পুলিশের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে হংকংয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন আন্দোলনকারীরা৷ জরুরি ভিত্তিতে সেখানে অর্থবহ স্বায়ত্তশাসনের প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন তারা৷ আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করতে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করেছে পুলিশ৷
বিজ্ঞাপন
শনিবার নতুন করে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে হংকংয়ে৷ প্রায় তিন হাজার মানুষ জড়ো হয়েছেন ভিক্টোরিয়া পার্কে৷ তাদের অভিযোগ অঞ্চলটিতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপের পরিকল্পনা করেছে চীন৷ তার প্রতিবাদ জানাতেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আন্দোলন শুরু করেছেন তারা৷
গত শনিবার চীন এক ঘোষণায় বলেছে, হংকংয়ের সরকার ব্যবস্থা নিয়ে কোন ধরনের বাধা সহ্য করা হবে না৷ অঞ্চলটিতে দেশাত্মবোধমূলক শিক্ষা আরো বাড়ানোর কথাও বলেছে দেশটি৷
সংবাদ সংস্থা এএফপিকে ১৭ বছর বয়সি এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘‘পুরো সরকারব্যবস্থা কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে৷ আমাদের প্রাপ্য স্বাধীনতা রক্ষা করতে আমরা বাইরে বেরিয়ে এসেছি৷''
প্রতিবাদকারীদের একটি অংশ শহরের গুরুত্বপূর্ণ একটি রাস্তা দখল করে রাখে৷ সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও পুলিশের নজরদারি এড়াতে অনেকই মুখোশ পরিহিত অবস্থায় ছিল৷ অনেকের মুখে ছিল গ্যাস মাস্কও৷
এদিকে সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাসের পাশাপাশি জল কামান ব্যবহার করে৷ কর্তৃপক্ষের দাবি, বিক্ষোভ সমাবেশ করার জন্য প্রতিবাদকারীদের কোনো অনুমতি ছিল না৷
হংকংয়ের কোনো বাসিন্দা চীনে অপরাধ করলে বিচারের জন্য তাকে চীনে পাঠানো যাবে, এমন এক বিলের বিরুদ্ধে গত জুনে সেখানে বিক্ষোভ শুরু হয়৷ সেপ্টেম্বরে এই বিল প্রত্যাহারে ঘোষণা দেন হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি ল্যাম৷ কিন্তু বিক্ষোভকারীদের দাবি হংকংয়ের স্বায়ত্তশাসন ও জনগণের সভা সমাবেশ করার স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে পুলিশ৷ প্রকৃত স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে জনগণকে রাস্তায় নামার আহবান জানিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা৷
এফএস/এআই (রয়টার্স, এপি)
হংকং সীমান্তে কেন চীনা সেনা?
হংকং ও চীনের সীমান্তের কাছে শেনঝেনে সামরিক মহড়া চালাচ্ছে চীন৷ হংকং এ চলমান প্রতিবাদের আবহাওয়ায় কেন এই মহড়া?
ছবি: Reuters/T. Peter
প্রতিবাদের পরিবেশ
গত ১০ সপ্তাহ ধরে হংকং এ চলছে সরকারবিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ৷ ১৯৯৭ সালের পর থেকে হংকঙে গণতন্ত্রের প্রশ্নে সবচেয়ে বেশি নাড়া দিয়েছে বর্তমানের এই বিক্ষোভ৷ প্রথমে প্রত্যর্পণ চুক্তিতে বদলের দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু হলেও পরে তা হংকং এ সার্বিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে পরিণত হয়৷ গণতন্ত্রের দাবিতে পথে নামা জনতা ইতিমধ্যে স্তব্ধ করেছে হংকংগামী বিমান চলাচলও৷
ছবি: picture-alliance/AP/V. Thian
অপেক্ষায় ট্যাঙ্কার
চীনের ‘পিপলস আর্মড পুলিশ'এর শতাধিক আধাসামরিক ট্যাঙ্ক ও ট্রাকসহ কয়েকশ সামরিক সদস্য বর্তমানে সীমান্তবর্তী শহর শেনঝেনে রয়েছেন৷
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, এর সাথে রয়েছে দু'টি জলকামানও৷
ছবি: Reuters/T. Peter
সামরিক অভিযান?
বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে হংকঙে চীনের সামরিক অভিযানের আশঙ্কার কথা৷ কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতামত, এমনটা হবে না৷ গোটা বিষয়টা আসলেই স্রেফ মহড়া৷
ছবি: Getty Images/AFP/Str
কেন নয় সামরিক অভিযান?
গত চার দশক ধরে চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পেছনে বড় অবদান রয়েছে হংকঙের, বলছেন ডয়চে ভেলের বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ ক্লিফর্ড কুনান৷ তাঁর মতে, অর্থনৈতিক সংস্কারের কাজ চীনে কিছুটা হলেও ধুঁকছে৷ এঅবস্থায় হংকং থেকে প্রাপ্য আর্থিক স্বস্তিকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে চায়না চীন৷ তাই আপাতত সীমান্তেই অবস্থান করছে চীনা সেনাবাহিনী৷
ছবি: Reuters/T. Peter
আন্তর্জাতিক চাপ?
হংকং চীনের অভ্যন্তরেই নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও চীনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়৷ চীনা বাজারে লগ্নি করতে চাওয়া আন্তর্জাতিক সংস্থারা বেইজিং এর কঠোর হংকং-নীতির ফলে বেঁকে বসতে পারে বলে মতামত কুনানের৷
ছবি: Getty Images/AFP/Str
সামরিক মহড়ায় কী প্রাপ্তি?
বিক্ষোভ সংযত করতে বেইজিং জানিয়েছে যে, এই প্রতিবাদকে তারা দেখছে প্রায় সন্ত্রাসবাদের সমতুল্য হিসাবে৷ এমন পরিস্থিতিতে প্রতিবাদকারীদের চাপে রাখতে ও কিছুটা ভয় দেখাতেই এই মহড়ার আয়োজন, মনে করেন নানইয়াং ইন্সটিটিউট অফ টেকনলজির সামরিক বিশেষজ্ঞ জেমস চার৷