সম্প্রতি মাদক নির্মূলে সারাদেশে অভিযান শুরু হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর৷ এতে অনেক মাদক ব্যবসায়ী যেমন ধরা পড়ছেন, তেমনি অভিযানের সময় বন্দুকের গুলিতে মারা গেছেন অনেকেই৷
বিজ্ঞাপন
বিষয়টি এরই মধ্যে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে দেশজুড়ে৷ বিশেষ করে সামাজিক গণমাধ্যমে অনেকেই এ নিয়ে কথা বলছেন৷ থাইল্যান্ড ও ফিলিপিন্সের উদাহরণ টেনে কেউ কেউ একে সমর্থন করলেও অনেকেই এর বিরোধিতা করছেন৷ সমর্থনকারীদের মতে, মাদক নির্মূলে অন্য কোনো উপায় নেই৷ আর বিরোধীদের মতে, হত্যা কোনো সমস্যা সমাধানের উপায় হতে পারে না৷ এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দেশের আইনি ব্যবস্থার দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ৷
সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম লিখেছেন, ‘‘মাদক প্রথমে একটি ব্যাক্তি, এরপর একটি পরিবার, অতঃপর একটি সমাজকে তছনছ করে দেয়৷ ওদেরকে প্রতিরোধ করুন৷’’
মৌলভিবাজারের কুলাউড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু ইউসুফ কুলাউড়ায় মাদক বিরোধী অভিযানের আপডেট দিচ্ছেন৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘কিছুক্ষণ আগে কুলাউড়া থানায় আরও একজন মাদক ব্যবসায়ী আটক৷ সার্কেলে ১২ এবং কুলাউড়া থানায় ৭৷’’
তরুণ সাংবাদিক লুৎফর রহমান কাকন লিখেছেন, ‘‘কোন প্রক্রিয়ায় করবে সেটা রাষ্ট্র ভালো জানে৷ তবে প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের সমূলে ধ্বংস করা জরুরি হয়ে পড়েছে৷ মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান আরো জোরালো হোক৷’’
বিশ্বের অদ্ভুত সব মাদক নিরাময় কেন্দ্র
আমাদের দেশে মাদকাসক্তি এখন বড় ধরনের সমস্যা৷ তবে মাদকাসক্তদের জন্য এখন বেশ কিছু নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র রয়েছে৷ কিন্তু সেগুলো এতটা অদ্ভুত হয়ত নয়৷ বিশ্বের অদ্ভুত কিছু মাদক নিরাময় কেন্দ্রের তথ্য থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/R.Gul
থাইল্যান্ডের পুনর্বাসন কেন্দ্র
থাইল্যান্ডে ফ্রা পুত্থাবাতের কাছে থামক্রাবক মঠ৷ এখানে মাদকাসক্তদের ভিন্ন উপায়ে চিকিৎসা করা হয়৷ আধ্যাত্মিক ও প্রাকৃতিক উপায়ে মাদকাসক্তদের মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তি এনে দেয়ার চেষ্টা করেন মঠের সন্ন্যাসীরা৷
ছবি: N.Asfouri/AFP/Getty Images
বমনের মাধ্যমে শুদ্ধি
এখানে সাধারণত মাদকাসক্তদের ১০দিনের একটি কর্মসূচিতে রাখা হয়৷ তবে এর মধ্যে বহির্বিশ্বের সাথে মোকাবিলা করার ক্ষমতা গড়ে না উঠলে আরো দীর্ঘ সময় সেখানে থাকতে পারেন তারা৷ ভোর বেলা প্রত্যেককে একটি পানীয় খেতে বাধ্য করা হয়, যার ফলাফল বমি৷ মঠের সন্ন্যাসীদের মতে পানীয়টি খুবই বাজে, কিন্তু কার্যকর৷ এছাড়া মঠ ছাড়ার আগে প্রতিটি অংশগ্রহণকারীকে অঙ্গীকার করতে হয় যে, সে আর কখনো মাদক ছুঁয়ে দেখবে না৷
