1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সত্যজিৎ তো স্পেশাল, তবে এখনো ভালো ছবি হচ্ছে: শর্মিলা ঠাকুর

শময়িতা চক্রবর্তী
১৫ মে ২০২৫

খুব ভালো চরিত্র না পেলে শর্মিলা ঠাকুর এখন আর সিনেমা করতে চান না । ডিডাব্লিউর সঙ্গে তার ভাবনার কথা জানালেন শর্মিলা ।

শর্মিলা ঠাকুর। ২০১৬ সালের ছবি।
সেরকম ব্যতিক্রমী কোনো চরিত্র না পেলে আর সিনেমায় অভিনয় করতে চান না শর্মিলা ঠাকুর। ছবি: picture-alliance/dpa/Rana Sajid Hussain/Pacific Press

৭৮তম কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এবার রেড কার্পেটে হাঁটবেন শর্মিলা ঠাকুর। ১৯ মে স্যাল বুন্যুল প্রেক্ষাগৃহে দেখানো হবে সত্যজিৎ রায়ের ১৯৭০-এর ছবি, অরণ্যের দিনরাত্রি। সেই উপলক্ষ্যেই শর্মিলা ঠাকুর. সিমি গারেওয়ালসহ এই ছবির সঙ্গে যুক্ত অন্যান্যরা রেড কার্পেটে হাঁটবেন। ফরাসি রিভিয়েরাতে রওয়ানা দেওয়ার আগে ডিডাব্লিউএর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে শর্মিলা জানালেন তার অরণ্যের দিনরাত্রির কথা, বাংলা সিনেমা নিয়ে তার অভিজ্ঞতার কথা এবং প্রিয় মাণিকদার কথা।

সত্যজিতের নায়িকা

১৯৫৯-এ অপুর সংসার দিয়ে সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে যাত্রা শুরু শর্মিলার। অরণ্যের দিনরাত্রির আগে দেবী এবং নায়কে অভিনয় করেছেন। তার পর সীমাবদ্ধ। নিজের চরিত্র নিয়ে কথা বলতে গিয়ে শর্মিলা বলেন, "অপর্ণার চরিত্র নিয়ে আমি খুবই খুশি ছিলাম। মাণিকদা আমাকে সবময়েই খুব ভালো চরিত্র দিয়েছেন। নায়কে আমার চরিত্রটা বিবেকের মতো। এটাতেও মোটামুটি তাই। যদিও অপর্না খুবই মডার্ন লুকিং এবং তার কাপড় জামা আধুনিক। কিন্তু যেভাবে কথা না বলে অসীমকে (সৌমিত্র) তিনি তার বক্তব্য বোঝালেন সেটা খুবই পরিণত। অপর্না অসীমকে কিন্তু অপমান করেননি। কিন্তু বুঝিয়ে দিলেন যে তার দম্ভটা ঠিক নয়। কিছু না বলেই বললেন, "কীসের দম্ভ তোমার?" চরিত্রের সেই ম্যাচিওরিটিটা মাণিকদা তৈরি করেছিলেন। ওনার চরিত্রগুলিতে অভিনয় করতে এত ভালো লাগে। নায়ক আবার একদম আলাদা। দেবীও আলাদা।"      

নায়কের শুটিং শুরুর আগে পরিচালক সত্যজিৎ রায়কে শর্মিলা ঠাকুর জিজ্ঞেস করেন তার চশমা দূরের দৃষ্টির জন্য, না কাছের জন্য? সেই স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে শর্মিলা জানান যে তার কথা শুনে পরিচালক খুব হেসে ফেলেছিলেন। "মাণিকদা বলেছিলেন, 'তুমি ঠিক করে নাও।'" শর্মিলা জানিয়েছেন, সত্যজিৎ চরিত্র সম্পর্কে কোনো ব্রিফ দিতেন না। অভিনেত্রী বলেন, "বেশি করে বোঝাতেন না। একবার বলে দিতেন। অপুর সংসারের সময় আমি ফ্রক পরে গেছিলাম। মঙ্কুদি (বিজয়া রায়) আমাকে শাড়ি পরিয়ে দিলেন। চুল বেঁধে টিপ পরিয়ে দিলেন। আমাকে দেখতে অনেকটাই বদলে গেল। ১৩ বছর থেকে আমাকে ১৬/১৭ বছরের দেখালো। মানিকদা আমাকে জিজ্ঞাসাও করলেন আমি বাংলা বলি কিনা। আমি বললাম, 'নিশ্চয়ই বলি।' আমাকে বুঝিয়ে দিলেন আমার চরিত্রটা সদ্য বিয়ে করে বাবা মাকে ছেড়ে শহরে এসেছে। দ্যাটস ইট। ওটাই একমাত্র ইন্সট্রাকশান। আর কিছু বলেননি।"

