আইএস এবং তালিবানের মতো তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলো দাবি করে যে, তারা ‘সত্যিকারের ইসলাম' কায়েম করবে৷ অক্সফোর্ডের ইসলামি চিন্তাবিদ সাঈদ নোমানুল হক মনে করেন, জঙ্গিদলগুলো যা করছে তা ইসলাম সমর্থন করে না৷
বিজ্ঞাপন
সত্যিকারের ইসলাম আসলে কেমন? ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস স্টাডিজের জেনারেল এডিটর সাঈদ নোমানুল হক বলেন, ‘‘এটা খুব মজার প্রশ্ন৷ আমাদের মনে রাখা উচিত, ইসলামে চার্চের মতো কোনো প্রতিষ্ঠান নেই, সুতরাং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ইসলামের যাবতীয় ব্যাখ্যা সর্বজনগ্রাহ্য করে প্রচার করার সুযোগ কোনো প্রতিষ্ঠানের নেই৷ সে কারণে ইসলামে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় জনমত৷ তাছাড়া এ কথাও মনে রাখা দরকার যে, আল-কোরআনে শুধু কিছু নিয়মই লিপিবদ্ধ করা হয়নি, (ইসলামের এই পবিত্র) গ্রন্থটি বিধিনিষেধ নিয়েই রচিত- তা-ও নয়৷ '' তিনি আরো বলেন, শরিয়াও মানুষের সৃষ্টি৷ তাই এর কিছু বিষয় নিয়ে মুসলমানদের মধ্যেও মতবিরোধ আছে৷
অনেকেই বলেন, ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই৷ কথাটা কি ঠিক? এ প্রসঙ্গে সাঈদ নোমানুল হকের অভিমত, ‘‘তারা (আইএস) কোরআন, হাদিসের কথা বলে৷ আমার মনে হয় তারা যেভাবে সব কিছুর সমাধান করতে চায় সেদিকে নজর দেয়াই উত্তম৷
আমরা যদি বিশ্বাস করি, নিরপরাধ শিশু হত্যা ইসলাম সমর্থন করে না, তাহলে (ইসলামিক স্টেট) ওদের সঙ্গে ইসলামের সম্পর্ক আছে কিনা এ বিষয় নিয়ে বিতর্কেরই তো দরকার পড়ে না৷''
দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে কয়েকটি মুসলিম প্রধান দেশে উগ্র জঙ্গিবাদের উত্থানের বিষয়টি নিয়েও কথা বলেছেন সাঈদ নোমানুল হক৷ দক্ষিণ এশিয়ার মুসলমানরা যেভাবে ইসলাম পালন করেন তার সঙ্গে সৌদি ওয়াহাবি বা সালাফিজম নির্দেশিত ইসলামের বড় রকমের পার্থক্য দেখতে পান শিক্ষাবিদ ও ইসলামি চিন্তাবিদ সাঈদ নোমানুল হক৷ তাঁর মতে, ‘‘সুফিরা যে ভূমিকা পালন করেছেন সেটা ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় ইসলাম ছড়াতে পারতো না৷ সুফিরা আইন এবং রাজনীতির বিষয়গুলোকে বেশি গুরুত্ব দেননি৷ আবার ইসলামের মূল নীতির প্রশ্নে কোনো আপোষও করেননি৷ তবে ইসলাম ব্যাখ্যায় তাঁরা ছিলেন মানবিক৷ কৌশলটা খুব ভালো ছিল তাঁদের৷ অমুসলিমদের কিছু রীতি-নীতি তাঁরা মেনে নিতেন এই ভেবে যে একদিন অমুসলিমরাও তাঁদের কাতারে আসবে৷''
ধর্মবিশ্বাস, ধর্মান্তর এবং ধর্মের স্বাধীনতা
ডেভিড স্ট্যাং খ্রিষ্টান থেকে মুসলমান হয়েছেন৷ তবে তিনি সালাফিস্টদের উগ্রতা এড়িয়ে চলেন৷ জার্মানিতে অনেকেই মনে করেন, মানবাধিকারগুলোর মধ্যে ধর্মের স্বাধীনতাটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ৷এসব নিয়েই আজকের ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কৌতূহল
ডেভিড স্ট্যাংয়ের কৈশোর থেকেই ধর্মের প্রতি বেশ অনুরাগ৷ নিয়মিত গির্জায় যেতেন, বাইবেল পড়তেন৷ তখন সবকিছু বুঝতে পারতেন না৷ অনেক প্রশ্ন জাগতো৷ কিন্তু উত্তর জানা হতো না৷ এখনো মনে আছে, দম্পতিদের নিয়ে একটা প্রশ্ন জেগেছিল, কিন্তু গির্জার পাদ্রী সে প্রশ্নের উত্তর তাঁকে বলেননি৷
ছবি: DW/K. Dahmann
হতাশা এবং মুসলমান হওয়া
একসময় ক্যাথলিক চার্চ, অর্থাৎ ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের গির্জা সম্পর্কে কেমন যেন হতাশ হয়ে পড়লেন ডেভিড স্ট্যাং৷ অন্য ধর্ম সম্পর্কে জানার চেষ্টা শুরু করলেন৷ এক মুসলিম আইনজীবীর সঙ্গে পরিচয় হলো৷ তিনি বললেন, ‘‘ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করো৷’’ তাঁর কথা মেনে একসময় সত্যিই মুসলমান হয়েছেন এবং সেই সুবাদে সবকিছুর নতুন মানেও খুঁজে পেয়েছেন স্ট্যাং৷