ছবি: Getty Images/Paula Bronstein
আধ্যাত্মিক চেতনা
পেরুর আয়াহুয়াস্কা নিরাময় কেন্দ্রে প্রতি বছর কয়েক হাজার মানুষ প্রাকৃতিক উপায়ে মাদকাসক্তি থেকে মুক্তির চিকিৎসা নিতে যান৷ সেখানকার আদিবাসীদের বিশ্বাস আয়াহুয়াস্কা প্রত্যেকের মধ্যে আধ্যাত্মিক চেতনার উন্মেষ ঘটিয়ে মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তি এনে দেয়৷ তবে পশ্চিমা চিকিৎসকদের মতে এ ধরনের চিকিৎসার ফলে ভয়ের স্মৃতি, বমি, প্রচুর ঘাম এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে৷ তাই বিশ্বের অনেক দেশে এখন আয়াহুয়াস্কা নিষিদ্ধ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V.Donev
ধর্মীয় পন্থা
ব্রাজিলের রিও ডি জানেরোর পুনর্বাসন কেন্দ্র এটি৷ এখানে আধ্যাত্মিক উপায়ে চিকিৎসা করা হয়৷ প্রতিদিন সকালে সব মাদকাসক্ত ব্যক্তি জড় হয়ে ঈশ্বরের বন্দনা করেন৷ প্রত্যেককেই একটি গির্জার পাশে থাকতে দেয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP/ F.Dana
শিকল বেঁধে চিকিৎসা
এই ব্যাক্তির নাম আমানউল্লাহ, যাকে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে জালালাবাদে একটি মাজারে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে৷ এখানে মাদকাসক্তদের চিকিৎসা করা হয়৷ শিকল দিয়ে ৪০ দিন বেঁধে রাখা হয় তাদের৷ খেতে দেয়া হয় একটু রুটি, অল্প পানি আর একটু মরিচের গুড়া৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/R.Gul
আধ্যাত্মিক সাহায্য
মীর আলী বাবা, যাঁর নামে এই মাজার৷ স্থানীয়দের বিশ্বাস, মাদকাসক্তদের এখানে এভাবে বেধে রাখার ফলে আলী বাবা তাদের এই আসক্তি থেকে বের হতে সাহায্য করেন৷ এই ধারণা কেবল আফগানিস্তানেই নয় বিশ্বের অনেক স্থানে রয়েছে৷ কিছু স্থানে মাদকাসক্তদের শাস্তি দেয়া হয়, এমনকি হত্যা করাও হয়৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/R.Gul
শ্রমিক শিবির
চীনে মাদকাসক্তদের পুনর্বাসন হয় জেলখানায়৷ কারাদণ্ড হওয়ার পর ঐ ব্যক্তিকে নিরাময় কেন্দ্রে পাঠানো হয়৷ কোকেইন, হেরোইন বা মারিজুয়ানা নিয়ে কেউ ধরা পড়লেও একই শাস্তি৷ তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, চীন মাদকাসক্তদের ক্লিনিকগুলোকে শ্রমিক ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করে৷ অর্থাৎ তাদের দিয়ে নানা কাজ করিয়ে নেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Shenglian
মৃত্যু অভিজ্ঞতা
কিরঘিজস্তানে যে পুনর্বাসন পদ্ধতিটি ব্যবহার করা হয় তা ভয়াবহ৷ এটাকে বলা হয় ‘কোমা চিকিৎসা’৷ মাদকাসক্তদের একটি ইনজেকশন দেয়া হয় যার প্রভাবে তারা কয়েক ঘণ্টা কোমা’র মতো অবস্থায় থাকে৷ এরপর যখন তারা ঘুম থেকে জেগে ওঠে তখন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায় বলে বিশ্বাস সেখানকার মানুষের৷ বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এর ব্যাপক সমালোচনা করেছেন৷
ছবি: picture alliance/Robert Harding World Imagery
বিলাসবহুল পন্থা
অনেক তারকারা মাদকাসক্তি থেকে মুক্তি পেতে বিলাসবহুল পথ বেছে নেন৷ সবচেয়ে বিখ্যাত পদ্ধতিটি হয় অ্যামেরিকার বেটি ফোর্ড ক্লিনিকে৷ এখানে বিখ্যাত সংগীত শিল্পী ও অভিনেতারা চিকিৎসা করান৷ এই ক্লিনিকে এমন কিছু সুযোগ সুবিধা থাকে যাতে আপনার মনে হবে আপনি একটি বিলাসবহুল হোটেলে আছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A.Rain
সবার চিকিৎসার সুযোগ নেই
বিশ্বের বেশিরভাগ মাদকাসক্তের চিকিৎসার সুবিধা নেই৷ যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জরিপ অনুযায়ী, সে দেশের মাত্র ১০.৪ শতাংশ মাদকাসক্ত ব্যক্তি চিকিৎসার সুবিধা পান৷ গরীব দেশগুলোতে এ অবস্থা আরো শোচনীয়৷
ছবি: picture alliance/JOKER
10 ছবি1 | 10
এদিকে, সাংবাদিক কামাল আহমেদ লিখেছেন, ‘‘এ কেমন নৈতিকতা আমাদের যে, আমরা আন্তর্জাতিক ফোরামে যে রাষ্ট্রীয় অপরাধের নিন্দা জানিয়ে তা বন্ধের জন্য সব রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানাবো, সেই অন্যায় কৌশলকেই আমরা অনুশীলন করব? এই দ্বিচারিতা বন্ধ হোক৷ মাদক কারবারিদের খুঁজে বের করে আটক করুন, বিচার করুন, শাস্তি দিন; কিন্তু সন্দেহের বশে হত্যা কোনো রাষ্ট্রীয় নীতি হতে পারে না৷’’
সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজের ভাষায়, ‘‘যুদ্ধ ছাড়াই প্রতিদিন এত মানুষের মৃত্যু কি সমাধান দিতে পারবে? সেই কবে বিএনপি ক্লিনহার্ট অপারেশন শুরু করেছিল দেশকে সন্ত্রাস মুক্ত করতে৷ পেরেছিলো? পারেনি৷ সাময়িক স্বস্তিপ্রকল্প কখনো স্থায়ী হয় না৷ তাই এখনো চলছে সন্ত্রাস, জঙ্গী আর মাদকের বিরুদ্ধে সাময়িক স্বস্তি প্রকল্প৷ এটা ঠিক, এসব প্রকল্প জনপ্রিয় হয়৷ কিন্তু স্থায়ী হয় না৷ তাই যদি হতো, তাহলে ক্রস ফায়ারের প্রবক্তা হিসাবে বিএনপি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতো৷ তাই ব্যর্থ প্রকল্প অনুসরণ না করাই উত্তম৷’’
তাঁর স্ট্যাটাসের দু'টি মন্তব্য গুরুত্ব বিবেচনায় তুলে ধরা হলো৷ সেখানে হাবিব রহশন লিখেছেন, ‘‘আমার বাসা বসুন্ধরা বি ব্লকে ৮নং রোডে৷ IUB, North South University র কাছে৷ ৮ নং রোড নেশাখোরদের পট্টি নামে পরিচিত৷ বাসার সামনে ছেলে-মেয়েরা যেভাবে নেশা করে, দেখতে অবাক লাগে৷ আমরা তাদের কিছু বলতে পারি না৷ মনে হয়, বসুন্ধরার মালিক এদের সহযোগিতা করে৷ এরা এত শক্তিশালী, ক্রস ফায়ার ছাড়া কোনো পথ নেই৷ সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই৷’’
আর মোহাম্মদ আলী মারজান লিখেছেন, ‘‘এদের বিচারের আওতায় এবং কারাগারের সীমানায় রাখতে না পারা রাষ্ট্রের ব্যার্থতা ! আর রাষ্ট গলা কেটে সে ব্যার্থতার দায়মুক্তির চোখ সাফাই দেয় ! এ লজ্জা কার ? বিচার বিভাগের ? শাসন বিভাগের ? নাকি রাষ্ট্রের?’’
