1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সংবাদমাধ্যমে নারীর অবস্থান

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৭ জানুয়ারি ২০১৭

সংবাদমাধ্যমে নারীর অবস্থান আজও তলানিতে পড়ে আছে৷ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের প্রধান নাসিমুন আরা হক মিনু জানান, ‘‘দেখতে সুন্দর হওয়ার কারণে নারী ‘প্রেজেন্টার' আমরা পাচ্ছি, কিন্তু নীতিনির্ধারণী পদে তাঁদের অংশগ্রহণ বাড়ছে না৷’’

বাকস্বাধীনতার প্রতীকী ছবি
ছবি: DW/M. Mamun

বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে কত নারী কাজ করেন তার সাম্প্রতিক কোনো পরিসংখ্যান নেই৷ তবে নাসিমুন আরা হক মিনুর কথায়, দেশে পত্রিকা, অনলাইন ও টেলিভিশন মিলিয়ে সংবাদমাধ্যমে কর্মরত নারীর সংখ্যা এক হাজার৷ অন্যদিকে বাংলাদেশ সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট জার্নালিজম অ্যান্ড কমিউনিকেশন বা বিসিডিজেসি-র কয়েক বছর আগের জরিপ অনুযায়ী, এই সংখ্যা মোট সংবাদমাধ্যম কর্মীর শতকরা ছয় ভাগ৷

গত অক্টোবরে অবশ্য বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ ২৪-এর সাংবাতিক শাহনাজ মুন্নি তাঁর এক প্রতিবেদনে বলেন, ‘‘প্রিন্ট মিডিয়ায় নারীর সংখ্যা শতকরা ৫ ভাগ আর ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় শতকরা ২৫ ভাগ৷''

নাসিমুন আরা হক মিনু

This browser does not support the audio element.

আরেকটি হিসাব দিয়েও পরিস্থিতি বোঝা যায়৷ আর তা হলো, জাতীয় প্রেসক্লাবের হিসেব৷ সেখানে ২০১৮ জন সদস্যের মধ্যে নারী সদস্য মাত্র ৭২ জন৷ ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের ছয় হাজার সদস্যের মধ্যেও নারীর সংখ্যা ১৫০ জনের বেশি নয়৷

নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের প্রধান নাসিমুন আরা হক মিনু ইলেট্রনিক মিডিয়ায় নারীর এই অংশগ্রহণ বাড়াকে সম্পূর্ণ ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন না৷ তিনি মনে করেন, ‘‘টেলিভিশন মালিকরা বা কর্তৃপক্ষ মনে করে নারীরা দেখতে সুন্দর৷ তাই তাদের ‘প্রেজেন্টার' পদে নিয়োগ দিচ্ছেন তাঁরা৷ কিন্তু রিপোর্টার বা নীতিনির্ধারণী পদে নারীদের অংশগ্রহণ আশানুরূপভাবে বাড়ছে না৷''

২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে ঢাকায় হেফাজতের সমাবেশে নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক নাদিয়া শারমিনের কথায় নারীদের অংশগ্রহণ আশানুরূপ না হওয়ার কারণ খুঁজে পাওয়া যায়৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নারী হওয়ার কারণেই আমাকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে৷ আমার তখনকার কর্মস্থল একুশে টেলিভিশনও আমাকে নির্যাতনের পর চিকিৎসা তো দূরের কথা, কোনো সহায়তাই করেনি৷ উলটে আমাকে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল৷ শুধু তাই নয়, আট মাসের বেতনও দেয়া হয়নি আমাকে৷''

নাদিয়া এখন একাত্তর টেলিভিশনে কাজ করেন৷ তিনি ‘ক্রাইম রিপোর্টিং'-এর মতো একটি ‘চ্যালেঞ্জিং বিট কাভার' করেন৷ তিনিই বাংলাদেশের প্রথম সাংবাদিক, যিনি সাহসিকতার জন্য ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের ‘ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অ্যাওয়ার্ড ফর কারেজ' পুরস্কার পান৷ তিনি বলেন, ‘‘নারী সাংবাদিককে দু'ধরনের যুদ্ধ করতে হয়৷ তাঁকে প্রমাণ করতে হয় যে সে যোগ্য৷ এছাড়া পুরুষের সঙ্গে প্রতিযোগিতাও করতে হয়৷ এর বাইরে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি তো আছেই৷ কোনো নারী যে ক্রাইম রিপোর্টার হতে পারে, এটাই অনেকের চিন্তায় আসে না৷''

নাদিয়া শারমিন

This browser does not support the audio element.

কর্মস্থলে কেনো বৈষম্য আছে কি? এমন প্রশ্নের জবাবে নাদিয়া বলেন, ‘‘দৃশ্যত নেই৷ তবে তা অনেকটা নির্ভর করে যিনি সুপারভাইজ করেন, তাঁর মানসিকতার ওপর৷''

অনলাইন নিউজ পেপার বাংলা ট্রিবিউনের সিনিয়র রিপোর্টার উদিসা ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘নারীদের রাজনীতি, অর্থনীতি বা কূটনীতির মতো বিষয় নিয়ে সাংবাদিকতা করাকে অনেকেই মানতে পারেন না৷ তাঁদের ধারণা,, নারী সাংবাদিক মানেই হলো তাঁরা হালকা বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন করবেন৷''

তিনি বলেন, ‘‘এই পেশায় আসা এবং টিকে থাকার জন্য পরিবারের সমর্থন একটা বড় ব্যাপার৷ আর নারী বিবাহিত হলে সেটা আরো বেশি প্রয়োজন৷ সাংবাদিকতা ২৪ ঘণ্টার পেশা৷ কোনো নারী রাতেও কাজ করবেন, এটা অনেকে ভাবতেই পারেন না৷''

ফরিদা ইয়াসমিন

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশে এবারই প্রথম জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক পদে একজন নারী নির্বাচিত হয়েছেন৷ তিনি হলেন ইত্তেফাকের সিনিয়র রিপোর্টার ফরিদা ইয়াসমিন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সাংবাদিকতায় পুরুষের তুলনায় নারীকে অনেক বেশি যোগ্যতার প্রমাণ রাখতে হয়৷ প্রথমত তাঁকে প্রমাণ করতে হয় যে, পুরুষ যেটা করতে পারে সেটা করতে তিনিও সক্ষম৷ তারপর তাঁকে পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হয়৷''

ফরিদা ইয়াসমিন জানান, ‘‘অনেকের মধ্যেই একটা ‘মাইন্ড সেট' কাজ করে যে এই কাজ নারী পারবে না, পারে না৷ বলা বাহুল্য, এই ‘মাইন্ড সেট' নারীকেই ভাঙতে হয়৷ আমি যত জায়গায় কাজ করেছি সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো বৈষম্যের শিকার আমি হইনি৷ তবে মনস্তাত্ত্বিক বাধা এখনো প্রবল৷''

নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের প্রধান নাসিমুন আরা হক মিনুর কথায়, ‘‘এক সময় পত্রিকার নারী পাতাগুলোতে শুধু নারীরাই কাজের সুযোগ পেতেন৷ কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলেছে৷ তারপরও সংবাদমাধ্যমে নারীদের অংশগ্রহণ অনেক কম৷ কারণ এখনো মনে করা হয় যে, এই ‘চ্যালেঞ্জিং' পেশা নারীদের জন্য নয়৷ তার ওপর এ পেশায় বেতন বৈষম্যেরও শিকার হন নারীরা৷ শিকার হন হয়রানিরও৷ এমনকি নিয়োগ দেয়ার সময়ও তাঁদের উপেক্ষা করা হয়৷''

তিনি বলেন, ‘‘এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি৷ আমরা সংবাদমাধ্যম এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দিয়ে দাবি করেছি যে, সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন পদে অন্তত ৩০ ভাগ নারী নিয়েগ দিতে হবে৷''

বন্ধু, আপনার দেখা কোনো নারী সাংবাদিকের গল্প বলুন আমাদের৷ লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