ছবি: DW/K. Dahmann
ধর্ম চর্চার দীর্ঘ প্রক্রিয়া
ডেভিড স্ট্যাং মনে করেন, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার মানে হলো, নতুন করে অনেক কিছু শেখা৷ তিনি জানতেন, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে মদ্যপান করা এবং শূকরের মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে৷ রাখতে হবে দাড়ি৷ যিনি তাঁকে মুসলমান হতে বলেছিলেন, তিনি এ-ও বলেছিলেন যে, মুসলিম হওয়ার অনুভূতিটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাই প্রক্রিয়াটাও অত্যন্ত দীর্ঘ৷
ছবি: DW/K. Dahmann
বিশ্বাসে আপোশ
কাজের সূত্রে ডেভিড স্ট্যাংকে প্রতিদিন হানোফার-বন যাওয়া-আসা করতে হতো৷ দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া সব সময় হয়ে উঠতো না৷ তাই সকাল আর সন্ধ্যার নামাজের সময়টা বাড়িয়ে নিয়েছিলেন৷ তিনি মনে করেন, জীবনের সঙ্গে বিশ্বাসের মেলবন্ধন ঘটানোটাই আসল৷
ছবি: DW/K. Dahmann
উগ্রতা পরিহার
২০১২ সালে উগ্র সালাফিস্টদের সহিংসতা দেখেছেন ডেভিড৷ তারা যেভাবে সন্ত্রাসবাদের পক্ষে যুক্ত দেখায়, তা মানতে পারেননি তিনি৷ সন্ত্রাসবাদীদের মতো ভয় দেখাতে তারা গলার কাছে বোমাও ঠেকায়৷ সালাফিস্ট সম্পর্কে তাঁর একটাই কথা, ‘‘আমি এমন কিছুর সঙ্গে থাকতে চাইনা৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্যাথলিক চার্চ ছাড়লেন উটে
উটে লাস-এর জন্ম ক্যাথলিক পরিবারে৷ ধর্মতত্ব নিয়ে পড়াশোনা করতে আগ্রহী ছিলেন৷ কিন্তু ধর্মতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করতে গেলে কিছু সমস্যাও যে হবে তা তিনি বুঝতেন৷ উটে বুঝতেন, ‘‘ক্যাথলিক থাকলে ধর্মতাত্ত্বিক হয়েও তেমন কিছু করতে পারবো না৷’’ এ সব ভেবে চার্চে যাওয়া বন্ধ করে দিলেন উটে৷
ছবি: DW/K. Dahmann
অন্তর্দ্বন্দ্ব...
উটের স্বামী প্রটেস্ট্যান্ট হলেন৷ ফলে এবার প্রটেস্ট্যান্টদের গির্জায় যাওয়ার সুযোগ পেলেন উটে৷ তাঁর ছেলেটা সমবয়সিদের সঙ্গে খেলতো৷ ওরও চার্চে যাওয়ার ইচ্ছা৷ কয়্যারে যোগ দিতে চায় সে৷ এ সব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পাঁচ বছর সময় নিয়েছিলেন উটে৷ নারী যাজক আনেগ্রেট কোহেন (বাঁ দিকে) এবং নিনা গুটমান (মাঝে) উটের এ সব অন্তর্দ্বন্দ্ব সমাধানে সহায়তা করেছিলেন৷
ছবি: DW/K. Dahmann
সহনশীলতা
ব্যাপারটিকে উটের বন্ধুরাও খুব ভালোভাবেই নিয়েছিলেন৷ বন্ধুদের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পেয়ে দীক্ষা নিয়ে চার্চে যাওয়া শুরু করলেন উটে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গির্জায় ভিড় কমছে
কয়েক বছর ধরে জার্মানিতে লোকজনের গির্জায় যাওয়ার প্রবণতা কমছে৷ গির্জার সদস্য বাড়াতে নেয়া হচ্ছে বিশেষ উদ্যোগ৷ বন শহরের ক্যাথলিক তথ্যকেন্দ্র ফিডেস-এ ধর্মের বিষয়ে সবাইকে আগ্রহী করে তোলার কাজটি করেন যাজক টোমাস ব্যার্নার্ড (ডানে)৷
ছবি: DW/K. Dahmann
কারণ কেলেঙ্কারি?
গির্জায় আর আগের মতো বেশি মানুষ আসছে না কেন? অনেকে মনে করেন, সাম্প্রতিক কালে পাদ্রিদের যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়ানোর খবর এক্ষেত্রে বেশ প্রভাব বিস্তার করেছে৷ যাজক টোমাস ব্যার্নার্ডও এ সম্পর্কে কিছুটা একমত৷ তিনি মনে করেন, এসব খবর বেশি প্রচার করে মিডিয়া বেশ ক্ষতি করেছে৷
ছবি: DW/K. Dahmann
ধর্মের স্বাধীনতা
ধর্মান্তরিত হয়েছেন, এমন অনেকেই মিউনিখ শহরের একটা প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছিলেন৷ প্রদর্শনীতে মানবাধিকারের সঙ্গে সঙ্গে ধর্মের স্বাধীনতার কথাও প্রচার করা হয়৷