দশম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে ৪৮ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন৷ মানোনয়ন-পত্র বাতিল হয়েছে দু’জনের৷ এই নারী সাংসদদের মধ্যে ২৪ ভাগই নাকি কোটিপতি, জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক বা ‘সুজন’৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন মোট ৫০টি৷ এঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ৩৮, জাতীয় পার্টির ৫, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির দুই এবং স্বতন্ত্র জোটের তিনজন নারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন৷ অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির একজন করে মোট দু'জন প্রার্থীর মনোনয়ন-পত্র বাতিল হয়েছে৷ পরে এই দুটি পদের জন্য নির্বাচন হবে৷
ওদিকে সুশাসনের জন্য নাগরিক বা সুজন জানিয়েছে, এই সংরক্ষিত নারী সাংসদদের মধ্যে ২৪ শতাংশ কোটিপতি এবং ২৬ শতাংশ ব্যবসায়ী৷ সুজন নির্বাচন কমিশনে দেয়া তাদের সম্পদের হিসাব থেকে এই তথ্য বের করেছে৷ তাদের দাবি, যাঁরা নির্বাচিত হয়েছেন তাঁদের বড় একটা অংশ আত্মীয়তার সূত্রে মনোনয়ন পেয়েছেন৷ অতীতে রাজনীতি করেননি এমন নয়জনও এমপি হয়েছেন৷ সুজন-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলের ভেতরে সত্যিকার গণতন্ত্র থাকলে এ সব নারীরা সংসদে আসতে পারতেন না৷ দল যে প্রক্রিয়ায় নারীদের মনোনয়ন দেয়, সেটা একেবারেই স্বচ্ছ নয়৷''
নারী নেত্রী ফরিদা আখতার বলেন, ‘‘দুটো কারণে সংসদে সংরক্ষিত আসন রাখা হয়েছে৷ প্রথমত, সরাসরি নির্বাচনের ক্ষেত্রে যেহেতু প্রতিযোগিতায় এখনও নারীরা সক্ষমতা অর্জন করেননি, তাই সংসদে নারীদের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে৷ দ্বিতীয়ত, সংখ্যাগরিষ্ঠ নারীদের স্বার্থ রক্ষায় নারী এমপিরা কথা বলবেন – এ কথা ভেবেও দেয়া হয়েছে এ সুযোগ৷ কিন্তু আমি মনে করি, এ সব কোটিপতি নারীরা কখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ নারীদের স্বার্থ রক্ষা করে না৷ আসলে সংরক্ষিত নারী এমপি নির্বাচনের পদ্ধতিটাই ত্রুটিপূর্ণ৷'' তিনি বলেন, ‘‘টাকার জোরে যাঁরা সংসদে ঢোকেন, তাঁরা আরও বেশি টাকা কামাই করতে চান৷ হয়ত আগামীতে দেখা যাবে যে, তাঁদের সম্পদ দ্বিগুণ হয়েছে৷''
তাই ফরিদা আখতারের মতে, ‘‘আগামী আর ২/১ টার্ম পরে সংরক্ষিত আসন উঠিয়ে দিয়ে সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা উচিত৷''
তবে সাবেক নারী সাংসদ ও আওয়ামী লীগ নেত্রী অপু উকিল বলেন, ‘‘সুজন বরাবরই নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে আওয়ামী লীগকে হেয় করার জন্য এ ধরনের রিপোর্ট করে থাকে৷ আওয়ামী লীগ যেসব নারীকে মনোনয়ন দিয়েছে, তাঁরা সবাই তৃণমূলের৷ এলাকার তৃণমূল পর্যায়ের নারীদের উন্নয়নের জন্য তাঁরা কাজ করে থাকেন৷ এছাড়া নারীদের সম্পদ থাকাটা অপরাধ নয়৷''
তিনি বলেন, ‘‘সুজন-এর এই রিপোর্ট নারীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে মনে করি৷ এটা নারী সমাজকে হেয় করেছে৷'' জানা গেছে, কয়েকদিনের মধ্যেই এই নারী সংসদ সদস্যদের নাম গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে৷
২০১৩ সালে বাংলাদেশের আলোচিত নারী
২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তো আলোচনায় ছিলেনই, ছিলেন আরো কয়েকজন৷ ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছেন দুই নারী৷
ছবি: DW/M. Magunia
শেখ হাসিনা
রাজনীতির ময়দানে প্রধানমন্ত্রী বরাবরই আলোচনায় ছিলেন৷ সেইসাথে পেয়েছেন জাতিসংঘের সাউথ-সাউথ পুরস্কার৷ সর্বদলীয় সরকার গঠনসহ নানা কারণে এখনও আলোচনায় তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
খালেদা জিয়া
