে, সে তখন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ডাব্লিউটিও-র নিয়মকে হাতিয়ার করতে পারবে৷ জার্মান চ্যান্সেলরের ইচ্ছা অনুযায়ী সবাই মিলে ‘একলা চলো রে'-র বদলে সমষ্টিগত সমাধানসূত্র মেনে নিয়েছে৷ এটা অবশ্যই একটা সাফল্য৷ ফরাসি প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে রুশ প্রতিনিধিদলও এই অর্জনের প্রশংসা করেছে৷
জলবায়ু সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ঘোষণাপত্রে সাফল্য খুঁজতে হলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ হতে হবে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে প্যারিস চুক্তি বর্জন করেছে, তার স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে৷ জি-টোয়েন্টিগোষ্ঠীর ইতিহাসে এই প্রথম কোনো মতপার্থক্য এত স্পষ্টভাবে স্বীকার করা হলো৷ বাকি ১৯টি দেশ প্যারিস চুক্তির প্রতি সম্পূর্ণ আনুগত্য দেখিয়েছে৷ এমনটা নাও হতে পারতো৷ এক্ষেত্রে ফলাফল আরও খারাপ হতে পারতো৷
ব্যর্থতার গ্লানি
আজকের দিনে এমন ফলাফল যথেষ্ট নয়৷ নারীর ক্ষমতায়ন বাড়ানোর মতো ভালো আইডিয়া, আফ্রিকার সঙ্গে নতুন চুক্তি, ডিজিটাল শিক্ষার উদ্যোগের মতো বিষয় যথেষ্ট নয়৷ জি-টোয়েন্টি বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার এক নতুন চেহারা সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে৷ গোটা বিশ্বে অনেক মানুষ মনে করেন, যে বিশ্ব অর্থনীতি হাতেগোনা কিছু মানুষের জন্য উপকার বয়ে আনছে৷ শীর্ষ সম্মেলনের শেষে আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেন, সম্মেলনের আগে সুশিল সমাজের উদ্যোগ এবং সম্মেলন চলাকালীন শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ অবশ্যই একটা অবদান রেখেছে, সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে৷ তবে তার সাক্ষাৎ পরিচয় দেখা যাচ্ছে না৷ জি-টোয়েন্টির কোনো বিকাশ দেখা যাচ্ছে না, মানুষের আরও কাছে আসার কোনো লক্ষণও চোখে পড়ছে না৷ সম্মেলনের আগে অভিযোগ উঠেছিল, নির্বাচনের এই বছরে ম্যার্কেল শুধু নিজের প্রতীকি ছবি তুলে ধরতে আগ্রহী – আন্তর্জাতিক মঞ্চে সফল নেতার ভূমিকা পালন করতে চান না তিনি৷ কিন্তু হামবুর্গ শহরের প্রতীকি ছবিগুলি অন্য কথাই বলে৷
ডাগমার এঙেল/এসবি