নিজের তিনটি সন্তানকে ছুড়ে ফেলেছিলেন তিনি৷ সন্তানরা প্রাণে বেঁচেছে৷ তবে তাকে দাঁড়াতে হয়েছে কাঠগড়ায়৷ ছুড়ে ফেলে নিজের সন্তানদের জীবন বিপন্ন করার অভিযোগে এক সিরীয় শরণার্থীর বিরুদ্ধে মামলার শুনানি শুরু হয়েছে বন আদালতে৷
বিজ্ঞাপন
অভিযুক্ত ব্যক্তি ২০১৪ সালে সিরিয়া থেকে তুরস্ক, বুলগেরিয়া এবং ফ্রান্স হয়ে সপরিবারে জার্মানিতে প্রবেশ করেন৷ তখন তার সঙ্গে ছিল স্ত্রী আর দুই সন্তান৷ জার্মানিতে আসার পর ওই দম্পতির আরেক সন্তান হয়৷ গত ফেব্রুয়ারিতে বন শহরের কাছের লোমার এলাকার এক শরণার্থী আশ্রয় শিবিরের দোতলা থেকে এক এক করে তিন সন্তানকেই ছুড়ে ফেলেছিলেন তিনি৷ সাত বছর ও পাঁচ বছর বয়সি দুই ছেলের মাথা ফেটে যায়৷ শরীরের কয়েকটি হাড়ও ভেঙেছিল তাদের৷ এক বছর বয়সি ছেলেটি সৌভাগ্যক্রমে বড় দুই ভাইয়ের ওপরেই পড়েছিল৷ তাই এখানে-ওখানে একটু কেটে যাওয়া ছাড়া ওর আর বড় কিছু হয়নি৷ সন্তানদের ছুড়ে ফেলে হত্যার চেষ্টার অভিযোগে বন শহরের আদালতে মামলা করেছিলেন সিরীয় ওই শরণার্থীর স্ত্রী৷ মঙ্গলবার ছিল সেই মামলার প্রথম শুনানির দিন৷
শুনানির সময় গায়ের নীল জামা তুলে মুখ ঢেকে হাঁটু গেড়ে বসেছিলেন অভিযুক্ত ব্যক্তি৷ তার আইনজীবী মার্টিন ক্রেটশনার জানিয়েছেন, তাঁর মক্কেল এখন কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত৷ আইনজীবী আরো জানান, স্ত্রীকে ‘শিক্ষা' দেয়ার জন্যই সেদিন তাঁর মক্কেল সন্তানদের ছুড়ে মেরেছিল৷
আসামীপক্ষের আইনজীবী ক্রেটশনার আরো জানান, তিন সন্তানের জননী জার্মানিতে এসে সিরিয়ার মতো সবকিছু মেনে নিতে চাননি বলেই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত৷
৩৬ বছর বয়সি সিরীয় ওই শরণার্থী এর আগেও আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছেন৷ একবার স্ত্রীকে সসপ্যান দিয়ে পেটানোর অভিযোগে আদালত তাকে ১০ দিন পরিবার থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছিল৷ কিন্তু সেবার কয়েকদিন পর স্ত্রী-ই তাকে ফিরিয়ে নেন৷
সিরিয়া থেকে যেভাবে জার্মানিতে এসেছে একটি পরিবার
জীবন বাঁচাতে সিরিয়া থেকে জার্মানিতে এসেছেন অনেক শরণার্থী৷ জার্মানির ইমিগ্রেশন সেন্টার সেসব মানুষের সংগ্রাম নিয়ে আয়োজন করেছে একটি প্রদর্শনীর৷ সেখানেই জানা গেলো কোটো পরিবারের বেঁচে থাকার গল্প৷
ছবি: Sammlung Deutsches Auswandererhaus
আলেপ্পোয় সুখি সংসার
২০১৬ সালে তোলা কোটা পরিবারের ছবি৷ খলিল, তাঁর স্ত্রী হামিদা, সন্তান মান্নান, ডোলোভান, আয়াজ এবং নের্ভানা৷ তখন সিরিয়ায় কোনো গৃহযুদ্ধ ছিল না, ছিল না ধ্বংসলীলা৷
ছবি: Sammlung Deutsches Auswandererhaus
দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত
সিরিয়ায় ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর সময় খলিল কোটো সেদেশের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একটি শাখার প্রধান ছিলেন৷ গৃহযুদ্ধ শুরুর পর চাকুরি হারান এই ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার৷ একসময় খাদ্য এবং পানির অভাব প্রকট হতে থাকে৷ ২০১৪ সালের এপ্রিলে পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, তারা তুরস্ক চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, যেখানে খলিলের মা বাস করতেন৷
ছবি: Sammlung Deutsches Auswandererhaus
ধাপে ধাপে আগানো
খলিল তুরস্কে কোনো কাজ খুঁজে পাননি৷ তাই ২০১৪ সালের জুলাইয়ে তাঁর পরিবার জার্মানিতে আসার সিদ্ধান্ত নেন৷ খলিলের ভাই ইউরোপে বাস করেন৷ তিনিই পরিবারটিকে জার্মানিতে আসতে উৎসাহ যোগান৷ শরণার্থী হিসেবে জার্মানিতে আসার পথে বুলগেরিয়ায় একটি শরণার্থী শিবিরে ছয় মাস কাটান কোটো পরিবার৷ এই চামচটি সেই শিবিরের এক স্মৃতিচিহ্ন৷
ছবি: Sammlung Deutsches Auswandererhaus
জার্মানিতে স্বাগতম
অবশেষে জার্মানিতে কোটো পরিবার৷ জার্মানির উত্তরের শহর ব্রেমেনে তাদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে৷ সেখানকার এক নারী খলিলকে এই জিন্সের প্যান্টটি দিয়েছেন, জার্মানিতে পাওয়া তাঁর প্রথম পোশাক এটি৷
ছবি: Sammlung Deutsches Auswandererhaus
অনিশ্চিত ভবিষ্যত
খলিলের সন্তানরা এখন জার্মান স্কুলে যাচ্ছেন৷ আর খলিল এবং তাঁর স্ত্রী হামিদা শিখছেন জার্মান৷ ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার জার্মানিতে একটি চাকরি পাবেন বলে আশা করছেন৷ সিরিয়ায় ফেলে আসা অতীত মাঝে মাঝে মনে করে আনন্দ খোঁজেন তারা৷ আয়াজের সিরিয়ার স্কুলের আইডি কার্ড এটি৷