বাদল অধিবেশনের মধ্যেই দিল্লি আসতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠক করতে পারেন একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে।
বিজ্ঞাপন
প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই ভারতীয় সংসদে শুরু হয়েছে বাদল অধিবেশন। একদিকে করোনা পরিস্থিতি এবং অন্যদিকে পেগাসাস নজরদারি, এ নিয়েই এবারের সংসদে উত্তপ্ত আলোচনা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তারই মধ্যে আগামী সপ্তাহে দিল্লি আসার কথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। নির্বাচনে জেতার পর এটিই তার প্রথম দিল্লি সফর। কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের এই আবহে মমতার দিল্লি সফরও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
বাদল অধিবেশন
পশ্চিমবঙ্গে জয়ের প্রতিক্রিয়া, হারের সাফাই
পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয়বারের জন্য সরকার গঠন করবে তৃণমূল। তৃণমূলের বিপুল জয়ের পর কে কেমনভাবে হার বা জয়ের প্রতিক্রিয়া দিলেন?
ছবি: AP Photo/picture alliance
বাংলা পারে, বললেন মমতা
মমতা-ঝড়ে উড়ে গেছে মোদী-শাহের বিজেপি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম প্রতিক্রিয়া, ''বাংলা পারে। এটা বাংলার জয়।'' পরে বললেন, ''এই জয় বাংলার মানুষকে বাঁচিয়ে দিল।'' নন্দীগ্রামের খবরে মমতা বললেন, ''আমরা পুনর্গণনা চাই।'' আদালতে যাওয়ার কথাও বললেন। তবে মমতা জানিয়ে দিয়েছেন, এখন বিজয় উৎসব নয়। এখন প্রথম কাজ, করোনার মোকাবিলা করা। তাই সকলের জন্য বিনা পয়সায় মোদীর কাছ থেকে টিকা চেয়েছেন। না দিলে ধরনার হুমকিও।
ছবি: AFP/Getty Images
মোদীর টুইট
পশ্চিমবঙ্গের ফল বেরনোর পর টুইট করে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মমতাকে অভিনন্দন জানিয়ে মোদী বলেছেন, বিধানসভায় তাদের উপস্থিতি বিপুলভাবে বেড়েছে। বিজেপি এখন রাজ্যের মঙ্গলের জন্য কাজ করে যাবে। অমিত শাহও বলেছেন, বিজেপি শক্তিশালী বিরোধী দল হিসাবে রাজ্যের মানুষের স্বার্থে ও উন্নতির জন্য কাজ করবে।
ছবি: Kuntal Chakrabarty/IANS
দিলীপ ঘোষের সাফাই
বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, তারা যে লক্ষ্য নিয়েছিলেন, সেই তুলনায় তাদের সাংগঠনিক শক্তি ছিল না। তাদের আরো লড়াই করতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২৫ বছর লড়াই করে ক্ষমতায় এসেছেন। বিজেপি-কেও রাজ্যে অনেক পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।
ছবি: Imago Images/Pacific Press Agency/S. Paul
অধীরের যুক্তি
অধীর চৌধুরী বলছেন, ''সাম্প্রদায়িক প্রচারের কাছে হেরেছি। মমতা সাম্প্রদায়িক প্রচার করলেন। মোদীকে ঠেকাতে দিদিকে ভোট দাও। কংগ্রেস যে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে মোদীর বিরুদ্ধে লড়ছে, লড়বে সেই ভরসা মুসলিমরা রাখতে পারলেন না। আমরা বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। শীতলকুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে মুসলিমরা মারা গেলেন। প্রচার হলো, মোদী মুসলিমদের মারবে। এর মোকাবিলা আমরা করতে পারলাম না।''
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
হার স্বীকার রাহুল গান্ধীর
ভোটে বিপর্যয়ের পর রাহুল গান্ধী বলেছেন, ''আমরা সবিনয়ে হার স্বীকার করে নিলাম। আমাদের নেতা ও কর্মী, যারা কাজ করেছেন এবং লাখ লাখ মানুষ যারা আমাদের সমর্থন করেছেন, সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা আমাদের মতাদর্শ ও মূল্যবোধের লড়াই চালিয়ে যাব।''
ছবি: Getty Images/AFP/S. Hussain
বিমান বসুর বক্তব্য
জন্মলগ্নের পরে এই প্রথম বামেদের কোনো প্রতিনিধি বিধানসভায় থাকবেন না। বাম জোটের তরফে বিমান বসু বলেছেন, ''জনগণ বিজেপি-কে পরাস্ত করতে চেয়েছিলেন। তাই তৃণমূল লাভবান হয়েছে। আমরা যৌথ পর্যালোচনা করব। এই হার থেকে শিক্ষা নেব। আমাদের দায়িত্ব আরো বেড়ে গেল।''
ছবি: UNI
আইএসএফ চুপ
ভোটের কিছুদিন আগে দল গঠন করেছিলেন ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি। ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট বা আইএসএফ। তারা হাত মেলায় বাম ও কংগ্রেসের সঙ্গে। জোটের হয়ে একমাত্র জয় আব্বাসের ভাই নওসাদ সিদ্দিকির। কিন্তু এরপর প্রতিক্রিয়া দেননি আব্বাস। তবে দিল্লিতে কংগ্রেস মুখপাত্র বলেছেন, আইএসএফের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভালো হয়েছে না ভুল হয়েছে, তা পরে পর্যালোচনা করা হবে।
ছবি: Naushad Bhai
পিকে-র প্রতিক্রিয়া
তৃণমূলকে জেতানোর পিছনে তার কৌশলও কাজ করেছে। সেই প্রশান্ত কিশোর বা পিকে-র প্রতিক্রিয়া, ''কঠিন লড়াই ছিল। নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা আছে বলে বিজেপি সব লড়াই জিতবে তার কোনো মানে নেই।'' পিকে দাবি করেছিলেন, বিজেপি একশ ছুঁতে পারবে না। সেটা মিলেছে। তারপরেও পিকে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেছেন, ''আমাদের প্রচার করতে অসুবিধা হচ্ছিল।'' তবে এই জয়ের পর তার ঘোষণা, আর কোনো দলের হয়ে কাজ করবেন না তিনি।
ছবি: Hindustan Times/Imago Images
8 ছবি1 | 8
সোমবারই সংসদে শুরু হয়েছে বাদল অধিবেশন। রোববার রাত থেকে দিল্লিতে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ছাতা মাথায় দিয়ে সংসদে প্রবেশের সময় জানিয়ে দেন, করোনা নিয়ে বিরোধীদের সমস্ত প্রশ্ন শোনা হবে। তবে সরকারকেও উত্তর দেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। শুধু তাই নয়, শাসকদলের সাংসদরা কীভাবে উত্তর দেবেন, তা নিয়েও প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন।
রোববার রাতেই পেগাসাস-কাণ্ড সকলের গোচরে এসেছে। এই বিষয়টি নিয়েও সংসদে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, এই ঘটনায় নাম জড়িয়েছে রাহুল গান্ধী থেকে একাধিক সাংবাদিকের। কেন এবং কীভাবে নজরদারি চলছিল, ভারত সরকারের এ বিষয়ে ভূমিকা কী? সংসদে এই বিষয়গুলি উঠতে পারে।
মমতার সফর
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তিনি দিল্লি আসবেন। সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছেন, প্রতিবারই সংসদের অধিবেশনের সময় তিনি একবার দিল্লি আসেন। করোনার জন্য এবার তা হয়নি। জুলাইয়ের শেষ দিকে দিল্লি আসার পরিকল্পনা করছেন তিনি। তৃণমূল সূত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছে, আগামী ২৬ জুলাই মমতা দিল্লি আসতে পারেন। থাকতে পারেন ২৯ তারিখ পর্যন্ত। ৩০ তারিখ তার ফিরে যাওয়ার কথা। তবে অন্য এক সূত্রের দাবি, ২৫ তারিখও মুখ্যমন্ত্রী দিল্লি আসতে পারেন। বস্তুত, দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তার সৌজন্য সাক্ষাৎ হতে পারে। তিনি সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গেও দেখা করতে পারেন।
উত্তর প্রদেশে নির্বাচনের আবহে দিল্লিতে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ শুরু হয়েছে। বিজেপি-বিরোধী জোট গড়ে তোলার একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, মমতার দিল্লি আসা রাজনৈতিক ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। বিরোধী নেতানেত্রীদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে তার। আগেই কংগ্রেসনেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে তার ফোনে কথা হয়েছিল। ফলে দিল্লিতে এসে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ নিয়ে মমতা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ। ফলে উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনের সময় থেকেই ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যেতে পারে মনে করা হচ্ছে।