রেজাউল ইসলাম রনি নামের এক অভিযুক্তের কেস স্টাডি তুলে ধরেন বাকি বিল্লাহ ৷ তিনি লেখেন যে, কীভাবে পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তা তার পরিবারের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাত করেছে৷ পরে তাকে ঠিকই ‘ক্রসফায়ারে’ দিয়েছে৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘মাদক ব্যবসার সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডাররা রাষ্ট্রের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে, বন্দুকযুদ্ধের নেতৃত্বও তারাই দেয়৷ ইয়াবার মতো সর্বনাশা মাদক রোধ করতে চাইলে রাষ্ট্রকে নিজের মাথার দিকেই বন্দুক তাক করতে হবে সবার আগে- সে কি তা পারবে?’’
মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও নিরাময় কেন্দ্র
বাংলাদেশে বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম আহসানিয়া মিশন পরিচালিত মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও নিরাময় কেন্দ্র৷ ঢাকায় নারীদের জন্য একটি ও ঢাকার বাইরে পুরুষদের জন্য দু’টি কেন্দ্রের মাধ্যমে সংস্থাটি কাজ করছে৷
ছবি: DW
নারীদের জন্য একটি, পুরুষদের দু’টি
ঢাকার মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডে আহসানিয়া মিশন পরিচালিত অ্যাডিকশন ম্যানেজমেন্ট এবং ইন্টেগ্রেটেড কেয়ার সেন্টার৷ সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় ছাড়াও এখানে আছে নারীদের জন্য মাদকাসক্তির চিকিৎসা ও নিরাময় কেন্দ্র৷ এখান থেকেই গাজীপুর ও যশোরে পুরুষদের দু’টি নিরাময় কেন্দ্রের কার্যক্রমের তদারকি চলে৷
ছবি: DW
‘রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ’
লাল কাপড়ে সুঁচি কাজের এ লেখাগুলো শোভা পাচ্ছে আহসানিয়া মিশনের নারী মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের প্রবেশ পথে৷ এটি তৈরি করেছেন কারাবন্দি মাদকাসক্তরা৷ আহসানিয়া মিশন তাদের তিনটি কেন্দ্রের মাধ্যমে মাদকাসক্ত মানুষকে আলোর পথ দেখানোর কাজে নিয়োজিত৷ বন্দি মাদকাসক্তদের নিরাময়েও সংস্থাটি কাজ করে থাকে৷
ছবি: DW/M. Mamun
মাদকাসক্তদের মধ্যে নারীরা বেশি
আহসানিয়া মিশনের মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে আলোর মুখ দেখতে আসা নারী মাদকাসক্তরা৷ প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক ডা. ফারাহ দিবা জানান, তাদের কাছে সেবা নিতে আসা মাদকাসক্তদের মধ্যে ১৫-২৫ বয়সের মেয়েরাই বেশি৷ নারীদের মধ্যে আসক্তির অন্যতম কারণ হিসেবে তারা চিহ্ণিত করেছেন বন্ধুদের বা পরিবারের অন্য কোনো মাদকাসক্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ৷
ছবি: DW
বিভিন্ন রকম ‘প্রোগ্রাম’
‘ব্রোকেন ফ্যামিলির’ সন্তানদের মধ্যেও অবশ্য মাদকাসক্ত মানুষ দেখা যায়৷ তাই আহসানিয়া মিশনের নারী মাদকাসক্ত কেন্দ্রে চলছে সাইকো-সোশ্যাল এডুকেশন প্রোগ্রাম৷ এ কেন্দ্রে এ রকম নানান প্রোগ্রামের মাধ্যমে মাদকাসক্তদের সুস্থ, স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
যাঁদের জন্য সুস্থ হয়ে উঠছেন মাদকাসক্তরা
আহসানিয়া মিশনের এই নারী মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে আছে সার্বক্ষণিক কাউন্সিলর ও চিকিৎসক৷ কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে মাদকাসক্তদের ভালো করে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন এ কাউন্সিলররা৷
ছবি: DW
দেখভাল প্রয়োজন প্রতিদিন, প্রতি ঘণ্টায়
