সাকিবকে নিয়ে চলছে আলোচনা
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭টেস্ট ক্রিকেট থেকে ৬ মাসের বিশ্রাম চেয়েছিলেন এই অলরাউন্ডার৷ তবে পেয়েছেন একটি টেস্ট সিরিজ না খেলার সুযোগ৷ এ নিয়েই চলছিল নানা ধরনের আলোচনা৷ ভক্তদের মনে জেগেছিল নানা প্রশ্ন৷ সব সংশয়ের অবসান ঘটাতেই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছিলেন সাকিব আল হাসান৷
জানিয়েছেন, যেহেতু অনেক বেশি খেলা হয়, তাই তাঁর ফিটনেসটাও (ট্রেনিং) ওভাবে করা হয় না বা করা হলেও মানসিকভাবে চাঙা থাকার যে ব্যাপারটি আছে, সেটি হয় না৷ অনেকটা বিরামহীনভাবেই ১০-১১ বছর ধরে খেলে চলেছেন৷ তাই এবার একটু বিরতি প্রাপ্য হয়ে গিয়েছিল বলে মনে করেন তিনি৷
নিজের ফেসবুক পাতায়ও ভক্তদের উদ্দেশে এমন কথাই লিখেছেন সাকিব, ‘‘আপনারা জানেন আমি গত কয়েক বছর ধরে দেশের গৌরবের জন্য বিরতিহীন ক্রিকেট খেলে যাচ্ছি , যার কারণে আমার অনেক শারীরিক ও মানসিক ধকল যাচ্ছে৷ এই ব্যাপারটি মাথায় রেখে আমি ঠিক করেছিলাম, আসন্ন দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট সিরিজের দুটি টেস্টে সামিয়িক বিরতি নেবো৷ বিসিবি বিষয়টি তাদের বিজ্ঞ বিবেচনায় নিয়ে আমাকে খেলা থেকে বিরতি নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে৷
ফলে, আমি মনে করি, সাময়িক এই বিরতি আমাকে আগামী খেলাগুলোর জন্য আরো শক্তি ও মনোবল জোগাবে এবং আমাকে ও পুরো দলকে আগামীতে সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে যেতে সাহায্য করবে৷ আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই সীমাহীন ভালোবাসা ও অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য৷ আসুন সবাই সামনের দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট সিরিজের জন্য আমাদের টাইগারদের সাফল্য কামনা করি৷’’
এদিকে, সাকিব বিরতি নেয়ায় প্রধান নির্বাচকের জন্য এটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন বলেছেন, ‘‘কাজটি সহজ ছিল না মোটেও৷ দল নির্বাচনে সাকিবের নামটি লিখে তবেই আমরা এগিয়ে যাই৷ এবার সেই সাকিবের বিকল্প ভাবতে হচ্ছে আমাদের৷’’
সাকিব আল হাসানের সংবাদ সম্মেলন এবং ফেসবুকে ঘোষণার পরও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার ঝড় বইছে৷
শরিফুল ইসলাম ফেসবুক পাতায় লীখেছেন, ‘‘সাকিব আল হাসান শারীরিক বা মানসিকভাবে মোটেই অসুস্থ বা ক্লান্ত নন৷ তিনি এটা একগুঁয়েমি করলেন বা প্রতিশোধ নিলেন৷’’
সজীব চক্রবর্ত্তী অবশ্য লিখেছেন, সাকিব ছাড়া বাংলাদেশের টেস্ট খেলা দেখার আগ্রহ কমে যাবে৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘সাকিব ছাড়া টেস্ট কল্পনা করা যেমন কঠিন, খেলা দেখারও আগ্রহ থাকবে না৷ সাকিব স্বেচ্ছায় বিশ্রামে গেল৷ সাকিব ছাড়া টেস্ট এত সহজ হবে না হাড়ে হাড়ে টের পাবে দল আর হাতুড়ে৷ নাসিরকে আবার তার পুরনো চাকরি দেয়া হয়েছে, পানি টানার৷ জানি না কী হবে৷ মিস করব সাকিবকে৷’’
