সংসদে আলোচনার আগেই আরএসএস-এর সভায় জাতীয় শিক্ষানীতি পেশ করে আলোচনা করলেন ভারতের শিক্ষামন্ত্রী।
বিজ্ঞাপন
নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার দেশের শিক্ষানীতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সরব। বর্তমান শিক্ষানীতির বদল ঘটিয়ে নতুন শিক্ষানীতি প্রণোয়নের কথা তারা বহুদিন ধরেই বলছেন। একটি খসড়াও তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে তা অনুমোদিতও হয়েছে। কিন্তু এখনো সংসদে তা নিয়ে আলোচনা হয়নি। তার আগেই আরএসএস-এর অধিবেশনে জাতীয় শিক্ষানীতি পেশ করলেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। তা নিয়ে আলোচনাও হলো। যা দেখে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে। সংসদে আলোচনার আগে শিক্ষানীতির খসড়া আরএসএস-এর সভায় কীভাবে পৌঁছে গেল? এই প্রশ্ন নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে।
ধর্মের নামে মন্দির, মসজিদ ও ঐতিহাসিক স্থাপনায় হামলা
প্রাচীন স্থাপনা ও অমুসলিমদের ধর্মীয় উপাসনালয় ধ্বংস করে চলেছে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস৷ মসজিদের ওপরও হামলা হয়েছে৷ উপমহাদেশে হিন্দু ও বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার ইতিহাসও দীর্ঘ৷ ধর্মের নামে এমন ধ্বংসের ‘খেলা’ থামবে কবে?
ছবি: Reuters
মালিতে ধ্বংসলীলা
এক সময় মালির টিমবাকটু শহরের অন্য নাম ছিল ‘মরুদ্যানের মুক্তা’৷ সেই শহরের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্যকে ধ্বংস করেই চলেছে সেখানকার ইসলামি জঙ্গি সংগঠন৷ ২০১২ সালে শহরটিতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর থেকে মুসলমানদের গড়া অনেক স্থাপত্য নিদর্শনও ধ্বংস করেছে তারা৷ সম্প্রতি শহরটিকে জঙ্গিদের কবল থেকে পুরোপুরি মুক্ত করার দাবি করেছে মালির সেনাবাহিনী৷
ছবি: Getty Images/AFP
সন্ত্রাসপ্রীতি এবং জ্ঞানভীতি
শুধু স্থাপনা বা গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক নিদর্শনই নয়, অনেক গুরুত্বপূর্ণ পাণ্ডুলিপিও ধ্বংস করেছে জঙ্গিরা৷
ছবি: DW/P. Breu
তথাকথিত আইএস-এর হামলা
সিরিয়ার পালমিরা শহরের প্রায় ২,০০০ বছরের পুরনো স্থাপনাগুলোও রেহাই পায়নি৷ সে দেশে চলছে তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর ধ্বংসযজ্ঞ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পালমিরার মন্দির ধ্বংস
এক সময় সিরিয়ার হোমস নগরীর এই স্থাপনাটিকে নিয়ে গর্ব করত সিরিয়া৷ এটি এক সময় ছিল মন্দির৷ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রাচীন এই উপসনালয় দেখে পর্যটকরা মুগ্ধ হতেন৷ আইএস-এর হামলায় স্থাপনাটি এখন ক্ষতবিক্ষত৷
ছবি: Reuters/Stringer
ধ্বংস যখন প্রচারণার হাতিয়ার
ধর্মীয় সম্প্রীতি, সাংস্কৃতিক সহাবস্থানকে হুমকির মুখে দাঁড় করানোর চেষ্টায় আইএস অক্লান্ত৷ নৃশংসতা, বর্বরতা ক্রমেই আইএস-এর প্রচারণার হাতিয়ার হয়ে উঠছে৷ এভাবে পেট্রল ঢেলে স্থাপনা পোড়ালে সংবাদমাধ্যম লুফে নেয় খবর, খবর প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে তথাকথিত জঙ্গিরাও পেয়ে যায় তাদের কাঙ্খিত প্রচার৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
আয়ের উৎস
সিরিয়া ও ইরাকের প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ শুধু ধ্বংসই করে না, অনেক সময় কদর বুঝে সেগুলো চোরাপথে চড়াদামে বিক্রিও করে আইএস৷ প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছ থেকেও অমূল্য সম্পদ কেড়ে নিয়ে বিক্রি করার অভিযোগ আছে আইএস-এর বিরুদ্ধে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/IS/Internet
আফগানিস্তানে তালেবান বর্বরতা
আফগানিস্তানের এই বৌদ্ধ মন্দিরটিকে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের স্বীকৃতি দিয়েছিল ইউনেস্কো৷ ২০০১ সালে হামলা চালিয়ে এটি প্রায় ধ্বংস করে দেয় তালেবান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/N. Ahmed
