1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
অপরাধভারত

সঞ্জয় রায় কি একমাত্র দোষী, উঠলো প্রশ্ন

১৮ জানুয়ারি ২০২৫

আরজি করে চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের রায় ঘোষণার পরও থেকে গেলো একটা পুরোনো প্রশ্ন। সঞ্জয় রায় কি এই ঘটনায় একমাত্র দোষী?

শিয়ালদহ আদালতের সামনে জুনিয়র ড়াক্তারদের বিক্ষোভ।
বাকি অপরাধীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে জুনিয়র ডাক্তাররা আবার বিক্ষোভ দেখালেন। ছবি: Satyajit Shaw/DW

এই প্রশ্ন তুলে আন্দোলনের পথে থাকার প্রত্যয় জানিয়েছে চিকিৎসক থেকে নাগরিক সমাজ।

আরজি কর মেডিকেল কলেজে কর্তব্যরত চিকিৎসকের হত্যার পর উত্তাল হয়েছিল কলকাতা থেকে জেলা। এক অভূতপূর্ব বিক্ষোভের সাক্ষী থেকেছিল পশ্চিমবঙ্গ। প্রতিবাদের স্বর এই রাজ্য ও দেশের সীমা ছাড়িয়ে পৌঁছে গিয়েছিল বিদেশে। ১৬২ দিন পরে রায় ঘোষণা হলেও তাতে সন্তুষ্ট নন সকলে।

সিবিআই তদন্ত ঘিরে নানা প্রশ্ন উঠেছে। সেই তদন্তের ভিত্তিতে রায় দিয়েছে আদালত। এই রায় নিয়ে খুশি হতে পারেননি নির্যাতিতার পরিবার থেকে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষজন। মোটের উপর এমনই হতাশা উঠে আসছে প্রতিক্রিয়ায়।

সঞ্জয় রায় দোষী সাব্যস্ত হলেও সে একমাত্র দুষ্কৃতী নয়, এই জনমত প্রবল হয়ে উঠেছে।  কলকাতার রাজপথে আবার দেখা গিয়েছে প্রতিবাদ মিছিল।

কী বললেন নিহত চিকিৎসকের বাবা?

বিচারককে ধন্যবাদ জানিয়েছেন নিহত চিকিৎসকের বাবা। সংবাদমাধ্যমে নিহত চিকিৎসকের বাবা বলেন, "এই রায় নিয়ে আমাদের খুব বেশি প্রত্যাশা ছিল না। সঞ্জয় একা এই কাজ করেছে, এটা আমরা মনে করি না। তাই ওর পাশাপাশি অন্য যারা এ কাজে যুক্ত ছিল, তাদের সাজা হলে বিচার সম্পূর্ণ হবে। আমরা হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছি যাতে সিবিআই সব অপরাধীকে খুঁজে বার করে।"

জুনিয়র জাক্তাররা বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের কথা বলছেন। ছবি: Satyajit Shaw/DW

আন্দোলন চলবে

আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকরা রায় বেরোনোর আগে কার্যত হতাশা প্রকাশ করেছিলেন। শিয়ালদহ আদালত সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করার পরেও তারা সেই সুরেই কথা বলেছেন। জুনিয়র ডাক্তার সৌম্যদীপ রায় বলেন, "যে অপরাধ একজনের নয়, তাকে একজনের চিহ্নিত করে চার্জশিট দিয়েছে সিবিআই। তার ভিত্তিতে আদালত রায় দিয়েছে। সঞ্জয় দোষী ঠিকই, কিন্তু সে একা ছিল না। যতক্ষণ না বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের ছবিটা সামনে আসছে, ততক্ষণ এই তদন্ত সম্পূর্ণ হবে না। আজকের রায় ঘোষণার সঙ্গে আদৌ এই মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে না। তাই সুবিচারের দাবিতে আন্দোলন আগামীতেও চলবে এবং জোরদার হবে।"

