পরিস্থিতির ধারাবাহিক উন্নতি সত্ত্বেও করোনা সংকট জার্মানিতে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট৷ তাই এখনই বিধিনিয়ম আরো শিথিল করা উচিত হবে না৷
বিজ্ঞাপন
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে কড়াকড়ির কারণে জার্মানিতে করোনা সংকট অনেকটা কমে এসেছে৷ সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কমে চলায় ফেডারেল ও রাজ্য স্তরে বেশ কিছু বিধিনিয়ম শিথিল করা হচ্ছে৷ আরো কিছু দোকানবাজার ও স্কুল ধাপে ধাপে খোলা হচ্ছে৷ কয়েকটি রাজ্য, এমনকি আরো সাহসি পদক্ষেপ নেবার পক্ষে সওয়াল করছে৷ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল পরিস্থিতির উন্নতি সত্ত্বেও বার বার সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছেন৷ তিনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সঙ্গত কারণেই সংক্রমণ সংক্রান্ত তথ্য ও পরিসংখ্যান বেশ কয়েকদিন আগের পরিস্থিতি তুলে ধরছে৷ বাস্তব চিত্র পেতে এত সময় লাগার কারণে ঝুঁকির মাত্রা যথেষ্ট বেশি৷
শুক্রবার রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটও আবার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছে৷ প্রতিষ্ঠানের উপ-প্রধান লার্স শাডে শুক্রবার বলেন, সংকটের প্রাথমিক পর্যায়ে যথেষ্ট দ্রুত পদক্ষেপ নেবার সুফল এখন দেখা যাচ্ছে৷ তবে এখনো সেইসতর্কতা ত্যাগ করার কোনো উপায় নেই৷ কিছু বিধিনিয়ম শিথিল করা সত্ত্বেও আরো ছাড়ের অনুমতি দেওয়া একেবারেই উচিত হবে না৷
শাডে বলেন, বর্তমানে জার্মানিতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি কাগজেকলমে শূন্য দশমিক নয় শতাংশ মানুষকে সংক্রমিত করতে পারে৷ অর্থাৎ, সংক্রমণের গড় হার প্রায় ১:১৷ এই সংখ্যা একের নীচে রাখাই মূল চ্যালেঞ্জ বলে তিনি মনে করেন৷ এই হার যত কমবে, পরিস্থিতির ততই উন্নতি হবে৷ কিছু এলাকায় এখনো এই হার একের বেশি৷ বিশেষ করে যেখানে বৃদ্ধাশ্রম বা অন্য কোনো আবাসনে বেশি হারে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে, সেখানে বর্তমান স্বাস্থ্যবিধি মেনেও কোনো লাভ হচ্ছে না৷ এই অবস্থায় শাডে মনে করেন, দিনে সংক্রমণের সংখ্যা কয়েকশয় নেমে না আসা পর্যন্ত আরো বিধিনিয়ম শিথিল করার কোনো অবকাশ নেই৷
রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের আশঙ্কা, প্রকাশ্যে আরো বেশি মানুষের মধ্যে যোগাযোগ ঘটলে সংক্রমণের হার আচমকা বেড়ে যেতে পারে৷ সে ক্ষেত্রে অন্যান্য কিছু দেশের মতো জার্মানিতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে৷ তখন হাসপাতাল আর চাপ সামলাতে পারবে না৷ তাই শাডে সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে বাসায় থাকার ডাক দিয়েছেন৷ সেইসঙ্গে তিনি আরো বেশি মানুষের পরীক্ষার পরামর্শও দিয়েছেন৷ এমনকি কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শে না এলেও এমন পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন৷
শুক্রবার জার্মানিতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ২,৩৩৭টি ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে৷ ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এখন দেড় লাখের সামান্য বেশি৷ ২২৭ জনের মৃত্যুর ঘটনার ফলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫,৩২১৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, রয়টার্স)
জার্মানিতে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে জীবন
করোনা-সংকট সত্ত্বেও জার্মানি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার পথে ফেরার উদ্যোগ শুরু করছে৷ প্রথম পর্যায়ে কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে৷ তবে প্রতিটি রাজ্য এ ক্ষেত্রে নিজস্ব পথ বেছে নিচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/A. Rentz
নতুন করে দৈনন্দিন জীবনের স্বাদ
প্রায় এক মাস কড়কড়ির পর জার্মানির মানুষ আবার কিছু স্বাধীনতার স্বাদ পাচ্ছেন৷ কিন্তু দেশের সব প্রান্তে বিধিনিয়ম এক নয়৷ ১৬টি রাজ্য এ বিষয়ে নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে৷ কিছু রাজ্যে ২০শে এপ্রিল থেকে ৮০০ বর্গ মিটারের কম আয়তনের দোকানপাট খোলা হয়েছে৷ তবে এমন অভিজ্ঞতার জন্য বার্লিনের মতো কিছু রাজ্যের মানুষকে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে৷
ছবি: Reuters/A. Gebert
যত মত, তত পথ
জার্মানির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া অবিলম্বে দোকানবাজার খোলার পথ বেছে নিয়েছে৷ বন শহরের অনেক মানুষ চুটিয়ে সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করছেন৷ আরো এক ধাপ এগিয়ে এ রাজ্যে এমনকি হবু মায়েদের প্রয়োজনীয় পণ্যের বড় দোকান খোলার অনুমতিও দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/A. Rentz
সাইকেল কেনার উৎসাহ
ডিন্সলাকেন শহরে সোমবার সাইকেলের দোকান খোলার পর নতুন সাইকেল কেনার আশায় অনেক মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন৷ জার্মানির সব রাজ্যেই সাইকেল, বই ও গাড়ির দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে৷ অন্যান্য দোকানের মতো এ ক্ষেত্রে আয়তন সংক্রান্ত কোনো বিধিনিষেধ থাকছে না৷
ছবি: Getty Images/L. Baron
ব্যবসা-বাণিজ্য আবার চালু
দোকানের মালিকরা আবার ক্রেতাদের স্বাগত জানাতে পেরে খুবই সন্তুষ্ট৷ বসন্ত উপলক্ষ্যে কিছু ছাড় দিয়ে ক্রেতাদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন অনেকে৷ স্যাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যের লুডভিগসবুর্গ শহরে এক দোকানের সামনে লেখা আছে ‘‘আমরা ফিরে এসেছি৷ আপনাদের আবার দেখতে পেয়ে খুব ভালো লাগছে৷’’
ছবি: Getty Images/AFPT. Keinzle
আবার স্কুলে ফেরার আনন্দ
কিছু রাজ্যে শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে আবার স্কুলে ফিরতে পারছে৷ বার্লিন, ব্রান্ডেনবুর্গ ও স্যাক্সনি রাজ্য বেশি বয়সের শিক্ষার্থীরা ফাইনাল পরীক্ষার প্রস্তুতি ও মূল পরীক্ষার জন্য সোমবার থেকে স্কুল ভবনে প্রবেশ করার সুযোগ পাচ্ছে৷ জার্মানির বেশিরভাগ রাজ্যে ৪ঠা মে থেকে শিক্ষার্থীরা সেই সুযোগ পাবে৷ শুধু বাভেরিয়া রাজ্যে ১১ই মে পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা করতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Michael
চিড়িয়াখানা ও মিউজিয়ামও দরজা খুলছে
কড়াকড়ির কারণে জার্মানির চিড়িয়াখানা ও সাফারি পার্কগুলিও বন্ধ রাখা হয়েছিল৷ কয়েকটি রাজ্যে সেই বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছে৷ মেকলেনবুর্গ-ওয়েস্টার্ন পমেরানিয়া, ব্রান্ডেনবুর্গ ও রাইনল্যান্ড প্যালেটিনেট রাজ্য চিড়িয়াখানা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এই তিনটি এবং আরো কিছু রাজ্যে মিউজিয়ামও খোলা হয়েছে৷
ছবি: Reuters/L. Kuegeler
মাস্ক পরার চল বাড়ছে
কিছু মানুষ স্বেচ্ছায় প্রকাশ্যে মাস্ক পরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ জার্মানির কিছু অঞ্চলে অবশ্য আরো বেশি মাস্ক-পরা মানুষ চোখে পড়ছে৷ দেশজুড়ে বাধ্যতামূলক না হলেও কয়েকটি রাজ্য ও পৌর কর্তৃপক্ষ এই নিয়ম চালু করছে৷ যেমন স্যাক্সনি রাজ্যে এপ্রিল মাস থেকে ট্রাম-বাস বা ট্রেনে এবং দোকানবাজারে মাস্ক পরা অথবা অন্য কোনো উপায়ে মুখ ও নাক ঢাকা বাধ্যতামূলক৷ বাভেরিয়াসহ আরো কিছু রাজ্যেও এমন নিয়ম চালু হয়েছে৷
ছবি: Reuters/W. Rattay
ব্যবধান বজায় রাখুন!
গোটা দেশজুড়ে সামাজিক দূরত্ব সংক্রান্ত নীতিমালায় কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না৷ বাসার মানুষ ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে কমপক্ষে দেড় মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হচ্ছে৷ যে সব দোকান খোলা হচ্ছে, সেখানেও নানাভাবে ক্রেতাদের মধ্যে এই দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা রয়েছে৷