1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সত্যিকারের গণপরিবহন হয়ে উঠুক রেল

ফয়সাল শোভন
৪ অক্টোবর ২০১৯

বিশ্বজুড়ে গণপরিবহণের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম রেল যোগাযোগ, যেখানে একসাথে অনেক মানুষ দ্রুত যাতায়ত করতে পারে৷ কিন্তু বাংলাদেশে যোগযোগের এই খাতটি এখনো সত্যিকারের গণবান্ধব পরিবহন হয়ে উঠতে পারেনি৷

Bangladesch - Vorbereitungen zu Eid-ul-Azha
ছবি: bdnews24.com

রেল যোগাযোগ মানেই শৈশবের বিষ্ময়বোধের স্মৃতি৷ মফস্বল পেরিয়ে শহরে যাওয়ার পথে ট্রেন দেখতে পাবার সে কী উত্তেজনা! কিংবা বাসের জানালা দিয়ে দূরে ট্রেনের ছুটে চলার ছবি৷ সেই ‘পথের পাঁচালির' অপু-দুর্গা থেকে শুরু করে ট্রেন নিয়ে এমন ফ্যান্টাসি সম্ভবত সব বাঙালি শিশু-কিশোরেরই থাকে৷ তারপর কোনোদিন যদি ট্রেনে চড়ার অপেক্ষার পালাটি শেষ হয় তাহলে তো কথাই নেই! পরিবারের সাথে বাক্স- প্যাটরা নিয়ে যাত্রা বাবার নতুন কর্মস্থলে৷ যেই যানটিকে দেখে আগে মনে হয়েছে অনন্তকাল ধরে ছুটে চলা জীবন্ত কোনো প্রাণী, অবাক বিষ্ময়ে দেখলাম সেটি কানফাটা আর্তনাদে নির্দিষ্ট প্লাটফর্মে এসে থামতেও জানে৷ এরপর তার পেটের ভেতর থেকে শয়ে শয়ে মানুষ নেমে পড়ে, হুড়মুড়িয়ে উঠে পড়ে আরো কয়েকশ'৷ তারপর ঝিম লাগা ছন্দে হেলেদুলে চলতে শুরু করে৷ বাতাসের সাথে চলে চাকার ছন্দের সংগত৷ সেই ছন্দ আবার মাথার এলোমেলো ভাবনার লাইনগুলোকেও যেন প্রতিধ্বনিত করে৷ এর মাঝেই সবুজ জমিন, নদী, পাহাড়, ছবির মতো লোকালয় পেরিয়ে ছুটে চলে ট্রেন৷ মাঝে একেকটি স্টেশনে থামা৷ বিদায়ের আবেগঘন দৃশ্য, প্রিয়জনের সাথে পুনর্মিলন, চায়ের দোকানের ব্যস্ততা, কুলিদের ছুটোছুটি সব মিলিয়ে অসংখ্য গল্পের ফটোগ্রাফি৷ ভ্রমণে এতটা বৈচিত্র্য, এত এত দৃশ্য, বিচিত্র অনুভূতি আর কোনো বাহনই দিতে পারে না৷ কিন্তু বাংলাদেশে সেই রেলে উঠবার কথা মনে হলে এখন আতঙ্কই লাগে৷

রেলযোগাযোগের সবচেয়ে বড় সুবিধাটি হলো নির্দিষ্ট গন্তব্যে সময় ধরে পৌঁছানো যায়৷ একজন যাত্রী সেইভাবে ছক কষে তার ভ্রমণ পরিকল্পনাটি করতে পারেন৷ কদাচিৎ হয়তবা সেই সময়ের কিছুটা হেরফের হতে পারে, সেটা ভিন্ন৷ কিন্তু বাংলাদেশে উল্টোটাই হয় যেন৷ ট্রেন সময়মতো আসাটাই তো বিস্ময়ের ব্যাপার যাত্রীদের কাছে৷ বছর দুয়েক আগে রংপুর থেকে ঢাকা ফিরবো৷ সড়কের বেহাল অবস্থা, তাই কাটা হলো ট্রেনের টিকিট৷ সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ পৌঁছানোর কথা যেই ট্রেন, স্টেশনে খোঁজ নিয়ে জানা গেল সেটি তখনো নাটোরে৷ রংপুর পৌছে সেই ট্রেনে ফিরতি যাত্রা শুরু করতেই মাঝরাত পার৷ তারপর যে গতিতে ট্রেন চলতে শুরু করল মনে হলো সেই শৈশবের হেলেদুলে চলা রেলেই আছি যেন৷ (এই অবস্থার পরিবর্তন হয়নি এখনো৷ খুব সম্প্রতি পরিবারের এক সদস্য রংপুর যেতে ঢাকা থেকে টিকিট কাটলেন৷ কমলাপুর থেকে সকাল নয়টার ট্রেন ছাড়লো দুপুর দুইটার পর৷)   