আর জি কর আন্দোলনের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রের অনেক বিশিষ্ট মানুষ জড়িয়ে পড়েছিলেন। এই আন্দোলনে গোড়া থেকে ছিলেন চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম মুখ, অভিনেত্রী চৈতী ঘোষাল। তিনি বলেন, "এই রায়ের পর আমাদের আন্দোলনের প্রয়োজন আরো বেড়ে গেল। বোঝা গেল একজন দোষী, কিন্তু আরও অপরাধী বাইরে রয়েছে। তাদের চিহ্নিত করতে হবে সিবিআইকে। তদন্তকারীরা যাতে সেটা নিরপেক্ষভাবে করেন, সে জন্যই আমাদের আন্দোলনের পথে থাকতে হবে।"

আরজি করের চিকিৎসক হত্যার নৃশংসতায় শিউরে উঠেছিল সমাজ। নিন্দায় মুখর হয়েছিলেন সব বয়সের মানুষ। নারী আন্দোলনের কর্মী অধ্যাপক শাশ্বতী ঘোষ ডিডাব্লিউকে বলেন, "আমাদের মনে হয়েছিল সঞ্জয় রায় একা ছিল না, আরো অনেকে জড়িত ছিল। তাদের কী খবর? পুরো ব্যাপারটায় আমাদের যে হতাশার জায়গাগুলো, তদন্তের যে ফাঁকগুলো রয়েছে বলে মনে হচ্ছে, যে প্রশ্নগুলো আছে, তার জবাব এখনো মিলল না।"

সাধারণ মানুষেরও প্রশ্ন, সঞ্জয় কি একা ওই অপরাধ করেছে?ছবি: Satyajit Shaw/DW

প্রশ্ন অনেক

আন্দোলনে জড়িয়ে থাকা জুনিয়র চিকিৎসক অর্ণব তালুকদার ডিডাব্লিউকে বলেন, "সঞ্জয় দোষী সাব্যস্ত হলেও কেন তথ্যপ্রমাণ লোপাট করা হলো। কেন গ্রেপ্তার করা হলেও সন্দীপ ঘোষ ও অভিজিৎ মন্ডলের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হলো না। ফরেনসিক রিপোর্টে একাধিক ব্যক্তির ডিএনএ পাওয়া গিয়েছে, ঘটনাস্থল ওটা নয় বলে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। তাই সিবিআই চার্জশিটের উপর ভিত্তি করে যে রায় হয়েছে, তাতে আমরা খুশি নই। তাই আন্দোলন চলবে।"

সঞ্জয়কে প্রথমে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশ। তাকেই অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছে সিবিআই। এর মধ্যে রয়ে গিয়েছে অনেক ধোঁয়াশা। 

সিবিআই তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন গোড়া থেকেই ছিল। ফরেনসিক রিপোর্ট সামনে আসার পর এই প্রশ্ন আরো জোরালো হয়েছে। যে সেমিনার রুমে দেহ উদ্ধার হয়েছিল, সেখানে ধস্তাধস্তির চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তা হলে কি বাইরে কোথাও খুন করে এখানে দেহ ফেলে রাখা হয়েছিল? 

রাজ্যের সাবেক পুলিশ কর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, "আমারও মনে হয় একাধিক ব্যক্তির এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সম্ভাবনা বেশি। ওই চিকিৎসক একটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজে কর্তব্যরত ছিলেন। সেখানে বাইরের একজন এসে ধর্ষণ, খুন করল, এটা অস্বাভাবিক। হাসপাতালের কেউ এর সঙ্গে জড়িত না থাকলে এমন ঘটনার সম্ভাবনা কম। ওই মহিলা চিকিৎসক কোনো কারণে হাসপাতালের দুর্নীতি চক্রের বিষ নজরে পড়ে যান, তাই তাকে খুন করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।"

সিবিআই সঞ্জয় রায়কে মূল অভিযুক্ত করে চার্জশিট পেশ করে। কিন্তু ধর্ষণ ও খুনের মামলায় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করে আরজিকরের সাবেক অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার ওসি অভিজিৎ মন্ডলকে অভিযুক্ত হিসেবে দেখাতে পারেননি তদন্তকারীরা। এ জন্য তারা জামিন পেয়ে যান। 

কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে আঙুল উঠেছে। ৯ আগস্ট দেহ উদ্ধারের আগের রাতে যারা হাসপাতালে কর্তব্যরত ছিলেন, তাদের হেফাজতে নিয়ে কেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি, এই প্রশ্ন উঠেছে। কলকাতা পুলিশ সঞ্জয় রায়কে গ্রেপ্তার করেছিল। তার নামেই চার্জশিট দিয়েছে সিবিআই। বাকিদের ক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ হল কেন?

নার্সদের সংগঠন নার্সেস ইউনিটি-র সম্পাদক ভাস্বতী মুখোপাধ্যায় ডিডাব্লিউকে বলেন, "সিএফএসএলের রিপোর্টের পর আমরা জেনেছি, সেমিনার রুম ঘটনার অকুস্থল নয়। ওই ঘরটার মধ্যে এত লোক সেদিন ঢুকে পড়েছিল, যেখানে বাবা-মা বাইরে এতক্ষণ অপেক্ষা করছিলেন। কলকাতা পুলিশ সঞ্জয় রায়কে গ্রেপ্তার করল, বাকিদের কী হবে? এগুলো কিন্তু ধোঁয়াশার মধ্যেই রয়ে গেল। আমরা আতঙ্কে আছি, অপরাধীরা চারিদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে।"

সিবিআই দাবি করছে, তাদের তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। একই সঙ্গে তদন্তকারীদের বক্তব্য, এই মামলায় তথ্যপ্রমাণ লোপাট করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র যদি থাকে, তার পর্দাফাঁস কোনো দিন কি হওয়া সম্ভব? এই প্রশ্ন ও সন্দেহ ঘিরে রেখেছে আন্দোলনকারীদের।

নানা ঘটনাক্রম এই সন্দেহ জোরালো করেছে। অর্ধনগ্ন দেহ দেখেও কেন আত্মহত্যার তত্ত্ব সামনে আনা হল, কেন দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত না করে দ্রুত দেহ সৎকার করা হল? খুনের মামলা রুজু হওয়াতে বিলম্ব কিংবা অভিযোগ জানাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গড়িমসি, এ সব অভিযোগ রয়েছে আতসকাচের তলায়।

অতিরিক্ত চার্জশিটের অপেক্ষায়

অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরসের সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় ডিডাব্লিউকে বলেন, "ফরেনসিক ল্যাবরেটরির রিপোর্টে একাধিক ব্যক্তির যুক্ত থাকার কথা বলা হয়েছে। সেমিনার রুমেই এটা হয়েছে কি না, তা নিয়ে অনেক কথা শোনা যাচ্ছে।এই ঘটনার সঙ্গে আর যারা জড়িত, তাদের বিচার প্রক্রিয়ার আওতায় নিয়ে আসা হোক সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দিয়ে।"

সঞ্জয় রায়ের দোষী সাব্যস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই মামলা শেষ হচ্ছে না। এরপর আদালতে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দাখিল করবে তদন্তকারী সংস্থা। বিচার প্রক্রিয়া চলবে নিম্ন আদালত থেকে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। বিচারের দাবিতে আন্দোলন ও সুবিচারের জন্য অপেক্ষা এখনই ফুরোচ্ছে না বলে মনে করছেন আন্দোলনকারীরা।

চিকিৎসক নেতা অর্জুন দাশগুপ্ত ডিডাব্লিউকে বলেন, "ডাক্তাররা অভয়ার বাবা-মাকে বিশ্বাস করেছে। তার বাবা-মা প্রথম থেকেই বলে আসছে এটা একজনের কাজ নয়। আমরা তাদেরকে বিশ্বাস করি। আমরা মনে করি এটা শেষ নয়, এত সহজে  এই প্রশ্নগুলো চলে যাবে না। আমরা এটার শেষ দেখে ছাড়ব। অভয়ার বাবা-মা ৫৯টি প্রশ্ন করেছেন। সেই প্রশ্নের উত্তর আমাদেরও চাই।"

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