বাংলাদেশে সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধে বিজ্ঞাপনকে কি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে? দেশের প্রধান দু’টি দৈনিকের সাম্প্রতিক সময়ের বিজ্ঞাপন বিশ্লেষণ করলে কিন্তু সেটাই স্পষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ৷
বিজ্ঞাপন
এ নিয়ে ‘বাংলা ট্রিবিউন'-এ গত ২৯শে আগস্ট বেসরকারি টেলিভিশন এটিএন নিউজের সহযোগী বার্তা প্রধান প্রভাষ আমিন একটি কলাম লেখেন৷ তার শিরোনাম হলো, ‘প্রথম আলোর কণ্ঠরোধের চেষ্টা করবেন না'৷
তিনি তাঁর কলামের একাংশে বলেন, ‘‘হঠাৎ করেই প্রথম আলোর বিজ্ঞাপন যেন একটু কম কম লাগছে৷ আমার কাছে ভালোই লাগছিল৷ পয়সা দিয়ে প্রথম আলো কিনি৷ বিজ্ঞাপন যত কম হয়, আমার ততই লাভ৷ খটকাটা হলো, বিজ্ঞাপন কমে গেল কেন? প্রথম আলোর কি সার্কুলেশন কমে গেছে, নাকি বিজ্ঞাপনদাতাদের বিজ্ঞাপন দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়েছে? প্রথম আলোকে কেন নিজেদের বিজ্ঞাপন দিয়ে পাতা ভরতে হচ্ছে? খোঁজ নিয়েও এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর পেলাম না৷''
শুধু প্রথম আলো নয়, একই গ্রুপের ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য ডেইলি স্টার'-এও বিজ্ঞাপন কমে গেছে৷ প্রভাষ আমিন রবিবার ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আমি একজন পাঠক হিসেবে লক্ষ্য করছি যে, প্রথম আলোতে এখন আর বেসরকারি টেলিফোন কোম্পানি এবং মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির বিজ্ঞাপন দেখা যায় না৷ কয়েকমাস আগেও এই চিত্র ছিল না৷ তবে এর নেপথ্যে কী বা কী কারণে এমন হলো – তা আমি অনুসন্ধান করে দেখিনি৷''
যেখানে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই
অনেক রাষ্ট্রেই সাংবাদিক ও ব্লগাররা হামলার শিকার হচ্ছেন৷ রিপোটার্স উইদাউট বর্ডার্স ২০১৫ সালের ‘প্রেস ফ্রিডম ইনবক্স’-এ বিশ্বের ১৮০টি দেশকে তুলে ধরেছে৷ সেই ব়্যাংকিং-এ যে দেশগুলি সবচেয়ে পেছনে, এই ছবিঘরে থাকছে তাদেরই কথা৷
ছবি: Fotolia/picsfive
ইরিট্রিয়া
‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচিতে’ শেষ অবস্থানে রয়েছে ইরিট্রিয়া৷ পূর্ব আফ্রিকার এই দেশটিতে স্বৈরতন্ত্রের কারণে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই বললেই চলে৷ অনেক সাংবাদিককে জোর করে দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে৷ রেডিও ইরেনা একমাত্র গণমাধ্যম, যা ইরিট্রিয়ার নিরপেক্ষ সংবাদ প্রদান করে৷ তবে এটি প্রচারিত হয় প্যারিস থেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Juinen
স্বৈরশাসকের স্বৈরশাসন
উত্তর কোরিয়াতেও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই৷ পুরো বিশ্ব থেকে দেশটিকে বিচ্ছিন্ন তরে রেখেছেন সে’দেশের স্বৈরশাসক কিম জং উন৷ তিনি যা চান, সেটাই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়৷ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেল ছাড়া তেমন কোনো গণমাধ্যম নেই৷ যে’সব ব্যক্তি তাঁদের স্বাধীন মতামত প্রকাশ করেন, তাঁদের রাজনৈতিক বন্দি শিবিরে রাখা হয় এবং এক সময় গুম করে ফেলা হয়৷ কখনো কখনো তাঁদের পরিবারের ওপরেও নেমে আসে বিপর্জয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Yonhap/Kcna
তুর্কমেনিস্তান
প্রেসিডেন্ট গুরবাঙ্গুলি বেরডিমুহামেদভ প্রায় দেশের সবগুলো গণমাধ্যমের মালিক৷ সংবাদপত্র রিসগাল কেবল ভিন্ন৷ তবে এর প্রতিটি সংস্করণে রাষ্ট্রের অনুমোদন নিয়ে ছাড়পত্র মেলে৷ এছাড়া ইন্টারনেট এবং ওয়েবসাইটেও হস্তক্ষেপ করে সরকার৷