শর্মিলা জানান পরিচালক সত্যজিৎ কখনোই খুব বেশি বোঝাতেন না। তিনি বলেন, "অরণ্যের দিনরাত্রিতে যে ছেলেটি বাচ্চা ছেলেটির চরিত্রে অভিনয় করেছিল তার সঙ্গে মাণিকদা মোড়ায় বসে, চোখে চোখ মিলিয়ে কিছু একটা বলতেন। এটা একান্তই ওর সঙ্গে মাণিকদার কথপোকথন। আমাদের শোনার বাইরে। বাচ্চাদের থেকে খুব ভালো অভিনয় উনি পেতেন। বাচ্চারা ভাবত মাণিকদা ওদের বন্ধু। সমবয়সী। আমাদের বেশি বোঝাতেন না। একবার স্ক্রিপ্ট পড়ে দিতেন। আর বলতেন, তোমরা ডায়লগ মনে রেখো না। সিনগুলো বুঝিয়ে দিতেন। কোথা থেকে কোথায় যাব, কখন কথা বলব এসব বলে দিতেন।"

অরণ্যের দিনগুলি

অরণ্যের দিনরাত্রির শুটিং হয় পালামৌ- এর কাছে। শর্মিলা বলেন, সেই সময় খুবই গরম ছিল ওখানে। "আমরা খুব কম বাজেটে ছবি করতাম। এই ছবির শুটিংয়ের সময় খুব গরম ছিল। আমরা বেশি সময় পেতাম না। সকালে দুই-তিন ঘণ্টা  আর বিকেলে দুই-তিন ঘণ্টা শুটিং হতো। কম সময় ছিল। কম বাজেট ছিল। তার মধ্যেই মানিকদা খুব মেপে মেপে ছবি করতেন। এয়ার কন্ডিশান ছিল না তখন। কোথাও ছিল না।"

তবে শুটিং-এর স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে শর্মিলা বলেন, সেই সময় তারা খুবই ভালো সময় কাটিয়েছেন। তিনি জানান, "আমরা খুব আড্ডা মারতাম কারণ দুপুরে আমাদের কোনও কাজ ছিল না। রবিদা, সমিত, শুভেন্দু, সৌমিত্র -- সবাই আড্ডা মারতাম। বংশীদাও (শিল্প নির্দেশক বংশী চন্দ্রগুপ্ত) চলে আসতেন। আমরা বনের মধ্যে সাঁওতাল গ্রামে যেতাম গান শুনতে। নাচও করতাম ওদের সঙ্গে। আড্ডা মারতাম। অপূর্ব ছিল সেই দিনগুলো।"  

আজকের মূলধারার ছবিতে গ্রাম-শহরের সেতু তৈরি হয়না বলে মনে করেন শর্মিলা। "কোথাও নেই। গৌতম ঘোষ 'পার' বানালেন। তখন গ্রামের ছবি উঠে এসেছে। এখন তো শহরের গল্পই হয় বেশিরভাগ।"

বড় পর্দার ম্যাজিক

সম্প্রতি সত্যজিতের মহানগর এবং নায়ক রিস্টোর করে বড় পর্দায় মুক্তি পেয়েছে। শর্মিলার আশা, অরণ্যের দিনরাত্রির নতুন প্রিন্ট এদেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে। বড়পর্দায় দেখা যাবে। তিনি বলেন, "ছবি ছোট পর্দায় দেখা যায় না। মানে,  নিশ্চয়ই হয়তো দেখা যায়। কেউ কেউ উপভোগও করেন। তবে বড় পর্দার মজাই অন্যরকম। বড় পর্দায় দেখব বলে আমি খুবই উত্তেজিত।"

সত্যজিতের পাঁচটি ছবিতে অভিনয় করেছেন শর্মিলা। স্বাভাবিক কারণেই পরিচালকের গুণমুগ্ধ এই অভিনেত্রী। অরণ্যের দিনরাত্রি প্রসঙ্গে শর্মিলা বলেন, "কী রোম্যান্টিক ছিল আমার আর সৌমিত্রর দৃশ্যগুলো! কী সুন্দর!  নায়কের একাধিক দৃশ্যও অপূর্ব।"