আহসানিয়া মিশনের নারী মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এখানকার সদস্যদের কার্যক্রম৷ মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের সদস্যদের সার্বক্ষণিক দেখভালের মধ্যেই রাখতে হয়৷
ছবি: DW
যেখানে থাকেন মাদকাসক্ত নারীরা
ঢাকার মোহাম্মদপুরে নারী মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের থাকার জায়গা৷
ছবি: DAM
পুরুষদের মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র
আহসানিয়া মিশনের রাজেন্দ্রপুরের পুরুষ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র৷ এটি পারিবারিক মিটিং বা ‘ফ্যামেলি মিটিং’-এর ছবি৷
ছবি: DAM
‘ফ্যামিলি মিটিং’
নিরাময় কেন্দ্রের সেবায় সুস্থ হয়ে ফিরে যাওয়ার পর, পরবর্তী সময় পর্যবেক্ষণের অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয় এ ধরনের ফ্যামিলি মিটিংয়ের৷
ছবি: DAM
খেলার ছলে চিকিৎসা
গাজীপুরের রাজেন্দ্রপর কেন্দ্রের মাদকাসক্ত চিকিংসার অংশ হিসেবে চলছে খেলাধুলা৷
ছবি: DAM
10 ছবি1 | 10
তরুণ সাংবাদিক এসএম ফয়েজ লিখেছেন, ‘‘র্যাবের এমন সাঁড়াশি অভিযানের মধ্যেও রাজধানীর কাফরুল, কাওরান বাজার রেললাইন, তেজগাঁও রেললাইন, গুলিস্থান পার্ক, মিরপুর পল্লবী মোড় সংলগ্ন লাল মাঠ, ১১ নম্বরের বিহারি ক্যাম্প, মোহাম্মদপুর এলাকার জেনেভা ক্যাম্প, জাতীয় নাট্য মঞ্চ, গাবতলী বালু মাঠ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, হাতিরঝিলসহ বিভিন্ন মাদক স্পটগুলোতে এখনও মাদক কেনাবেচা চলছেই প্রকাশ্যে৷ গোলাপি বড়ি বা বাবা বিক্রির কৌশল কিছুটা পরিবর্তন করেছে খুচরা ব্যবসায়ীরা৷ আর গডফাদাররাতো বরাবরই নতুন জামাই আদরে...... হা হা হা....৷’’
ক্যানাডা প্রবাসী সাংবাদিক শওগাত আলি সাগর লিখেছেন, ‘‘মাদক ব্যবসায় রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধে পদক্ষেপ নিন৷ ছুটকোদের ক্রসফায়ারে দিয়ে রুই-কাতলাদের বাঁচিয়ে দেবেন না৷ এভাবে মাদক ব্যবসা বন্ধও হবে না৷’’
মোহাম্মদ শাহেদসরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে লিখেছেন, ‘‘একটি জিনিস আমার মনে হলো বলা দরকার, বাংলাদেশ কোনো মাদক উৎপাদনকারী দেশও না, আর মাদক তৈরিও করে না৷ আমরা যেটুকু দেখেছি, বিশেষ করে ‘ইয়াবা’ বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে ঢোকে৷ এক্ষেত্রে পুলিশ RAB যেভাবে দেশের অভ্যন্তরে অভিযান চালাচ্ছে, সীমান্ত এলাকায় যারা কর্মরত রয়েছে তারাও যদি একটু কঠোর পদক্ষেপ নেন, তাহলে বাংলাদেশ থেকে মাদক নির্মূল করা সম্ভব৷’’
আহমেদ রাজীব লিখেছেন, ‘‘ফিলিপিন্সের জনসংখ্যা প্রায় ১০ কোটি৷ সেখানে ২ বছরে ২০ হাজার মাদক ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হয়েছে৷ অর্থাৎ দিনে প্রায় ২৭ জনের মতো মাদক ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হচ্ছে৷ যদি ফিলিপিন্সের সাথে তুলনা করা হয়, তবে সেই তুলনায় বাংলাদেশের ১৬ কোটি জনসংখ্যা ও জনসংখ্যার ঘণত্ব বিচারে দুই বছরে ৩০ হাজার মাদক-ব্যবসায়ী এবং দিনে ৪০ জনেরও অধিক মাদক-ব্যবসায়ী নিহত হতে পারে৷ কিন্তু বর্তমানে মাদক-ব্যবসায়ীর নিহতের সংখ্যা ফিলিপিন্সের গতিতে বাড়ছে না৷ গতি বাড়িয়ে অভিযান আরো ফলপ্রসূ হোক৷ আবার, সেইসাথে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখাও ভীষণ জরুরি৷’’
সংকলন: যুবায়ের আহমেদ
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...
