ওয়াকফ আইন নিয়ে অন্তর্বর্তী নির্দেশিকার পথে সুপ্রিম কোর্ট
১৭ এপ্রিল ২০২৫
প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার বেঞ্চে এই শুনানি শুরু হয়েছে বুধবার। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রের কথা শুনবেন বিচারপতিরা।
ভারতের সুপ্রিম কোর্টছবি: picture-alliance/NurPhoto/N. Kachroo
বিজ্ঞাপন
বুধবার ভারতের সুপ্রিম কোর্টে শুরু হয়েছে সংশোধিত ওয়াকফ আইন নিয়ে মামলা। মামলাকারীরা নতুন আইনটির উপর স্থগিতাদেশ চেয়েছিল। কিন্তু গোটা আইনটির উপর স্থগিতাদেশ দিতে চায়নি সুপ্রিম কোর্ট। তবে তিনটি বিষয় উল্লেখ করে তার উপর অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিতে চেয়েছিলেন বিচারপতিরা। কিন্তু কেন্দ্রের আইনজীবী আদালতের কাছে সময় চান। বলা হয়, এবিষয়ে কেন্দ্র তাদের মতামত জানাতে চায়। এরপরেই বিচারপতিরা জানান, বৃহস্পতিবার তাদের বক্তব্য শোনা হবে, তারপর সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে আছেন বিচারপতি সঞ্জয় কুমার এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথন। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে তারাও এই মামলাটি শুনছেন। বুধবার সংশোধিত ওয়াকফ আইন নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন তোলে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। তার মধ্যে মূল তিনটি বিষয় হলো, সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলাকালীন আদালতেরনির্দেশে ওয়াকফ সম্পত্তি ঘোষিত হওয়া কোনো জায়গা বা প্রতিষ্ঠানকে ওয়াকফ নয় বলে ঘোষণা করা যাবে না। ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে জেলাশাসক তদন্ত চালাতে পারেন কিন্তু কোনো নির্দেশ দিতে পারবেন না। এবং তৃতীয়ত, ওয়াকফ বোর্ড এবং কাউন্সিলের সদস্যদের মুসলিম হতেই হবে। কেবলমাত্র পদাধিকার বলে অমুসলিম ব্যক্তিরা এই বোর্ড বা কাউন্সিলে যোগ দিতে পারেন।
বিক্ষোভ সত্ত্বেও ওয়াকফ বিল পাস করাতে চায় মোদী সরকার
সংসদের বাজেট অধিবেশন চলবে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত। তার মধ্যে ওয়াকফ বিল পাস করাতে চায় সরকার। দেশ জুড়ে বিক্ষোভ শুরু।
নরেন্দ্র মোদী সরকার বর্তমান বাজেট অধিবেশনেই ওয়াকফ বিল পাস করাতে চায়। সংসদের অধিবেশন চলবে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত। তার মধ্যেই বিল পাস হয়ে যেতে পারে। সম্ভবত ঈদের পরই বিল পাস করার উদ্যোগ নিতে পারে সরকার।
ছবি: Indian National Congress party
দেশজুড়ে প্রতিবাদ শুরু
ওয়াকফ বিল নিয়ে দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু করেছে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড(এআইএমপিএলবি)। বুধবার পাটনায় বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। ২৯ তারিখ অন্ধ্রপ্রদেশে আন্দোলন হবে। কিছুদিন আগে দিল্লিতে এই আন্দোলন হয়েছে।
ছবি: Sonu Mehta/Hindustan Times/Sipa USA/picture alliance
আমন্ত্রণ সত্ত্বেও নীতীশ কুমার যাননি
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে বিক্ষোভে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এআইএমপিএলবি নেতারা। কিন্তু নীতীশ কুমার যাননি। আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে বিহারে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে জোটসঙ্গি বিজেপি-কে চটাতে চাননি নীতীশ। তিনি মুসলিম ভোট পেতে আগ্রহী হলেও বিক্ষোভে যাননি বা দলের কাউকে পাঠাননি।
ছবি: Hindustan Times/Sipa USA/picture alliance
ছিলেন লালুপ্রসাদ ও তেজস্বী
বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব ও তার ছেলে তেজস্বী যাদব বিক্ষোভে গিয়েছিলেন। তেজস্বী বলেন, অসুস্থ শরীরেও লালুপ্রসাদ যাদব তার সমর্থন জানাতে এসেছেন। আরজেডি সংসদে এবং বিহারে এই বিলের বিরোধিতা করবে। তারা এই অসাংবিধানিক বিল মানবে না। জনসুরাজ পার্টির নেতা প্রশান্ত কিশোরও বিক্ষোভে অংশ নেন।
ছবি: Hindustan Times/picture alliance
কংগ্রেসের বিরোধিতা
কংগ্রেস জানিয়ে দিয়েছে, তারা এই বিলের বিরোধিতা করবে। কারণ, তারাও মনে করে, এই বিল সংবিধানসম্মত নয়। দিল্লির বিক্ষোভে কংগ্রেস নেতা সলমন খুরশিদ-সহ একাধিক নেতা যোগ দিয়েছিলেন।
ছবি: Sonu Mehta/Hindustan Times/Sipa USA/picture alliance
আপত্তি কোথায়
ওয়াকফ বিলে বলা হয়েছে, ওয়াকফ বোর্ডে অন্ততপক্ষে দুই জন মুসলিম নন, এমন সদস্য থাকবেন। তাছাড়া অন্তত একজন করে শিয়া, সুন্নী এবং অনগ্রসর মুসলিমদের প্রতিনিধি থাকবেন। সার্ভে কমিশনারের পদটি বাতিল করা হয়েছে। তার জায়গায় জেলার কালেক্টরকে সার্ভে বা সমীক্ষার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সরকারি সম্পত্তি ওয়াকফের তালিকা থেকে বাদ যাবে। এই বিষয়ে কালক্টর সিদ্ধান্ত নেবেন। এই নিয়ে আপত্তি বিরোধীদের।
ওয়াকফ নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটির প্রধান ও বিজেপি সাংসদ জগদম্বিকা পাল বলেছেন, এআইএমপিএলবি ওয়াকফ বিল নিয়ে রাজনীতি করছে। তারা মুসলিমদের ভুল বোঝাচ্ছে। বিল পাস করার জন্য পেশ করা হয়নি। তারা পাটনায় গিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে।
ছবি: AFP
বিল কি পাস হবে?