আফ্রিকায় হামলার শিকার মসজিদ
মসজিদও অনেকক্ষেত্রে তথাকথিত ধর্মীয় উন্মত্ততার শিকার৷ ২০১৫ সালে মুসলমানদের উপাসনালয়ের ওপর সবচেয়ে বেশি হামলার খবর আসে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকান থেকে৷ খ্রিষ্টান-মুসলিম দাঙ্গায় সেখানে অন্তত ৪১৭টি মসজিদ আংশিক অথবা পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে বলেও দাবি করা হয়৷
ছবি: ISSOUF SANOGO/AFP/Getty Images
গির্জায় হামলা
ইসলামি জঙ্গিরা আফ্রিকা অঞ্চলে গির্জাতেও প্রায়সময়ে হামলা চালায়৷ হামলায় হতাহতের ঘটনাও ঘটে৷ ওপরের ছবিটিতে কেনিয়ার এক গির্জায় হামলার পরের দৃশ্য৷
ছবি: dapd
ভারতের ইতিহাসের কালো অধ্যায়
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারতের ইতিহাসের ‘কালো দিন’৷ ভারতের উত্তর প্রদেশের ফৈজাবাদ জেলার বাবরি মসজিদে সেদিনই হামলা চালিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করে হিন্দু মৌলবাদীরা৷ মুঘল সম্রাট বাবরের নামে গড়া সুপ্রাচীন এই মসজিদের ওপর হামলার ঘটনা ভারতের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে৷
ছবি: AFP/Getty Images
বাংলাদেশে প্রতিবছরই মন্দিরে হামলা
বাংলাদেশের ভূখণ্ডে মূলত একাত্তরের মুক্তযুদ্ধের সময় থেকেই ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দুরা হামলা, নির্যাতনের শিকার৷ তবে মন্দিরে মুর্তি ভাঙা, মন্দিরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের অসংখ্য ঘটনা ঘটে প্রতিবছর৷ বৌদ্ধ মন্দিরেও হামলা হয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হামলার কারণ ধর্মীয় উগ্রতা৷ সারা বিশ্বে ধর্মের নামে ধর্মীয় উপাসনালয় বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ওপর হামলা থামবে কবে?
ছবি: Reuters
11 ছবি1 | 11
মঙ্গল এবং বুধবার আরএসএস-এর সম্মেলনে জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে মাতৃভাষায় শিক্ষার উপর জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে ইতিহাস বিষয়ে। আরএসএস-এর বরাবর অভিযোগ, দেশের ইতিহাস লেখার ক্ষেত্রে বিদেশি শক্তিদের অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অথচ যারা ওই শক্তির প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছিল, তাদের তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। পাঠ্যক্রম থেকে মুঘল ইতিহাস, সুলতানি ইতিহাস কমিয়ে সেখানে মারাঠা, রাজপুত ইতিহাসকে গৌরবান্বিত করার কথা বলা হয়েছে। আরএসএস-এর এই বক্তব্য নিয়ে দেশের ঐতিহাসিক মহলে বহু বিতর্ক হয়েছে। এখনো হচ্ছে। জাতীয় শিক্ষানীতিতে আরএসএস-এর বহু বক্তব্যই গ্রহণ করা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। এবং সে কারণেই শিক্ষামন্ত্রী সংসদে তা তোলার আগে আরএসএস-এর সভায় নিয়ে গেছেন বলে রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য।
সাধারণত, এই ধরনের বিষয় সংসদে আলোচনার পরেই সকলের সামনে আসে। সংসদের বিতর্কসভায় আলোচনার পর অনেক সময় এই ধরনের বিলের পরিমার্জন বা পরিবর্ধন হয়। সংসদের দুইকক্ষ মত দিলে তবেই নীতি প্রণয়ন হয়। বিরোধীদের অভিযোগ, শিক্ষামন্ত্রী দেখিয়ে দিলেন, সংসদ নয়, আরএসএস-ই তাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
সিপিএম-এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, ''এবার দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে গেল যে, বিজেপি কার অঙ্গুলিহেলনে চলে।'' কংগ্রেসও এই ঘটনার তীব্র বিরোধিতা করেছে।
২০২৫ সালে আরএসএস-এর ১০০ বছর পূর্তি। রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, তার আগে আরএসএস-এর একাধিক কর্মসূচিকে বাস্তবায়িত করতে চায় বিজেপির সরকার। জাতীয় শিক্ষানীতিও তারই একটি অংশ। এবং সে কারণেই শিক্ষামন্ত্রী সংসদে ওঠার আগে বিষয়টি আরএসএস-এর কাছ থেকে পাশ করিয়ে নিয়েছেন।