1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সংবাদমাধ্যম আইএস-র দোসর?

ডিয়ানা হোডালি/এসবি১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

সন্ত্রাসী সংগঠন ‘ইসলামিক স্টেট’-এর হত্যাকাণ্ডের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া বা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করার অর্থ সন্ত্রাসবাদীদের প্রচারণায় সাহায্য করা৷ এমনটাই মনে করেন ডিয়ানা হোডালি৷

Irak Islamischer Staat Fahne ISIS
ছবি: Imago/Xinhua

মাসের পর মাস ধরে আইএস নামক সন্ত্রাসী সংগঠনটি গোটা বিশ্বকে ত্রাসের মধ্যে রেখেছে৷ স্বঘোষিত ‘ইসলামিক স্টেট' ঢাক পিটিয়ে প্ররোচনার খেলা খেলে চলেছে৷ বন্দি বিনিময় নিয়ে তারা এমন সুরে আলোচনা করছে, যেন তারা স্বীকৃত বৈধ রাষ্ট্রের মর্যাদা পেয়ে গেছে৷ সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কে পণবন্দিদের হত্যার নৃশংস দৃশ্যের ছবি ও ভিডিও চালাচালি হচ্ছে৷ বার বার শোনা যাচ্ছে কাতর আবেদন – ‘‘এই সব ছবি দেখিয়ে নিজেদের সন্ত্রাসবাদীদের দোসর হয়ে উঠবেন না৷'' তবে অনেক ইউজার তার তোয়াক্কা করছেন না৷ আবার অনেকে সেই সব ভয়ংকর দৃশ্যের ছবি আরও ছড়িয়ে দিচ্ছেন, কারণ তাঁরা বাকিদের জানাতে চাইছেন আইএস আসলেই কতটা বর্বর৷ কিন্তু সন্ত্রাসী মিলিশিয়া বাহিনী হিসেবে আইএস যে দুঃস্বপ্নকে বাস্তব করে তুলছে, তা জানতে আর কি কিছু বাকি আছে? তার জন্য কি সত্যি এই সব ছবি ও ভিডিও দেখতে হয়? উত্তর হলো – না, একেবারেই না৷

ডিয়ানা হোডালিছবি: DW

সংবাদমাধ্যমও একই বিড়ম্বনায় পড়েছে৷ ইন্টারনেটে প্রকাশিত এই সব ভিডিও দেখে অনেক সাংবাদিক ভাবছেন, এগুলি কি বাকিদের দেখানো উচিত? এমন জঘণ্য অপরাধের তীব্রতাই তো তা নিয়ে রিপোর্ট করার কারণ৷ এমন বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের ভিডিও নিয়ে তাই দুই রকম প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে৷ একদিকে অ্যামেরিকার দক্ষিণপন্থি রক্ষণশীল টেলিভিশন কেন্দ্র ফক্স নিউজ জর্ডানের বন্দি পাইলটের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের গোটা ভিডিওটাই তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে৷ সিএনএন তার ঠিক বিপরীত সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ জার্মানির টেলিভিশন চ্যানেলগুলিও সেই ভিডিও একেবারেই দেখায় নি৷ ইউটিউব আপলোড করা সেই সব ভিডিও যত দ্রুত সম্ভব মুছে ফেলার চেষ্টা করছে৷ তবে তার কোনো ফল হচ্ছে না, কারণ আইএস অনুগামীরা মহা আনন্দে খোদ ফক্স নিউজের ওয়েবসাইট থেকেই ভিডিওর লিংক শেয়ার করে চলেছে৷ তাদের ঘৃণার পাত্র পশ্চিমা বিশ্বই সেই ব্যবস্থা করে দিচ্ছে৷

মধ্যপন্থাও আইএস-কে সাহায্য করছে

সংবাদমাধ্যমের একটা বড় অংশই মধ্যপন্থা অবলম্বন করে চলেছে এবং ভিডিও থেকে কিছু স্থিরচিত্র তুলে ধরছে৷ এমনকি জার্মানিতেও এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে৷ তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট'-এর কীর্তিকলাপ জনসমক্ষে তুলে ধরার একটা তাগিদ লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ যুক্তি হিসেবে বার বার বলা হচ্ছে, আইএস যে কতটা নৃশংস ও ভয়ংকর হতে পারে, সেটাই তুলে ধরা হচ্ছে৷ কিন্তু সমস্যা হলো, এমন প্রচারণার মাধ্যমেই এই সন্ত্রাসী সংগঠন বিনা সমস্যায় তাদের বার্তা ও প্রতীক গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে পারছে৷ কালো পতাকার সামনে মুখোশ পরা জল্লাদ ও কমলা পোশাক পরা বন্দিদের ছবি কে না দেখেছে? প্রত্যেক টেলিভিশন কেন্দ্র, প্রত্যেক পত্র-পত্রিকা, প্রত্যেক অনলাইন পোর্টাল যখন আইএস-এর তৈরি ছবি বা ভিডিও প্রকাশ করে, তখন অনিচ্ছা সত্ত্বেও তারা সন্ত্রাসবাদীদের মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের অংশ হয়ে পড়ে৷

