সঙ্গী বা সঙ্গিনীর মধ্যে কী দেখে মানুষ বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়? কেবলই মুখশ্রী, দেহের গড়ন, শিক্ষা বা সামাজিক অবস্থান? নাকি অন্য কিছু?
বিজ্ঞাপন
গবেষকরা বলছেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অনকে বিষয়েই হয়ত মতের বা পছন্দের মিল থাকে৷ তবে গুরুত্বপূর্ণ মিলটি থাকে দু'জনের ডিএনএ গঠনে৷ অর্থাৎ, চোখ যাই খুঁজুক, বিয়ের জন্য পাত্র-পাত্রী বাছাইয়ের সময় মানুষ আসলে কাছাকাছি ডিএনএ গঠনের কাউকেই খুঁজে ফেরে৷
এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ৮২৫টি দম্পতির জিন বিন্যাস পরীক্ষা করে দেখেছেন বিজ্ঞানীরা৷ সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী এই ১৬৫০ জন অ্যামেরিকানের সবাই নন-হিস্পানিক শ্বেতাঙ্গ, যাঁদের জন্ম হয়েছে ১৯৩০ থেকে ১৯৫০ সালের মধ্যে৷
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের তহবিলে পরিচালিত এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের জিনবিন্যাস থেকে ১৭ লাখ ডিএনএ ব্লক (সিঙ্গেল নিউক্লিওটাইড পলিমরফিজম) মিলিয়ে দেখেছেন গবেষকরা৷ আবার স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যেসব বিষয়ে মিল পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলোর সঙ্গে তুলনা করার জন্য মিলিয়ে দেখা হয়েছে অন্য কোনো দম্পতির নারী বা পুরষের ডিএনএ-র সঙ্গেও৷
গবেষক দলের প্রধান কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বেঞ্জামিন ডমিঙ্গে বলেন, ‘‘আমরা জানি, মানুষ সাধারণত নিজের জাতি বা নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর ভেতরেই প্রেম বা বিয়েতে অভ্যস্ত৷ আমরা এর মূল কারণগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি৷ আমরা কেবল একটি নির্দিষ্ট গ্রুপের মানুষের (নন হিস্পানিক, শ্বেতাঙ্গ) মধ্যেই গবেষণা সীমাবদ্ধ রেখেছি৷ তারপরও আমরা দেখেছি, প্রতিটি দম্পতির মাঝে জিনগত অনেক সাজুয্য রয়েছে৷''
স্বামী পাচ্ছেন না? কিনে নিন!
বিয়ে রসিকতার ব্যাপার নয়৷ কিন্তু সুজানে হাইনৎস এমন বিষয় নিয়ে রসিকতাই করে চলেছেন৷ বিয়ে বিয়ে খেলার একটা প্রকল্পের কাজ শুরু করে দেখছেন এই পৃথিবীতে তাঁর অনেক সমব্যথী৷ ছবিঘরে থাকছে এই নিয়েই মজার এক গল্প৷
ছবি: Suzanne Heintz
যেন এক আদর্শ পরিবার
এক সময় সবাইকেই একটা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় – ‘বিয়ে কবে করছো?’ এ প্রশ্ন যে কত অস্বস্তিকর, যাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয় তাঁর মনে প্রশ্নটি যে কত চাপ তৈরি করে, তা কেউ ভাবেনই না৷ এ চাপ থেকে মুক্তি পেতে ফটোগ্রাফার সুজানে হাইনৎস কাপড়ের দোকানের পোশাক পরানো কিছু মূর্তি, অর্থাৎ ম্যানেকুইন্স দিয়ে সাজিয়েছেন নিজের পরিবার৷ স্বামী চঙ্কি, মেয়ে মেরি মার্গারেটের সঙ্গে তাঁর ছবিটি দেখুন৷ যেন সুখী পরিবার, তাই না!