বিশ্বের অদ্ভুত সব মাদক নিরাময় কেন্দ্র
আমাদের দেশে মাদকাসক্তি এখন বড় ধরনের সমস্যা৷ তবে মাদকাসক্তদের জন্য এখন বেশ কিছু নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র রয়েছে৷ কিন্তু সেগুলো এতটা অদ্ভুত হয়ত নয়৷ বিশ্বের অদ্ভুত কিছু মাদক নিরাময় কেন্দ্রের তথ্য থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/R.Gul
থাইল্যান্ডের পুনর্বাসন কেন্দ্র
থাইল্যান্ডে ফ্রা পুত্থাবাতের কাছে থামক্রাবক মঠ৷ এখানে মাদকাসক্তদের ভিন্ন উপায়ে চিকিৎসা করা হয়৷ আধ্যাত্মিক ও প্রাকৃতিক উপায়ে মাদকাসক্তদের মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তি এনে দেয়ার চেষ্টা করেন মঠের সন্ন্যাসীরা৷
ছবি: N.Asfouri/AFP/Getty Images
বমনের মাধ্যমে শুদ্ধি
এখানে সাধারণত মাদকাসক্তদের ১০দিনের একটি কর্মসূচিতে রাখা হয়৷ তবে এর মধ্যে বহির্বিশ্বের সাথে মোকাবিলা করার ক্ষমতা গড়ে না উঠলে আরো দীর্ঘ সময় সেখানে থাকতে পারেন তারা৷ ভোর বেলা প্রত্যেককে একটি পানীয় খেতে বাধ্য করা হয়, যার ফলাফল বমি৷ মঠের সন্ন্যাসীদের মতে পানীয়টি খুবই বাজে, কিন্তু কার্যকর৷ এছাড়া মঠ ছাড়ার আগে প্রতিটি অংশগ্রহণকারীকে অঙ্গীকার করতে হয় যে, সে আর কখনো মাদক ছুঁয়ে দেখবে না৷
ছবি: Getty Images/Paula Bronstein
আধ্যাত্মিক চেতনা
পেরুর আয়াহুয়াস্কা নিরাময় কেন্দ্রে প্রতি বছর কয়েক হাজার মানুষ প্রাকৃতিক উপায়ে মাদকাসক্তি থেকে মুক্তির চিকিৎসা নিতে যান৷ সেখানকার আদিবাসীদের বিশ্বাস আয়াহুয়াস্কা প্রত্যেকের মধ্যে আধ্যাত্মিক চেতনার উন্মেষ ঘটিয়ে মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তি এনে দেয়৷ তবে পশ্চিমা চিকিৎসকদের মতে এ ধরনের চিকিৎসার ফলে ভয়ের স্মৃতি, বমি, প্রচুর ঘাম এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে৷ তাই বিশ্বের অনেক দেশে এখন আয়াহুয়াস্কা নিষিদ্ধ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V.Donev
ধর্মীয় পন্থা
ব্রাজিলের রিও ডি জানেরোর পুনর্বাসন কেন্দ্র এটি৷ এখানে আধ্যাত্মিক উপায়ে চিকিৎসা করা হয়৷ প্রতিদিন সকালে সব মাদকাসক্ত ব্যক্তি জড় হয়ে ঈশ্বরের বন্দনা করেন৷ প্রত্যেককেই একটি গির্জার পাশে থাকতে দেয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP/ F.Dana
শিকল বেঁধে চিকিৎসা
