তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে কোচ ও ক্রিকেট বিশ্লেষক নাজমুল আবেদীন ফাহিম৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও আশঙ্কা নিয়ে কথা বলেছেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলে : ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুটো টেস্টেই হারে কি আপনি অবাক হয়েছেন? নাকি মনে হয়েছে, এমনই হবার কথা ছিল?
নাজমুলআবেদীনফাহিম : কিছুটা তো অবাক হয়েছি বটেই৷ কয়েক বছর আগে ওরা আমাদের এখানে এসেছিল৷ সাম্প্রতিক সময়ে ওদের পারফরম্যান্স তেমন ভালো না৷ আর আমরাও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ভালো খেলছিলাম৷ ওরা পূর্ণ শক্তির দল নিয়ে এলেও আশা করতাম, আমরা জিতবো৷ এবং অবশ্যই ওরা পূর্ণ শক্তির দল নিয়ে আসেনি এবার৷ আবার আমার মনের মধ্যে ছিল, টেস্ট ক্রিকেট খেলার জন্য এবার আমাদের কোনো প্রস্তুতিই ছিল না৷ তারপরও যোগ-বিয়োগ করে আমার মনে হচ্ছিল, এরকম একটা দলের বিপক্ষে নিজেদের দেশে খেলায় আমরা জিতে যাবো৷
প্রথম টেস্টের শেষ দিনে কাইল মেয়ার্সের স্পেশাল ইনিংসে জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ৷ পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশের কাছে দ্বিতীয় টেস্টে আগ্রাসী ক্রিকেট এবং প্রবল প্রত্যাবর্তন নিশ্চয়ই আশা করেছিলেন?
বাংলাদেশ যে অবস্থা থেকে হারলো প্রথম টেস্ট, সেটি একটু ডিমোরালাইজিং৷ প্রত্যাশিত ফল না পেলে অনেক সময় আমাদের মনোবল ভেঙে পড়ে৷ ভারতের উদাহরণ এখানে দিতে চাই৷ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ৩৬ রানে অলআউট হবার পরও ওদের মধ্যে ফিরে আসার তাগিদ ছিল৷ নিজস্ব খেলার প্রসেস থেকে বিচ্যুত হয়নি৷ যেমন ঢাকা টেস্টেও আমরা স্পিনিং উইকেট করবো, তা দিয়েই বিপক্ষ দলকে ধরাশায়ী করবো- এই ভাবনার মধ্যেই একটা নেতিবাচক ব্যাপার ছিল৷ তবে প্রথম টেস্টের শেষ ইনিংসের মতো দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসেও আমরা তেমন ভালো বোলিং করতে পারিনি৷ সেই ইনটেন্টটা দেখাতে পারিনি৷ শুধু যখন প্রথম ইনিংসে অনেক পিছিয়ে পড়লাম, এরপর তা দেখা গেল৷ ‘‘আমরা কোণঠাসা হয়ে গেছি, ওদের অল্প রানে অলআউট করতেই হবে’’- এমন একটা তাগিদ দেখেছি৷ শরীরী ভাষা খুব স্ট্রং ছিল৷ তখন যে কিলার ইন্সটিংক্ট দেখেছি, তার অভাব সিরিজের অন্য সময় জুড়ে ছিল৷
‘জাতীয় দলের অধিনায়ক হবার জন্য ওর চেয়ে (মুমিনুল) যোগ্য ব্যক্তি বাংলাদেশ দলে আছে’
কিন্তু তা তো টেনে নেয়া যায়নি, কারণ এরপর ২৩১ রান তাড়া করেও জিততে পারেনি বাংলাদেশ!
টেনে নেয়া উচিত ছিল৷ আসলে টেনে নেয়ার দরকার পড়তো না, যদি প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা দায়িত্বশীল ব্যাটিং করতেন৷ যদি নিজেদের স্কোরগুলো বড় করতেন৷ তাহলে প্রথম ইনিংসে এত পিছিয়ে থাকা লাগে না৷ তখন দ্বিতীয় ইনিংসেও কম রান তাড়া করতে হতো৷ তবে এটা সত্ত্বেও বলছি, ২৩১ রান তাড়া করা অবশ্যই বাংলাদেশের উচিত ছিল৷
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের অমন দায়িত্বহীন ব্যাটিং করতে তো এই প্রথম দেখা গেল না৷ সর্বশেষ টেস্টে মুশফিকের রিভার্স সুইপ ,কিংবা ২০১৯ সালে আফগানিস্তানের কাছে টেস্ট হারে সাকিবের স্টেপ আউট করে বেরিয়ে এসে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসার কথা বলা যায়৷ টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা নিজেদের উইকেটের মূল্যটা বুঝতে পারেন বলে আপনার মনে হয়?
সবাই যে ভালো করতে চায়, তাতে সন্দেহ নেই৷ তবে দীর্ঘ পরিসরের খেলায় চাপ সামলানো খুব জটিল৷ এই ফরম্যাটের ঘরোয়া ক্রিকেটে চাপ সামলানোর কোনো ব্যাপারই নেই৷ সেখানে জিতলে খুব খুশি, কিন্তু হারলে কোনো অসুবিধা হয় না৷ চাপের মুহূর্তে পারলে পারলাম, না পারলে নাই৷ কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ‘না পারলে নাই’ কথাটা বলতে পারি না৷ এটির মুখোমুখি হতে হয়৷ কিন্তু অভিজ্ঞতার অভাবে সে চাপ জয় করা যায় না৷ টেস্টে ভালো খেললে আমরা তা টেনে নিতে পারি হয়তো৷ কিন্তু কঠিন মুহূর্তে সেভাবে সাড়া দিতে পারেন না আমাদের ব্যাটসম্যানরা৷
আশা জাগিয়েও জিততে না পারা ছয় টেস্ট
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ ১২১টি টেস্ট ম্যাচ খেলে মাত্র ১৪টিতে জিতেছে৷ আরো কয়েকটি ম্যাচে জেতার আশা জাগিয়ে তুলেছিল টাইগাররা৷ এমন ছয়টি টেস্টের তথ্য থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Jewel Samad/AFP/Getty Images
মুলতান টেস্ট, ২০০৩
বাংলাদেশের অধিনায়ক খালেদ মাহমুদকে চোখ মুছতে মুছতে মাঠ ছাড়তে দেখা যাচ্ছে৷ কারণ, ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের মুলতানে অনুষ্ঠিত টেস্ট ম্যাচ জেতার ভালো সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ৷ ২৬১ রানের লক্ষ্যে খেলতে নামা পাকিস্তানের সংগ্রহ একটা সময় ছিল ৮ উইকেটে ২০৫৷ কিন্তু মাঠে থাকা ইনজামাম বলতে গেলে প্রায় একাই সেদিন বাংলাদেশকে হারিয়ে দিয়েছিলেন৷ ১৩৮ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি৷ পাকিস্তান জিতেছিল এক উইকেটে৷
ছবি: Jewel Samad/AFP/Getty Images
ফতুল্লা টেস্ট, ২০০৬
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে শাহরিয়ার নাফীসের শতকের (১৩৮) সুবাদে ৪২৭ রান করে বাংলাদেশ৷ এরপর রফিকের অসাধারণ বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়া ২৬৯ রানে অলআউট হয়ে যায়৷ দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪৮ রানে অলআউট হওয়ায় বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ার সামনে ৩০৭ রানের লক্ষ্য দেয়৷ আবারও রফিকের কারণে ২৭৭ রানে ৭ উইকেট পড়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার৷ কিন্তু মাঠে তখনো ছিলেন রিকি পন্টিং৷ অপরাজিত ১১৮ রানের ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে হারিয়ে দেন তিনি৷
ছবি: Hamish Blair/Getty Images
চট্টগ্রাম টেস্ট, অক্টোবর ২০০৮
প্রথম ইনিংসে ৪৪ রানে বাংলাদেশের ৪ উইকেট পড়ে গেলেও মুশফিকুর রহিম ও মেহরাব জুনিয়রের ব্যাটিংয়ের কারণে ২৪৫ রান তুলেছিল টাইগাররা৷ এরপর সাকিব ৩৬ রানে সাত উইকেট নিয়ে কিউইদের ১৭১ রানে আটকে দিয়েছিলেন৷ দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ২৪২ রান তুললে মোট ৩১৭ রানের টার্গেট পায় নিউজিল্যান্ড৷ ওপেনার রেডমন্ডের ৭৯ আর চার নম্বরে নামা ড্যানিয়েল ভেট্টোরির ৭৬ রানের সুবাদে তিন উইকেটে জিতে যায় কিউইরা৷
ছবি: Farjana Khan Godhuly/AFP/Getty Images
ঢাকা টেস্ট, ফেব্রুয়ারি ২০০৮
মর্কেল আর স্টেইনের দুর্দান্ত বোলিংয়ের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে ১৯২ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ৷ তবে শাহাদাত হোসেনের (২৭ রানে ছয় উইকেট) কারণে দক্ষিণ আফ্রিকা মাত্র ১৭০ রানেই অলআউট হয়ে যায়৷ এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ১৮২ রানে অলআউট হয়ে গেলে দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে মাত্র ২০৫ রানের টার্গেট দিতে সমর্থ হয় টাইগাররা৷ স্মিথ ও হাশিম আমলার ব্যাটিংয়ে ভর করে পাঁচ উইকেটের জয় পায় প্রোটিয়ারা৷
ছবি: Duif du Toit/Gallo Images/Getty Images
চট্টগ্রাম টেস্ট, ২০১৬
সাব্বিরকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন জো রুট৷ পঞ্চম দিনে জেতার জন্য ৩৩ রান প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের৷ ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ২ উইকেট৷ বাংলাদেশ হেরে যায় ২২ রানে৷ তাই ৬৪ রানে অপরাজিত থাকা সাব্বিরকে হতাশা ঘিরে ধরেছিল৷ প্রথম ইনিংসে মিরাজের দুর্দান্ত বোলিংয়ের কারণে (৮০ রানে ৬ উইকেট) ইংল্যান্ড ২৯৩ রান তুলতে সমর্থ হয়৷ জবাবে বাংলাদেশ করেছিল ২৪৮ রান৷ দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪০ রান করে ইংলিশরা৷ বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ২৬৩ রানে৷
ছবি: Getty Images/G. Copley
ঢাকা টেস্ট, ২০২১
প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪০৯ রান করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে তাদেরকে ১১৭ রানে বেঁধে ফেলে টেস্ট জয়ের আশা জাগিয়েছিল বাংলাদেশ৷ দ্বিতীয় ইনিংসে জয়ের জন্য ২৩১ রানের টার্গেট পেয়েছিল টাইগাররা৷ কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ২১৩ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ৷ ফলে ১৭ রানে হেরে যায় টাইগাররা৷ এটাই টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে কম রানে পরাজয়৷ ৯ উইকেট পাওয়ায় ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হন রাহকিম কর্নওয়াল৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
6 ছবি1 | 6
বাংলাদেশ ক্রিকেটের নীতিনির্ধারণ সংস্থা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও নিশ্চয়ই চায় টেস্টে জাতীয় দল ভালো করুক৷ কিন্তু সেটির প্রস্তুতির যে জায়গা, সেই ঘরোয়া ক্রিকেটের উন্নতিতে নজর দেয় না কেন?
একেবারে গোড়ার কথা হলো, আমরা সবকিছু নিজেদের হাতে ধরে রাখতে চাই৷ আমাদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দল তৈরি করে কে? বোর্ড৷ এই দলের কোচিং স্টাফ কে ঠিক করে? বোর্ড৷ প্রস্তুতি কেমন হবে, তা কে ঠিক করে? বোর্ড৷ এখানে তাই ওনারশিপের ব্যাপার নেই৷ একদল মানুষ ৮-১০টা টিমের সব কিছু নিজেরা করছে৷ এটা কখনোই প্রতিযোগিতামূলক আবহ তৈরি করতে পারে না৷ যদি আলাদা করে বিভিন্ন গ্রুপকে দায়িত্ব দেয়া হতো, তাহলে কেউ কারো সঙ্গে হারতে চাইতো না৷ সর্বশেষ যে টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট (বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ) হলো, সেখানে সবাই যার যার মতো সেরা দল তৈরির চেষ্টা করেছে, জেতার চেষ্টা করেছে, হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের চেষ্টা করেছে৷ আমার দেখা মতে, সেটি ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের গত ২০ বছরের অন্যতম সেরা টুর্নামেন্ট৷ প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক টুর্নামেন্ট৷ এমন কোনো সুযোগই আমাদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নেই যেখানে কেউ জিতলে খুশি হয়, কিন্তু হারলেও একটু মন খারাপ হয় না৷
এর সমাধান তাহলে কী? প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটটাও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের মতো কিছু করা?
দল তৈরির স্বাধীনতা দিতে হবে৷ তাহলে দায়বদ্ধতা তৈরি হবে৷ খুলনার দল যদি খুলনার লোকজন ঠিক করে, তাহলে পুরো খুলনার লোকের কাছে তাদের দায়বদ্ধতা হবে৷
মানে অনেক বছর ধরে শুনে আসা আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থার পথে হাঁটার পরামর্শ আপনার?
একেবারে৷ বোর্ড না হয় শুরুতে অর্থনৈতিক ব্যাপারটা নিজেদের হাতে রাখুক৷ কিন্তু দল তৈরি করা, ট্রেনিং করানোর কাজগুলো ওদের দিয়েই করাতে হবে৷ তাহলে ওনারশিপ তৈরি হবে৷
এগুলো তো বড় পরিসরের কথা৷ এবার টেস্টে আসি আবার৷ স্পিনিং ট্র্যাক বানিয়ে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর মতো কিছু সাফল্য বাংলাদেশ পেয়েছে৷ একাদশে পেসার থাকেন একজন বা কখনো থাকেনই না৷ এই ফর্মুলায় কি টেস্টে কার্যকর সাফল্য পাবে বাংলাদেশ?
এটা তো অলরেডি ব্যাকফায়ার করেছে৷ কারণ, সব দেশে এখন ভালো স্পিনার আছে; স্পিনের বিপক্ষে ভালো খেলার মতো ব্যাটসম্যান আছে৷ আর আমাদের ব্যাটসম্যানদের সক্ষমতা এখন অনেক বেড়েছে৷ প্রতিপক্ষ পেস বোলিং দিয়ে উড়িয়ে দেবে, অমন ভয় পাবার কারণ নেই৷ পেস ও স্পিনের সংমিশ্রণে একটা বোলিং আক্রমণ তাই আমাদের তৈরি করতে হবে৷
যেসব টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশ
সেই ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৪৩ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে টাইগাররা৷ তার মধ্যে জয় এসেছে ২১টিতে৷ চলুন জেনে নিই সেই টেস্টগুলোর কথা৷
ছবি: Anjum Naveed/AP/picture alliance
আগস্ট ৩০-সেপ্টেম্বর ০৩, প্রতিপক্ষ পাকিস্তান: বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী
পরপর ২ টেস্ট পাকিস্তানকে নিজেদের মাটিতে হোয়াইট ওয়াশ করেছে বাংলাদেশ৷ রাওয়ালপিন্ডিতে বাবর আজমদের দুই ইনিংসে ২৭৪ ও ১৭২ রানে অলআউট করে ৬ উইকেটের জয় তুলে নেন শান্তরা৷ লিটনের সেঞ্চুরি, মিরাজের অর্ধশতক ও ৫ উইকেট, হাসান মাহমুদের ৫ উইকেট এই জয়ে বড় ভূমিকা রাখে৷ এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মধ্য সিরিজ জয় পায় বাংলাদেশ৷
ছবি: Anjum Naveed/AP Photo/picture alliance
আগস্ট ২১-২৫, ২০২৪, প্রতিপক্ষ পাকিস্তান
টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ১০ উইকেটের জয়। এর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৩ টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। ১৪তম টেস্টে ঐতিহাসিক জয়। টেস্টে নবম দল হিসেবে পাকিস্তানকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। বাকি থাকলো শুধু ভারত ও সাউথ আফ্রিকা। দেশের বাইরে বাংলাদেশের এটা সপ্তম জয়। ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে পাকিস্তান। জবাবে বাংলাদেশ তাদের প্রথম ইনিংসে ৫৬৫ রানের বড় সংগ্রহ তোলে। পাকিস্তানের ২য় ইনিংস গুটিয়ে যায় ১৪৬ রানে।
ছবি: Farooq Naeem/AFP/Getty Images
২৮ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর, ২০২৩, প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫০ রানের বিশাল এক জয় পায় অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর দল। বাংলাদেশের হয়ে ৬ উইকেট নেন তাইজুল। নিউজিল্যান্ড : ৩১৭ ও ১৮১, বাংলাদেশ:৩১০ ও ৩৩৮৷
ছবি: Munir uz Zaman/AFP
জুন ১৪-১৮ (২০২৩), প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান
মিরপুরে ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ৷ ৫৪৬ রানের বিশাল ব্যবধানে ম্যাচ জেতে বাংলাদেশ, যা টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের ব্যবধানে জয়ের তিন নম্বরে আছে। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ৩৮২ রানে অল-আউট হয়। পালটা ব্যাট করতে নেমে আফগানিস্তান ১৪৬ রান তুলেছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেটে ৪২৫ রান তুলে ব্যাটিং ছেড়ে দেয় বাংলাদেশ। শেষ ইনিংসে আফগানিস্তান অল-আউট হয় ১১৫ রানে।
ছবি: Munir uz Zaman/AFP
এপ্রিল ৩-৭ (২০২৩), প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড
মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে ৭ উইকেটের জয় পায় টাইগাররা৷ আয়ারল্যান্ড ১ম ইনিংসে ২১৪ এবং ২য় ইনিংসে ২৯২ করে৷ বাংলাদেশ ১ম ইনিংসে ৩৬৯ এবং ২য় ইনিংসে ৩ উইকেটে ১৩৮ রান করে ৭ উইকেটের জয় পায়৷
ছবি: Farooq Naeem/AFP/Getty Images
জানুয়ারি ১-৫ (২০২২), প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড
নিউজিল্যান্ডকে তাদেরই মাটিতে হারিয়ে টেস্টে ঐতিহাসিক এক জয় পায় বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে যেকোনো ফরম্যাটেই এটি বাংলাদেশের প্রথম জয়। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে প্রথম টেস্টের শেষ দিনে ৮ উইকেটের বড় জয় পেয়েছে মুমিনুলবাহিনী।
ছবি: Marty Melville/Photospor/AP/picture alliance
জুলাই ৭-১১ (২০২০) প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে
হারারের একমাত্র টেস্ট ২২০ রানে জিতেছে সফরকারীরা। বাংলাদেশের দেওয়া ৪৭৭ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে পঞ্চম দিনে দ্বিতীয় ইনিংসে জিম্বাবোয়ে অলআউট হয় ২৫৬ রানে। এই জয়ের অন্যতম রূপকার মেহেদী হাসান মিরাজ।
মুশফিকুর রহিমের দ্বিশতক (২০৩) আর মুমিনুলের শতকে (১৩২) ভর করে বাংলাদেশ জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে এক ইনিংস ও ১০৬ রানের জয় পায়৷ প্রথমে ব্যাট করতে নেমে জিম্বাবোয়ে ২৬৫ রান করেছিল৷ এরপর বাংলাদেশ খেলতে নেমে ছয় উইকেটে ৫৬০ রান তোলে৷ পরের ইনিংসে জিম্বাবোয়ে ১৮৯ রান করে অলআউট হয়ে যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. U. Zaman
নভেম্বর ৩০-ডিসেম্বর ২, ২০১৮ প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ
মিরপুর টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ইনিংস ও ১৮৪ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ৷ এই প্রথম প্রতিপক্ষকে ফলো অন করানো ও ইনিংস ব্যবধানে জয়ের অনির্বচনীয় দুটি স্বাদ দল পেল একদিনেই৷ দুই ম্যাচের সিরিজে ২-০তে জয়৷ ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ৷ ১১৭ রানে ১২ উইকেট, বাংলাদেশের হয়ে এক ম্যাচে সেরা বোলিংয়ের কীর্তি৷ ম্যান অব দা ম্যাচ মেহেদী হাসান মিরাজ৷ ম্যান অব দা সিরিজ সাকিব আল হাসান৷
ছবি: Picture-alliance/AP Photo/A.M. Ahad
নভেম্বর ২২-২৪, ২০১৮ প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ
প্রতিপক্ষকে দুই ইনিংস মিলিয়ে সবচেয়ে কম বলে দুবার অলআউট করে জেতা ম্যাচের নতুন রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ৷ আড়াই দিনে টেস্ট জিতেছিল টাইগাররা৷ সাড়ে সাত সেশনের মতো খেলা হয়েছে এই টেস্টে৷ এটিই টেস্টে বাংলাদেশের দ্রুততম জয়৷ নাঈম হাসান প্রথম ইনিংসে পেয়েছেন ৫ উইকেট৷ দ্বিতীয় ইনিংসে তাইজুল পেয়েছেন ৬ উইকেট৷ মুমিনুল হক পেয়েছেন ম্যাচসেরার পুরস্কার৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. U. Zaman
নভেম্বর ১১-১৫, ২০১৮ প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে
জিম্বাবোয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ২১৮ রানের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ৷ সিরিজ ১-১ ড্র৷ ৪৪৩ রানের লক্ষ্য তাড়ায় দ্বিতীয় সেশনে জিম্বাবুয়ে থামে ২২৪ রানে৷ ৩৮ রানে ৫ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের সফলতম বোলার মেহেদী হাসান মিরাজ৷ দ্বিশত হাঁকিয়ে ম্যাচ সেরা মুশফিকুর রহিম৷ সিরিজ সেরা হয়েছেন তাইজুল ইসলাম৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
জানুয়ারি ৬-১০, ২০০৫, প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে: বাংলাদেশ ২২৬ রানে জয়ী
টাইগাররা প্রথমবারের মতো টেস্ট জয়ের স্বাদ পায় চট্টগ্রামে৷ ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ৪৮৮ রান তোলে স্বাগতিকরা৷ আর দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে ৯ উইকেটে ২০৪ রান করে৷ প্রথম ইনিংসে জিম্বাবোয়ের স্কোর ছিল ৩১২ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫৪ রান৷
ছবি: Getty Images/AFP
জুলাই ৯-১৩, ২০০৯, প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ: বাংলাদেশ ৯৫ রানে জয়ী
দেশের বাইরে বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট জয়ের দেখা পায় ২০০৯ সালের ১৩ জুলাই৷ কিংসটাউনে সেই টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৯৫ রানে হারায় টাইগাররা৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Samad
জুলাই ১৭-২০, ২০০৯, প্রতিপক্ষ ওয়েস্টইন্ডিজ: বাংলাদেশ চার উইকেটে জয়ী
সেবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর ছিল সাফল্যে ঠাসা৷ দ্বিতীয় টেস্টে সেন্ট জর্জেসে স্বাগতিকদের হারায় টাইগাররা, সেবার জিতেছিল চার উইকেটে৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Brooks
এপ্রিল ২৫-২৯, ২০১৩, প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে: বাংলাদেশ ১৪৩ রানে জয়ী
জিম্বাবোয়ের হারারেতে স্বাগতিকদের আবার ‘বধ’ করে টাইগাররা৷ প্রথম ইনিংসে ৩৯১ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৯ উইকেটে ২৯১ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ৷ জবাবে প্রথম ইনিংসে ২৮২ আর দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫৭ রানেই গুটিয়ে যায় জিম্বাবোয়ে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Njikizana
অক্টোবর ২৫-২৭, ২০১৪, প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে: বাংলাদেশ তিন উইকেটে জয়ী
ঢাকায় বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়৷ তিন দিনে শেষ হওয়া সেই টেস্টে শুরুতে ব্যাট করতে গিয়ে প্রথম ইনিংসে ২৪০ রান করে জিম্বাবোয়ে৷ আর দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের সংগ্রহ ছিল ১১৪৷ অন্যদিকে, প্রথম ইনিংসে ২৫৪ আর দ্বিতীয় ইনংসে ৭ উইকেটে ১০৭ রান তুলে জিতে যায় স্বাগতিকরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
নভেম্বর ৩-৭, ২০১৪, প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে: বাংলাদেশ ১৬২ রানে জয়ী
খুলনায় জিম্বাবোয়েকে হারায় বাংলাদেশ৷ সেই টেস্ট পাঁচ দিন পর্যন্ত গড়ালেও শেষমেশ তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি জিম্বাবোয়ে৷ ফলাফল স্বাগতিকদের ১৬২ রানের জয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
নভেম্বর ১২-১৬, ২০১৪, প্রতিপক্ষ জিম্বাবোয়ে: বাংলাদেশ ১৮৬ রানে জয়ী
আবারো চট্টগ্রামে জিম্বাবোয়েকে হারায় টাইগাররা৷ সেবার ব্যবধান ছিল ১৮৬ রানের৷
ছবি: Getty Images/AFP/Strdel
অক্টোবর ২৮-৩০, ২০১৬, প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড: বাংলাদেশ ১০৮ রানে জয়ী
এখন পর্যন্ত বড় কোনো ক্রিকেট শক্তির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের একমাত্র টেস্ট জয় এটি৷ ঢাকায় ইংল্যান্ডকে নাস্তানাবুদ করে টাইগাররা৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
মার্চ ১৫-১৯, ২০১৭, প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী
একদিকে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের শততম ম্যাচে জয়, অন্যদিকে প্রথমবারের মত শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে জয়-দুই দিক দিয়েই ঐতিহাসিক বাংলাদেশের এই টেস্ট ম্যাচটি৷ পঞ্চম দিনে ৪ উইকেটে জয় নিশ্চিত করে টাইগাররা৷ ম্যাচ সেরা হয়েছেন তামিম ইকবাল৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. S. Kodikara
আগস্ট ২৭-৩০, ২০১৭, প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া: বাংলাদেশ ২০ রানে জয়ী
প্রথমবারের মত অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বাংলাদেশ ইতিহাস গড়ে৷ এটা ছিল সাকিব ও তামিমের ৫০তম টেস্ট। সাকিব মোট ১০ উইকেট নিয়ে এবং তামিম দুই ইনিংসেই অর্ধশত করে স্মরণীয় করে রাখলেন এই টেস্টকে৷ ম্যাচ সেরা সাকিব আল হাসান৷ দ্রষ্টব্য: ইএসপিএন ক্রিকইনফো থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ছবিঘরটি তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
21 ছবি1 | 21
ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে টেস্ট সিরিজ হারের পর বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তার ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন গণমাধ্যমকে৷ কিন্তু আপনি কি মনে করেন না, এর চেয়ে ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করাটাই বোর্ডের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
অবশ্যই৷ যে পদ্ধতিতে আমরা দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটার তৈরি করছি, তাতে অনেক ভুল আছে৷ যে কারণে ওখান থেকে আন্তর্জাতিক মানের টেস্ট ক্রিকেটার আমরা পাবো না৷ হঠাৎ হয়তো এক-দুজন পাবো৷ আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এই সিরিজের কথা বললে, এজন্য আমরা কোনো প্রস্তুতিই নিতে পারিনি৷ এর একটা কারণ হতে পারে, কোভিডের কারণে আরো দীর্ঘ সময় বায়োবাবলে থাকতে হবে বলে প্রস্তুতির সময়টা দীর্ঘ হবার ব্যাপারটা ক্রিকেটাররা হয়তো মেনে নিতে পারেননি৷ সেটি ভীষণ ভুল৷ ভীষণ অপেশাদার৷ আরেকটা ব্যাপার হয়ত, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জিতবেই বলে ধরে নিয়েছিল৷ যদি জানতো এমন ফল হতে পারে, তাহলে আরো অনেক ভালো প্রস্তুতি নিতো৷
মানে, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে খাটো করে দেখেছিল বাংলাদেশ?
অবশ্যই৷
বাংলাদেশ দলের যথাযথ প্রস্তুতি না হওয়ার দায় অবশ্যই বোর্ডের রয়েছে৷ তবে ক্রিকেটারদেরও নিশ্চয়ই নিজেদের জায়গা থেকে হাত তুলতে হবে যে, নিজেদের জায়গা থেকে তারাও কাজটা করতে পারেননি?
পুরোপুরি৷ আমি নিশ্চিত এখন অনেক ক্রিকেটারই ভাবছেন, ইশশ আমি যদি এমন করতাম কিংবা অমন করতাম! যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে ওদের খেলার কথা, সেটির ঘাটতি দেখেছি৷ টিম ম্যানেজম্যান্টের সেটি আগে থেকে দেখে ক্রিকেটারদের সেভাবে তৈরি করা দরকার ছিল৷
টিম ম্যানেজমেন্টের কথা বলছিলেন৷ কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর অধীনে ৭ টেস্ট খেলে ছয়টিতে হেরেছে বাংলাদেশ৷ এর মধ্যে আফগানিস্তানের বিপক্ষে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এই দুটি হারও আছে৷ তার পারফরম্যান্সকে কিভাবে মূল্যায়ন করছেন? এবং অধিনায়ক মুমিনুল হকেরও?
আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, মুমিনুল হক নিজেও কখনো ভাবেনি সে বাংলাদেশ দলের ক্যাপ্টেন হবে৷ আমি নিজেও কখনো ভাবিনি৷ ওকে তো ছোটবেলা থেকে চিনি৷ ও খুব ভালো ক্রিকেটার৷ এই সিরিজেও ভালো খেলেছে৷ আরো ভালো খেলবে, আশা করছি৷ কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে ওকে আমি কখনো দেখিনি৷ জাতীয় দলের অধিনায়ক হবার জন্য ওর চেয়ে যোগ্য ব্যক্তি এই বাংলাদেশ দলে আছে৷ আমি মমিনুলকে দোষ দিতে চাই না, কারণ, আমার মনে হয়েছে, ক্যাপ্টেন্সিটা মুমিনুলের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে৷ আবার এটিও আমি নিশ্চিত না, ক্যাপ্টেন্সি ও নিজে কতটা করতে পেরেছে; কতটা বাইরে থেকে নির্দেশনার ভিত্তিতে করতে হয়েছে৷
সবচেয়ে কম বয়সের টেস্ট সেঞ্চুরিয়ানরা
১৭ বছর আগে এক বাংলাদেশি কিশোর সবচেয়ে কম বয়সে টেস্টে শতক করার রেকর্ড গড়েছিলেন৷ পূর্ববর্তী রেকর্ড ভাঙা দেখতে ক্রিকেটবিশ্বকে অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ চার দশক৷ এই ছবিঘর টেস্ট ক্রিকেটের এমন কিছু বিস্ময়কে নিয়ে৷
ছবি: Lakruwan Wanniarachchi/AFP/Getty Images
মোহাম্মদ আশরাফুল (বাংলাদেশ)
২০০১ সাল৷ শ্রীলঙ্কার সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব গ্রাউন্ডে চলছে এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ৷ টেস্ট অভিষেকেই আশরাফুল করে বসলেন অসাধারণ কীর্তি৷ মাত্র ১৭ বছর ৬১ দিন বয়সে ১১৪ রান করে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে সেঞ্চুরি করার গৌরব অর্জন করলেন৷ সে ম্যাচে বাংলাদেশ ইনিংস ও ১৩৭ রানের ব্যবধানে পরাজিত হলেও আশরাফুল রয়ে গেছেন ইতিহাসের পাতায়৷
ছবি: Lakruwan Wanniarachchi/AFP/Getty Images
মুস্তাক মোহাম্মদ (পাকিস্তান)
আশরাফুলের আগের রেকর্ড ছিল পাকিস্তানের মুস্তাক মোহাম্মদের দখলে৷ ১৯৬১ সালে নয়া দিল্লিতে ভারতের বিপক্ষে ১০১ রানের ইনিংস খেলেন তিনি৷ তখন তাঁর বয়স ছিল ১৭ বছর ৭৮ দিন৷ (ছবিতে বাঁ দিক থেকে দ্বিতীয়)
ছবি: AP
শচীন টেন্ডুলকার (ভারত)
১৯৯০ সালে ম্যানচেস্টারে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ১১৯ রানের ইনিংস খেলে সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরিয়নের তালিকায় তৃতীয় স্থান দখল করেছেন ক্রিকেট বিশ্বে ‘বিস্ময় বালক’ হিসেবে পরিচিত শচীন টেন্ডুলকার৷ ম্যাচের শেষ ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে প্রথম শতরান পেলেও খেলায় শেষ পর্যন্ত কোনো ফল আসেনি৷
ছবি: Reuters
হ্যামিলটন মাসাকাদজা (জিম্বাবুয়ে)
২০০১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট শতক করেন জিম্বাবুয়ের মাসাকাদজা৷ ১১৯ রানের ইনিংস করার সময় তাঁর বয়স ছিল ১৭ বছর ৩৫২ দিন৷ এই ইনিংসের ফলে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে অভিষেকে সেঞ্চুরি করার রেকর্ড করেন মাসাকাদজা৷ অবশ্য মাত্র দুই মাস পরেই আশরাফুল ভাঙেন সেই রেকর্ড৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
ইমরান নাজির (পাকিস্তান)
২০০০ সালে ব্রিজটাউনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করার সময় নাজিরের বয়স ছিল ১৮ বছর ১৫৪ দিন৷ তবে পরবর্তীতে পাকিস্তান দলে নিয়মিত জায়গা করে নিতে ব্যর্থ হন তিনি৷ ১৯৯৯ সালে অভিষেকের পর থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত টেস্ট খেলেছেন মাত্র ৮টি৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Vidanagama
সেলিম মালিক (পাকিস্তান)
১৯৮২ সালে করাচিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাকিস্তানের পক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় সেলিম মালিকের৷ প্রথম ইনিংসে মাত্র ১২ রান করলেও, দ্বিতীয় ইনিংসে করেন অপরাজিত শতরান৷ তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ১৮ বছর ৩২৩ দিন৷
ছবি: Getty Images/AFP
পৃথ্বী শ (ভারত)
অভিষেকেই জাত চিনিয়েছেন ভারতের পৃথ্বি শ৷ ২০১৮ সালে রাজকোটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৩৪ রান করেন তিনি৷ ১৮ বছর ৩২৯ দিন বয়সে দখল করে নেন ভারতের সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেকে শতরান করার রেকর্ড৷ তবে অভিষেকের হিসেব বাদ দিলে সবচেয়ে কমবয়সী ভারতীয় টেস্ট সেঞ্চুরিওনদের তালিকায় তিনি চতুর্থ৷
ছবি: Getty Images/H. Trump
শহীদ আফ্রিদি (পাকিস্তান)
১৯৯৯ সালে চেন্নাইয়ে ভারতের বিপক্ষে ১৪১ রানের ইনিংস খেলেন শহীদ আফ্রিদি৷ তখন তাঁর বয়স ছিল ১৮ বছর ৩৩৩ দিন৷ তবে ২০১০ সালে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরে যাওয়ার আগে তিনি ম্যাচ খেলেন মাত্র ২৭টি, শতরানের ইনিংস খেলেছেন ৫টি৷ অবসরে যাওয়ার সময় আফ্রিদি বলেন, টেস্ট ক্রিকেট তিনি উপভোগ করেন না৷
ছবি: AP
8 ছবি1 | 8
আর কোচ?
কোচের দায়িত্বই তো এখানেই৷ তার বুঝতে হবে, দল কোন জায়গায় রয়েছে, কী করলে আরো ভালো করবে৷ প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাপারটা দেখুন৷ ওরা নিজেদের আন্ডারডগ ভেবেছে৷ প্রথম টেস্ট জয়ের পর, দ্বিতীয় টেস্ট জয়ের পর ওদের উল্লাসের ধরন দেখলেই বুঝবেন৷ দ্বিতীয় টেস্ট শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ধারাভাষ্যকার ইয়ান বিশপের কমেন্ট্রি শুনলেই বুঝবেন৷ ওরা কল্পনাই করতে পারেনি, এ সিরিজ জিতবে৷ সে কারণেই অত উল্লাস৷ ওদের জন্য এটি অবিশ্বাস্য এক অর্জন৷
টেস্টে বিপর্যয়ের পর আমরা সবাই অনেক কথা বলি৷ কিন্তু কাজের কাজ হয় না তেমন৷ বরং পরের বিপর্যয়ের পর আবার সেই কথাগুলোই ফেরে৷ ভবিষ্যতে বাংলাদেশ যথাযথ টেস্ট দল হিসেবে গড়ে উঠবে, এরকম কোনো সম্ভাবনার জায়গা দেখেন?
এখনো দেখি না৷ দেখুন, শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটীয় সুযোগ-সুবিধা কিন্তু আমাদের মতোই৷ তবে ওদের সবাই টেস্ট দল হিসেবে দেখে৷ কারণ, ওরা সেভাবে কমপিট করতে পারে৷ শ্রীলঙ্কার চেয়ে বাংলাদেশে প্রতিভাবান ক্রিকেটারের সংখ্যা কোনো অবস্থাতেই কম না৷ তবু আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে আছি৷ আগে যে বলছিলাম, কিছুটা ক্রিকেটের বিকেন্দ্রীকরণ, কিছুটা ওনারশিপ দেয়া, কিছুটা সততা- এসব নিশ্চিত করতে পারলে আমাদের পারফরম্যান্স তো এমনিতেই ৫০ শতাংশ বেড়ে যাবে৷ আর টেস্ট ক্রিকেটের কারণে এক সময় আমাদের ওয়ানডে স্ট্যান্ডার্ডও পিছিয়ে যাবে৷ আফগানিস্তান কি এখনকার জায়গায় থাকবে? থাকবে না৷ গত দুই বছরে ওদের উন্নতি দেখেন৷ আয়ারল্যান্ড এ জায়গায় থাকবে? হতে পারে, ওদের আমাদের মতো টাকা-পয়সা নেই৷ কিন্তু কেউ যদি সৎভাবে এগিয়ে যেতে চায়, তাকে আটকানো যায় না৷ দেখবেন হয়তো ভবিষ্যতে আয়ারল্যান্ডও আমাদের জন্য হুমকি হবে৷ তাই আমরা যদি এখনই সতর্ক না হই, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ক্রিকেটের যথেষ্ট দুর্নাম হবে৷ আরো অনেক অনেক খারাপ দিনও দেখতে হতে পারে৷
সুমনের চোখে বাংলাদেশের সেরা টেস্ট একাদশ
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ গত ১০ নভেম্বর উনিশ বছর পূর্ণ করে বিশে পা রেখেছে৷ সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমনের গড়া বাংলাদেশের সেরা টেস্ট একাদশে কারা এবং কেন স্থান পেয়েছেন তা জানতে দেখুন আমাদের এই ছবিঘর৷
ছবি: AP
মাশরাফি
সেরা একাদশের নেতৃত্ব নির্দ্বিধায় মাশরাফি বিন মর্তুজার হাতে তুলে দিয়ে সুমন বলেছেন, ‘‘এত জোরে বল করতে আমি দেশের খুব কম বোলারকেই দেখেছি৷ সুইংও ছিল৷ অত্যন্ত বুদ্ধিমান বোলার৷’’
ছবি: AP
তামিম
‘সেরা পারফর্মার‘ হিসেবেই ওপেনিংয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তামিম ইকবাল৷ লর্ডসে সেঞ্চুরি করা এই খেলোয়াড়কে একাদশে রাখার পেছনে দেশ ও দেশের বাইরে পারফর্ম্যান্সকেই বড় করে দেখেছেন হাবিবুল বাশার৷ তিনি বলেন, ‘‘পেস ও স্পিন সমান ভালো খেলে৷ সবচেয়ে বড় কথা, ওর ব্যাটিং অন্য ব্যাটসম্যানদেরও আত্মবিশ্বাস দেয়৷ ওকে এক নম্বরে রাখতে তাই একদমই সময় লাগেনি৷’’
ছবি: picture-alliance/A. Salahuddin
জাভেদ ওমর
৪০টি টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা এবং টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের হাবুডুবু খাওয়ার সময়ে উইকেট আঁকড়ে পড়ে থাকার মানসিকতাকে গুরুত্ব দিয়ে জাভেভ ওমরকে দলে রেখেছেন সুমন৷
ছবি: Shamsul Hoque Tanku
মুমিনুল
তিন নম্বর পজিশনে স্থান পেয়েছেন তিনি৷ সুমন বলছেন, মুমিনুলকে বাছতে কষ্ট হয়নি তার৷ তবে এই পজিশনে মুমিনুলকে বাদ দিলে নিজেকে জায়গা দিতেন তিনি৷ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান মুমিনুলকে একাদশে রাখার ব্যাখ্যায় সুমন বলছেন, ‘‘রান করার দক্ষতা অনেক এবং ব্যাকফুটে শক্তিশালী৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/M. U. Zaman
বুলবুল
বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে একাদশে রেখে সুমন বলছেন, ‘‘বাংলাদেশের ক্রিকেটকে আরো অনেক কিছুই দেওয়ার ছিল তাঁর৷’’ মাত্র ১৩ টেস্ট ক্যারিয়ারেও বুলবুল সর্বকালের সেরা একাদশে থাকার মতো ঝলক দেখিয়েছিলেন বলে বিশ্বাস করেন হাবিবুল বাশার সুমন৷
ছবি: Shamsul Hoque Tanku
আকরাম খান
১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফিজয়ী অধিনায়ক আকরাম খানকে সেরা একাদশে জায়গা দিয়ে সুমন বলছেন, ‘‘যে-কোনো বোলিং আক্রমণকে ছিঁড়ে-খুঁড়ে ফেলার ক্ষমতা ছিল উনার৷ পেস ও স্পিন খেলার সামর্থ্যের দিক থেকে অত্যন্ত উঁচু দরের ব্যাটসম্যান তিনি৷’’
ছবি: DW/Z. Chowdhury
সাকিব
অলরাউন্ডার হিসেবে একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন সাকিব আল হাসান৷ সব ফরম্যাটে বাংলাদেশের সেরা খেলোয়াড়ও তিনি৷
ছবি: Munir uz Zaman/AFP/Getty Images
মুশফিক
সুমন বলছেন, মুশফিক অলরাউন্ডার, কারণ, তিনি উইকেটের পেছনেও দাঁড়াবেন৷ বিশেষজ্ঞ উইকেটরক্ষক হিসেবে খালেদ মাসুদ অপ্রতিদ্বন্দ্বী হলেও মুশফিককে দিয়ে কিপিং করালে বাড়তি একজন ব্যাটসম্যান খেলাতে পারার চিন্তা থেকেই তাঁর ওপর আস্থা রেখেছেন সুমন৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. S. Kodikara
রফিক
এই সি্পন বোলারকে একাদশে রেখে সুমন বলছেন, ‘‘রফিক আমার দলে সব সময়ই থাকবে৷ আমি অধিনায়ক থাকাকালে সে আমাকে খুব কমই বঞ্চিত করেছে৷ রান আটকানোর পাশাপাশি উইকেট তুলে নেওয়ায় ওর চেয়ে ভালো আর কেউ নয়৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/F. K. Godhuly
শাহাদাত
ভীতিকর পেসার হিসেবে একাদশে শাহাদাত হোসেনকে রেখে সুমন বলছেন, ‘‘টেস্ট ক্রিকেটে অধিনায়ক যে রকম আক্রমণাত্মক বোলার চায়, শাহাদাত সে রকমই একজন৷ সত্যিকারের টেস্ট বোলার৷’’
ছবি: AP
মুস্তাফিজ
টেস্ট ক্যারিয়ারে এখনো বলার মতো কিছু না করলেও মুস্তাফিজকে যে-কোনো উইকেটে উইকেট নেওয়ার মতো বোলার বলেই মনে করেন সুমন৷ এজন্য তাঁর সেরা টেস্ট একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন তরুণ এই বোলার৷