ভারত-অস্ট্রেলিয়া সম্পর্ক
৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪এর সঙ্গে ইতি হলো ভারতকে ইউরেনিয়াম রপ্তানির ওপর ক্যানবেরার নিষেধাজ্ঞা৷
অবশেষে শান্তিপূর্ণ পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসেবে ভারতকে স্বীকৃতি দিল অস্ট্রেলিয়া৷ শুক্রবার নতুন দিল্লিতে সই হলো বেসামরিক পরমাণু সহযোগিতা চুক্তি৷ ভারতকে পরমাণু জ্বালানি ইউরেনিয়াম সরবরাহের ওপর থেকে দীর্ঘদিনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল অস্ট্রেলিয়া৷ ভারতকে ইউরেনিয়াম জ্বালানি সরবরাহ না করার একমাত্র কারণ ছিল ভারতের পরমাণু অস্ত্র প্রসার রোধ চুক্তি এনপিটিতে সই না করা৷
এ বিষয়ে দু'দেশের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছিল ২০১২ সালে৷ শুক্রবার নতুন দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ভারত সফররত অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টোনি অ্যাবটের বৈঠকের পর অ্যাবটের সঙ্গে আসা অস্ট্রেলিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী অ্যান্ড্রু রোব বলেন, শান্তিপূর্ণ কাজে পরমাণু শক্তি কাজে লাগাতে যে সব রক্ষাকবচের সংস্থান থাকা দরকার, ভারত তার সবকটি পালন করেছে৷ রক্ষাকবচের সংস্থানে অস্ট্রেলিয়া সন্তুষ্ট৷ পর্যবেক্ষকদের মতে, ভারতের বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রয়োজন মেটাতে ক্যানবেরার ইউরেনিয়াম রপ্তানি এক বড় ভূমিকা পালন করবে সন্দেহ নেই৷
উল্লেখ্য, বিশ্বে ইউরেনিয়াম উৎপাদনে তৃতীয় বৃহত্তম দেশ অস্ট্রেলিয়া৷ অন্যদিকে ভারতে এখন আছে মাত্র ২০টি ছোট রিয়্যাক্টর৷ মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৪,৭৮০ মেগাওয়াট৷ আরো ৩০টি রিয়্যাক্টর বসিয়ে পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে যাওয়া হবে ৬৩ হাজার মেগাওয়াটে৷ এর জন্য খরচ হবে ৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷
শুধু তাই নয়, কয়লা, তরল প্রাকৃতিক গ্যাসসহ বিভিন্ন খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ অস্ট্রেলিয়া৷ কয়লার জোগান বাড়াতেও অস্ট্রেলিয়া গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে৷ বর্তমানে ভারতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি প্রধানত কয়লা ভিত্তিক৷ জাতীয় তাপবিদ্যুৎ নিগমের পরিসংখ্যান অনুসারে অর্ধেক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে মাত্র সাতদিনের কয়লা মজুত রয়েছে৷ এটা মেটাতে অস্ট্রেলিয়া থেকে কয়লা আমদানি জরুরি৷ অস্ট্রেলিয়ার একটা বড় কয়লা খনির দায়িত্বে আছে একটি ভারতীয় কোম্পানি৷ কয়লা, ইউরেনিয়াম ও তরল প্রাকৃতিক গ্যাস দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে ভারতের শিল্পবিকাশের বড় অংশীদার হতে পারে৷
মোদীর সঙ্গে বৈঠকে উঠে আসে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার, শিক্ষা বিনিময় কর্মসূচি ও কৃষি ক্ষেত্রে মজুতকরণ, পরিবহন, হিমঘর স্থাপন, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তি হস্তান্তর৷ এছাড়াও ভারতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে বিশাল সুযোগ ও সম্ভাবনা আছে, ক্যানবেরা তা পুরোপুরি কাজে লাগাতে ইচ্ছুক৷ অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করেন, দুটি দেশের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য এক, ভাষাগত মিল আছে, বিশ্ব সংঘাতে উভয় দেশ সর্বদাই একে অপরের পাশে থেকেছে৷ তা সত্ত্বেও দুটি দেশের নৈকট্য যতটা থাকা উচিত ছিল, তা হয়নি৷ এবারের সফরে সেই দূরত্ব দূর হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন৷ নরেন্দ্র মোদীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কেন্দ্রমূলে আছে কর্মসংস্থান ও দক্ষতা৷ সেদিক থেকে অস্ট্রেলিয়া এক স্বর্ণভূমি৷
শুধু ইউরেনিয়াম রপ্তানি নয়, এর বাইরেও এশিয়া ও ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার স্থিতিশীলতায় ভারতের এক মূল্যবান পার্টনার – বিশেষ করে চীনের উদীয়মান শক্তির দাপটের প্রেক্ষাপটে৷ জাপানকেও এই বলয়ের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷ দিল্লি ও ক্যানবেরা তাদের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করার সুযোগ আছে৷ মনমোহন সিং সরকারের জমানায় এর চেষ্টা হয়েছিল কিন্তু তা ফলপ্রসূ হয়নি৷ এবার মোদী ও অ্যাবট দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে কৃতসংকল্প৷ এর অধীনে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যৌথ নৌ মহড়া সমুদ্র পথে জাহাজ চলাচলের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা এবং নৌ নজরদারির তথ্যাদি বিনিময়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