ছবি: Stringer/AFP/Getty Images
ভিয়েতনাম
ভিয়েতনামেও কোনো স্বাধীন গণমাধ্যম নেই৷ ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি বলে দেয় সাংবাদিকরা কী লিখবেন৷ বেশিরভাগ প্রকাশক, সম্পাদক এবং সাংবাদিক ক্ষমতাসীন দলের সদস্য৷ সম্প্রতি কয়েকজন ব্লগার কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমকে চ্যালেঞ্জ করলে তাঁদের জেলে পাঠানো হয়৷
ছবি: picture alliance/ZB/A. Burgi
চীন
রিপোটার্স উইদাউট বর্ডার্স বলছে, ব্লগার এবং সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে বড় কারগারটি রয়েছে চীনে৷ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কেউ কোনো সংবাদ প্রকাশ করলে, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়৷ এছাড়া বিদেশি সাংবাদিকদের উপর উত্তোরত্তোর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে চীনে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Schiefelbein
সিরিয়া
রিপোটার্স উইদাউট বর্ডার্স দেশটিকে গত কয়েক বছর ধরে মুক্ত গণমাধ্যমের শত্রু হিসেবে উল্লেখ করেছে৷ বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের পর থেকে সিরিয়ায় অনেক সাংবাদিককে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে৷ হত্যা করা হয়েছে অনেকককে৷ অন্যদিকে আল-নুসরা ফ্রন্ট, যারা ইসলামিক স্টেট এবং আসাদের বিরুদ্ধে লড়ছে, তাদের হাতেও বিপন্ন হতে হচ্ছে সরকারি গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের৷ এছাড়া সাংবাদিকদের অপহরণের ঘটনাও ঘটে চলেছে অহরহ৷
ছবি: Abd Doumany/AFP/Getty Images
6 ছবি1 | 6
‘আদিবাসী' নিয়ে রিপোর্ট, প্রতিক্রিয়া
গত ১৬ই আগস্ট ‘রাঙামাটির বাঘাইছড়ি: সেনাবাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে পাঁচ আদিবাসী নিহত' – এই শিরোনামে প্রথম আলো তাদের প্রথম পাতায় প্রধান খবর হিসেবে একটি সংবাদ পরিবেশন করে৷ এর পরদিন ১৭ই আগস্ট প্রথম আলো ওই খবর নিয়ে একটি ব্যাখ্যা দেয়৷ সেই ব্যাখ্যাটি ছিল এরকম – ‘‘গতকাল রোববার প্রথম আলোতে প্রকাশিত রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে পাঁচ সন্ত্রাসী নিহত হওয়ার খবরের শিরোনাম নিয়ে ভুল-বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে৷ নিহত পাঁচ ব্যক্তি যে সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য, তা প্রতিবেদনে একাধিকবার এবং হাইলাইটসে বা বড় হরফে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে৷''
প্রথম আলো তাদের ব্যাখ্যায় আরো লেখে – ‘‘শিরোনামে এবং প্রতিবেদনের শুরুতে ‘আদিবাসী' লেখার অর্থ এই নয় যে, তারা নিরীহ যুবক৷ আমরা গতকালও খোঁজ নিয়ে জেনেছি, নিহতরা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্য৷ উল্লেখ্য, সংবিধানে পার্বত্য এলাকার জনগোষ্ঠীকে উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায় হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে৷''
পর্যবেক্ষকদের মতে, ১৬ই আগস্টের পর থেকেই প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারের বিজ্ঞাপনে ধস নামে৷ বিজ্ঞাপনী এজেন্সি হিসেবে কাজ করে এ রকম কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে ডয়চে ভেলে৷ তাদের মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যাদের মাধ্যমে প্রথম আলোর শতকরা ৮০ ভাগ বিজ্ঞাপন আসে৷ সেই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘‘প্রথম আলোতে এ মুহূর্তে প্রধানত বেসরকারি মোবাইল ফোন কোম্পানি ও বহুজাতিক কোম্পানির বিজ্ঞাপন দেয়া বন্ধ আছে৷ আমরা কিছু বুকিংও বাতিল করেছি৷''
কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বিজ্ঞাপন বন্ধ
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে গ্রামীণ ফোনসহ পাঁচটি বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর সংবাদমাধ্যমগুলিতে প্রধান বিজ্ঞাপনদাতা হিসেবে বিবেচিত৷
এই গ্রামীণ ফোনের অধিকাংশ শেয়ার নরওয়ের ‘টেলিনর' গ্রুপের৷ ডয়চে ভেলেকে টেলিনর-এর এশিয়া অঞ্চলের প্রধান টর ওডল্যান্ড ই-মেল মারফত জানান, ‘‘বাংলাদেশের দু'টি প্রধান দৈনিকে (পত্রিকা) বিজ্ঞাপন না দেয়ার জন্য নির্দেশনা রয়েছে কর্তৃপক্ষ৷ এর ফলে গ্রামীণ ফোন গ্রাহকদের সঙ্গে পত্রিকার মাধ্যমে বাণিজ্যিক যোগাযোগের ক্ষেত্রটি ব্যর্থ হচ্ছে৷ এরইমধ্যে টেলিনর এবং গ্রামীণ ফোন বেশ কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে, এই প্রতিক্রিয়া কমিয়ে আনতে৷ তার মধ্যে অন্যতম হলো কর্তৃপক্ষ, শিল্প প্রতিষ্ঠান, বিনিয়োগকারী ও মিডিয়া পার্টনারদের সঙ্গে মতবিনিময়৷ আমরা আশা করছি, এর মধ্য দিয়ে সংবাদপত্রে শিগগিরই বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করতে পারবো৷''
বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার শিকার যারা
চলতি বছর ইসলামপন্থিরা একের পর এক হামলা চালিয়ে বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছে৷ এতে প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন৷ চলুন জানা যাক ২০১৫ সালের কবে, কারা হামলার শিকার হয়েছেন...৷
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্লগার খুন
একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে খুন হন ব্লগার এবং লেখক অভিজিৎ রায়৷ কমপক্ষে দুই দুর্বৃত্ত তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে৷ এসময় তাঁর স্ত্রী বন্যা আহমেদও গুরুতর আহত হন৷ বাংলাদেশি মার্কিন এই দুই নাগরিককে হত্যার দায় স্বীকার করেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি গোষ্ঠী ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’৷ পুলিশ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
বাড়ির সামনে খুন
ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে হত্যা করা হয় ঢাকায়, গত ৩০ মার্চ৷ তিন দুর্বৃত্ত মাংস কাটার চাপাতি দিতে তাঁকে কোপায়৷ সেসেময় কয়েকজন হিজরে সন্দেহভাজন দুই খুনিকে ধরে ফেলে, তৃতীয়জন পালিয়ে যায়৷ আটকরা জানায়, তারা মাদ্রাসার ছাত্র ছিল এবং বাবুকে হত্যার নির্দেশ পেয়েছিল৷ কে বা কারা এই হত্যার নির্দেশ দিয়েছে জানা যায়নি৷ বাবু ফেসবুকে ধর্মীয় উগ্রপন্থিদের বিরুদ্ধে লিখতেন৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
সিলেটে আক্রান্ত মুক্তমনা ব্লগার
শুধু ঢাকায় নয়, ঢাকার বাইরে ব্লগার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে৷ গত ১২ মে সিলেটে নিজের বাসার কাছে খুন হন নাস্তিক অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট এবং ব্লগার অনন্ত বিজয় দাস৷ ভারত উপমহাদেশের আল-কায়েদা, যাদের সঙ্গে ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’-এর সম্পর্ক আছে ধারণা করা হয়, এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷ দাস ডয়চে ভেলের দ্য বব্স জয়ী মুক্তমনা ব্লগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/EPA/Str
বাড়ির মধ্যে জবাই