এই ব্যাক্তির নাম আমানউল্লাহ, যাকে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে জালালাবাদে একটি মাজারে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে৷ এখানে মাদকাসক্তদের চিকিৎসা করা হয়৷ শিকল দিয়ে ৪০ দিন বেঁধে রাখা হয় তাদের৷ খেতে দেয়া হয় একটু রুটি, অল্প পানি আর একটু মরিচের গুড়া৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/R.Gul
আধ্যাত্মিক সাহায্য
মীর আলী বাবা, যাঁর নামে এই মাজার৷ স্থানীয়দের বিশ্বাস, মাদকাসক্তদের এখানে এভাবে বেধে রাখার ফলে আলী বাবা তাদের এই আসক্তি থেকে বের হতে সাহায্য করেন৷ এই ধারণা কেবল আফগানিস্তানেই নয় বিশ্বের অনেক স্থানে রয়েছে৷ কিছু স্থানে মাদকাসক্তদের শাস্তি দেয়া হয়, এমনকি হত্যা করাও হয়৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/R.Gul
শ্রমিক শিবির
চীনে মাদকাসক্তদের পুনর্বাসন হয় জেলখানায়৷ কারাদণ্ড হওয়ার পর ঐ ব্যক্তিকে নিরাময় কেন্দ্রে পাঠানো হয়৷ কোকেইন, হেরোইন বা মারিজুয়ানা নিয়ে কেউ ধরা পড়লেও একই শাস্তি৷ তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, চীন মাদকাসক্তদের ক্লিনিকগুলোকে শ্রমিক ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করে৷ অর্থাৎ তাদের দিয়ে নানা কাজ করিয়ে নেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Shenglian
মৃত্যু অভিজ্ঞতা
কিরঘিজস্তানে যে পুনর্বাসন পদ্ধতিটি ব্যবহার করা হয় তা ভয়াবহ৷ এটাকে বলা হয় ‘কোমা চিকিৎসা’৷ মাদকাসক্তদের একটি ইনজেকশন দেয়া হয় যার প্রভাবে তারা কয়েক ঘণ্টা কোমা’র মতো অবস্থায় থাকে৷ এরপর যখন তারা ঘুম থেকে জেগে ওঠে তখন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায় বলে বিশ্বাস সেখানকার মানুষের৷ বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এর ব্যাপক সমালোচনা করেছেন৷
ছবি: picture alliance/Robert Harding World Imagery
বিলাসবহুল পন্থা
অনেক তারকারা মাদকাসক্তি থেকে মুক্তি পেতে বিলাসবহুল পথ বেছে নেন৷ সবচেয়ে বিখ্যাত পদ্ধতিটি হয় অ্যামেরিকার বেটি ফোর্ড ক্লিনিকে৷ এখানে বিখ্যাত সংগীত শিল্পী ও অভিনেতারা চিকিৎসা করান৷ এই ক্লিনিকে এমন কিছু সুযোগ সুবিধা থাকে যাতে আপনার মনে হবে আপনি একটি বিলাসবহুল হোটেলে আছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A.Rain
সবার চিকিৎসার সুযোগ নেই
বিশ্বের বেশিরভাগ মাদকাসক্তের চিকিৎসার সুবিধা নেই৷ যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জরিপ অনুযায়ী, সে দেশের মাত্র ১০.৪ শতাংশ মাদকাসক্ত ব্যক্তি চিকিৎসার সুবিধা পান৷ গরীব দেশগুলোতে এ অবস্থা আরো শোচনীয়৷