বানিয়ে সংবাদ লিখে ধরা পড়া জার্মান তারকা সাংবাদিক ক্লাস রেলোটিউসের বিরুদ্ধে মামলা করেছে স্বনামধন্য পত্রিকা ডেয়ার স্পিগেল৷ রবিবার ডেয়ার স্পিগেল এক বিবৃতিতে জানায়, ক্লাস রেলোটিউসের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ পাওয়া গেছে৷
বিজ্ঞাপন
তার সঙ্গে দেখা হওয়া সিরিয়ান শিশুদের সহায়তার জন্য তিনি যে ভুয়া অনুদান ক্যাম্পেইন চালিয়ে যাচ্ছিলেন সেটি একেবারেই মিথ্যা৷ ঐ শিশুদের দেয়ার নাম করে তিনি যে অনুদান সংগ্রহ করেন, সেটিও সরাসরি তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যায়৷
স্পিগেলের সম্পাদকের দেওয়া ঐ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সিরিয়ার দুই শিশুকে নিয়ে লেখা রেলোটিউসের 'কিংস চিলড্রেন' প্রতিবেদনটি পড়ার পর পাঠকদের অনেকেই তাদেরকে দত্তক নিতে চান এবং অর্থ সহায়তার আগ্রহ প্রকাশ করেন৷ সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পাঠকদের অর্থ আত্মসাত করেন রেলোটিউস৷
এক টুইটে আবারও দুঃখ প্রকাশ করেছে স্পিগেল৷ টুইটে বলা হয়, ‘‘আমাদের প্রতিবেদক ক্লাস রেলোটিউস প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে বড় ধরনের জালিয়াতি করেছেন৷ ইতোমধ্যে তিনি আমাদের পত্রিকা থেকে ইস্তফা দিয়েছেন৷ তবে আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি৷''
উল্লেখ্য, সিরিয়া বিষয়ক এই প্রতিবেদন ছাড়াও আরো অনেক প্রতিবেদনে বানোয়াট তথ্য দিয়ে আসছিলেন রেলোটিউস৷ তার কাছে সংবাদ বিষয়ক রেকর্ডিংস চাওয়া হলে প্রায়শই তিনি সেগুলো ‘হারিয়ে গেছে' বা ‘সংরক্ষণ করা হয়নি' বলে দাবি করতেন৷
ভাইরাল হওয়া কিছু ভুয়া খবর
আজকাল সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেক তাজা খবর শেয়ার করা হয়৷ কিন্তু সেই খবরগুলোতে অনেক ভুয়া খবরও থাকে৷ অনেক সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা বিভ্রান্তও হন৷ ছবিঘরে থাকছে ২০১৬ সালে সবচেয়ে বেশি ছড়ানো কয়েকটি ভুয়া খবর৷
একটি ফেসবুক লাইভে দেখাচ্ছিল আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র থেকে নভোচারীদের স্পেসওয়াক করার দৃশ্য৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় তা ভাইরাল হয়ে যায়৷ ইউএনআইএলএডি, ভাইরাল ইউএসএ এবং ইন্টারেসটিনেট- এটি পোস্ট করার পর ফেসবুকে বিপুল পরিমাণ লাইক ও শেয়ার হয়৷ কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, ফুটেজের কোথাও নাসা বা ফেসবুকের লাইভ স্ট্রিম কথাটির উল্লেখ ছিল না৷ পরে নাসা’র এক মুখপাত্র জানান, ভিডিওটি ২০১৩ সালে রুশ নভোচারীদের ধারণ করা ভিডিও৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Nasa
করোনা বিয়ারের প্রতিষ্ঠাতার উইল
২০১৬ সালের অন্যতম ভাইরাল খবর এটি-করোনা বিয়ার-এর প্রতিষ্ঠাতা আন্তোনিও ফার্নান্দেজ মৃত্যুর আগে তাঁর জন্মভূমি স্পেনের একটি গ্রামের ৮০টি পরিবারের মধ্যে ২০ কোটি ইউরো দান করার উইল করে গেছেন৷ ডেইলি মেইল প্রথমে খবরটি প্রকাশ করে স্থানীয় পত্রিকার বরাত দিয়ে৷ পরে আরটি, দ্য ইন্ডেপেন্ডেন্ট, দ্য মিররসহ বেশ কয়েকটি সংবাদপত্রও তা প্রকাশ করে৷ পরে ফার্নান্দেজের পরিবার প্রতিবাদ জানানোয় তারা খবরটি সরিয়ে ফেলে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/M. Rourke
