1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সংবাদ প্রকাশের কারণেই কি খুন হলেন ফাগুন?

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৪ মে ২০১৯

জামালপুরের রেল লাইনের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয় তাঁর লাশ৷ তরুণ সাংবাদিক ইহসান ইবনে রেজা ফাগুনের এমন মৃত্যু নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন৷ কী কারণে হত্যা করা হলো তাঁকে?

প্রতীকী ছবিছবি: DW

মঙ্গলবার রাতে ইহসান ইবনে রেজা ফাগুন নামের তরুণ সাংবাদিকের লাশ উদ্ধার করে রেলওয়ে থানা পুলিশ৷ ফাগুন অনলাইন নিউজপোর্টাল প্রিয় ডটকমে কাজ করতেন৷ রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র ছিলেন তিনি৷ তাঁর বাবা কাকন রেজা এনটিভির শেরপুর জেলা প্রতিনিধি৷

ফাগুনের মাথায় আঘাতের চিহ্ন এবং গলা ফোলা ছিল৷ তা থেকে পুলিশের ধারণা, তাঁকে হয়ত গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে৷

পুলিশ বলছে, মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে রেললাইনের পাশে ফাঁকা জায়গায় একটি ছেলেকে পড়ে থাকতে দেখে এগিয়ে আসেন গ্রামবাসী৷ তখনও দেহে প্রাণ ছিল৷ গ্রামবাসী তাঁকে উদ্ধার করে মাথায় পানিও দিয়েছে৷ কিন্তু বেশিক্ষণ বাঁচিয়ে রাখা যায়নি৷ মৃত্যুর আগে কিছু বলেও যেতে পারেনি ফাগুন৷ মাথায় আঘাতের কারণে তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে৷ তবে মৃত্যু সেই রক্তক্ষরণের কারণেই হয়েছে, নাকি গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে, সেটি পোস্টমর্টেম রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না৷

প্রিয় ডটকম ছেড়ে ঈদের পরই জাগো নিউজে যোগদানের কথা ছিল ফাগুনের৷ মঙ্গলবার সকালে ঢাকায় এসে জাগো নিউজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে চাকরি চূড়ান্ত করেছেন তিনি৷ ওই দিনই ট্রেনে করে গ্রামের বাড়ি শেরপুরে যাচ্ছিলেন৷ পথের মধ্যে মিলল তাঁর লাশ৷ শুক্রবার এই ঘটনায় জামালপুর থানায় একটি হত্যা-মামলা হয়েছে৷ কাকন রেজার দুই ছেলের মধ্যে ফাগুন ছিল বড়৷ নিজের বড় ছেলে মেধাবী ও বিনয়ী ছিল বলে জানান কাকন রেজা৷

মৃত্যুর নেপথ্যে কি সেই সংবাদ?

ফাগুনের বাবা কাকন রেজা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রিয় ডটকমের ইংরেজি বিভাগে কাজ করত ফাগুন৷ মাঝে মধ্যে বাংলায়ও রিপোর্ট লিখত, যদিও তার পদবী ছিল সহ-সম্পাদক৷ কিছুদিন আগে একটি ডেভেলপার কোম্পানির বিরুদ্ধে সংবাদ লিখেছিল ফাগুন৷ ওই সংবাদের পর ডেভেলপার কোম্পানি তাকে হুমকি দিয়েছিল৷ এমনকি আপোষের প্রস্তাবও দিয়েছিল৷ফাগুনকে নেপাল ভ্রমণের খরচ ও একটি আইফোন টেন কিনে দিতে চাওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু ফাগুন সেই প্রস্তাবে রাজি হননি৷ পরে প্রিয় ডটকম কর্তৃপক্ষের মধ্যস্থতায় সমঝোতা হয়৷ সেখানে ডেভেলপার কোম্পানির এমডি এসে ক্ষমাও চেয়েছিলেন৷ এমনিতে ফাগুনের কোনো শত্রু ছিল না৷ তবে আমার নিজের সাংবাদিকতার কারণে কেউ আমার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ছেলেকে হত্যা করে থাকতে পারে৷ কারণ, পারিবারিক কোনো শত্রুতাও ছিল না আমার পরিবারে৷’’

বাংলাদেশে সবকিছুই হতে পারে: জাকারিয়া স্বপন

This browser does not support the audio element.