আজকের ছবিতে কি সেই সংবেদনশীলতা দেখতে পাওয়া যায়? শর্মিলা বলেন, "হচ্ছে তো ভাল ছবি। আমাদের আগের ছবিটি (সুমন ঘোষের পুরাতন) খুব সংবেদনশীল। খুব ভালো সংলাপ। আমি সব বাংলা ছবির কথা বলতে পারব না। তবে যা দেখেছি তা তো ভালোই লেগেছে। মানিকদার মতো অত ভালো হতে পারে না। উনি খুবই স্পেশাল।"

সত্যজিতের ছবির নানা দৃশ্যাংশ এখন ইন্সটাগ্রামের মতো সোশাল মিডিয়ায় রিলসের মাধ্যমে জনপ্রিয় হচ্ছে। শর্মিলা বলেন, "গ্রামের ধারণাই তো আসতে আসতে মুছে যাচ্ছে। এখন তো কেবলই শহর। আমরা যে গ্রাম দেখেছি তা খোঁজার জন্য অনেক দূর যেতে হয়। এখন সবার কাছে টিভি আছে, মোবাইল ফোন আছে। ওটিটিতে ছবি দেখেন মানুষ। তবে যে ছবি বড় পর্দার জন্য বানানো তা বড় পর্দাতেই দেখতে ভালো লাগে। ছোট স্ক্রিনে সেই আনন্দ পাওয়া মুশকিল। তবে নিঃসন্দেশে অনেক বেশি সুবিধাজনক। অত দূরে গিয়ে টিকিট কেটে একবারে বসে অতখানি সময় দেওয়া খুব সহজ নয়।"

সুমন ঘোষের পুরাতনের পরে কি আর বাংলা ছবি করবেন না শর্মিলা?  জানালেন, তিনি অবসর গ্রহণের কথা ভেবেছেন। অভিনেত্রী জানান, "শুধু বাংলা ছবির কথা বলিনি। আমি বলেছি আমি আর কোনো ছবিই করব না। আমার আর শরীরে কুলোচ্ছে না। তবে যদি তেমন ভালো স্ক্রিপ্ট হয় আর যদি তারা আমার স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য বিষয়ের কথা খেয়াল রাখে তাহলে করতে পারি। আমি এখন ক্লান্ত হয়ে যাই। বাংলা ছবি তো করতেই পারি। তবে খুব ভালো চরিত্র পেতে হবে।  নাহলে আমার কোনো উৎসাহ নেই।" 

ওয়েস অ্যান্ডারসনকে কৃতজ্ঞতা

অরণ্যের দিনরাত্রি রিস্টোর হওয়ায় খুবই খুশি শর্মিলা। তিনি বলেন, "আমি খুবই খুশি এতদিন পরে ছবিটা রিস্টোর করা হয়েছে। যারা রিস্টোর করেছেন তাদের প্রতি আমার অনেক কৃতজ্ঞতা। রিস্টোর না করলে পুরনো ছবিকে বাঁচিয়ে রাখা যায় না। শব্দ, দৃশ্য সব খারাপ হয়ে যায়। ছবিটি আর দেখতে ভালো লাগে না।" পরিচালক ওয়েস অ্যান্ডারসন প্রসঙ্গে বলেন, "উনি মাণিকদার খুবই ভক্ত। উনিও এই রেস্টোরেশানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন। উনি যদি বিষয়টাকে এভাবে না দেখতেন তাহলে এই ছবিটা কানে দেখানো হয়ত সম্ভব হত না।" 

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাসের উপর ১৯৭০-এ নির্মিত এই ছবিটিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, শর্মিলা ঠাকুর, রবি ঘোষ, সমিত ভঞ্জ, সিমি গারেওয়াল, শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়, কাবেরি বসুসহ অন্যান্যরা। ১৯৭০-এর বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে গোল্ডেন বিয়ারে মনোনীত হয় ছবিটি। শর্মিলা বার্লিনে যাননি। কিন্তু আন্তর্জাতিক মঞ্চে ছবিটির প্রশংসা দেখেছেন। তিনি বলেন, "আমি বার্লিনে যাইনি। কিন্তু আমি এই ছবির সঙ্গে যেখানে গেছি সেখানেই লোকেদের এই ছবি নিয়ে উচ্ছ্বসিত হতে দেখেছি। আমার মনে হয়ে কলকাতার দর্শকদের থেকে এই ছবিটা বাইরের লোকেরা বেশি ভালো বুঝেছেন। যখনি রবিদা (ঘোষ) স্ক্রিনে আসতেন সবাই হাততালি দিতেন। উনি কিন্তু সকলের ফেভারিট ছিলেন।"                            

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