নাজমিন আক্তার জানিয়েছেন সাকিবের বিরতি নেয়ার কথা শুনে তার বিরক্তি লেগেছিল৷ তবে তাঁর সংবাদ সম্মেলন দেখে সেই বিরক্তি কেটে গেছে৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘কালকের পুরো সাক্ষাৎকার দেখে এখন মনে হচ্ছে, টানা ১১ বছর সার্ভিস দেয়ার পর এরকম একটা বিরতি তিনি চাইতেই পারেন৷ দরকার আছে৷ মনের উপর তো জোর চলে না৷ ইনজুরিমুক্ত একটা সাকিব আল হাসানকে আগামী ৪/৫ বছর দেখতে হলে যদি দুই টেস্ট না খেলে, তাহলে তাই সই৷’’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘কয়েকদিন আগেও যারা বেয়াদবমুক্ত ক্রিকেট দল চাই স্লোগান দিত, প্রতি ঘণ্টায় তারাই এখন বলছে, সাকিব খেলবে না মানে? তার চৌদ্দগোষ্ঠী খেলবে৷’’
মো. রবিউল খান অবশ্য সাকিবের এই বিরতি মেনে নিতে পারছেন না৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘যে কারণেই এ সিদ্ধান্ত নিক না কেন সাকিবের এরকম সিদ্ধান্ত মানা যায় না, কেননা, সাকিব একাদশে থাকলে আমার মনে হয়, ১২ জন নিয়ে খেলি৷ ও না থাকলে ওর অভাব কেউ পূরণ করতে পারবে না৷ সেই সাথে হয়ত আমাদের টেস্টে উন্নতির অগ্রযাত্রাটা থেমে যাবে৷’’
হৃদয় ইসলামের কণ্ঠেও অনেকটা রবিউলের সুর৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট সিরিজে দেখা যাবে না জীবন্ত কিংবদন্তি সাকিব আল হাসানকে৷ সাকিব আল হাসান দলে না থাকা মানে দুইজন প্লেয়ার কমে যাওয়া৷ ব্যাটিং, বোলিং করে একাই দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতেন তিনি৷ বিরতি পেলে হয়তো বস আবার নতুন উদ্যমে ফিরতে পারবেন৷ বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটের উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম হলো সাকিব আল হাসান৷ খুব মিস করবো দক্ষিন আফ্রিকা টেস্ট সিরিজে৷ আবারও তাঁকে দেখা যাবে ডিসেম্বরে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কা টেস্ট সিরিজে৷ মিস ইউ টেস্ট ক্রিকেটের বরপুত্র সাকিব আল হাসান৷’’
নাজমুল মনি সাকিবের বিরতির সংবাদ শুনে বিরাট একটা ধাক্কা খেয়েছেন বলে লিখেছেন৷ তিনি ফেসবুকে প্রশ্ন রেখেছেন, ‘‘আচ্ছা, বাংলাদেশ বছরে কয়টা টেস্ট খেলে? সাকিব বিশ্রাম চেয়েছেন এতে আমার কোনো আপত্তি নাই, বাংলাদেশের হয়ে তিন ফরম্যাটে বিরতিহীনভাবে খেলে চলেছেন, খেলছেন বিশ্বজুড়ে টি টোয়েন্টি লিগ৷ সুতরাং বিশ্রাম সাকিবের দরকার৷ এই কথাটা সাধারণ দর্শকরাও বলেছিল কিছুদিন আগেও৷ কিন্তু সেটা যে জাতীয় দলের খেলা থেকে বিশ্রাম, সেটা কল্পনা করিনি৷ সাকিব যদি সিদ্ধান্ত নিয়েই থাকেন বিশ্রাম নেবার তাহলে সেটা অন্যভাবে ম্যানেজ করা যেতো৷ তাছাড়া এই বছর তুলনামূলক ম্যাচ কমই খেলেছেন সাকিব, আইপিএলে সাইড বেঞ্চে বসে থেকেছেন৷ ফলে ডিপিএল এবং চ্যাম্পিয়নস ট্রফির কন্ডিশনিং ক্যাম্পে অংশ নেননি৷ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর পাকিস্তান সফর বাতিল করায় লম্বা ছুটি পেয়েছেন সব ক্রিকেটার৷ তারপরও যদি বিশ্রামের প্রয়োজন মনে করেন, তাহলে তিনি সিপিএল বাদ দিতে পারতেন, অথবা বিপিএল! টেস্ট থেকে বিশ্রামের সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নিতে পারলাম না৷’’
সংকলন: অমৃতা পারভেজ
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী