1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সচিবালয়ে আগুন নিয়ে যা জানা গেলো

২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয় গুরুত্বপূর্ণ কেপিআইভুক্ত (কী পয়েন্ট ইনস্টলেশন) স্থাপনায় বুধবার মধ্যরাতে আগুনে ভস্মীভূত গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ মন্ত্রণালয়ের নথি৷

বাংলাদেশ সচিবালয়
বুধবার গভীর রাতে বাংলাদেশ সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগেছবি: DW

আগুন লাগার ধরণ বিবেচনায় নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি ‘পরিকল্পিত নাশকতা’ হতে পারে৷ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে পরিকল্পিত বলছেন রাজনৈতিক দল ও ছাত্র-আন্দোলনের অনেক নেতাও৷ আবার বৈদ্যুতিক গোলযোগ (শটসার্কিট) থেকেও আগুন লাগতে পারে, এমনটাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷ ঘটনার তদন্তে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে সরকারের কমিটি৷

আগুন লাগার পর ঘটনা উদঘাটন ও সবিচালয়ের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে সুপারিশ করতে আট সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে আহ্বায়ক করে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে৷

কমিটির সদস্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যায়ের কেমিক্যাল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. ইয়াছির আরাফাত খান ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘আমরা সব দিক বিবেচনায় নিয়েই তদন্ত কাজ করছি৷ প্রথম বৈঠকে সবকিছু নিয়েই আলোচনা হয়েছে৷ আমাদের আলোচনায় কোন কিছু বাদ যায়নি৷’’

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে৷ শুক্রবার সকালে সচিবালয়ের অগ্নিদগ্ধ ভবন পরিদর্শন করেছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল৷ তিনি এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব৷

পরিদর্শন শেষে তিনি জানান, ‘‘নাশকতা নাকি দুর্ঘটনা- এই বিষয়ে মন্তব্য করার মতো অবস্থা হয়নি৷ আমরা বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করছি৷ তদন্ত সাপেক্ষে বাকি কথা বলা যাবে৷’’

গত বুধবার রাত ১টা ৫২ মিনিটে সচিবালয়ে আগুন লাগে৷ প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য চেষ্টা করে৷ পরিস্থিতি দ্রুত নিয়স্ত্রনে আনতে পরে মোট ২০ ইউনিট নির্বাপনকাজে অয়শ নেয়৷ এ সময় সচিবালয়ের আগুন নেভাতে গিয়ে শোয়ানুর জামান নয়ন নামের এক ফায়ার ফাইটার ট্রাকচাপায় নিহত হন৷

এই আগুন দেখে মনে হচ্ছে না, স্বাভাবিক শর্টসার্কিট থেকে এটা হয়েছে: আবু নাঈম মো. শাহিদউল্লাহ

This browser does not support the audio element.

বৃহস্পতিবার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, সচিবালয়ে অগ্নিকান্ডে মোট পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের নথি পুড়ে গেছে৷ মন্ত্রণালয়গুলো হলো- যুব ও ক্রীড়া, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, শ্রম ও কর্মসংস্থান, স্থানীয় সরকার এবং সড়ক ও পরিবহন৷ পুড়ে যাওয়া পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের নথিপত্রের মধ্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নথি অনলাইনে থাকার কারণে সেটি রিকভার (সংরক্ষণ) করা যাবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি৷ তবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র সংরক্ষণ পুরোটাই অ্যানালগ পদ্ধতিতে হয়, এ মন্ত্রণালয়ের যে শাখাগুলোর নথি পুড়ে গেছে, সেগুলোর কতটুকু রিকভার করা যাবে তা নিরূপণের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে কমিটি গঠন করা হয়েছে৷

বিশ্লেষকেরা যা বলছেন

আগুনের ঘটনা নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের সাবেক কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন৷ ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু নাঈম মো. শাহিদউল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দুর্ঘটনাজনিত শর্টসার্কিট হতে পারে, পরিকল্পিতভাবে শর্টসার্কিট দিয়ে আগুন সৃষ্টি করা যেতে পারে৷ এই আগুন দেখে মনে হচ্ছে না, স্বাভাবিক শর্টসার্কিট থেকে এটা হয়েছে৷ পরিকল্পিত শর্টসার্কিটের জন্য ওই ছয়তলায় থাকতে হবে না৷ আগে থেকে পরিকল্পনা করে দু'টি বৈদ্যুতিক তার একসঙ্গে লাগিয়ে বারুদ, গান পাউডার কিংবা কেমিক্যাল রেখে নিচে বৈদ্যুতিক প্লাগ অন করলে বৈদ্যুতিক স্পার্কের কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে৷

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের আরেক সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সচিবালয় তো রাষ্ট্রের ‘কী' পয়েন্ট, কেপিআইভুক্ত এলাকা৷ যদিও এখানে আগেও একাধিকবার আগুন লেগেছে৷ পিডাব্লিউবি কাজও করেছে৷ আবার কেন তাহলে আগুন লাগলো? আমরা অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এভাবে কখনো দুর্ঘটনার আগুন লাগে না৷ দুর্বৃত্তরা যখন আগুন লাগায় তখন একসঙ্গে একাধিক স্থানে আগুন লাগে৷ এমন দুর্বৃত্তায়নের আগুন আমি আগেও দেখেছি৷ এখানেও (সচিবালয়) তাই হয়েছে বলে মনে হচ্ছে৷ এটা শর্টসার্কিট না, আগুন লাগানো হয়েছে৷''

দাহ্যবস্তু না থাকার পরও আগুন কীভাবে ওপরে গেলো এমন প্রশ্ন তুলে আবু নাঈম মো. শাহিদউল্লাহ বলেন, ‘‘এত দ্রুততার সঙ্গে ছয়তলার দুই প্রান্তে আগুন পৌঁছে যাওয়া এবং সেখান থেকে চারটি ফ্লোরে প্রসারিত হওয়া রহস্যজনক৷ কারণ সেখানে কোনো উচ্চ দাহ্যবস্তু, কেমিক্যাল ও ইলেট্রিক্যাল সংযোগ তেমন ছিল না৷ মাঝামাঝি লিফট থেকেও আগুন লাগার আশঙ্কা নেই৷ কারণ সেখানে করিডোর আছে, দুই প্রান্তে অফিসগুলোতে পৌঁছাতে গেলে কিছু জায়গা আছে সেখানে কোনো দাহ্যবস্তু নেই৷ ভবনের দুই প্রান্ত থেকে আগুন কীভাবে ওপরে গেল, এসব দেখে মনে হচ্ছে এটা স্বাভাবিক কোনো আগুন নয়৷''

গান পাউডার ছিল কিনা খতিয়ে দেখছে ‘বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ'

সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগার ঘটনায় গান পাউডার ব্যবহার হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতেই গঠিত তদন্ত কমিটিতে বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান৷

বৃহস্পতিবার সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, মধ্যরাতে রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার উৎস কী? অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কি স্বাভাবিক দুর্ঘটনাজনিত নাকি নাশকতাজনিত, এ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে৷ অগ্নিকাণ্ড ঘটাতে গান পাউডার ব্যবহার করা হয়েছে কি না, তা নিয়েও কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন৷

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনের জন্য বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে৷ এই বিষয়টি দেখতে একজন বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞকে কমিটিতে রাখা হয়েছে৷

গান পাওডারের সন্দেহের বিষয়ে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের সাবেক ইন্সপেক্টর শামসুল আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই আগুনে কোনো বিস্ফোরক ছিল কি না সেটা নিশ্চিত হতে উদ্ধার করা ছাইয়ের ফরেনসিক পরীক্ষা করালেই নিশ্চিত হওয়া যাবে৷ ফরেনসিক পরীক্ষায় বোঝা যায়, ওখানে কি ছিল৷ আমি যতদুর জানি, সিআইডি এই ফরেনসিক পরীক্ষার কাজ করছে৷''

জানা গেছে, সিআইডির একটির দল সচিবালয় থেকে ছাই সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছে৷ এ বিষয়ে সিআইডির পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আবুল কালাম আজাদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পরীক্ষার ফলাফল এখনও পাওয়া যায়নি৷ খুবই গুরুত্ব সহকারে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের একটি দল এগুলো পরীক্ষা করছে৷''

কুকুরের মরদেহে সন্দেহ সমন্বয়কের 

‘‘সচিবালয়ের আগুনে পোড়া কুকুরের মরদেহ বলে দেয় এটি একটি ষড়যন্ত্র'' বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম৷

বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে সারজিস আলম বলেন, ‘‘আগুন শুধু আমাদের দুই সহযোদ্ধা আসিফ মাহমুদ ও নাহিদ ইসলামের রুমে লাগানো হয়েছে৷ সেখানে কুকুরের মরদেহ প্রমাণ করে এটি ষড়যন্ত্র৷ সচিবালয়ে আমলারা খুনি হাসিনাকে বসিয়ে রেখেছিল৷ গণঅভ্যুত্থানের আগে কিছু আমলানামক দাস ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় শ্লোগান দিয়েছে খুনি হাসিনার পক্ষে৷ তারা এখনো সচিবালয়ে চাকরি করে৷ তারা চাকরি করলে সচিবালয় কীভাবে নিরাপদ থাকবে? হয় সাদা নইতো কালা৷ তাদের চেয়ারে বসিয়ে রাখলে তাদের দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পাওয়া সম্ভব না৷ সে কারণে এখন অপকর্ম হচ্ছে, দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন হচ্ছে৷’’

আগুনের কারণ অনুসন্ধানে একাধিক কমিটি

আগুনের কারণ উদঘাটনে অনুসন্ধান শুরু করেছে সরকার গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি৷ পাশপাশি গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারও অনুসন্ধান করছেন৷

এছাড়াও কী কারণে আগুন লেগেছে, তা যাচাইয়ে সিআইডি, র‌্যাব, পুলিশের বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহের চেষ্টা করছে৷ তাদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ দলও ছিল বলে জানা গেছে৷

শুক্রবার সকালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আট সদস্যের তদন্ত কমিটির সদস্যরা প্রবেশ করেন৷ সেখানে তারা মিটিং করেন৷ কমিটির সদস্য সচিব ফায়ার সার্ভিসের ডিজি সচিবালয় থেকে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদের বলেন, তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে৷ বলার মতো এখনও কিছু হয়নি৷

অন্যদিকে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য দু'টি কমিটি গঠন করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়৷

এছাড়া আগুনের ঘটনায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে৷

মাঝেমধ্যেই আগুন লাগে সচিবালয়ে

ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, সচিবালয়ের পুরোনো কোনো ভবনই অগ্নি ঝুঁকিমুক্ত নয়৷ এর আগে মাঝেমধ্যেই আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে৷ তবে সেগুলোতে বড় কোনো ক্ষতি হয়নি৷

গত ১ আগস্ট সচিবালয় ক্লিনিক ভবনে (৯ নম্বর ভবন) নিচ তলায় সিঁডিকোঠায় বিদ্যুতের মেইন ডিস্ট্রিবিউশন বোর্ডে (এমডিবি) আগুন লাগে৷ তবে সচিবালয়ের ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাৎক্ষণিক আগুন নিভিয়ে ফেলতে সক্ষম হন৷ ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি সচিবালয়ে ৬ নম্বর ভবনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আগুনের ঘটনা ঘটে৷ ৬ নম্বর ভবনের সপ্তম তলায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৬০৬ নম্বর কক্ষে ফলস সিলিংয়ের সঙ্গে থাকা টিউব লাইটের স্টার্টারে আগুন লাগে৷ এতেও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি৷

এর আগে ২০১৯ সালের ৭ জুলাই সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের সপ্তম ও অষ্টম তলার মাঝামাঝি স্থানে বৈদ্যুতিক বোর্ডরুমে আগুন লাগে৷ গ্যাস সরবরাহ লাইন থেকে ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর সচিবালয়ের ক্লিনিকের পেছনে গণমাধ্যমকেন্দ্রের সামনে উত্তর দিকের দেওয়ালে এ আগুন লাগে৷ ২০১৮ সালের ১৩  সেপ্টেম্বর ৪ নম্বর ভবনের সপ্তম তলায় ৬২৯ নম্বর কক্ষে আগুন লাগে৷

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সচিবালয়ের পুরোনো ৯টি ভবনের মধ্যে ৪, ৬ ও ৭- এ তিনটি ভবন সবচেয়ে বড়৷ ৭ ও ৪ নম্বর ভবন দুটি নির্মাণ করা হয়েছিল ষাটের দশকে৷ ৬ নম্বর ভবনটির নির্মাণকাল আশির দশকের শেষ দিকে৷ এই তিনটি ভবনের সবকটিতেই বাইরের দিকে কোনো বারান্দা নেই৷ ৪, ৬ ও ৭ নম্বর ভবনের দুই পাশে রুম, মাঝে চলাচলের রাস্তা৷ কয়েক বছর আগে ১ নম্বর ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সবচেয়ে বড় ২১ তলাবিশিষ্ট ভবন ৬-এ প্রধানমন্ত্রীর অফিস ও মন্ত্রিসভা কক্ষ স্থানান্তর করা হয়৷ তবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অন্যান্য দপ্তর ১ নম্বর ভবনেই আছে৷

সাজসজ্জায় বেড়েছে অগ্নিঝুঁকি

সচিবালয়ে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকবার৷ সেসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অগ্নিঝুঁকি কমাতে নানান সুপারিশ করেছিল ফায়ার সার্ভিস৷ কিন্তু সেসব সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি৷ বরং সচিবালয়ের বিভিন্ন দপ্তরের সংস্কারকাজ এমনভাবে করা হয়েছে, যা আগুন লাগার ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বরে মনে করেন বিশ্লেষকেরা৷

অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এভাবে কখনো দুর্ঘটনার আগুন লাগে না: আলী আহমেদ খান

This browser does not support the audio element.

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে অনেক মন্ত্রণালয়ে সংস্কারকাজ হয়েছে৷ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সাজসজ্জার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে কাঠ৷ কাঠ দাহ্য পদার্থ হওয়ায় তা আগুন লাগার ঝুঁকি অনেকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ ৭ নম্বর ভবনের আগুন ছড়িয়ে পড়ার একটি বড় কারণ হলো মন্ত্রণালয়গুলো কাঠ দিয়ে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করেছে৷

এদিকে সচিবালয়ের ভেতরে ফায়ার সার্ভিসের বড় গাড়িগুলো প্রবেশ করানো যায় না৷ গেইটগুলো এমনভাবে নির্মান করা হয়েছে যে, বড় গাড়ি সেখানে প্রবেশ করতে পারে না৷

এছাড়া হোসরিল পাইপ, ফায়ার অ্যালার্ম, ফায়ার ড্রিল এবং সব ফ্লোরে হাইড্র্যান্ট সিস্টেম স্থাপনের পরামর্শ দিয়ে গণপূর্ত বিভাগকে কয়েক দফা চিঠি দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস৷ সচিবালয়ের ভবনগুলো দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়৷ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ বেশিরভাগ কর্মকর্তাই নতুন৷ ফলে আগে কী হয়েছে তারা জানেন না৷ তারা আসার পর তাদের সামনে এ বিষয়গুলো আসেনি৷

তার আগে ২০২০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি অগ্নিকাণ্ডের উদ্ধার সচেতনতার জন্য সচিবালয়ের ৪ নম্বর ভবনে ‘অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার মহড়া' চালায় ফায়ার সার্ভিস৷

সেসময় ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের তৎকালীন সহকারী পরিচালক ছালেহ উদ্দিন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘‘সচিবালয়ে বড় কোনো অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটলে তা মোকাবিলা করা কঠিন হবে৷ কারণ, সচিবালয়ের প্রবেশ গেটগুলো খুবই ছোট৷ এসব গেট দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভেতরে নেওয়া যায় না৷ সচিবালয়ের ভেতরে যেখানে চারশ গাড়ি পার্কিং রাখার জায়গা রয়েছে, সেখানে এক হাজার ২০০ গাড়ি পার্ক করা হয়৷ তাই যদি পিক আওয়ারে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে ফায়ার সার্ভিসের কোনো গাড়ি সচিবালয়ে প্রবেশ করতে পারবে না৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