1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সংসদের উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন

২ আগস্ট ২০২৫

বাংলাদেশে দুই কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন৷ উচ্চকক্ষের একশ আসনের নির্বাচন হবে সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে৷ নিম্নকক্ষের তিনশ আসনের নির্বাচন হবে আগের মতোই আসনভিত্তিক সরসারি ভোটে৷

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবন৷
বাংলাদেশে দুই কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন৷ নিম্নকক্ষে ভোট হবে সরাসরি৷ আর উচ্চকক্ষে ভোট হবে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে৷ ভোটের পদ্ধতি নিয়ে এনসিপি সমর্থন দিলেও বিরোধিতা করছে বিএনপিসহ আরো অনেক রাজনৈতিক দল৷ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images

আর নারী আসনের সংখ্যা আগের মতোই থাকছে ৫০টি৷ তবে, রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনে সাত শতাংশ আসনে নারী প্রার্থীদের মনোনয়ন দিতে হবে৷ তিনশ আসনে এটা এটা ঘূর্ণায়ন পদ্ধতিতে হবে৷ ফলে সব মিলিয়ে সংসদের আসন সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৪৫০টি৷

এক শতাংশ ভোট পেলেই উচ্চকক্ষে আসন

৩১ জুলাইয়ের সবশেষ বৈঠকে উচ্চকক্ষের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঐকমত্য কশিমন৷ তবে, উচ্চকক্ষের সদস্যদের আইন প্রণয়ন করার কোনো ক্ষমতা থাকবে না৷ কোনো রাজনৈতিক দল ন্যূনতম এক শতাংশ ভোট পেলেই উচ্চকক্ষে আসন পাবে৷ অর্থাৎ এক শতাংশ ভোট পেলেই উচ্চকক্ষের একশটি আসনের মধ্যে একটি আসন পাবে ওই রাজনৈতিক দল৷ এক্ষেত্রে, ওই দলটি নিম্নকক্ষে কোনো আসন যদি জিততে যদি ব্যর্থও হয়, তা উচ্চকক্ষে কোনো বাধা তৈরি করবে না৷

উচ্চকক্ষের এখতিয়ার

উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির প্রস্তাবে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি একমত হয়েছে৷ তবে, এরবিরোধিতায় আছে বিএনপিসহ কয়েকটি দল৷ কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, উচ্চকক্ষের নিজস্ব কোনো আইন প্রণয়নের ক্ষমতা থাকবে না৷ তবে, অর্থবিল ছাড়া অন্য সব বিল নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষে উপস্থাপন করতে হবে৷ উচ্চকক্ষ কোনো বিল স্থায়ীভাবে আটকে রাখতে পারবে না৷ এক মাসের বেশি কোনো বিল আটকে রাখা হলে, সেটি উচ্চকক্ষে অনুমোদিত বলে গণ্য করা হবে৷

নিম্নকক্ষের প্রস্তাবিত বিলগুলো পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করবে উচ্চকক্ষ এবং নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে তা অনুমোদন অথবা প্রত্যাখ্যান করতে হবে৷ যদি উচ্চকক্ষ কোনো বিল অনুমোদন করে, তবে দুই কক্ষে পাস হওয়া বিল রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য পাঠানো হবে৷

আর যদি উচ্চকক্ষ কোনো বিল প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে তা সংশোধনের সুপারিশসহ নিম্নকক্ষে পুনর্বিবেচনার জন্য পাঠানো হবে৷ নিম্নকক্ষ সেই সংশোধনগুলো আংশিক বা পূর্ণভাবে গ্রহণ কিংবা প্রত্যাখ্যান করতে পারবে৷

জুলাই-আগস্টের উত্তাল দিনগুলি

02:56

This browser does not support the video element.

রাজনৈতিক দলের প্রতিক্রিয়া

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন বলেন, ‘‘উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে ক্ষমতার একটি ভারসাম্য তৈরি হবে৷ যারা নিম্নকক্ষে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে, তারা উচ্চকক্ষে তা নাও পেতে পারে৷ আর উচ্চকক্ষে প্রকৃত জনমতের প্রতিফলন হবে৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘যদিও উচ্চকক্ষের যে ক্ষমতা প্রস্তাব করা হয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়৷ তারপরও তারা প্রশ্ন তুলতে পারবেন৷ আলোচনা করতে পারবেন৷ দেশের মানুষও সেটা জানবেন৷ আর ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলো তার ভিত্তিতে জনমত গড়ে তুলতে পারবে৷''

পুরো নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে হলেই ভালো হতো বলে মনে করেন এনসিপির এই নেত্রী৷ তিনি বলেন, ‘‘তাতে প্রকৃত জনমতের প্রতিফলন হতো৷ তারপরও শুধু উচ্চকক্ষে হলেও কিছুটা ভারসাম্য তৈরি হবে৷''

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি যে বলছে নিম্নকক্ষের আসনের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন হবে, সেটা হলে তো আর পিআর পদ্ধতি হলো না৷''

তবে বিএনপি এবং তাদের মিত্র-জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির দাবি, উচ্চকক্ষের আসন নিম্নকক্ষে প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে দিতে হবে৷ তারা উচ্চকক্ষের এখতিয়ার নিয়েও আপত্তি তুলেছে৷

পিআর পদ্ধতিতে সংসদের ভারসাম্য নষ্ট হবে: এমরান সালেহ প্রিন্স

This browser does not support the audio element.

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ওই দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘উচ্চকক্ষে একশ আসনে নির্বাচনের যে পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে, সেই প্রস্তাবের আমরা তীব্র বিরোধিতা করছি৷ বিএনপি ও কয়েকটি দল ও জোট এই পদ্ধতি এবং প্রস্তাবিত ক্ষমতার সঙ্গে একমত নয়৷ আমাদের ভিন্নমত লিখিতভাবে লিপিবদ্ধ না হলে আমরা এটিকে অনুমোদন দেব না৷''

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা মনে করি যদি প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন হয় তাহলে সংসদের ভারসাম্য নষ্ট হবে৷ দেখা যাবে নিম্নকক্ষে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে একটি দল সরকার গঠন করলেও উচ্চকক্ষে অন্যান্য দল এক হয়ে ভারসাম্যহীনতা তৈরি করতে পারে৷ তাদের আসন বেশিও হয়ে যেতে পারে৷ তাই আমরা বলেছি নিম্নকক্ষে যে আসন তার আনুপাতিক হারে উচ্চকক্ষে আসন বণ্টন করতে হবে৷''

তিনি বলেন, ‘‘সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা শুধু নিম্নকক্ষের হাতেই থাকতে হবে৷ উচ্চকক্ষের হাতে এটা থাকার বিরোধী আমরা৷ এর কারণ হলো, যারা ভোটারদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন, তাদের বাইরে সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা কারো থাকতে পারে না৷ উচ্চকক্ষের যারা তারা তো সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন না৷''

আমরা সংসদে উচ্চকক্ষেরই বিরোধিতা করেছি: রুহিন হোসেন প্রিন্স

This browser does not support the audio element.

অন্যদিকে, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম উচ্চকক্ষ গঠনের বিরোধিতা করেছে৷

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘‘আসলে আমরা সংসদে উচ্চকক্ষেরই বিরোধিতা করেছি৷ কারণ, আমরা মনে করি বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে উচ্চকক্ষ একটা হাতি পোষার মতো৷ আসলে ওখানে যা হবে তা হলো বিভিন্ন রাজনৈতিক দল কিছু লোককে উচ্চকক্ষের সদস্য করবে, যাদের কিছু দেয়া দরকার তাদের৷ আবার কাউকে পুরস্কার হিসেবে ওই পদ দেবে৷ এতে আসলে কাজের কাজ কিছু হবে না৷ আসলে যা দরকার তা হলো, স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা৷ সেটা যদি করা হয় তাহলে সংসদ আসলে আইন প্রণয়নে মনোনিবেশ করতে পারবে৷ সেটা না করে উচ্চকক্ষের নামে যা করা হচ্ছে, তাতে কিছু লোককে উচ্চকক্ষের নামে সংসদদে নেয়া ছাড়া আর কিছুই হবে না৷''

যা বলছেন বিশ্লেষকেরা

বিশ্লেষকেরা বলছেন, পুরো নির্বাচনই সংখ্যানুপাতিক হলে ভালো হতো৷ তাতে আসলে ভোটারদের মতের প্রকৃতই প্রতিফলন ঘটতো৷ তবুও উচ্চকক্ষেই তা হচ্ছে, সেটাও একটা ভালো উদ্যোগ৷ এতে জবাবদিহিতা বাড়বে৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ও নির্বাচন পদ্ধতি বিশ্লেষক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যদি উচ্চকক্ষেও আনুপাতিক নির্বাচন হয় তাহলে সেখানে অন্তত প্রকৃত ভোটের প্রতিফলন ঘটবে৷ সেখানে ভোটের অনুপাতে অনেক ছোট দলও আসন পাবে৷''

তিনি বলেন, ‘‘বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থায় আসলে প্রকৃত অর্থে ভোটারদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে না৷ যেমন, ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি পেয়েছিলো মোট ভোটের ৪১ শতাংশ৷ আসন পেয়েছিলো ১৯৩টি৷ আর আওয়ামী লীগ পেয়েছিলো ৩৯ শতাংশ৷ কিন্তু আসন পেয়েছিলো মাত্র ৩০টি৷ এখন বিশ্বের অধিকাংশ দেশে আসনভিত্তিক না হয়ে আনুপাতিক নির্বাচন হচ্ছে৷''

বিএনপির দাবি প্রসঙ্গে এই অধ্যাপক বলছেন, ‘‘বিএনপি বলছে, উচ্চকক্ষের আসন নিম্নকক্ষে প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে দিতে হবে৷ আসলে সেটা তো কোনো পিআর পদ্ধতির নির্বাচন নয়৷ সেটা আগের পদ্ধতিই, সংসদে যেভাবে নারী আসন ভাগ হয়৷''

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘‘আসলে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ভোটের অনুপাতে হয়৷ এখন নিম্নকক্ষ হবে প্রচলিত পদ্ধতিতে আর উচ্চকক্ষ হবে আনুপাতিক, এটা একটা মিশ্র পদ্ধতি হয়ে গেল৷ আমার কাছে এটা অদ্ভুত মনে হচ্ছে৷ এতে আসলে দেখা যাবে, উচ্চকক্ষে ক্ষমতাসীন দল তার প্রভাব হারাতে পারে৷''

তিনি বলেন, ‘‘পিআর পদ্ধতির দুর্বলতা হচ্ছে, এতে দুর্বল সরকার গঠিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে৷ সরকারটি কোয়ালিশন সরকারের মত হয়৷ শতকরা ৫০ ভাগের বেশি ভোট না পেলে কোনো দলই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় না৷ আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত যা দেখা গেছে তাতে ৩৪-৪০ শতাংশ ভোট পেলেই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া যায়৷''

রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘‘আমাদের কাছে যে খসড়া পাঠানো হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, যারা ক্ষমতায় যাবে তারা নির্বাচিত সংসদে আগামী দুই বছরের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করবে৷ এখন বিএনপি তো উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের ব্যাপারে লিখিতভাবে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে৷ তাহলে, তারা ক্ষমতায় গেলে তাদের জন্য কি এটা বাস্তবায়নে বাধ্যবাধকতা থাকবে?''

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