ধর্ষণের ভুয়া খবর
২০১৬ সালের জানুয়ারিতে বার্লিনে লিজা নামের এক জার্মান কিশোরীকে এক দল অভিবাসীর ধর্ষণ করার খবর ভাইরাল হয়ে যায়৷ বিশেষ করে রুশ মিডিয়ায় খবরটি বিপুল কভারেজ পায়৷ পরে কিশোরীটি জানায়, সে সব কিছু বানিয়ে বলেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Wuestenhagen
মার্কিন নির্বাচন
মার্কিন নির্বাচনে যে ভুয়া খবরটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছিল তাতে ছিল ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অপরাধের মাত্রার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ফলাফলের তুলনা৷ এছাড়া নির্বাচনের ফলাফলের এমন একটি মানচিত্র ওয়াশিংটন পোস্ট প্রকাশ করেছিল, যেটির দিকে ভালোভাবে তাকালে বোঝা যায় একেবারে ওপরে ২০১২ সালের উল্লেখ রয়েছে৷
ট্রাম্প এবং সিম্পসন
সিম্পসন কার্টুনে বেশ কিছু ভবিষ্যদ্বাণী থাকে৷ আর এ কারণে ট্রাম্প নির্বাচনে জেতার পর একটি ট্রল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়, যেখানে বলা হয় সিম্পসনে আগেই বলা হয়েছিল, ট্রাম্প নির্বাচনে জিতবেন৷ কিন্তু বাস্তবে এমন কিছু হয়নি৷ অথচ টুইটারে বাস্তব আর পুরোনো ভুয়া সিম্পসনের ছবি দেয়ায় নিউজটি ভাইরাল হয়ে যায়৷
ছবি: INTERTOPICS / Taschen-Verlag
শোকার্ত ক্যাঙ্গারু
ডেইলি মেইল এমন একটি ছবি প্রকাশ করে যেখানে দেখানো হয় এক পুরুষ ক্যাঙ্গারু নারী ক্যাঙ্গারুকে দুই হাতে ধরে অশ্রুসজল চোখে তাকিয়ে আছে৷ ইভান সুইৎজারের তোলা ছবিটি এভাবে উপস্থাপনের কারণে ভাইরাল হয়ে যায়৷ তবে ভেটেরিনারি বিশেষজ্ঞরা জানান, নারী ক্যাঙ্গারুর সঙ্গে যৌন মিলনের ইচ্ছে জাগলে পুরুষ ক্যাঙ্গারুর চোখ অশ্রুসজল হয়, তখনই তারা দুই হাত দিয়ে ঝাঁকিয়ে নারী ক্যাঙ্গারুকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করে৷
ছবি: DW/C. Atkinson
বিখ্যাত গণমাধ্যমের নকল
ভুয়া খবর প্রচারকারীরা জনপ্রিয় এবং বিখ্যাত ওয়েবসাইটগুলোকে নকল করে ৷ ফলে মানুষ খুব ভালোভাবে লক্ষ্য না করলে বুঝতে পারে না, সেগুলো প্রকৃত ওয়েবসাইট, নাকি ভুয়া৷ যেমন, এবিসি নিউজ ডট কম এর সঙ্গে ডট সিও যুক্ত করে (ABCnews.com.co), ব্লুমবার্গের সঙ্গে ডট এমএ যুক্ত করে, ওয়াশিংটন পোস্ট ডট কম- এর সঙ্গে ডট সিও যুক্ত করে কয়েকটি ভুয়া সংবাদ সাইট তৈরি করা হয়েছে৷ এসব ওয়েবসাইটের কাজই ভুয়া সংবাদ পরিবেশন করা৷
ছবি: Getty Images/S. Platt
7 ছবি1 | 7
সিরিয়ার ঘটনাটি যে ‘বানোয়াট', তা উন্মোচন করেন তার সঙ্গে থাকা তুরস্কের ফটোসাংবাদিক৷ তিনিই তথ্য দেন, সেই সিরিয়ান বালক দুটি ভাই নয়৷ তারা এখনও তুরস্কেই থাকে৷ তাদের জার্মানিতে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়ার যে কাহিনি রেলোটিউস রচনা করেছেন, তাও মিথ্যা৷
এছাড়া, ডেয়ার স্পিগেলের বিবৃ্তিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত বিষয়ক একটি প্রতিবেদন নিয়ে তার বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ আসে৷ ঐ প্রতিবেদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত অপর এক সাংবাদিক ক্লাসের বিরুদ্ধে অসততার অভিযোগ আনেন৷
ডেয়ার স্পিগেল হামবুর্গভিত্তিক একটি সাপ্তাহিক নিউজ ম্যাগাজিন৷ এর সার্কুলেশন প্রায় ৮ লাখ ৪০ হাজার কপি৷ জার্মানির অন্যতম শীর্ষ পত্রিকা এটি৷