কারণ আইএস-এর তোলা ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করার মাধ্যমে সংবাদমাধ্যম এই সন্ত্রাসী সংগঠনকে তার পছন্দমতো ভাবমূর্তি তুলে ধরতে সাহায্য করছে৷ আইএস মোটেই জনসাধারণের হৃদয় জয় করতে চায় না৷ আইএস তার ক্ষমতা তুলে ধরতে চায়৷ আইএস ভয় দেখাতে চায় – বিশেষ করে ইরাকি নিরাপত্তা বাহিনী বা অন্য যে কোনো শক্তিকে, যারা ‘ইসলামিক স্টেট'-এর বিরুদ্ধে সংগ্রামের কথা ভাবছে৷ আইএস তার প্রতিপক্ষের মনোবল ভেঙে দিতে চায়৷ তাদের বার্তার সারমর্ম হলো ‘‘আমাদের কাছে আসার চেষ্টা করলে কী পরিণাম হয়, তা নিজেরাই দেখে নাও৷'' এতে কাজও হচ্ছে৷ গত বছর তিন হাজারেরও কম যোদ্ধা নিয়ে আইএস বিনা বাধায় ইরাকের মোসুল শহর দখল করতে সক্ষম হয়েছে৷ তাদের ভয়ে ইরাকি সেনাবাহিনীর তিনটি ডিভিশন তাদের অস্ত্রশস্ত্র, সাজসরঞ্জাম ফেলে রেখে পলায়ন করেছিল৷ জর্ডানের বন্দি পাইলটের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর সংযুক্ত আরব আমিরাত আইএস-এর উপর বিমান হামলা সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছিল৷

চাই সংবাদ পরিবেশনের নতুন নীতিমালা

আইএস-এর তৈরি ছবি ও ভিডিও প্রচারের পরিণতি হিসেবে বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায় সমাজের মূল স্রোত থেকে কিছুটা দূরে সরে যাচ্ছে৷ তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট'-এর সঙ্গে ইসলাম ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই৷ তারা শুধু ধর্ম থেকে ফায়দা তুলছে, সেটিকে নোংরা, বিকৃত করে তুলছে৷ তা সত্ত্বেও নৃশংস দৃশ্যের ছবি ইসলাম-বিদ্বেষ আরও বাড়িয়ে তুলছে৷ সমাজে একঘরে হয়ে পড়লে কী ঘটতে পারে, তারও দৃষ্টান্ত স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে৷ যেমন জার্মানি থেকে অনেকে ইরাক ও সিরিয়ায় আইএস-এর যোদ্ধা হিসেবে যোগ দিয়েছে৷ এমন প্রবণতা এখনো তীব্র আকার ধারণ না করলেও অবাস্তব নয়৷

সংবাদমাধ্যম ও জনসংযোগের নিখুঁত কৌশলের সাহায্যে আইএস লড়াই না করেই সংগ্রামে জিতে বসে আছে৷ বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বে অনেকেই আইএস-এর পেশাদারি ‘পাবলিক রিলেশনস'-কে পাত্তা দেয়নি৷ সন্ত্রাসবাদীরা সব কিছু নিখুঁতভাবে গুছিয়ে নিয়েছে৷ তাদের কাছে লেখক, সম্পাদক, ক্যামেরাম্যান – সব আছে৷ মুক্ত সমাজে সংবাদ মাধ্যম কী ভাবে কাজ করে, আইএস তা ভালোভাবে রপ্ত করেছে৷ অর্থাৎ তারা জানে, সবাই প্রতিনিয়ত চাঞ্চল্যকর ‘স্টোরি'-র খোঁজে ছুটছে৷ আইএস ও তাদের জাতভাইরা সংবাদমাধ্যমের জগতকে এবার সংবাদ পরিবেশন সংক্রান্ত নতুন নীতিমালা রচনা করতে বাধ্য করছে, যাতে কেউ আর তাদের ছবি ও ভিডিও প্রকাশ না করে৷ এখন তার সময় এসে গেছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