সত্তরে পা রাখছেন স্টিফেন হকিং
৬ জানুয়ারি ২০১২কিন্তু তাতে কী! বসে নেই তাঁর আবিষ্কার৷ হকিং কী বলছেন সেটা শোনার জন্য অধীর আগ্রহে থাকেন বিশ্বের সব বিজ্ঞানীরা৷
ইটালির বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি মারা যান ১৬৪২ সালের ৮ জানুয়ারি৷ আর তার ঠিক তিনশো বছর পর জন্ম স্টিফেন হকিং-এর৷ ১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারি তিনি ব্রিটেনের অক্সফোর্ডে জন্মগ্রহণ করেন৷ বাবা ড. ফ্র্যাঙ্ক হকিং ছিলেন জীববিজ্ঞানের গবেষক৷ আর মা ইসোবেল হকিং ছিলেন রাজনৈতিক কর্মী৷
হকিং-এর বাবা চেয়েছিলেন ছেলে ডাক্তার হোক৷ কিন্তু হকিং-এর আগ্রহ ছিল বিজ্ঞানের প্রতি৷ গণিত নিয়ে পড়াশোনা করতে চেয়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিভার্সিটি কলেজে গণিতের কোর্স পড়ানো হতো না বলে ভর্তি হয়ে যান পদার্থবিজ্ঞানে৷ পরে তাপগতিবিদ্যা, আপেক্ষিকতা এবং কোয়ান্টাম বলবিদ্যায় তার আগ্রহ তৈরি হয়৷
বর্তমানে তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘থিওরেটিক্যাল কসমোলজি সেন্টার'এ গবেষণা পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন৷ এর আগে তিনি ৩০ বছর ধরে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতের ‘লুকাসিয়ান প্রফেসর' হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷ আরেক বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটনও এই পদে বহুদিন কাজ করেছেন৷ শিক্ষা বিষয়ে বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন পদগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয় লুকাসিয়ান প্রফেসরকে৷
বিশ্বব্যাপী হকিং বিখ্যাত হয়ে ওঠেন তাঁর ‘এ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম' বইয়ের মাধ্যমে৷ ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত এই বইতে তিনি মহাবিশ্বের আগমন নিয়ে বেশ কিছু তত্ত্ব দেন৷ এই বইতেই তিনি তাঁর বিখ্যাত বিগ ব্যাং তত্ত্বটি আলোচনা করেছিলেন৷ বেস্ট সেলার এই বইটির প্রায় ১০ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়৷ সেসময় জার্মান ম্যাগাজিন স্পিগেলকে বলেছিলেন, ‘আমার মনে হয় শুধু আমি বা আমার মতো তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানীরাই নন, আমরা সবাই জানতে চাই আমরা কোথা থেকে এসেছি৷'
ব্রিফ হিস্ট্রি বইতে তিনি, মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে ঈশ্বরের ভূমিকা থাকার বিশ্বাসটি মেনে নিয়েছিলেন৷ কিন্তু তাঁর সাম্প্রতিকতম ‘দ্য গ্র্যান্ড ডিজাইন' বইয়ে তিনি বলেছেন, পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মানুযায়ী বিগ ব্যাং বিস্ফোরণ একটি অনিবার্য ঘটনা ছিল৷ এ ক্ষেত্রে ঈশ্বরের কোনো ভূমিকা ছিল না৷ মার্কিন পদার্থবিদ লিওনার্ড মোডিনাওয়ের সঙ্গে যৌথভাবে মিলে তিনি এই বইটি লিখেছেন৷
বইতে হকিং বলছেন, অভিকর্ষ শক্তির সূত্রের মতো পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন সূত্র কার্যকর রয়েছে, তাই একদম শূন্যতা থেকেও মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্ভব এবং সেটি অবশ্যম্ভাবী৷ ‘স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৃষ্টি' হওয়ার কারণেই আমরা মহাশূন্যে অনেক কিছুর অস্তিত্ব দেখতে পাচ্ছি৷
এছাড়া ব্রিটিশ দৈনিক ‘দ্য টেলিগ্রাফ'কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হকিং বলেন, যারা মৃত্যু তথা অন্ধকারকে ভয় পায় তাদের জন্য স্বর্গ হচ্ছে এক কল্পকাহিনী৷
হকিং আরো বলেন, মানুষের মস্তিষ্ক কম্পিউটারের মতো৷ যখন কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ আর কাজ করে না তখনই কেবল তার মৃত্যু ঘটে৷ অচল কম্পিউটারের যেমন পরবর্তী জীবন বলে কোনো কথা নেই তেমনি মানুষের ক্ষেত্রেও মৃত্যুর পরে স্বর্গ-নরক বলে কিছু নেই৷ স্বর্গ তাদের কাছেই কেবল কাল্পনিক একটি গল্প যারা অন্ধকারে ভয় পান৷
নিজের সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য - আমি ৪৯ বছর আগে থেকেই অকালমৃত৷ তাই আমি এখন আর মরতে ভয় পাই না৷ আমি যা করতে চেয়েছিলাম তার অনেক কিছুই করতে পেরেছি৷
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক