‘সচেতনতা দিয়ে এইডস-কে নির্মূল করা সম্ভব’
১ ডিসেম্বর ২০১৪![Swasiland Aids-Patient bekommt antiretrovirale Medikamente](https://static.dw.com/image/15912162_800.webp)
মেলবোর্নের বিশ্ব এইডস সম্মেলন থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে এইডস ব্যাধিকে নির্মূল করার যে পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছে, বিশ্বের বহু দেশের বাস্তব রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে তা অলীক বলে পরিগণিত হতে পারে৷
নতুন সহস্রাব্দ শুরু হওয়া যাবৎ এইডস গবেষণায় প্রভূত প্রগতি ঘটেছে৷ আজ আর এইচআইভি ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়াটাকে মৃত্যুদণ্ডের সামিল বলে গণ্য করা হয় না৷ অ্যান্টি-রিট্রোভাইরাল ড্রাগস দিয়ে এইডস ভাইরাসকে বহুদিন আটকে রাখা যায় এবং রোগী মোটামুটি স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে – যদি তার সে সব বহুমূল্য ওষুধ কেনার সামর্থ্য থাকে৷
এছাড়া এইডস চিকিৎসাও নানা নতুন পথে এগিয়েছে: ক্যানসার গবেষণার অনুকরণে এইডস যেখানে লুকিয়ে থাকে, ঠিক সেখানেই তাকে আক্রমণ করা হচ্ছে৷ বিজ্ঞানীরা এইচআইভি ভাইরাস-কে কোষ থেকে বেরিয়ে আসতে ‘‘প্রলোভিত'' করতে পেরেছেন৷ কিন্তু সব সাফল্য সত্ত্বেও, এইচআইভি রোগকে জয় কর শুধুমাত্র তখনই সম্ভব হবে, যখন বিশ্বের সর্বত্র মানুষজন দায়িত্বশীলের মতো আচরণ করতে শিখবেন৷
দুঃখের বিষয়, আজও সব মানুষ সে রকম আচরণ করে না – বিশেষ করে তাদের যৌনজীবনে তো নয়ই৷ আজকের দুনিয়ায় প্রতিটি মানুষের জানা থাকার কথা যে, যৌনরোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল কন্ডোম ব্যবহার করা৷ এবার কর্তৃপক্ষ, সরকারবর্গ এবং ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলিকে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, যেখানে কন্ডোম ব্যবহার সংক্রান্ত সচেতনতা নিন্দনীয় নয় – অর্থাৎ রাজনৈতিক, আইনগত এবং সামাজিক বিচারে একটি মুক্ত পরিবেশ৷
এটা স্পষ্ট যে, বিশেষ করে আফ্রিকার দেশগুলিতে এইডস রোগ ছড়ানোর মূল কারণগুলি হচ্ছে রোগটিকে একটি ‘গুপ্তরোগ' হিসেবে দেখা; যৌনশিক্ষার অভাব; সমকামীদের মতো যে সব গোষ্ঠীর এইডস রোগে আক্রান্ত হবার বিশেষ ঝুঁকি আছে, তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক ব্যবহার; এবং যারা এইচআইভি-তে আক্রান্ত, তাদের একঘরে করা৷
এইডস রোগের দায়িত্বপূর্ণ চিকিৎসা ও প্রতিরোধ একমাত্র তখনই সম্ভব, যদি এই রোগ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য – কী ভাবে এই রোগের সংক্রমণ ঘটে, বিপদ কোথা থেকে আসতে পারে এবং এইডস টেস্ট সহজেই করানো যায় কি না, ইত্যাদি তথ্য সর্বসাধারণের জ্ঞাত হবে৷ যে সব সরকার সমকামীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছেন; অথবা জড়িবুটি দিয়ে এইডস সারানোর নানা আজগুবি ও কাল্পনিক প্রচেষ্টা – এইডস প্রতিরোধের পথে এ ধরনের বাতুলতা ঘটলে চলবে না৷ আরো বড় কথা: উন্নয়নশীল দেশগুলির মানুষদেরও এইডস সংক্রান্ত ওষুধপত্র সহজে ও সস্তা দামে কিনতে পারার ব্যবস্থা থাকা চাই: প্রয়োজনে শিল্পোন্নত দেশগুলিকে তার অর্থসংস্থান করতে হবে৷
যে সব দেশ এইডস-এর ঝুঁকিতে থাকা গোষ্ঠী ও ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে, এমনকি নিপীড়ন চালাচ্ছে – তাদের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণও অনুরূপভাবে জরুরি৷ যে সব সরকার দেশের জনগণের মধ্যে এইডস সংক্রান্ত সচেতনতা সৃষ্টির জন্য পর্যাপ্ত উদ্যোগ নিচ্ছেন না, তদের ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য৷
মানবাধিকার মেনে চলা এবং জনগণের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ব্যতিরেকে চিকিৎসাক্ষেত্রে সর্বাধুনিক গবেষণাও তার একক প্রচেষ্টায় দুনিয়াকে এইডস-এর বিভীষিকা থেকে মুক্ত করতে পারবে না৷