1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সংবিধান থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা' বাদ চান অ্যাটর্নি জেনারেল

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৫ নভেম্বর ২০২৪

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বুধবার হাইকোর্টে এক শুনানিতে অংশ নিয়ে বলেন, তারা চান সংবিধান থেকে ‘সমাজতন্ত্র' ও ‘ধর্মনিরপেক্ষতা' শব্দগুলো বাদ দেওয়া হোক৷

বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট৷
সংবিধান থেকে ‘সমাজতন্ত্র' ও ‘ধর্মনিরপেক্ষতা' শব্দগুলো বাদ দিতে চান অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান৷ছবি: Mortuza Rashed/DW

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী প্রশ্নে রুল শুনানিতে তিনি বলেন, ‘‘আমরা চাই সংবিধান থেকে ‘সমাজতন্ত্র' এবং ‘ধর্মনিরপেক্ষতা' শব্দগুলো বাদ দেওয়া হোক... ‘গণতন্ত্র', ‘সমাজতন্ত্র' নয়, রাষ্ট্রীয় নীতির মূলনীতি হতে পারে৷''

অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, ‘‘দেশের ৯০ ভাগ মুসলমান৷ আগে আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাসের কথা ছিল৷ এটা যেভাবে আগে ছিল, সেভাবে চাইছি৷''

২০১১ সালের ৩০ জুন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়৷ এর মাধ্যমে ১৯৭২ সালের সংবিধানের বেশ কিছু বিষয় ফিরে আসে৷ ১৯৭৫ সালের পর বিভিন্ন সময়ে সংবিধানের কয়েক দফা সংশোধন হয়৷ প্রস্তাবনায় পরিবর্তন এবং রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করা হয়৷ সংবিধানের প্রস্তাবনায় এবং আট অনুচ্ছেদে সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের কথা বলা হয়৷ পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের প্রস্তাবনায় এবং আট অনুচ্ছেদে সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের কথা বাদ দেয়া হয়৷

বর্তমান সংবিধানের প্রস্তাবনায়রয়েছে বিসমিল্লাহির-রহমানির রহিম৷ (দয়াময়, পরম দয়ালু, আল্লাহের নামে পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নামে)৷ আর ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসাবে রাখা হয়েছে৷ বলা হয়েছে , প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন৷

রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে আছে: জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা৷

অ্যাটর্নি জেনারেল সংবিধান থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা' বাদ দিতে চাইলেও অন্য আইনজীবীরা বলছেন, বিষয়টি মুক্তিযুদ্ধের স্পিরিটের সঙ্গে যায় না৷ ছবি: Sazzad Hossain/DW

পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আরো পরিবর্তন আসে সংবিধানে৷ এই সংশোধনীর মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক হিসেবে স্বীকৃতিও দেয়া হয়৷ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়৷ জাতীয় সংসদে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়৷ এছাড়া সংবিধানে ৭ অনুচ্ছেদের পরে ৭ (ক) ও ৭ (খ) অনুচ্ছেদ সংযোজন করে সংবিধানবহির্ভূত পন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পথ রুদ্ধ করা হয়৷

পঞ্চদশ সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে গত ১৮ আগস্ট সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচজন রিটটি করেন৷ হাইকোর্ট রুল দেয়ার পর এখন শুনানি চলছে৷

প্রতিক্রিয়া

সংবিধানে এখনো রাষ্ট্রধর্ম আছে৷ আর প্রস্তাবনায় বিসমিল্লাহির-রহমানির রহিম আছে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন মনে করেন, ‘‘নতুন করে আবার সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের কথা ফিরিয়ে আনার দরকার নেই৷ এমনিতেই রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করার মধ্য দিয়ে নাগরিকদের মধ্যে এক ধরনের বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে আলাদা রাখা উচিত৷ রাষ্ট্রের তো কোনো ধর্ম হয় না৷ মুসলমান নামাজ পড়তে পারে৷ হিন্দু পূজা করতে পারে৷ রাষ্ট্র কি নামাজ পড়তে পারে? রাষ্ট্র কি পূজা করতে পারে? নাগরিক হিসাবে যদি সবার সমান অধিকার হয় তাহলে ধর্মের ব্যাপারে সমান হবে না কেন? আসলে ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার৷ রাষ্ট্র চলবে সেক্যুলারভাবে৷ আর যদি কোনো দেশের শতভাগ মানুষ মুসলিম হয় তাহলে আলাদা কথা৷''

‘ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে আলাদা রাখা উচিত’

This browser does not support the audio element.

অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, ‘‘আমাদের ইসলাম ধর্ম যদি আমরা দেখি তাহলে দেখব সেখানেও সেক্যুলার প্রাকটিস আছে৷ মহানবি (সা.) যখন মদিনায় হিজরত করেন তখন যে মদিনা সনদ হয় তাতে কিন্তু প্রত্যেক ধর্মীয় গোষ্ঠীর ধর্মীয় স্বাধীনতার সুরক্ষা দেয়া হয়েছে৷ মহানবির যে র‌্যাশনালিটি সেটা যদি মুসলমানরা বুঝতে পারে তাহলে রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যাপারে ধর্মনিরপেক্ষতাই সর্বোত্তম,'' বলেন তিনি৷

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এখন তো রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম৷ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ তো অনেকবার বলেছে এটা তাদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করেছে৷ এটা তারা পরিবর্তনের দাবি করছে৷ সব নাগরিককে সমান বলে আমরা যদি কোনো একটি ধর্ম, গোত্র বা গোষ্ঠীকে সুপিরিয়র করি তাহলে অন্যরা ইনফিরিয়র হয়ে যায় না?''

এদিকে, বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট দীপঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘‘এখন যা সংবিধানে আছে, রাষ্ট্র ধর্ম আছে আবার ধর্মনিরপেক্ষতাও আছে৷ এটাকে আমরা বলি সোনার পাথর বাটি৷ একটা জগাখিচুরি অবস্থা৷ এখন যদি আবার ওইটা করে তাহলে তো কোনো সমাধান হলো না৷''

তার কথা, ‘‘যদি স্বাধীনতার ঘোষণা দেখেন তাহলে ইকুইটি, ইকুয়ালিটি, স্যোসাল জাস্টিস এবং হিউম্যান ডিগনিটি৷ এখন যদি একটি ধর্মকে প্রাধান্য দেয়া হয় তাহলে তো অন্য ধর্মের যারা তারা কিন্তু দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে পরিণত হয়৷ তাহলে কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর থাকে না৷''

আর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক বলেন, ‘‘এই বিষয়গুলো মুক্তিযুদ্ধের স্পিরিটের সাথে যায় না৷ সংবিধান আর ধর্ম দুইটি আলাদা জিনিস৷ কেউতো আর সংবিধান দিয়ে মুসলমান বা হিন্দু হয় না৷ আমরা ধর্ম জানি কোরান, বেদ বা অন্য কোনো ধর্মগ্রন্থ দিয়ে৷ এর সঙ্গে সংবিধানের কোনো সম্পর্ক নেই৷''

অন্য কেউ বৈষম্যের শিকার হবে এমন সংশোধনী চাই না

This browser does not support the audio element.

‘‘তবে অবশ্যই দেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে সংবিধানে কী থাকবে, কী থাকবে না৷ তবে আমার কথা হলো রাষ্ট্র এবং ধর্ম দুইটি আলাদা এবং আলাদা রাখাই শ্রেয়৷''

তবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘‘পঞ্চদশ সংশোধনী পুরোটাই অবৈধ৷ এটা একটা পার্লামেন্টারি ফ্রড৷ তাই এটা বাতিল হওয়া দরকার৷ এটা বাতিল হলে সংবিধানে যা ফিরে আসবে তাই হবে৷''

আর বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘‘অ্যাটর্নি জেনারেল যা বলেছেন তা তার সাবমিশন৷ এটা রাষ্ট্রের বক্তব্য৷ আমাদের নিজস্ব দলীয় অবস্থান আছে৷''

‘‘আমরা এমন কোনো সংশোধনী চাই না যাতে কোনো ধর্মের মানুষ তাদের বৈষম্যের শিকার মনে করেন৷ আমাদের মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ মুসলমান৷ কিন্তু অন্য ধর্মের মানুষও বাংলাদেশের নাগরিক৷ তাদেরও সমান অধিকার৷ তাদের সঙ্গে বৈষম্য করা যাবে না৷ ধর্মীয় ব্যাপারে এখন সংবিধানে যা আছে আমরা সেই অবস্থানেই আছি৷ সব ধর্মের সমান মর্যাদা ও নিরাপত্তার পক্ষে আমরা৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