ব্লগার নিলয় চট্টোপাধ্যায়কে, যিনি নিলয় নীল নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন, হত্যা করা হয় ঢাকায় তাঁর বাড়ির মধ্যে৷ একদল যুবক বাড়ি ভাড়ার আগ্রহ প্রকাশ করে ৮ আগস্ট তাঁর বাড়িতে প্রবেশ করে এবং তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে৷ নিজের উপর হামলা হতে পারে, এমন আশঙ্কায় পুলিশের সহায়তা চেয়েছিলেন নিলয়৷ কিন্তু পুলিশ তাঁকে সহায়তা করেনি৷ ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’ এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে, তবে তার সত্যতা যাচাই করা যায়নি৷
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
জগিংয়ের সময় গুলিতে খুন বিদেশি
গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে জগিং করার সময় ঢাকার কূটনৈতিক এলাকায় খুন হন ইটালীয় এনজিও কর্মী সিজার তাবেলা৷ তাঁকে পেছন থেকে পরপর তিনবার গুলি করে দুর্বৃত্তরা৷ জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে বলে দাবি করেছে জিহাদিদের অনলাইন কর্মকাণ্ডের দিকে নজর রাখা একটি সংস্থা৷ তবে বাংলাদেশে সরকার এই দাবি অস্বীকার করে বলেছে ‘এক বড় ভাইয়ের’ তাঁকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/ A.M. Ahad)
রংপুরে নিহত এক জাপানি
গত ৩ অক্টোবর রংপুরে খুন হন জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও৷ মুখোশধারী খুনিরা তাঁকে গুলি করার পর মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়৷ ইসলামিক স্টেট এই হত্যাকাণ্ডেরও দায় স্বীকার করেছে, তবে সরকার তা অস্বীকার করেছে৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন না যে তাঁর দেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীটির উপস্থিতি রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
হোসনি দালানে বিস্ফোরণ, নিহত ১
গত ২৪ অক্টোবর ঢাকার ঐতিহ্যবাহী হোসনি দালানে শিয়া মুসলমানদের আশুরার প্রস্তুতির সময় বিস্ফোরণে এক কিশোর নিহত এবং শতাধিক ব্যক্তি আহত হন৷ বাংলাদেশে এর আগে কখনো শিয়াদের উপর এরকম হামলায় হয়নি৷ এই হামলারও দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট, তবে সরকার সে দাবি নাকোচ করে দিয়ে হামলাকারীরা সম্ভবত নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি গোষ্ঠী জেএমবি-র সদস্য৷ সন্দেহভাজনদের একজন ইতোমধ্যে ক্রসফায়ারে মারা গেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Zaman
ঢাকায় প্রকাশক খুন
গত ৩১ অক্টোবর ঢাকায় দু’টি স্থানে কাছাকাছি সময়ে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়৷ এতে খুন হন এক ‘সেক্যুলার’ প্রকাশক এবং গুরুতর আহত হন আরেক প্রকাশক ও দুই ব্লগার৷ নিহত প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনের সঙ্গে ঢাকায় খুন হওয়া ব্লগার অভিজিৎ রায়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ জঙ্গি গোষ্ঠী ‘আনসার-আল-ইসলাম’ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
প্রার্থনারত শিয়াদের গুলি, নিহত ১
গত ২৭ নভেম্বর বাংলাদেশের বগুড়ায় অবস্থিত একটি শিয়া মসজিদের ভেতরে ঢুকে প্রার্থনারতদের উপর গুলি চালায় কমপক্ষে পাঁচ দুর্বৃত্ত৷ এতে মসজিদের মুয়াজ্জিন নিহত হন এবং অপর তিন ব্যক্তি আহত হন৷ তথকথিত ইসলামিক স্টেট-এর সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততা দাবি করা স্থানীয় একটি গোষ্ঠী হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
9 ছবি1 | 9
টর ওডল্যান্ড-এর বক্তব্যে অবশ্য এ কথা স্পষ্ট নয় যে, কোন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তারা বাংলাদেশের প্রধান দু'টি দৈনিকে বিজ্ঞাপন দেয়া বন্ধ রেখেছে৷
