ভারতের সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর মেয়ে প্রিয়াঙ্কা এগিয়ে এসেছেন দলে বৃহত্তর ভূমিকা নিতে৷ ইতিমধ্যেই একা বৈঠক করেছেন কংগ্রেসের নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে৷
বিজ্ঞাপন
২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের মুখে কংগ্রেসের অবস্থা যখন এক ডুবন্ত জাহাজের মতো, তখন দলে বৃহত্তর ভূমিকা নিতে এগিয়ে এসেছেন সোনিয়া কন্যা প্রিয়াঙ্কা বাড্রা (গান্ধী)৷ রাজধানি দিল্লির রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আসন্ন সাধারণ নির্বাচন সোনিয়া পুত্র রাহুলের রাজনৈতিক জীবনের সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ, তখন দাদার হাত শক্ত করতেই এগিয়ে এসেছেন প্রিয়াঙ্কা৷ রাহুলের বাসভবনে একা তিনি দলের নির্বাচনি প্রচার অভিযানের রোডম্যাপ, তথা কৌশল নীতি নিয়ে পৃথক পৃথক বৈঠক করেন দলের কিছু শীর্ষ নেতা ও মন্ত্রীদের সঙ্গে৷
পাশাপাশি ভোটের আগে দলকে মজবুত করতে সাংগঠনিক রদবদলের ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি৷ যেমন, গান্ধী পরিবারের মা ও ছেলে সোনিয়া এবং রাহুল দলের প্রচার অভিযানে থাকবেন সামনে৷ আর প্রিয়াঙ্কা সামলাবেন পেছন দিক থেকে দলের সাংগঠনিক দায়দায়িত্ব, যদিও তিনি দলের পদাধিকারি নন৷ বংশপরিচয়ে অবশ্য তিনি দেশের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবারের সদস্যা৷ কংগ্রেসের সাধারণ সচিব জনার্দন দ্বিবেদি বলেন, প্রিয়াঙ্কা দলের সক্রিয় সদস্যা না হলেও মা ও দাদার নির্বাচন কেন্দ্র উত্তর প্রদেশের রায়বেরিলি এবং আমেথিতে দলের হয়ে কাজ করছেন অনেকদিন ধরে৷ সেখানকার মানুষজনের কাছে প্রিয়াঙ্কা কাছের মানুষ৷ যদিও ২০১২ সালে উত্তর প্রদেশ বিধানসভা ভোটে ঐ দুটি লোকসভা কেন্দ্রের আওতাধীন পাঁচটি বিধানসভা ক্ষেত্রের সবকটিতেই কংগ্রেসের হোয়েছিল ভরাডুবি৷ তারপর থেকে প্রিয়াঙ্কা ওখানকার ভোটারদের কংগ্রেসমুখী করতে লাগাতার চেষ্টা কোরে চলেছেন৷
দিল্লিতে সাধারণ মানুষের জয়
দুর্নীতিবিরোধী দল ‘আম আদমি পার্টি’ দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে চমক দেখিয়েছে৷ ক্ষমতাসীন কংগ্রেসকে হারিয়ে শুধু দিল্লির দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করেনি, ভারতের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিতও দিয়েছে তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিকল্পে স্বস্তি খোঁজা
আত্মপ্রকাশের কয়েক মাসের মধ্যেই দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে ৭০টি আসনের মধ্যে ২৮টিতে জিতেছে আম আদমি পার্টি৷ অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক নতুন একটি দলের এমন সাফল্যকে দেখছেন ‘সাধারণ মানুষের জয়’ হিসেবে৷ তাদের এ জয় কংগ্রেস তো বটেই, এমনকি এ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ৷আম আদমি পার্টি লোকসভা নির্বাচনের জন্য ভোটারদের সামনে বিকল্প পছন্দ হিসেবে উঠে এসেছে৷
ছবি: Getty Images/Afp/Narinder Nanu
দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ
আম আদমি পার্টির প্রতিষ্ঠাতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, তাঁর দল ৩২টি আসন পাওয়া ডানপন্থী দল বিজেপির সঙ্গে জোট গড়ে রাজ্য সরকারে অংশীদার হবে না৷ ঘুস কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল আম আদমি পার্টি৷ অরবিন্দ কেজরিওয়াল ছিলেন সেই আন্দোলনের পুরোভাগে৷ দিল্লির নির্বাচনে এ বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে ধারণা করা হয়৷
ছবি: Reuters
কংগ্রেসের ভরাডুবি
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় থেকেই ভারতীয় রাজনীতিতে বড় দল কংগ্রেস৷ এবারের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে সেই দল হেরে গেছে নবাগত আম আদমি পার্টির কাছে৷ ভোটাররা যে দিল্লিতে অন্তত কংগ্রেসের শাসনে ক্ষুব্ধ এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই৷ মুখ্যমন্ত্রী শীলা দিক্ষিতের নেতৃত্বে টানা ১৫ বছর রাজ্য সরকার পরিচালনা করেছে কংগ্রেস৷ এবার শীলা দিক্ষিত নিজেই হেরেছেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালের কাছে৷ মাত্র ৮টি আসন পেয়েছে কংগ্রেস৷
ছবি: Reuters
নতুন পথের বাঁকে
ভারতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলন শুরু করেছিলেন আন্না হাজারে৷ ৭৪ বছর বয়সি এই সমাজকর্মী সংসদে ‘জন লোকপাল বিল’ পাস করানোর দাবিতে শুরু করেছিলেন অনশন৷ অরবিন্দ কেজরিওয়ালও ছিলেন তখনকার সেই দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে৷ পরে আম আদমি পার্টি গড়েন৷ ‘আম আদমি’, অর্থাৎ সাধারণ জনগণের সমর্থন নিয়ে কেজরিওয়াল এবার এক নতুন পথের বাঁকে এনে দাঁড় করিয়েছেন ভারতের রাজনীতিকে৷
ছবি: Reuters
‘গণতন্ত্রবিরোধী’ দাবি!
কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে, দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বে যাঁরা আছেন তাঁরা দুর্নীতিকে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করলেও এর সমাধানের উপায় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অদূরদর্শীতার পরিচয় দিয়েছেন৷ কংগ্রেস সমর্থকরা বলছেন, আম আদমি পার্টি এবং এর বাইরের সমাজকর্মীরা প্রকারান্তরে অনির্বাচিতদের কর্তৃত্বের কথা বলছেন, অথচ গণতন্ত্র নির্বাচিত প্রতিনিধির ওপরই জনগণের সেবার দায়িত্ব অর্পণ করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ধর্ষণের বিরুদ্ধে রায়
গত এক বছরে বেশ কয়েকটি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে দিল্লিতে৷ ধর্ষণ রোধ করে দিল্লির নারীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার৷ এ ব্যর্থতার জন্য দিল্লির ভোটাররা রাজ্য সরকারকেই দায়ী মনে করে৷ বিশ্লেষকদের মতে, নারীর নিরাপত্তা বিধানে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার কারণে জনমনে জন্ম নেয়া হতাশারও প্রতিফলন ঘটেছে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে৷
ছবি: Reuters
নতুন চ্যালেঞ্জার
দিল্লির মতো রাজস্থান, ছত্তিশগড় আর মধ্য প্রদেশের নির্বাচনেও বিজেপির কাছে হেরেছে কংগ্রেস৷ আগামী বছর অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ড্রেস রিহার্সেলে এমন পরাজয় কংগ্রেসের জন্য নিশ্চয়ই খুব বড় ভাবনার বিষয়৷ আম আদমি পার্টি বিধানসভা নির্বাচনে শুধু দিল্লিতেই অংশ নিয়েছে৷ তবে আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনেও অংশ নেয়ার পরিকল্পনার কথা ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে দলটি৷ বিজেপির জন্যও এটা কিন্তু নতুন চ্যালেঞ্জ!
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
এরই প্রেক্ষিতে এই প্রশ্ন উঠেছে এবার সোনিয়া গান্ধী যদি নির্বাচনে না দাঁড়ান তাহলে প্রিয়াঙ্কা কী এবার মায়ের ভোট কেন্দ্রে প্রার্থী হবেন? এই নিয়ে দলের মধ্যে রয়েছে দ্বিমত৷ কেউ কেউ বলছেন, জনপ্রিয়তার নিরিখে প্রিয়াঙ্কার দাঁড়ানো উচিত, কেউ কেউ মনে করেন প্রিয়াঙ্কার উচিত নেপথ্যে থেকে দলকে পরিচালিত করা৷ প্রচার অভিযানে রাহুল গান্ধী তথা কংগ্রেসকে উপযুক্তভাবে তুলে ধরতে এক পিআর সংস্থাকে নিয়োগ করা হোয়েছে৷ আপাতত ঠিক হয়েছে তুলে ধরা হবে খাদ্য সুরক্ষা আইন, তথ্য জানার অধিকার আইন, গ্রামীণ কর্ম সংস্থান, লোকপাল আইন, জমি অধিগ্রহণ বিল ইত্যাদির পাশাপাশি রাহুলের স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি৷ আম আদমি পার্টি সোনিয়া এবং রাহুলের বিরুদ্ধে দেবে শক্তিশালি প্রার্থী৷ তবে সোনিয়া বা প্রিয়াঙ্কা ভোটে দাঁড়াবেন কিনা, তা স্থির হোতে পারে ১৭ই জানুয়ারি কংগ্রেসের মহাঅধিবেশনে৷
প্রধান বিরোধীদল বিজেপির প্রতিক্রিয়া হলো, প্রিয়াঙ্কা ভোটে দাঁড়ান বা না দাঁড়ান বিজেপির তাতে গুরুত্ব দিতে নারাজ৷ এটা বিজেপির কাছে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়৷ নাগরিক সমাজের একাংশের মন্তব্য, কংগ্রেস পার্টিতে কী পরিবারতন্ত্রই শেষকথা৷ কেন সব দিক থেকে যোগ্য কোনো নেতা উঠছেন না যিনি নরেন্দ্র মোদীর প্রকৃত প্রতিপক্ষ হতে পারেন?