ছবি: Suzanne Heintz
ছবি দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো
এভাবে নকল পরিবার সাজিয়ে, ছবি তুলে, সেই ছবি দিয়ে বানানো কার্ডের মাধ্যমে প্রিয়জনদের বিশেষ বিশেষ দিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে রীতিমতো সাড়া জাগিয়েছেন সুজানে হাইনৎস৷ এভাবে বিয়ে নিয়ে সবার সঙ্গে মজা করার প্রকল্পটির নাম দিয়েছেন ‘প্লেয়িং হাউস প্রজেক্ট : লাইফ ওয়ান্স রিমুভড’৷
ছবি: Suzanne Heintz
সপরিবারে প্যারিস সফর
চঙ্কি আর মার্গারেটকে কিনে এনে নিজের পরিবার গড়েছিলেন সুজানে৷ এক সময় মনে হলো, পরিবার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে বেড়াতে যাওয়া দরকার৷ প্রথম সফরটা হলো প্যারিসে৷ সেখানে আইফেল টাওয়ার থেকে শুরু করে যত দর্শনীয় স্থান আছে সব জায়গায় গিয়েছেন সুজানে৷ চঙ্কি আর মার্গারেটের সঙ্গে এমন সব ছবি তুলেছেন, যেন তাঁরা সত্যি সত্যিই সুখী পরিবার৷ এই ছবিটি তোলা হয়েছিল নোত্র দাম-এর সামনে৷
ছবি: Suzanne Heintz
বংশীবাদক
প্যারিস সফরটা ছিল দারুণ৷ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে সুজানে বললেন, ‘‘আমি ছিলাম প্যারিসের বংশীবাদক৷’’ তাঁর পেছনে শত শত কৌতূহলী মানুষের ভিড় জমেছিল – এটা বোঝাতেই এমন বলা৷ ‘প্লেয়িং হাউস প্রজেক্ট: লাইফ ওয়ান্স রিমুভড’ প্রকল্পটি ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে৷ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ বিয়ে নিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা সুজানেকে জানাচ্ছেন তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে৷
ছবি: Suzanne Heintz
পুরুষদেরও একই হাল
সুজানে হাইনৎস বললেন, ‘‘‘প্লেয়িং হাউস’ শুধু মেয়েদের জন্য নয়৷’’ বিয়ে হচ্ছেনা কেন, কবে হবে – এ সব প্রশ্ন একটা সময় পুরুষদেরও শুনতে হয়৷ তাই এখন পুরুষরাও সুজানেকে জানাচ্ছেন তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা৷
ছবি: Suzanne Heintz
এবার চলচ্চিত্র নির্মাণ
ঘুরে ঘুরে ছবি তুলে আনন্দ দেয়া-নেয়ার মধ্যেই আর বিষয়টিকে সীমাবদ্ধ রাখছেন না সুজানে হাইনৎস৷ ভাবছেন, একটা চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন৷ ছবিতে থাকবে তিনটি পর্ব৷ প্রথম পর্বে প্যারিস সফরের মজার সব অভিজ্ঞতা, দ্বিতীয় পর্বে উঠে আসবে বিয়ে সম্পর্কে তাঁর পরিবর্তিত ভাবনা আর শেষে থাকবে বিয়ে নিয়ে স্কুলপড়ুয়া শিশুদের মনের কথা৷ এমন ছবি কে না দেখতে চাইবে, বলুন?
ছবি: Suzanne Heintz
6 ছবি1 | 6
ডমিঙ্গে বলেন, জিনগতভাবে মিল আছে এমন জীবনসঙ্গী বেছে নেয়ার আসল প্রক্রিয়াটি হয়ত অনেক জটিল, হয়ত আরো অনেক বিষয় এর সঙ্গে সম্পর্কিত৷ তবে পাত্র-পাত্রী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মানুষ সাধারণত একই ধরনের পারিবারিক ও সামাজিক অবস্থান, মানসিক গঠন, শিক্ষা, জাতি-ধর্ম-বর্ণ, বয়স ও শারীরিক গড়ন খুটিয়ে দেখে৷ হয়ত এর মধ্যে দিয়েই তাঁরা নিজেদের অজান্তে নিজেদের মতো জিনবিন্যাসের কাউকে বাছাই করতে চায়৷
‘‘যেমন ধরুন, সম্ভাব্য সঙ্গী বা সঙ্গিনীর উচ্চতা মানুষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখে৷ লম্বা মানুষ লম্বা আরেকজনকেই বিয়ে করতে চায়৷ ফলে ওই দম্পতির ক্ষেত্রে একটি বিষয়ে জিনগত সাজুয্য তৈরি হয়৷ কিন্তু এই বাছাই প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি কীসের প্রভাবে নেয়া হয় – তা বলা কঠিন৷''
অন্য জাতি বা নৃগোষ্ঠী, মিশ্র জাতির দম্পতি বা সমকামীদের মধ্যে একই গবেষণা চালানো হলে আরো অনেক চমকপ্রদ তথ্য হয়ত বেরিয়ে আসবে বলই গবেষকদের বিশ্বাস৷