ওয়াকফ বিল পাস করাতে সরকারের সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাগবে। সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাগে। লোকসভা ও রাজ্যসভা দুই জায়গাতেই এনডিএ-র সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। ফলে সরকারের পক্ষে বিল পাস করাতে অসুবিধা হবে না। নীতীশ কুমার ও চন্দ্রবাবু নাইডু বিলের বিরোধিতা করলে সরকার অসুবিধায় পড়তো। তারা প্রকাশ্যে তা করছেন না।
ছবি: Mahesh Kumar A./AP Photo/picture alliance
মোদীর ঈদ উপহার
বিজেপি ইতিমধ্যে গরিব মুসলিমদের মোদী কা সওগাত বা মোদীর উপহার দিতে শুরু করেছে। ৩২ লাখ পরিবারকে এই উপহার দেওয়া হবে। একটি প্যাকেটে খেজুর, শুকনো ফল, পুরুষদের কুর্তা-পাজামা ও মেয়েদের সালোয়ার-কামিজের পিস থাকছে সেই উপহারে।
ছবি: Hindustan Times/Sipa/picture alliance
ওয়াকফের সম্পত্তির পরিমাণ
ভারতে ওয়াকফ বোর্ডের অধীনে আট দশমিক সাত লাখ সম্পত্তি আছে। নয় দশমিক চার লক্ষ একর জমি ওয়াকফ সম্পত্তি। তার বর্তমান দাম আনুমানিক এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। ভারতে মোট ৩২টি ওয়াকফ বোর্ড আছে। উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে দুইটি শিয়া ওয়াকফ বোর্ড আছে।
ছবি: Ab Rauoof Ganie/DW
10 ছবি1 | 10
বুধবার এই তিন নির্দেশিকা জারি করার কথা বিবেচনা করছিল সুপ্রিম কোর্ট। শেষমুহূর্তে কেন্দ্র জানায়, তারা এবিষয়ে আরো কিছু বক্তব্য জানাতে চায়। তখন প্রধানবিচারপতির বেঞ্চ নির্দেশিকা জারি না করে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রকে বক্তব্য পেশ করার সুযোগ দেয়।
সংশোধিত ওয়াকফ বিল স্থগিত করার আবেদন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যে মামলা হয়েছে, তার হয়ে সওয়াল করছেন প্রবীণ আইনজীবী কপিল সিবল। এদিন আদালতে তার সঙ্গে তীব্র বিতর্ক হয় সরকারপক্ষের আইনজীবী তুষার মেহতার। কপিল প্রশ্ন তোলেন, কেন অমুসলিমদের ওয়াকফ বোর্ডে রাখার কথা বলা হয়েছে নতুন আইনে? প্রধান বিচরপতি জানান, কেবলমাত্র দুইজন অমুসলিম ব্যক্তিকে সেখানে রাখার কথা বলা হয়েছে। এর উত্তরে কপিল জানান, অন্তত দুইজন অমুসলিম ব্যক্তিকে রাখার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ, চাইলে এর চেয়ে বেশি অমুসলিম ব্যক্তিকেও ওয়াকফ বোর্ডে ঢোকানো সম্ভব। এরপরেই সরকারপক্ষের আইনজীবীকে বিচারপতি খান্না প্রশ্ন করেন, কোনো হিন্দু বোর্ডে মুসলিম প্রতিনিধিকে বসাতে রাজি হবে সরকার?
আদালত এদিন ওয়াকফ বিষয়ক তদন্তে জেলাশাসক বা সমমর্যাদার অফিসারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। কপিলের বক্তব্য ছিল, জেলা শাসক সরকারি কর্মচারী। আদৌ তার ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাংবিধানিক অধিকার আছে কি না, সেই প্রশ্ন তোলেন কপিল। বিচারপতিরাও এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, এর আগে পার্লামেন্টের দুই কক্ষেই ওয়াকফ বিল নিয়ে তীব্র বিতর্ক হয়েছে। বিরোধীদের আপত্তি সত্ত্বেও বিলটি পাশ করিয়েছে সরকার। রাজ্য সভায় ওয়াকফ বিতর্কে ঠিক এই প্রশ্নগুলিই তুলেছিলেন কপিল। এদিন আদালতে আরো একবার একই সওয়াল করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য শোনার পর আদালত কোনো নির্দেশ দেয় কি না, সে দিকেই তাকিয়ে বিশেষজঞ মহল। বস্তুত, ওয়াকফ নিয়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজ্যে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের ঘটনা ঘটছে। পশ্চিমবঙ্গ-সহ একাধিক রাজ্যে ওয়াকফ নিয়ে প্রতিবাদ সহিংস হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, এই মামলাটি ব্যতিক্রমী।