কী ছিল সেই রিপোর্টে? ঘটনাটিই বা কী ছিল? জানতে চাইলে প্রিয় ডটকমের সম্পাদক জাকারিয়া স্বপন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ওই ঘটনা তো ৮ থেকে ১০ মাস আগের৷ ডেভেলপার কোম্পানির মালিক নিজে এসে ক্ষমা চেয়ে গেছেন৷ পরে আমরা রিপোর্টটি প্রত্যাহার করে নেই৷ বাংলাদেশে সবকিছুই হতে পারে৷ তবে ওই নিউজের কারণে এতদিন পর এসে হত্যাকাণ্ড, সেটা ঠিক আমার কেমন যেন লাগছে৷ কারণ, ওই রিপোর্টের কারণে ডেভেলপার কোম্পানির কোনো জমি বাতিল হয়নি, তাদের তেমন কোনো ক্ষতিও হয়নি, তাহলে কেন তারা এমন করবে? তারপরও আমি বিষয়টি আরো ভালোভাবে খতিয়ে দেখবো?'' কোম্পানিটির নাম জানতে চাইলে স্বপন বলেন, ‘‘যেহেতু ওই কোম্পানির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি, তাই এই মুহূর্তে আমি তাদের নাম বলতে পারি না৷ যদি কখনো তাদের সংশ্লিষ্টতা আসে, তাহলে নাম বলবো৷’’

কীভাবে ফাগুনের মৃত্যু?

জাগো নিউজে সাক্ষাৎকার দিয়ে মঙ্গলবারই শেরপুরে ফিরছিলেন ফাগুন৷ বেলা ৪টার দিকে শেরপুরগামী একটি ট্রেনে ওঠেন তিনি৷ তখনও বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে৷ রাত ৮টায় সর্বশেষ কথা হয়েছে৷ তখন তিনি বাবাকে জানান, ময়মনসিংহের কাছাকাছি আছেন৷ এরপরই ফাগুনের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়৷ কোনোভাবেই ছেলের সন্ধান পাচ্ছিলেন না কাকন রেজা৷ বুধবার সকালে তিনি ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানায় একটি জিডি করেন৷ পুলিশ ফাগুনের মোবাইল ফোনের অবস্থান শনাক্ত করে দেখে সর্বশেষ তাঁর অবস্থান ছিল ময়মনসিংহের একটি গ্রামে৷ কিন্তু ওই জায়গায় ফাগুনের যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না৷ পরে বুধবার সন্ধায় জামালপুরে অজ্ঞাত পরিচয় লাশের সন্ধান পাওয়ার কথা জেনে কাকন রেজা গিয়ে দেখেন সেটি তাঁর ছেলের লাশ৷

ওই সংবাদের পর ডেভেলপার কোম্পানি তাকে হুমকি দিয়েছিল: কাকন রেজা

This browser does not support the audio element.

জামালপুর রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তাপস চন্দ্র পণ্ডিত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গ্রামবাসী আমাদের খবর দেয়, জামালপুরের নুরুন্দি এলাকায় রেললাইনের পাশে এক তরুণকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে৷ এর কিছুক্ষণের মধ্যে তাঁর মৃত্যু হয়৷’’ মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তাপস চন্দ্র পণ্ডিত বলেন, ‘‘লাশ দেখে মনে হচ্ছে, কয়েকভাবে তাঁর মৃত্যু হতে পারে৷ প্রথমত ট্রেন থেকে কেউ তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে পারে৷ অন্য জায়গায় হত্যার পর লাশ নুরুন্দি এলাকায় রেখে যেতে পারে৷ কারণ ওই এলাকাটি অনেকটাই ফাঁকা৷ মানুষের চলাচল অনেক কম৷ আর রাতের বেলায় তো কেউ ওখানে যায়ই না৷’’ 

রেলওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ

ফাগুনের বাবা কাকন রেজা ডয়চে ভেলের কাছে অভিযোগ করেছেন, ‘‘মঙ্গলবার রাত ১২টায় লাশ উদ্ধারের পর বুধবার দুপুরের পর থেকেই লাশটি অজ্ঞাত পরিচয় হিসেবে দাফনের চেষ্টা শুরু করে রেলওয়ে থানা পুলিশ৷ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেসটিগেশন (পিবিআই)-র বিরোধিকার কারণে তারা তা করতে পারেনি৷ তাদের এই তড়িঘড়ি দেখে আমার সন্দেহ হয় এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রেলওয়ে পুলিশের কোনো-না-কোনো যোগসূত্র থাকতে পারে৷’’

লাশ দেখে মনে হচ্ছে, কয়েকভাবে তাঁর মৃত্যু হতে পারে: তাপস চন্দ্র পণ্ডিত

This browser does not support the audio element.

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামালপুর রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি তাপস চন্দ্র পণ্ডিত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বুধবার সকালে জামালপুর সদর হাসপাতালে লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে৷ আমি নিজে পিবিআইকে ডেকে এনেছি ছেলেটির ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়ার জন্য৷ কারণ, আমরা যেসব লাশ উদ্ধার করি, তার সবগুলোর ফিঙ্গার প্রিন্ট রেখে দেই, যাতে এনআইডি সার্ভারের সঙ্গে মিলিয়ে পরে দরকার হলে পরিচয় জানা যায়৷ সব কার্যক্রম শেষে আমরা লাশটি আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের কাছে দেওয়ার উদ্যোগ নিই, কারণ, জামালপুর সদর হাসপাতালে লাশ সংরক্ষণের জন্য রেফ্রিজারেটরের কোনো ব্যবস্থা নেই৷ ২৪ ঘণ্টা গেলে লাশ ফুলে ওঠে, গন্ধ ছড়াতে থাকে৷ ফলে এভাবেই আমরা কাজটি করি৷ তারপরও বুধবার সন্ধ্যায় পিবিআই-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কাছে আমি জানতে পারি, শেরপুরের একজন সাংবাদিকের ছেলে মিসিং আছে৷ তখন তাঁর কাছ থেকে কাকন রেজার নম্বর নিয়ে আমি নিজেই তাঁকে ফোন করি৷ তিনি ভাইবারে আমাকে ছবি পাঠাতে বলেন, আমি সেটাও পাঠিয়েছি৷ এরপর তিনি নিশ্চিত করেন যে লাশটি তাঁর ছেলের৷ তিনি এসে লাশ শনাক্ত করেন৷ তাঁর ছেলের লাশ অজ্ঞাত হিসেবে দাফন করে আমাদের লাভ কী? বরং আমি নিজে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে ছেলের লাশের সন্ধান দিয়েছি৷’’

সব ক্ষেত্রেই আমরা সরকারের গাফিলতি দেখেছি: শাবান মাহমুদ

This browser does not support the audio element.

সাংবাদিক হত্যার বিচারে গড়িমসি

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনিসহ এ পর্যন্ত কোনো সাংবাদিক হত্যারই বিচার হয়নি৷ এই বিচারের ক্ষেত্রে গড়িমসির অভিযোগ অনেক দিনের৷ একইভাবে তরুণ সাংবাদিক ফাগুনের বিচারও কি পাবে তার পরিবার?

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)-র সাধারণ সম্পাদক সাবান মাহমুদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যুগ যুগ ধরে সাংবাদিকরা সংবাদ প্রকাশের কারণে কখনো সরকারের, কখনো প্রভাবশালীদের রক্তচক্ষুর শিকার হয়েছেন৷ অনেককে জীবন দিতে হয়েছে৷ সব ক্ষেত্রেই আমরা সরকারের গাফিলতি দেখেছি৷ আবার সাংবাদিকদের নেতা হিসেবে আমি বলতে পারি, আমাদের দায়ও কম নয়৷ আমরা হয়ত সেই ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলতে পারিনি বা সরকারকে বাধ্য করতে পারিনি৷ তবে যেখানে সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না, সেখানে সরকার দুর্বল হয়ে পড়ে৷ গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্থ হয়৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