এদিকে বাংলাদেশে পত্রিকাসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপনের প্রবাহ পর্যক্ষেণ ও তথ্য সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রধান হলো রায়ান্স আর্কাইভস লিমিটেড৷ তাদের কাছ থেকে ডয়চে ভেলে আগস্টের প্রথম পাঁচদিন এবং সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখ থেকে পরবর্তী পাঁচদিনের বিজ্ঞাপন প্রবাহের তথ্য সংগ্রহ করে৷ তাতে দেখা যায়, প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার ১৬ই আগস্টের আগে গ্রামীণ ফোন, রবি, এয়ারটেলসহ বিভিন্ন মোবাইল ফোন কোম্পানি এবং ইউনিলিভারসহ বহুজাতিক কোম্পানির বিজ্ঞাপন প্রধানভাবে পেত৷ কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিজ্ঞাপন বলতে গেলে নেই৷
হিসাব বলছে বিজ্ঞাপন থেকে আয় কমে গেছে
রায়ান্স আর্কাইভস লিমিটেড-এর আরেক হিসাব থেকে দেখা যায়, জুলাই মাসে প্রথম আলো একদিনে গ্রামীণ ফোন, রবি, বাংলা লিংক, এয়ারটেল, টেলিটক, প্যাসিফিক টেলিকম এবং ইউনিলিভার থেকে বিজ্ঞাপন পেয়েছে ৬ কোটি ৩২ লাখ ৩০হাজার ৭০০ টাকার৷ অথচ সেপ্টেম্বর মাসে পেয়েছে মাত্র ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকার বিজ্ঞাপন৷ এই তারিখে এয়ারটেল, টেলিটক ও প্যাসিফিক টেলিকম কোনো বিজ্ঞাপন দেয়নি৷
ওদিকে ডেইলি স্টারের ক্ষেত্রে দেখা যায়, জুলাই মাসে ছিল ১ কোটি ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার ১০০ টাকার বিজ্ঞাপন৷ আর সেপ্টেম্বর মাসে এক্ষেত্রে তারা পেয়েছে মাত্র ৩ লাখ ৮৪ হাজার টাকার বিজ্ঞাপন৷
রায়ান্স আর্কাইভস লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ হাসান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আমাদের পর্যবেক্ষণে এটা স্পষ্ট যে প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে মোবাইল ফোন কোম্পানি এবং কিছু বহুজাতিক কোম্পানির বিজ্ঞাপন কমে গেছে৷ আর সেটা দৃশ্যমানভাবেই কমেছে৷ প্রথম আলো অন্য বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তা পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলেও, ডেইলি স্টারের পুষিয়ে নেয়ার বিষয়টি দৃশ্যমান নয়৷''
তিনি বলেন, ‘‘বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে এই দুটি পত্রিকার এই অবস্থা অতীতে আমাদের পর্যবেক্ষণে কখনো দেখা যায়নি৷'' এছাড়াও একাধিক সূত্র জানিয়েছে যে, সম্প্রতি প্রথম আলোর মোট বিজ্ঞাপন বাবদ আয় ২৫ ভাগ আর ডেইলি স্টারের ২৫ ভাগ কমে গেছে৷
এ নিয়ে ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে কথা বলার জন্য প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান এবং ডেইলি স্টার-এর সম্পাদক মাহফুজ আনামের সঙ্গে যোগাযোগর চেষ্টা করেও তাঁদের পাওয়া যায়নি৷
রায়ান্স আর্কাইভস লিমিটেড-এর তথ্য মতে, জুলাই মাসে প্রথম আলো মোট বিজ্ঞাপন পায় ২৪ কোটি ৮৭ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকার৷ এর মধ্যে টেলিকম খাত ও ইউনিলিভার থেকে তারা পেয়েছিল শতকরা ২৫ ভাগ বিজ্ঞাপন৷
সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম আলো মোট বিজ্ঞাপন পায় ১৫ কোটি ৩০ লাখ ২৮ হাজার ৯০০ টাকার৷ এর মধ্যে ফোন কোম্পানি এবং ইউনিলিভার-এর বিজ্ঞাপন মাত্র শতকরা ১ ভাগ৷ অর্থাৎ জুলাই মাসের তুলনায় সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম আলো ৯ কোটি টাকার বিজ্ঞাপন কম পেয়েছে৷
প্রিয় পাঠক, বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় দু’টি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন বন্ধ করে চাপ সৃষ্টির ব্যাপারটা আপনি কিভাবে দেখছেন? আপনার মতামত জানান নীচে মন্তব্যের ঘরে৷