করোনা মহামারি নিয়ে দাম্ভিকতা দেখিয়েছে জার্মানি৷ এর মূল্য হিসেবে এখন অনেক লোক মারা যাচ্ছেন, অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ করোনা মোকাবিলায় জার্মানির প্রসঙ্গে এমন মন্তব্য করেন ডয়চে ভেলের আস্ট্রিড প্রাঙে৷
বিজ্ঞাপন
গত বসন্তে দক্ষিণ কোরিয়ায় যখন মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয় তখন জার্মানিতেবিজ্ঞানীরা মুখ ও নাক ঢাকা মাস্ক পরার প্রয়োজন আছে কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক করে গেছেন৷ যে দেশ করোনা মোকাবিলায় সফল তার প্রতি বিশ্বের এই অংশের সুস্পষ্ট দাম্ভিক আচরণ আমি সহ্য করতে পারি না৷
এমন মনোভাবের কারণে ২০২০ সালে জার্মান অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি সাড়ে পাঁচ শতাংশ কমবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ সেখানে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রবৃদ্ধি কমবে মাত্র এক শতাংশ৷
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসেবে ৫২ মিলিয়ন জনসংখ্যার দক্ষিণ কোরিয়ায় এখন পর্যন্ত মাত্র সাড়ে ৫০ হাজার জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন৷ মারা গেছেন ৬৯৮ জন৷ আর প্রায় ৮৩ মিলিয়নের জার্মানিতে আক্রান্তের সংখ্যা দেড় মিলিয়নের বেশি৷ মারা গেছেন ২৬ হাজার ৪০০ জন৷
দক্ষিণ কোরিয়া ছাড়াও তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর দেখিয়েছে করোনা মোকাবিলায় ডিজিটালাইজেশন জীবন বাঁচাতে পারে৷ জার্মানি এক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে৷
সিঙ্গাপুরের নাগরিকদের প্রতিদিন সরকারি অ্যাপে ব্যক্তিগত তথ্য দিতে হয়৷ আর জার্মানিতে এমনকি জনস্বাস্থ্য বিভাগেরও সরকারের অ্যাপে প্রবেশাধিকার নেই, বলে জানিয়েছেন জার্মান এসোসিয়েশন অফ ডক্টরস ইন দ্যা পাবলিক হেলথ সার্ভিসের প্রধান উটে টাইশার্ট৷
এছাড়া এখনও জার্মানির অনেক জায়গায় করোনা পরীক্ষার ফলাফল ফ্যাক্সের মাধ্যমে জানানো হচ্ছে৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনেক দপ্তর এখনও অ্যানালগ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে৷
জার্মাননাগরিকরা প্রতিদিন ফেসবুক, অ্যামাজন, ইন্সটাগ্রাম ও টুইটারে নিজেদের তথ্য দিলেও সরকারের করোনা অ্যাপে তথ্য দেয়ার সময় ডেটা প্রোটেকশনের বিতর্ক তোলেন৷ ফলে এই অ্যাপ খুব একটা কার্যকর হতে পারছেনা৷ এধরনের ‘ডিজিটাল ডাবল স্ট্যান্ডার্ড' সহ্য করা যায় না৷ লকডাউনের কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবিকা ধ্বংসের সময় আমি ডেটা প্রোটেকশন নিয়ে বিতর্ক চাই না৷
আমার কাছে করোনার এই সময়ে ডেটা প্রোটেকশনের চেয়ে জীবনের নিরাপত্তা বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷
আস্ট্রিড প্রাঙে/জেডএইচ
এ বছর জার্মানিতে যেভাবে ক্রিসমাস উদযাপন
করোনা সংকট জার্মানিতে ক্রিসমাসের আমেজে কেমন প্রভাব ফেলেছে, দেখুন এই ছবিঘরে...
ছবি: picture alliance/D. Kalker
ড্রেসডেনের গির্জা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তৈরি ড্রেসডেন শহরের ফ্রাউয়েনকির্শে গির্জাটি এই অঞ্চলে সৌহার্দ্যের প্রতীক৷ সাধারণত, এই গির্জায় ক্রিসমাসের সময় ভিড় জমান কয়েক হাজার মানুষ৷ এ বছর তা হবে না৷ বদলে, গির্জার অনুষ্ঠান ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে সবার জন্য৷
ছবি: picture-alliance/ZB/T. Eisenhuth
বাখের গির্জা
বিখ্যাত সংগীতস্রষ্টা ইওহান সেবাস্টিয়ান বাখ লাইপসিশ শহরের টোমাসকির্শে গির্জার সাথে দীর্ঘ ২৭ বছর যুক্ত ছিলেন৷ তার হাতে গড়া সেন্ট টমাস বয়েজ কয়ার আজও প্রতি বছর ক্রিসমাসের সময় নানা ধরনের ক্যারল পরিবেশন করে৷ এই গির্জায় জমায়েতের অনুমতি থাকলেও অন্যান্যবারের মতো হাজার হাজার মানুষ সেখানে যোগ দিতে পারবেন না৷ আগে থেকে নাম নথিভুক্ত করা হাতে গোনা কয়েকজনই পারবেন অংশ নিতে৷
ছবি: Bachfest Leipzig/J. Schlueter
মিউনিখের ফ্রাউয়েনকির্শে
ক্রিসমাসের ভোর তিনটের সময় প্রতি বছর এই গির্জায় টানা ২০ মিনিট ধরে ঘণ্টা বাজানো হয়৷ ক্রিসমাসের অনুষ্ঠান তারাও সরাসরি সম্প্রচার করবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে৷ সশরীরে অনুষ্ঠান উপভোগ করার অনুমতি রয়েছে মাত্র ১৩০জনের৷
ছবি: picture-alliance/Chromorange/A. Gravante
কোলন ক্যাথিড্রাল
বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ গির্জা কোলনের ক্যাথিড্রাল৷ ৫১৫ ফুট উঁচু এই ক্যাথিড্রালের ক্রিসমাসের বিশেষ প্রার্থনায় অংশ নিতে সাধারণ মানুষকে আগে থেকে অনুমতি নিতে হবে৷ মানা হবে অন্যান্য করোনাবিধি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Berg
রাজার ক্যাথিড্রাল
আখেন শহরের ক্যাথিড্রালটি এক হাজার ২২৪ বছর পুরোনো৷ এই ক্যাথিড্রালে এক সময় জার্মান রাজাদের অভিষেকের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো৷ জনপ্রিয় এই ক্যাথিড্রালেও এবার করোনার কারণে ক্রিসমাসের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন মাত্র ১২০জন৷
ছবি: DW/Muhammad Mostafigur Rahman
হামবুর্গের গির্জা
জার্মানির উত্তরাঞ্চলের ‘মিশেল’ গির্জায় ক্রিসমাসের সময় বেশ কয়েকদিন ধরে চলে টানা প্রার্থনা৷ এ বছর গোটা প্রার্থনাটাই হবে গির্জার ভেতরে ও বাইরে খোলা আকাশের নীচে অনেক বেশি জায়গা জুড়ে৷ কারণ, গুরুত্ব পাচ্ছে শারীরিক দূরত্ব ও করোনাবিধি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বার্লিনের গির্জা
বার্লিনের কাইজার মেমোরিয়াল গির্জা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল৷ আজও এই গির্জার গুরুত্ব মানুষের কাছে বেশ অনেকটাই৷ করোনাবিধি মেনে এখানে অন্যান্য বারের তুলনায় কম দর্শক ভিড় জমাবেন, কারণ, কড়াকড়ি কমানো হয়নি এখনো৷
ছবি: picture-alliance/ ZB
সর্বোচ্চ চূড়া যে গির্জার
বিশ্বের সবক’টি গির্জার মধ্যে সবচেয়ে উঁচু চূড়ার খেতাব রয়েছে উলম শহরের ম্যুনস্টার গির্জার৷ পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় এই স্থানে এবার ভীড় অনেকটাই কম হবে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ৷ জার্মানির সবচেয়ে বড় ‘প্রোটেস্টান্ট গির্জা’য় ক্রিসমাস পালন করতে হলে প্রয়োজন হবে আগাম অনুমতির৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Puchner
এগারোটি প্রার্থনার অনুষ্ঠান
হিলডেশহাইম ক্যাথিড্রালে নিয়ম মেনেই পালিত হবে ক্রিসমাস৷ দর্শকের ভীড় সামলাতে মোট ১১টি প্রার্থনা আযোজিত হবে৷ প্রতিবারই বজায় রাখা হবে দূরত্ব৷ একেকটি প্রার্থনা সভায় যোগ দিতে পারবেন সর্বোচ্চ ৮০জন৷
ছবি: Fotolia/panoramarx
নিয়ম মেনেই উৎসব
এরফুর্ট শহরের সবক’টি গির্জাতেই এবার ব্যাপক কড়াকড়ি৷ জার্মানির অন্যান্য গির্জার মতো এখানেও জারি আছে দূরত্ববিধি৷ গির্জার প্রবেশদ্বারের পাশেই রয়েছে হাতধোয়া ও জীবাণুনাশকের ব্যবস্থা৷ এভাবেই সংকটের মধ্যেও সংযতভাবে উৎসব পালন করার পরিকল্পনায় জার্মানির গির্জাগুলি৷