আট-তিন ভোটে রায় দিলো ব্রিটেনের সর্বোচ্চ আদালত: সংসদের অনুমোদন ছাড়া লিসবন চুক্তির ৫০ ধারা অনুযায়ী ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া বিধিসম্মত ভাবে চালু করা যাবে না৷ তবে স্কটল্যান্ড, উত্তর আয়ারল্যান্ড বা ওয়েলশ সংসদের অনুমোদন লাগবে না৷
বিজ্ঞাপন
গত ডিসেম্বর মাসে চার দিন ধরে শুনানি চলে; শোনেন সুপ্রিম কোর্টের সব ১১ জন বিচারক৷ তাঁদের রায় কিন্তু গত জুন মাসের ব্রেক্সিট গণভোটের ফলাফলকে বদলে দিতে পারেবে না, যে গণভোটে ৫২ শতাংশ ভোটার ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের পক্ষে ভোট দেন৷
সুপ্রিম কোর্টের রায় বেরনোর পর ব্রেক্সিট মন্ত্রী ডেভিড ডেভিস পার্লামেন্টে বলেন যে, শীঘ্রই সংসদে যতদূর সম্ভব ‘‘সোজাসুজি'' একটি বিল পেশ করা হবে৷ ডেভিস সাংসদদের প্রতি বিলটিকে ‘‘সময়মতো'' পাশ করানোর ও ‘‘জনতার ইচ্ছাকে খর্ব'' না করার আহ্বান জানিয়েছেন৷ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে আগেই ঘোষণা করেছিলেন যে, তিনি মার্চ মাসের মধ্যেই লিসবন চুক্তির ৫০ ধারা অনুযায়ী ইইউ ত্যাগের প্রক্রিয়া শুরু করতে চান৷ সেই সময়সূচি বজায় থাকছে, বলে ডেভিস জানান৷
অপরদিকে ব্রিটিশ সরকারকে স্কটল্যান্ড, উত্তর আায়ারল্যান্ড বা ওয়েলস-এর ‘‘ডিভল্ভড'' বা দায়িত্ব হস্তান্তরের মাধ্যমে সৃষ্ট সংসদগুলির অনুমোদন নিতে হবে না, বলে সুপ্রিম কোর্ট প্রধান লর্ড ডেভিড নয়বার্গার জানিয়েছেন৷ স্কটল্যান্ডের ‘ফার্স্ট মিনিস্টার' নিকোলা স্টার্জন কোর্টের এই সিদ্ধান্তে তিনি হতাশ হয়েছেন, বলে মন্তব্য করেন৷
ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে যে দুই বাদী এই মামলা এনেছিলেন, তারা হলেন ডায়ার তোজেত্তি ডন সান্টোস নামের এক হেয়ারড্রেসার ও জিনা মিলার নামের এক ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজার৷ মামলা দায়ের করার পর ডস সান্টোসকে এমনই কুকথা শুনতে হয়েছে যে, তিনি আত্মগোপন করে রয়েছেন৷ অপরদিকে মিলার বলেছেন, তাঁকে যে পরিমাণ ব্যক্তিগত গালিগালাজ সহ্য করতে হয়েছে, তাতে স্তম্ভিত তিনি৷ মিলার ব্রেক্সিটকে ‘‘একটি প্রজন্মের সবচেয়ে বিভেদসৃষ্টিকারী বিষয়'' বলে অভিহিত করেছেন৷
বিদায় ব্রিটেন! এখানে আর নয়...
গণভোটের আগেই তার পরিণাম সম্পর্কে বার বার সাবধান করে দিয়েছিল ব্রিটেনের অর্থনীতি জগত৷ তাতে কোনো লাভ হয়নি৷ এবার অনেক কোম্পানি পাততাড়ি গোটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Kumm
ভোডাফোন
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্রিটেন থেকে সদর দপ্তর সরিয়ে নেবার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করছে৷ জার্মানির ড্যুসেলডর্ফ শহর তাদের নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে৷ এমনিতেই জার্মানি ভোডাফোনের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Hayhow
রায়ানএয়ার
ইউরোপের সবচেয়ে বড় সস্তার বিমান সংস্থার সদর দপ্তর আয়ারল্যান্ডে হলেও তাদের বেশিরভাগ বিমানই ব্রিটেনে থাকে৷ রায়ানএয়ার জানিয়ে দিয়েছে, ব্রিটেনে নতুন করে আর কোনো বিমান থাকবে না এবং নতুন কোনো রুট চালু হবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Scholz
ইজিজেট
ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম সস্তার বিমান সংস্থার সদর দপ্তর লন্ডনে৷ কিন্তু আর কতদিন? কোম্পানির প্রধান ক্যারোলিন ম্যাককল এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারেননি৷ ইউরোপের সবচেয়ে লাভজনক কোম্পানিগুলির মধ্যে অন্যতম ইজিজেট৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Guillot
ভার্জিন
রিচার্ড ব্র্যানসন ব্রিটেনের সবচেয়ে পরিচিত শিল্পপতিদের অন্যতম৷ ব্রেক্সিট সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য হলো, ‘‘আমরা এক বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে চলেছি৷ গণভোটের পর পুঁজিবাজারে তাঁর শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলির মূল্য এক তৃতীয়াংশ কমে গেছে৷ ব্র্যানসন নতুন করে গণভোটের দাবি করছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Leal-Olivas
জেপি মরগ্যান চেজ
লন্ডন শহরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ব্যাংকের প্রায় ১৬ হাজার কর্মী কাজ করছেন৷ এবার কর্মীদের একটা অংশ ব্রিটেন থেকে সরিয়ে নেবার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করছে এই ব্যাংক৷ গণভোটের আগেই ব্যাংকের প্রধান জেমি ডায়মন সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, সর্বোচ্চ ৪ হাজার কর্মী সরানো হতে পারে৷
ছবি: Getty Images/C.Gillon
ভিসা
বেশ কয়েক’শ কর্মী সরিয়ে নিতে বাধ্য হবে বিশ্বের অন্যতম প্রধান এই ক্রেডিট কার্ড কোম্পানি৷ কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিয়ম অনুযায়ী যে কোনো কোম্পানির তথ্যভাণ্ডার ইইউ-র মধ্যে রাখতে হবে৷ ফলে লন্ডনে ভিসা ডেটা সেন্টার বন্ধ করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না৷
ছবি: Imago
ফোর্ড
ইউরোপে ব্রিটেনই ফোর্ড কোম্পানির প্রধান বাজার৷ ব্রিটেনের ড্যাগেনহ্যাম শহরে ফোর্ড কারখানায় তৈরি ইঞ্জিন ও যন্ত্রাংশ জার্মানিতে পাঠানো হয়৷ ব্রেক্সিট ভোটের পর কোম্পানি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, যে প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে তারা সব রকম পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার
জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার কোম্পানির স্ট্র্যাটেজি প্রধান এড্রিয়ান হলমার্ক বলেছেন, ‘‘সবাই মোটেই হতাশায় ভুগছেন না৷ আমরা ব্রিটিশ৷ ব্রিটেনের সঙ্গেই আমরা আছি৷’’ তাঁর মতে, ব্যবসা স্বাভাবিকভাবেই চালু আছে, কারণ, কমপক্ষে আগামী দুই বছর পর্যন্ত ব্রিটেন ইইউ-র পূর্ণ সদস্য থাকবে৷