সরকার পতনের আন্দোলন, জামায়াত নেতাদের মুক্তি দাবি, হেফাজতকে সমর্থন – এসব কারণে বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াও ছিলেন আলোচনার তুঙ্গে৷
ছবি: DW
শিরীন শারমিন চৌধুরী
এ বছরের এপ্রিলে জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবে নির্বাচিত হন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী৷ তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম নারী স্পিকার৷ এছাড়া প্রথমবার এবং সংরক্ষিত কোটায় সংসদ সদস্য হয়ে স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার ঘটনাও তারই ক্ষেত্রে প্রথম৷
ছবি: DW/M. Mamun
নাজমুন আরা সুলতানা
ফেব্রুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে যোগ দেন নাজমুন আরা সুলতানা৷ তিনি ইতিহাসে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে নিয়োগ পাওয়া প্রথম নারী বিচারপতি৷ ২০০০ সালে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় তিনিই ছিলেন দেশের উচ্চ আদালতে প্রথম নারী বিচারপতি৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
ওয়াসফিয়া নাজরীন
এভারেস্ট জয়ী দ্বিতীয় বাংলাদেশী নারী ওয়াসফিয়া নাজরীন এ বছর মার্চে ইউরোপের সর্বোচ্চ চূড়া মাউন্ট এলব্রুস জয় করেন৷ সেখানে গিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন তিনি৷ ২০১১ সালে স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে পৃথিবীর সাতটি মহাদেশের সর্বোচ্চ ৭টি শৃঙ্গ জয় করার ঘোষণা দেন ওয়াসফিয়া৷ এরই মধ্যে পাঁচটি শৃঙ্গ জয় করেছেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
রেশমা
বাংলাদেশে এ বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা রানা প্লাজার ভবন ধস৷ এ ঘটনায় আলোচিত নারী রেশমা৷ রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে যাকে ১৭ দিনের মাথায় জীবিত উদ্ধার করা হয়৷ বিশ্ব গণমাধ্যমে বিষয়টি ব্যাপক আলোড়ন তুলে৷ তবে তাকে উদ্ধারের ঘটনা ‘নাটক’ বলেও উল্লেখ করেছিল অনেক দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম৷
ছবি: Getty Images/AFP/STRDEL
নাদিয়া শারমিন
এ বছরের এপ্রিলে হেফাজত ইসলামের একটি সমাবেশে দলটির কর্মীদের হাতে নাজেহাল হন একুশে টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার নাদিয়া শারমিন৷ এ হামলার প্রতিবাদে কেবল সাংবাদিকরাই নন, পুরো দেশের নারী অধিকার কর্মীরা ব্যাপক বিক্ষোভ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
লাকি আক্তার
গণজাগরণ মঞ্চের অগ্নিকন্যা লাকি আক্তার শাহবাগ আন্দোলনের সময় ব্যাপক পরিচিত পান৷ তার স্লোগান ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এবং গণজাগরণের কর্মীদের উদ্দীপিত করেছিল সব সময়৷ তার স্লোগানে গর্জে উঠেছিল শিশু-কিশোর, আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা৷
ছবি: REUTERS
নাজমা আক্তার
বার্লিনে এ বছরের বর্ষসেরা নারী নেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন বাংলাদেশের নাজমা আক্তার৷ তৈরি পোশাক শিল্পের কর্মী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করা এই নারী এ বছরের অক্টোবরে ‘আস্ত্রাইয়া ফিমেল লিডার অফ দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০১৩’ ট্রফি গ্রহণ করেন৷
ছবি: DW/Ashish Chakraborty
মাহফুজা আক্তার
বাংলাদেশের তথ্যকল্যাণী মাহফুজা আক্তার এ বছর ডয়চে ভেলে আয়োজিত ‘গ্লোবাল মিডিয়া ফোরাম অ্যাওয়ার্ড' পান৷ উচ্চমাধ্যমিক পাস করা মাহফুজা তথ্যকল্যাণী হিসেবে কাজ করছেন ২০১০ সাল থেকে৷ গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী ইউনিয়নে অবস্থিত তাঁর নিজের গ্রামসহ আশেপাশের মোট পাঁচটি গ্রামে কাজ করেন তিনি৷