বাংলাদেশে রেলের গতি কত? একটি ইংরেজি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ইন্টারসিটি ট্রেন সর্বোচ্চ ৭০ কিলোমিটার বেগে ‘ছোটে'৷ এমনকি এই গতিতেও নাকি সব ট্রেন চলে না৷ বিভিন্ন রুটে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে লাইনগুলো নাজুক হয়ে পড়েছে৷ তাতে ট্রেনের গতি আরো কমেছে৷

ট্রেন ছুটবে ঘণ্টায় হাজার কিলোমিটার!

04:37

This browser does not support the video element.

মহাসড়কে গাড়ির গতি যেখানে ৮০ কিলোমিটার, সেখানে ট্রেন চলে তার চেয়েও ধীরে৷ উন্নত দেশে ট্রামের গতিও সম্ভবত এর চেয়ে বেশি৷ উচ্চ গতির ট্রেনের ঘণ্টায় ৩০০ কিলোমিটার ছোটার তথ্যটা না হয় বাদই থাকলো৷ শুধু যে ধীরগতি তা নয়, বাংলাদেশ রেল দিনকে দিন পরিণত হচ্ছে হাস্যকর যানে৷ বগি রেখে ট্রেনের চলে যাওয়া, চালক ছাড়াই ট্রেনের যাত্রা এমন খবরও অনেক সময় আসে৷

এত যন্ত্রণা, তারপরও এখনো বিপুল মানুষ এই যাতায়ত ব্যবস্থাটির উপর নির্ভরশীল, কেননা সত্যিকারের গণপরিবহনতো রেলই৷ যেই যানে একসাথে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ যাতায়ত করতে পারে৷ রেল বিভাগের হিসাবেই গড়ে প্রায় ১৫ ভাগ হারে রেলের যাত্রী বাড়ছে বছরে৷ ট্রেন যে এখনো মানুষের কাছে কতটা কাঙ্খিত পরিবহন তা টের পাওয়া যায় ঈদের আগে৷ সেসময়কার ভেতরে আর ছাদে ঠাসা যাত্রীদের ছবি আসে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও৷ কিন্তু ঈদের সেই টিকিট কাটতে গিয়ে যাত্রীদের ভোগান্তির অন্ত থাকে না৷ মাঝরাতে লাইনে দাঁড়িয়ে দিন পেরিয়েও অনেকের টিকিটের দেখা মেলে না৷ গত কয়েক বছরে অনলাইনে আর ‘রেল সেবা' নামের একটি অ্যাপসের মাধ্যমেও টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে৷ কিন্তু ঈদে সেখান থেকে টিকিট মেলাটাও সৌভাগ্যের ব্যাপার৷ অগ্রিম টিকিট ছাড়ার কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই সেগুলো উধাও হয়ে যায়৷ অনেকে অ্যাপস আর সাইটে প্রবেশের  সুযোগই পান না৷    

ফয়সাল শোভন, ডয়চে ভেলেছবি: Masum Billah

এই ভোগান্তি পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত যারা যাত্রার জন্য উঠে পড়তে পারেন ট্রেনে, তাদের আনন্দের সীমা থাকে না৷ টেলিভিশন সংবাদে অভিযোগের চেয়ে যাত্রীদের তৃপ্তির বহিপ্রকাশই তখন বেশি থাকে৷ অল্পতেই খুশি হওয়া এই মানুষগুলোকে পুঁজি করেই রেল বিভাগ তার অব্যবস্থাপনাকে টিকিয়ে রাখছে দিনের পর দিন৷ সত্যিকারের গণবান্ধব যান যেন না হয়ে উঠে রেল, সেই চেষ্টাও হয়তবা করেন অনেকে৷ কারণ, তাতে সড়ক পথে পরিবহনের বেপরোয়া বাণিজ্যটাও টিকে থাকে৷ 

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলতে চান? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷ 

ফয়সাল শোভন ডয়চে ভেলের মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক৷@FaisalShovon14
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